somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ূব বাচ্চু, আপনি আসবেন ফিরে গানে গানে, রুপালি গিটার হাতে...

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
১৯৯০ এর দিকে আমাদের ব্যান্ড এ্যালবামগুলোর একটা ফরমেট ছিলো। বেশিরভাগ থাকবে বিরহের গান, একটি সন্ত্রাস অথবা মাদকবিরোধী গান, একটি ফোক গান। সেই সময়ে আমাদের ব্যান্ডগুলির মূল শক্তি ছিলো মেলোডি। লিরিক? সে একরকম বসিয়ে দিলেই হবে আর কী! সেই সময় একজন নেপথ্যে থাকা মিউজিসিয়ান এক অদ্ভুত কাজ করে ফেললেন! তিনি ছিলেন সোলসের গিটারিস্ট। এল আর বি নামে একটি ব্যান্ড গড়ে একসাথে দুটি এ্যালবাম বের করে ফেললেন! বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল এ্যালবাম। তখন তার সাথে ছিলেন কি-বোর্ডে টুটুল, বেইজে স্বপন আর ড্রামসে জয়। ঐ এ্যালবামের গানগুলি বেশ অদ্ভুত। একেকটা গানে একেকরকম গল্প। ডাবল এ্যালবামের প্রথম পিঠের গানগুলি ছিল-
১। ঘুম ভাঙা শহর ২। প্রভু ৩। ঢাকার সন্ধ্যা ৪। শেষ চিঠি ৫। তুমি ছিলে
দ্বিতীয় পিঠে ছিলো
১। মাধবী (নষ্ট নারী) ২। সবাই চলে যায় ৩। ধীরে ধীরে ৪। ফেরারী এই মনটা আমার ৫। কেন তুমি
দ্বিতীয় এ্যালবামের গানগুলি ছিলো
এ পিঠে
১। হকার ২। হ্যাপি ৩। আড্ডা ৪। তোমার চিঠি ৫। রিটায়ার্ড ফাদার ৬। পেনশন
ও পিঠে
১। স্মৃতি নিয়ে ২। এমনটি হলে কেমন হয় ৩। শেষ রাতে ডাক্তার ৪। মা ৫। জীবনের মানে ৬। এক কাপ চা
২২টি গানের মধ্যে মাত্র ৫টি গান প্রেমের। বাকিগুলোকে গানও বলতে পারেন, গল্পও বলতে পারেন। প্রেমের গানের মধ্যেই আবার গল্প আছে। “তোমার চিঠি” (https://www.youtube.com/watch?v=l7i5gv3V010) গানটির কথা বলি। একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার চিঠি পেয়েছে। আকস্মিক একটি চিঠি। এত তাড়াতাড়ি এ চিঠি আসার কথা ছিলো না। তার মধ্যে নানারকম অমঙ্গল আশঙ্কা কাজ করছে। সে খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সে মোটামুটি নিশ্চিত, এটি একটি প্রত্যাখ্যানপত্র। পুরো সময়টা একটা সাইকোলজিকাল ক্রাইসিসের মধ্যে থাকে শ্রোতা। চিঠি খুললে কী হবে? সেই ৯২ সালে এমন অভিনব উপায়ে শ্রোতার সাথে সংযুক্ত থাকার উপায় বের করেছিলেন তিনি। এর পরে কজন এরকম করতে পেরেছেন? এই গানটির কথা কজন মনে রেখেছেন?
সেই এ্যালবামে ছিলো একজন ভাগ্যাহত বৃদ্ধের গল্প, রিটায়ার করার পর যিনি প্রবল বিরুদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছেন, ছিলো বস্তিবাসী একটি মেয়ের জীবন সংগ্রামের গল্প, ছিলো একজন পতিতার গল্প, একজন হকারের গল্প, বখাটে ছেলেদের হতাশা আর বিনোদনের গল্প, ছিলো সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনাসঙ্গীত! আমি একজনকে চিনি, যিনি সেইসময় ‘প্রভু’ গানটি নামাজ শেষে মোনাজাত হিসেবে পড়তেন।
“প্রভু আমাকে শক্তি দাও, শক্তি দাও, শক্তি দাও
প্রভু আমাকে মুক্তি দাও, মুক্তি দাও, মুক্তি দাও,
এই অতি পুরোনো জীবনধারাকে তুমি বদলে দাও...”

