somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্লাকা- পৃথিবীর ভয়ংকরতম ড্রাগ, সাবধান হোন আগে থেকেই!

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনার মুখে গুলি লেগেছে। রক্তক্ষরণে মারা যেতে পারেন। কিন্তু আপনি কোনো ব্যথাই অনুভব করছেন না। হয়ে আছেন সুপার হাইপার। প্রেতে পাওয়া ব্যক্তির মতো পিঠ ধনুকের মত বাঁকা করে উলটো হয়ে হাঁটছেন, আর ক্রমাগত অর্থহীন কথা বলে চলেছেন। হরর মুভিতে এমন দৃশ্য দেখা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবেও কি এমন হতে পারে? জ্বী, হতে পারে যদি আপনি ফ্লাকা (Flakka) ওভারডোজে থাকেন।

ফ্লাকা কী? ফ্লাকা হচ্ছে নতুন ধরণের একটি সিনথেটিক ড্রাগ। এর পোষাকি নাম আছে আরো। সালভা, স্পাইস, ফাইভ ডলার ইনস্যানিটি ইত্যাদি। ফ্লাকার বড় ভাই হলো বাথ সল্ট (Bath sault) নামক আরেকটি ড্রাগ। যা ২০১১ সালেই ব্যান হয়ে যায়। বাথ সল্টের ওপর আরো অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর চেয়েও অনেক শক্তিশালী একটি ড্রাগস আবিষ্কৃত হয়, এবং ফ্লাকা নামে পরিচিতি লাভ করে। ফ্লাকা’র উৎপত্তি যে যৌগটি থেকে তার নাম হলো- আলফা পিভিপি (alpha-PVP). এ্যামফিটামিন থেকে উৎপন্ন হতো ভয়ংকর ড্রাগ বাথ সল্ট, সেই এ্যামফিটামিনেরই নতুন রূপ হলো আলফা পিভিপি, যার ক্ষমতা পূর্বসরীর চেয়ে অনেক বেশি। মজার ব্যাপার কি জানেন? বাথ সল্টের ইনগ্রিডিয়েন্ট এ্যামফিটামিন ২০১১ সালে ব্যান হলেও ফ্লাকার ইনগ্রিডিয়েন্ট আলফা পিভিপি অনেকদিন পর্যন্ত ব্যান হয় নি। তাই প্রোডাকশন চলেছে দেদার। এখনও অবশ্য ড্রাগস হিসেবে তেমন পরিচিতি লাভ করে নি ফ্লাকা, অনেক দেশেই এখনও ব্যবহার শুরু হয় নি। শুরু হলে যে কী হবে তা আমাদের কল্পনাতীত।

ফ্লাকার ভয়াবহতার কাছে বর্তমানে প্রচলিত ভয়ংকর ড্রাগসগুলোর ক্ষমতা একদম নস্যি। জ্বী, ঠিকই বলছি আমি। নস্যি! এটি কোকেনের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষমতাধর। ১০ গুণ খুব কম মনে হচ্ছে? আচ্ছা ধরুন আপনার বেতন ১০ হাজার থেকে হঠাৎ করে ১ লাখ টাকা হয়ে গেলো। কেমন অনুভব করবেন ভাবুন! আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, ফ্লাকা’র ওভারডোজ হতে খুব অল্প পরিমাণ নিলেই চলে। পরিমাণটা কতটুকু শুনবেন? ১ গ্রামের ১০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র! আর ওভারডোজের প্রতিক্রিয়া একদম ধর তক্তা মার পেরেক টাইপ। আপনি কোনো সুযোগই পাবেন না। সাথে সাথেই শুরু হয়ে যাবে। আর তারপর আপনি এগিয়ে যাবেন শোচনীয়তম পরিণতির দিকে। শুধু যে নিজেকে শেষ করে দেবেন তা না, আশেপাশের মানুষ, গাছ-পালা, ঘর-বাড়ি কোনোকিছুই আপনার কাছে নিরাপদ থাকবে না। আপনি খুব দ্রুতই পরিণত হবেন শক্তিশালী এক দানবে। আপনাকে রুখবে, সাধ্য কার? ফ্লাকা’র আরেকটি নাম হলো জোম্বি ড্রাগ। জ্বী, এটা আক্ষরিক অর্থেই মানুষকে বোধশক্তিহীন, রক্তলোলূপ জোম্বিতে পরিণত করবে। আপনার চলাফেরা, অঙ্গভঙ্গি, কোনোটাই মানুষের মত মনে হবে না। কোনো ভাবেই না।

জোম্বি ড্রাগ ফ্লাকা একপ্রকার মহামারির রূপ নেয় ২০১৫-১৬ সালের ফ্লোরিডাতে। ওভারডোজড মানবজোম্বিরা ছাদ থেকে লাফিয়ে, গাড়ির কাঁচ মাথা দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে, নগ্ন হয়ে রাস্তায় দৌড়ে এক ত্রাস আর আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ৮০ ডলারে কোকেন পাওয়া যেতো, আর ফ্লাকা পাওয়া যেতো মাত্র ৫ ডলারে। আসক্তরা নেবে না কেন? মরবে না কেন, বলুন? ১৬ মাসে মারা যায় প্রায় ৬৩ জন মানুষ! এখন অবশ্য ফ্লোরিডাতে এর আগ্রাসন নেই বললেই চলে, তবে ঘাঁটি বেঁধেছে ব্রাজিলে, সাউথ আফ্রিকায়, ফিলিপাইনে। আমাদের এখানে আসতেও বা দেরী কী! ২০১৫ সালে মালদ্বীপে একজন বাংলাদেশীকে এই ড্রাগস সহ গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

