somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আর আমার সুন্দরী শিক্ষিকাত্র‌য়: জীবন থেকে নেয়া (রম্য পোষ্ট)

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা থেকেই বন্ধুদের দেখে আসছি সুন্দরী বড় আপুদের প্রেমে পড়তে আর বলতে দোস্ত এই আপুটানা যা সুন্দর... একেবারে মাধুরী। কোনটা আবার ঐশ্বরিয়া, শাবনুর নয়ত পূর্নিমা। আমার বেলায় ঘটনা ছিল একেবারে উল্টো। আমি ঘুরে ঘুরে গিয়ে প্রেমে পড়তাম আমার অসম্ভব সুন্দরী সব ম্যাডামদের। সেই সব হারানো দিনগুলোর সুখস্মৃতির পাতা থেকে তিনটি ঘটনা নিয়ে আমার আজিকার পোষ্ট।

স্কুল জীবন: আমি তখন নবম শ্রেনীর ছাত্র। এতদিনের দুষ্ট ছেলেটা প্রথম বারের মত বুঝতে পারে পড়ালেখার আরেক নাম কি। প্রহর যত কাটে বইয়ের ভারও তত বাড়ে। ধীরে ধীরে জীবনটা কেমন জানি বেরসিক হয়ে উঠছিল কোথাও কোন আনন্দের লেশমাত্র নেই, সব জায়গায় শুধু পড়া পড়া আর পড়া। এমন সময় আমার বিরান ভূমিতে জলের প্রসবন নিয়ে আসল বকুল নামে এক সুন্দরী গনিতের শিক্ষিকা। প্রথম প্রথম ভাল করে লক্ষ্য করতাম না (নিজেই আছি প্যারায় এই সময় কি আর প্রেমে পড়া যায়)। কিন্তু হঠাৎ, হঠাৎ.. একদিন চোখ পড়ল শিক্ষিকার অনিন্দ্য সুন্দর চুলের খোপা আর আমায় পেয়ে বসল এরশাদের বিদিশার নেশা। ;)
খোপায় বাঁধা বকুল ফুল....কাইরা নিল আমার ঘুম
আমার বন্ধুরা যখন গাইতে থাকত হিন্দী গান বলি চুরিয়া বলি কানঁগানা আমার কন্ঠে তখন সুর তোলে হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের সেই কালজয়ী গান অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে কই তার মত তুমি আমার কথা শুনে হাস নাতো। চলতে ফিরতে শুধুই এই গান। বন্ধুরা বিরক্ত হয়ে বলে, ধুৎ তুই কি সব গান গাস। আমি বলি হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের নাম শুনেছিস, এই গানের মানে বুঝিস!!!! আসলে আমি নিজেও ঐ গানের মর্মার্থ না যতখানি বুঝি তার চেয়ে বুঝি এই গানের মধ্যে থাকা সেই নাম...বকুল। তখন আমার জীবনটাই ছিল পুরো বকুলময়। বকুল ফুল ভাল লাগে, বকুলের মালা ভাল লাগে এমনকি পাশের বাসার অসহ্য বকুলকেও ভাল লাগে । আরো ভাল লাগে বকুল গান আর সেই নাম...বকুল।
একদিন দেখি ম্যাডামের খোপায় নেই, বকুল ফুলের মালা.......ক্লাস শেষে আমতা নামতা করতে করতে বলেই ফেললাম, ম্যাম আজ যে খোপায় মালা দেন নি। বলেই জিহ্বায় কামড়, ভাবলাম এবার নিশ্চয় টাস করে একটা চড় লাগিয়ে দিবে। কিন্ত আমায় অবাক করে দিয়ে ম্যাডাম হেসে ফেলল, বলল যেই মেয়েটা আমায় ফুল এনে দিত ও চলে গেছে।
আমায় আর পায় কে, এখন আর আমাকে ভোরে জোর করে ডেকে তুলতে হয় না। নিজে নিজেই উঠি আর চলে যাই পরে থাকা ফুল তুলতে আর সেখান থেকে সরাসরি ম্যাডামের বাসায় (বাসায় আনলেতো কৈফিয়ত দিতে হবে)। ম্যাম তো অবাক, বলল আরে তুমি কেন কষ্ট করতে গেলে? আমি বললাম কি যে বলেন ম্যাম, শিক্ষক হইছে সবচেয়ে বড় গুরুজন আর গুরুজনের সম্মান করা দায়িত্ব না!!! কিন্তু বিধাতার মনে হয় আমার এত সুখ সহ্য হল না....মাসখানেক পরেই আমার সেই বকুল ম্যাডাম বদলি হয়ে চলে গেল অন্য এক জেলায়। আমার গানের কথাগুলোও বদলে গেল ..এখন আর আমি
বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি গাই না, গাইতে থাকি বকুল ফুল বকুল ফুল কেন এত তাড়াতাড়ি আমায় ছাড়িয়া গেলি