(২)
দ্বিতীয় এ্যালবাম ‘সুখ’। এই এ্যালবামেও ব্যান্ডের অপরিবর্তিত লাইনআপ। সালটা ১৯৯৩। ১৯৯২ সালের ডাবল এ্যালবামটা অতি মাত্রায় নিরীক্ষামূলক ছিলো, সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। আইয়ূব বাচ্চু এবং এলআরবিকে তখনও আন্ডারগ্রাউন্ডের মানুষ বলা যায়। সুখ এ্যালবামের মাধ্যমে তিনি ইতিহাস গড়লেন। “সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে...” এই একটি গান, এই একটি গান সম্পর্কে পাতার পর পাতা লেখা যায়। আমার এখনও মনে পড়ে ১৯৯৩ সালের বৃষ্টিস্নাত এক দুপুরের কথা। স্থান ক্যান্টপাবলিক স্কুল। টিফিনটাইমে আমি আমার প্রিয়তম বন্ধু কবীরের সাথে গাইছিলাম গানটি। গাইতে গাইতে কেঁদে ফেলেছিলাম আবেগে। ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। আমাদের শহর সৈয়দপুরে নতুন এ্যালবাম অনেক দেরিতে আসতো। গানটা প্রথম শুনি এক টিভি প্রোগ্রামে। ক্যাসেটে রেকর্ড করে রেখেছিলাম। প্রতিদিন কতবার শুনতাম তার হিসেব নেই। সেই সময়ে একটি অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছিলো। ডিভোর্স হয়ে যাওয়া দুই নর-নারী এই গানটি শুনে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তাদের মনে হয়, জীবনকে আরেকটি সুযোগ দেয়া যায়! তারা একে অপরকে বলেন “চলো বদলে যাই”। তারা আবার একসাথে থাকা শুরু করেন। গান দিয়ে দুইটি জীবন আক্ষরিক অর্থেই বদলে দেয়া, পৃথিবীতে এমন ঘটনা খুব বেশি আছে কি?
সুখ এ্যালবাম আইয়ূব বাচ্চু একটি অদ্ভুত কাজ করেছিলেন। একেকটি গান গেয়েছিলেন একেকরকম কণ্ঠে। “ক্ষণিকের সুখ” গানটিতে হাই পিচে অতি তীক্ষ্ণ গলায়, “আমি যে কার” এ ভূপেন হাজারিকার মত করে, “কী আশাতে”, “ব্যাপারটা”, “মানুষ বনাম অমানুষ” একেকটা একেকরকম! সুখ গানটির দৈর্ঘ্য ছিলো ১২ মিনিট। অনিকেত প্রান্তরের আগ পর্যন্ত এটিই ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গান!

(৩)
১৯৯৪ সালে বের করলেন ‘তবুও’। এই এ্যালবামেও তিনি এক অদ্ভুত কাজ করেন! তখন প্রতিটি এ্যালবামের এ পিঠ আর ও পিঠের গানের তালিকা যেভাবে দেয়া থাকতো, সে নিয়ম ভেঙে তিনি অন্যভাবে লেখেন গানগুলির নাম। পুরো একটি বাক্যে ছিলো সবগুলো গানের নাম। মনে করার চেষ্টা করে দেখি...
“একজন জারজ সন্তানের বহুদুরে হারিয়ে যাওয়া মাকে বলিস, তার ক্ষণিকের সুখ নষ্ট করেছে আমাদের মূল্যবোধ। উনিশ কিংবা কুড়ির উর্মিলা চৌধুরিকে আমি চাই আবারো এলোমেলো একটি রাত জাগা পাখির জ্ঞানের আঁচলে। ও দুখিনী আমার বাংলাদেশ, এই নিখাঁদ কৃষ্ণ রাতের নগরে অনেকটা অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিপাতের মত তোমাকে চেয়েছি তবুও...”