আপনি যদি একজন কৌতূহলী মানুষ হয়ে থাকেন, এবং কৌতূহলের বশে মাঝমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস নিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান, এবং ফ্লাকা বাংলাদেশে পাওয়া গেলে একটু চেখে দেখার ইচ্ছে পোষণ করেন, তাহলে এখনই সংবরণ করুন নিজেকে। ফ্লাকাকে বলা হয় ডেভিলস ড্রাগ। মানুষের টলারেন্স লেভেল আসলে এখনও সেই লেভেলে যায় নি। সামান্য ওভারডোজেই চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মারা যেতে পারেন, বা অন্যকে মেরে ফেলতে পারেন। আই শিট ইউ নট।

ফ্লাকা ওভারডোজের কিছু বাস্তব এবং হরিফায়িং ঘটনা বিবৃত না করলেই নয়।

(১) বলেছিলাম ফ্লাকাজনিত অসুরিক শক্তির কথা। জেমস ওয়েস্ট নাম এক ব্যক্তি একবার লওডাডেল পুলিশ হেডকোয়ার্টারের হ্যারিকেন প্রোটেক্টেড গ্লাস নিজ হাতে প্রায় ভেঙেই ফেলেছিলো। তার ধারণা ছিলো কেউ তাকে তাড়া করছে। মেরে ফেলতে চাচ্ছে, তার বাঁচার কোনো উপায় নেই আর। পুলিশই পারে তাকে রক্ষা করতে। এরকম পরিস্থিতি অবশ্য ফ্লাকা ওভারডোজের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। প্রায়ই হয়ে থাকে। নিজের মধ্যে অন্য স্বত্তার উপস্থিতি, অপরিসীম আতঙ্ক, কাল্পনিক চরিত্রের দ্বারা ভীত হওয়া, খুব স্বাভাবিক।

(২) ফ্লোরিডার সেই এপিডেমিকের সময়কার কথা। কেনেথ ক্রাউডার নামক একজন নগ্ন হয়ে গাছের সাথে সঙ্গম করার চেষ্টা করছিলো। পুলিশ তাকে থামানোর চেষ্টা করে না পেরে ইলেকট্রিক গান দিয়ে ভয়াবহ শক দিলো। তার এতে কিছুই হলো না। গর্ব ভরে সে নিজেকে বজ্রদেবতা থর হিসেবে দাবী করলো। ফ্লাকা ওভারডোজের ক্ষেত্রে কাপড়চোপড় খুলে নাঙ্গা হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। কারণ এসময় শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মক রকম বেড়ে যায়। সেটা ১০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
(৩) ফ্লোরিডার সে সময়েরই আরেকটি ঘটনা। ম্যাথু কেনি নামক একজন নগ্ন হয়ে দৌড়ুচ্ছিলেন আতঙ্কিত হয়ে। তার উদ্দেশ্য- কোন একটি গাড়ির সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করা। কেন? কারণ একদল শয়তানের উপাসক তার সমস্ত কাপড় চোপড় কেড়ে নিয়ে মেরে ফেলার জন্যে তাড়া করেছে। তাদের হাতে ধরা পড়ার ভীষণ আতঙ্কের চেয়ে মরে যাওয়া অনেক শ্রেয় তার কাছে।

(৪) অস্টিন হ্যারোফের গল্পটা আরো ভয়াবহ। ফ্লাকাচ্ছন্ন অবস্থায় যখন তাকে ধরা হয়, তখন সে তার প্রতিবেশীর মুখ চিবিয়ে ছিবড়ে করে ফেলেছে, এবং পশুর মত গর্জাচ্ছে। ভাবা যায়!

(৫) এখন যে ঘটনার কথা বলবো, সেটা আমার কাছে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, আর ভয়াবহ লেগেছে। ঘটনাটা ব্রাজিলের। মুখে গুলি লেগে গর্ত হয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি ফ্লাকায় বিভোর হয়ে এক হাসপাতালে এলো। তার মুখে যেমন জখম, ঠিকমত চিকিৎসা না পেলে সে মারা যেতে পারে। কিন্তু সে তখন কিছুই বোধ করছে না!

হ্যাঁ, যে ঘটনাটা দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম সেখানেই ফিরে যাচ্ছি আবার। সেই হতভাগ্য লোকটি তার মেরুদণ্ড উলটো দিকে বাঁকা করে পশুর মত গর্জাতে লাগলো, আর অনায়াসে হাঁটতে লাগলো এভাবেই। ভিডিওটি দেখতে চান? মন শক্ত করুন। দেখুন-


এই অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ যে কেন ক্ষেপে উঠেছে নিজেদের এভাবে ধ্বংস করে দিতে! এই অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। করজোড়ে মিনতি জানাই!

সর্বশেষ সংযুক্তি- ফ্লাকার মূল উৎপাদক দেশ চিনে আলফা পিভিপি উৎপাদন ব্যান করা হয়েছে। ফলে ফ্লাকা পাওয়া এখন খুবই কঠিন ব্যাপার। তারপরেও সাউথ আফ্রিকার ডারবানে পুনরায় তা কীভাবে যেন চলে এসেছে। সেখানকার পরিস্থিতি খুব একটু ভালো না। আশার ব্যাপার একটাই, আর তা হলো, এই ড্রাগটি এতই ভয়ংকর, যে হার্ডকোর এ্যাডিক্টরাও এটা নিতে তেমন আগ্রহ বোধ করছে না।

প্রথম প্রকাশ- এগিয়ে চলো ডট কম
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×