কলেজ জীবন: এস এস সি পরীক্ষা শেষ..তাই সমানে মুভি দেখে যাইতেছি...কোনটা বাংলা কোনটা হিন্দি আর কোনটা ইংলিশ কোন বাচ-বিচার নাই। কিন্তু একটা ছবি আবার সব উলটপালট করে দিল । ম্যা হু না...ছবিটায় সুস্মিতা সেনের প্রতি শাহরুখ খানের পাগলামিময় ভালবাসা আমার ভেতরে জমে থাকা ছাই চাপা সে প্রেম.. আবার দাউদাউ করে জ্বালিয়ে তুলল। কিন্তু কি আর করার কলেজ জীবন শুরু হতে এখনও মাস দুয়েক বাকি।
কলেজে ভর্তি হলাম। একেতো পুরানো প্রেম তার উপর আবার মেয়েরা নাই, তাই ম্যাডামরাই একমাত্র ভরসা ;) ।১ম ক্লাস খুব এক্সসাইটেড..ক্লাসে ঢুকল বাংলার সুন্দরী টিচার। সুন্দরী বললেই যথেষ্ট না তাই আর একটু বলি। রবীন্দ্র সাজে সজ্জিত ত্রিশ ছুই ছুই হৈমন্তী। আমি তখন নিজেকে অপু অপু ভাবছি। হৈমন্তী একুশের গল্প পড়ানো শুরু করল। কিছুক্ষন পর সে একটা প্রেম সংক্রান্ত গভীর প্রশ্ন করল তপু কে নিয়ে। কেউ পারল না আর আমিও তখন যতই অপু অপু ভাব নেই তপুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। স্বাভাবিক কারনেই মনের আকাশে মেঘের কালো ছায়া, কিন্তুু দমে যাওয়ার পা্ত্রতো আমি নই। খোঁজ নিলাম এই ম্যাডামের পরবর্তী বাংলা ক্লাস কোন সেকশনে। জানলাম পরেরদিন বি সেকশনে। পরের দিন আমার সেকশনের ক্লাস বাদ, দে ছুট বি সেকশনের পানে। ম্যাম আসল সেই.. একই ঢংয়ে। শুরু করল দেয়া সেই... একই লেকচার আর একটু পর সেই... প্রতীক্ষীত একই প্রশ্ন। আর এবার আমি অপু হয়ে গেলাম (লজ্জার ইমো হপে)। যেভাবে ম্যাডাম আমার আসল ক্লাসে প্রশ্নের উত্তরটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই বুঝিয়ে দিলাম আজ আমি তাহাকেই। ভিতর থেকে রবীন্দ্র প্রেম জাগিয়া উঠিল তাই মনে মনে বলিতে লাগিলাম...
তোমার ছোড়া শর আমি রেখেছিলাম যতন করিয়া
প্রিয়া প্রথম সুযোগেই তাই দিলাম তোমাকেই ছুড়িয়া
ম্যাডামের চোখে মুখে দিপ্তির বহি: প্রকাশ!! (কে জানে মনে মনে ভেবেছিলেন কিনা, আমি পাইলাম উহাকে পাইলাম) ;)

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন: স্কুল কলেজের গন্ডি পার হয়ে তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে। এতদিনে আমি বেশ পরিণত, স্কুল কলেজের পাগলামিগুলোও অনেকাংশে কমে এসেছে। তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার..ক্লাস নিতে আসল সদ্য ইউএস থেকে পিএইচডি করে আসা এক সুন্দরী শিক্ষিকা (একটু বেশিই স্মার্ট)...এসেই শুরু করল তার অর্জনলিপির বর্ননা, স্বভাবতই আমার মনটা বিগড়ে গেল। ক্লাসে বসেই পাঠ্য বইয়ের আড়ালে গল্পের বই পড়তে শুরু করলাম (সময় নষ্ট করে কি লাভ)। বেশ অনেকক্ষন পর ম্যামের ক্রুর দৃষ্টি পড়ল আমার উপর। ভাবল আমি মনে হয় ওনাকে ইগনোর করছি। আমাকে বলল, এই যে ছেলে কি করছেন? বললাম ম্যাম বই দেখছি আর লেকচার শুনছি। ক্ষেপে গিয়ে বলল আপনি আমার দিকে না তাকিয়ে কিসের লেকচার শুনছেন। তারপর যা বলল তা শুনেতো মেজাজ আমার তিরিক্ষি...ও আমি দেখতে পচা, সুন্দর না, তাই আপনি আমার দিকে তাকান না (অবিশ্বাস্য হলেও সত্য)। ক্লাস শেষে বন্ধুদেরকে বলি এই উনি কি বেশি পড়তে পড়তে সাইকো হয়ে গেছে নাকি? এক বন্ধু মজা করে বলে বসল আরে বিয়ে হয়নিতো তাই তোর সাথে এমন করেছে...আরেক বন্ধু একডিগ্রী বাড়িয়ে যা বলল তাতে আমি হাসতে হাসতে শেষ B-) মেয়েদের নাকি ঠিক বয়সে বিয়ে না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়!!! বলতে গেলে পুরো সেমিস্টারেই উনি আমাকে এভাবে জ্বালিয়েছে আর আমিও ঘাড়ের রগ একটা বাঁকা করে ওনার দিকে না তাকিয়েই গেছি (আড়ালে দেখছিলাম ;) )। একদিন হঠাৎ শুনি কেউ আমায় পিছন থেকে ডাকছে, এই যে শুনেন!! পিছন দিকে ফিরে দেখি আমার সেই ম্যাডাম...তাকাতেই বলল এই যে আপনি আমার দিকে তাকিয়েছেন B-):D । (এই ঘটনা মনে পড়লে এখনও আমার হাসি আসে) B-)
বছর খানেক পরে ডিপার্টমেন্টের গেটে দেখা, হাসিমুখে সালাম দিলাম। ম্যাম জানতে চাইল আমি কেমন আছি? বললাম ভাল কিন্তু উনাকে আর জিজ্ঞেস করার দরকার ছিল না উনি কেমন আছেন? বিয়ে হয়েছে নিশ্চয়ই ভাল আছেন ;) ।(মেজাজ ও ঠান্ডাই মনে হইল) B-)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:০২
৩৭টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×