একটা মজার ধাঁধার মত! এখান থেকে গানের নামগুলি বের করতে পারবেন? আচ্ছা, আমি বলে দিচ্ছি।
এ পিঠের গান-
১। একজন জারজ সন্তান ২। নষ্ট করেছে আমাদের ৩। আবার এলোমেলো
৪। বহুদূরে ৫। তোমাকে চেয়েছি ৬। আমি চাই
ও পিঠের গান
১। মাকে বলিস ২। দুখিনী ৩। অন্ধ মেয়ে ৪। উনিশ কিংবা কুড়ি ৫। জ্ঞানের আঁচল ৬। রাত জাগা পাখি ৭। আমার বাংলাদেশ
এই এ্যালবামে ড্রামসে জয় ছিলেন না, মাইলস থেকে আসেন মিল্টন আকবর। তিনিও এই কিছুদিন আগে চলে গেছেন বহুদূরে...
তবুও এ্যালবামটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রিমিনালি আন্ডাররেটেড এ্যালবাম। এই এ্যালবামের আমার বাংলাদেশ গানটি ছাড়া আর কোনোটিই তেমন প্রচার পায় নি। এলআরবির লিরিক এ্যাডভেঞ্চারের সবচেয়ে সাহসী প্রয়োগ ঘটেছিলো এই এ্যালবামে।
“পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের ঝড়
এলোমেলো হয় যখন
রক্তমাখা উৎস খুঁজতে হয়রান একজন
সচেতনতার এই সমাজে
ভালোবাসার মূল্য দিতে
নষ্ট বীর্য যার জঠরে
জন্ম দিয়েছে কারো...”
জ্বী, সেই ১৯৯৪ সালে তিনি আমাদের নষ্ট বীর্য আর নষ্ট কামনা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। বলেছিলেন, “বলি সেসব বাবা আর মাকে, ঠিকানা মেলে নি যাদের
ক্ষণিকের সুখ আর নষ্টামীতে, সাবধানতা আনেন...”
লিরিকটা সম্ভবত লতিফুল ইসলাম শিবলী অথবা যায়েদ আমিনের ছিলো।
প্রতি এ্যালবামে টুটুল একটি করে গান গাইতেন। সাধারণত হালকা ধাঁচের রোমান্টিক বা বিরহের গান হতো সেগুলি। কিন্তু এবার গাইলেন থ্রাশ মেটাল গান “তোমাকে চেয়েছি” (https://www.youtube.com/watch?v=_rw9_QaWnj4) । হ্যাঁ, ব্যাচেলর সিনেমার “কেউ প্রেম করে, কেউ প্রেমে পড়ে, আমার হয়েছে কোনটা, জানে না এই মনটা”র সুকণ্ঠী গায়ককে থ্রাশ মেটাল গাইয়েছিলেন তার গুরু, মজার না ব্যাপারটা?

(৪)
১৯৯৪ সালে আমার বন্ধু দ্বীপ সৈয়দপুর থেকে পাবনায় চলে যায় বাবার বদলির কারণে। চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ হতো। একটা দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলো সে পাবনায় এডওয়ার্ড কলেজে এলআরবির কনসার্ট নিয়ে। কী কী গান গাওয়া হয়েছিলো, কোন গানের কী প্রতিক্রিয়া ছিলো দর্শকদের, তার বিস্তারিত বিবরণ। সে আইয়ূব বাচ্চুকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পেয়ে জীবনটাকে সার্থক মনে করেছিলো। আমি চিঠিটা বারবার পড়তাম। আমার জীবনের সবচেয়ে বেশিবার পড়া চিঠি।
১৯৯৪ এর শেষের দিকে সৈয়দপুর থেকে ঢাকায় যাই, আমার বড়আব্বুর বাসায়। এক মাস থাকি। সেখানে আমার কাজিনদের সাথে গান নিয়েই বেশি কথা হতো। সেই সময়ে আনন্দ বিচিত্রা অথবা তারকালোক পত্রিকায় সেইসময়কার রকস্টারদের বাসার টেলিফোন নাম্বার দিয়ে দেয়া হয়েছিলো। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই কাজটা তারা করেছিলো। সেখানে ছিলো আইয়ূব বাচ্চু, পিলু খান, মাকসুদুল হক, আশিকুজ্জামান টুলু, ফান্টি এমন আরো কজনের ফোন নাম্বার। আমি সাহস করে বেশ কয়েকবার ফোন করেছি। কথা হয়েছে সবার সাথেই। আইয়ূব বাচ্চুর সাথেও কথা হয়েছিলো। তিনি খুব রিজার্ভ ছিলেন, তবে বেশি কথা বলতেন না, তবে প্রশ্নের উত্তর দিতেন আন্তরিকতার সাথেই।
১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ হলো আইয়ুব বাচ্চু এবং এলআরবির অভাবনীয় উত্থানের বছর! এই সময় এলআরবির দুইটি এ্যালবাম, ঘুমন্ত শহরে, এবং স্বপ্ন বের হয়। আইয়ূব বাচ্চু তার একক এ্যালবাম কষ্ট দিয়ে অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, ফিলিংসের সাথে দুটি ডাবল এ্যালবাম ক্যাপসুল ৫০০ এমজি, আর স্ক্রু ড্রাইভার্স নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের সবচেয়ে সুখী সময়!
আইয়ূব বাচ্চু অবিশ্বাস্য গতিতে অসাধারণ সব কাজ করে যাচ্ছিলেন। প্রতিবছর একটি করে এ্যালবাম বের হতো এল আর বির। সেই সময় অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলি দুই থেকে চার বছর সময় নিতো এ্যালবাম আনার। ৯৫-৯৬ থেকেই সবাই প্রতিবছর একটি করে এ্যালবাম বের করতে মনোযোগী হন। এই আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে আমি আইয়ূব বাচ্চুর এলআরবিকেই রাখতে চাই।
৯৬ এ আমি যখন ঢাকায় আসি, ক্লাস নাইনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল খুবই বাজে হয়েছিলো। তখন আমার মধ্যে যেসব আশঙ্কা কাজ করেছিলো তার মধ্য একটি হলো, এত বাজে রেজাল্ট করলে তো আমাকে ক্যাসেট কেনার টাকাই দেয়া হবে না আর! প্রতিবছর এল আরবির নতুন এ্যালবাম বের হয়। আমি কীভাবে শুনবো তাহলে?
১৯৯৮ সালে এলআরবির শেষ ডাবল এ্যালবাম আমাদের! বিস্ময়! বের হয়। এলআরবির এ্যালবাম, তাও আবার একসাথে দুটো! দমবন্ধ আনন্দের অনুভূতি! ১৯৯৮ সালে আমি আমার জীবনের প্রথম লিরিক লেখি। সেটাও ছিলো আইয়ূব বাচ্চু এবং তার এলআরবিকে নিয়ে। তার কিছু গানের শিরোনাম নিয়ে ট্রিবিউট। লিরিকটির নাম ছিলো “অবাক শ্রোতা”। দেখুন তো কয়টি গান খুঁজে পান?
“তোমার গান তোমার কথা
তোমার সুরের আলোকছটা
মানায় আমার কল্পনাকে হার
এই শহরের ঘুম ভেঙ্গে যায়
অন্ধ মেয়ে চোখ তুলে চায়
তার চোখে তুমি স্বপ্নের রূপকার
উনিশ কিংবা কুড়ির সেই উর্মিলা চৌধুরী
অথবা জয়ন্ত নামের পরাজিত একজন
নষ্ট নারীর বুকের কষ্ট আজ অগ্নিগিরি
রিটায়ার্ড ফাদারের নীরব অশ্রূ সংবরণ...
আমরা তো আজ জানি না কেই
কে ছিলো সেই হকার
কোথায় আছেন বীর সেনানী মেঘনাদ মজুমদার
রঙচঙ মেখে রূপসী সাজে, কোথায় আছে ছন্দা?
চাঁদমামা তো আগের মতই, নেই তার ভালোমন্দা
জীবন নিয়ে এমন অনেক, অনেক রকম কথা
শুনিয়ে দিয়ে যাও আমাদের, আমরা অবাক শ্রোতা”
(৫)
এলআরবি এবং আইয়ূব বাচ্চুকে নিয়ে সুখস্মৃতির এখানেই সমাপ্তি টানি? ১৯৯৮ পরবর্তী সময়ে অসংখ্য মিক্সড এ্যালবাম, সিনেমার গান, এই গান, সেই গান, এনার্জি ড্রিংকের এ্যাড, ইত্যাদি করতে করতে ধীরে ধীরে আইয়ূব বাচ্চু নতুন অডিয়েন্স তৈরি করতে থাকেন, এবং হারাতে থাকেন। এর পরে তাকে আর কখনই আমার আন্ডারগ্রাউন্ডের ডাকসাইটে মাফিয়া মনে হয় নি। এর পরেও তিনি অনেক হিট গান উপহার দিয়েছেন, আবার বেসুরো গলায় উদ্ভট লিরিকের গানও গেয়েছেন। তাকে নিয়ে ট্রোল হয়েছে, তার বিরুদ্ধপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। অদ্ভুত তাদের মানসিকতা, তাদের প্রিয় শিল্পীর সাথে আইয়ূব বাচ্চুর বিরোধ বলে আইয়ুব বাচ্চুর ভালো সব কাজই তারা অস্বীকার করা শুরু করলো, তাকে নিয়ে রঙ্গ রসিকতা শুরু করলো,ফাকিং লুজারস! আইউব বাচ্চু অবশ্য সেসব কখনও পাত্তা দেন নি, দেয়ার কারণও নেই। তার নিশ্চয়ই খুব হাসি পেতো এসব দেখে!
আইয়ূব বাচ্চুকে আমি সামনাসামনি একবারই দেখেছি। ২০০২ -০৩ সালে। কুয়েটে, কনসার্টে। তিনি আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, "আপনাদের মত অডিয়েন্স আমি খুব কম পেয়েছি। আপনাদের জন্যে আমি একটি গান করবো, যা কনসার্টে গাই না। গানটি আমার খুব প্রিয়"।
তিনি গেয়েছিলেন- "আমার একটা নির্ঘুম রাত, তোমার হাতে তুলে দিলেই বুঝতে তুমি, কষ্ট কাকে বলে!"।

আইয়ূব বাচ্চু, আপনাকে কখনই সোশাল মিডিয়ায় সরব দেখি নি। আপনি এখনও আমার কাছে সেই ফিতার ক্যাসেটের মহানায়ক। কালো পোষাকের রেকলেস গ্যাংস্টার, অথবা দরদী কন্ঠের ফেরারী প্রেমিক। আপনার গান শুনতে শুনতে সাবালক হয়ে উঠেছি, ক্যাসেটগুলো এখন আর নেই, আমি এখন সোশাল মিডিয়া এ্যাডিক্টেড, ক্যারিয়ার র‍্যাটরেসে সচকিত, মিডলাইফ ক্রাইসিস ধাওয়া করে পেছন পেছন, আর তাই আপনার কাছেই ফিরে আসতে হয় ইউটিউবের প্লেলিস্টে, সাউন্ডক্লাউডের ইলেক্ট্রোমেঘে।
আপনি নেই, আপনি আর আসবেন না কখনও এই তথাকথিত সত্য আমি অস্বীকার করি। কারণ আপনিই গেয়েছিলেন-
আমি গানে গানে
আসবো ফিরে কানে কানে
দোলাব হৃদয় তোমার
সময় অসময়ে
ক্ষণেক্ষণে প্রতিক্ষণে বেলা অবেলার আলিঙ্গনে
আমি থাকবো তোমার ঠিক সবখানে...


প্রথম প্রকাশ- আমার ব্যক্তিগত ব্লগ
ছবি- তীর্থ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৩২
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×