এই যে ম্যাডাম , এক কাপ চা কি হবে ?
বউ রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে বলল সরল , ল্যাপটপ থেকে মুখ না তুলেই ।
মিনা ও সাথে সাথেই বলল, "হবে , এই নাও ধর।"
ধোঁয়া তোলা গরম চা একেবারে চাহিবার আগেই পাওয়া ?
সরল চা নিতে গিয়ে দেখল জামাই কে অবাক করে দিতে পেরে বৌ হাসছে মিটিমিটি ।"
চা নিয়েই আসছিলাম ", হাসি প্রসারিত করে বলল মিনা ।
হাসির আভায় না চায়ের সুবাসে মনটা ভাল লাগায় ভরে গেল এই শীতের সকালে ।
সরলের বউ মিনা যেন মিনা কার্টুনের মিনার বড় ভার্শন । একটু কৃষ্ণ বর্ণের মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে । এদের এরেন্জড ম্যারেজ । ভালই লাগে জুটি টা দেখতে । তবে মনে হয় আম দুধ এখনো মিশে যায়নি । এখনো পারষ্পরিক বোঝাপড়ার স্টেজে আছে এই নিউলি ম্যারেড কাপোল ।
যাইহোক, চা টা অসাধারণ লাগল সরলের । লেবু আর মশলা দেয়া চা । এই সকালে জানালা দিয়ে আসা এক ফালি শীতের মিষ্টি রোদ মিনার মুখের উপর পড়ে আছে । অপূর্ব লাগলো বৌটাকে ।, পরিবেশে রোমান্টিকতা আরও বাড়িয়ে দিয়ে ল্যাপীতে বেজে যাচ্ছে ...
~~ সকালের সোনা সোনা রোদ~~
~~ সেই পথের ধুলোয় এসে ছড়িয়ে যাবে~~
~~ আমার দুচোখে বোনা~~
~~ বিবাগী স্বপ্নগুলো তোমাকেই খুঁজে পাবে ~~
সে মনে মনে বলল , আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে মিট করার জন্য নিশি-দিন কি এক অসীম হাহাকার , ব্যাকুলতা আর হৃদয়ে শূন্যটার পাথরচাপা কষ্ট ছিল -কোথায় পৃথিবীর কোন কোণে লুকিয়ে থাকা শ্যামবর্ণের সাধারণ এই নারী অসাধারণ মহিমায় আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছে ।
আমি যুগ যুগ যেন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি ,তোমাকে পেয়েছি ।জীবন কয় দিনের আর বল ।কোথাও যাবনা, বউ , সুখ খুঁজতে ।
আমি মনোগ্যামাস , স্ত্রৈণ ।
ভাগ্যিস জোরে বলেনি । মিনা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ত তাহলে ।আর নির্ঘাত তার হাতে গরম চা ভর্তি কাপটা সরলের গায়ের উপর পড়ত ।
বেরসিকের মত নিজের হাতের সেই কাপটা নিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করতেই সরল বলল , "বস না । এখানে বসে খাও ।"
>আমার না , মা এর চা … মা কে দিয়ে আসি ,ঠাণ্ডা হয়ে যাবে না হলে ।
বউ এর পিছনে পিছনে সেও এসে গেল মায়ের কাছে । মায়ের কাছে এসেই বলল ," আম্মা, কি অবস্থা আপনার ?চা টা ভাল হয়েছে ।খেয়ে দেখেন । মিনার আদা চা । "
বউ প্রতি ছেলের আহ্লাদী দেখে মায়ের গা জ্বলে গেল ।
"হুম , কালার টাও সুন্দর আসছে ।"
মিনা কি বুঝল , কে জানে ।মিষ্টি গলায় বলল ,"এতো সামান্য চা , মায়ের মত রান্না কবে যে করতে পারব ? আমার খুব ভাল লাগে ।"
>> দেখতে হবে না আম্মাজান টা কার , বলল সরল ।
"তোমার রান্না ও ভাল হয় ",মা বললেন । মেয়েটা সাংঘাতিক চালাক আর বেয়াদব ।বুড়ো বয়সে আমাকে দিয়ে রান্না করিয়ে নেয়ার জন্য চালবাজ কথাবার্তা । আর গর্দভ ছেলেটা সব কিছুতেই বউ কে সাপোর্ট করছে ।
মিনা আর বসল না । একটা মাত্র ছুটির দিন । তার নিজেরই অনেকগুলো কাজ থাকে । সে নিজেদের রুমের দিকে গেল । জামাইটা অবশ্য চক্ষুলজ্জার কারণে এবার আর বউ কে অনুসরণ করলনা ।
তারপরের ঘটনা দ্রুত ঘটে গেল । বৌ কে লুকিয়ে বৌ এর নামে অভিযোগ করতে গিয়ে চোখে পানি চলে এলো,মায়ের অশ্রু সরলের মনে শেলের মত বিঁধল ।
মেজাজ খারাপ করে কাউকে কিছু না বলে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে এলো ।সঙ্গে সঙ্গেই বড়বোনের ফোন । "এই, তুই কই বাসায় আয় ।"
জরুরী তলব । গলার মধ্যে ঝাড়ি ঝাড়ি ভাব । সরলের সিক্সথ সেন্স বললো যেওনা ,যেওনা ।
তবু চিরকালীন আদেশ পালনে অভ্যস্ত পা দুটি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে বোনের বাসায় পৌঁছে গেল ।
তার বোন কাছেই থাকে ।
ওদের বিল্ডিং এর গায়ের সাথে লাগানো একটা বিল্ডিং উঠছে । দুনিয়ার আওয়াজ , প্রচণ্ড শব্দ দূষণ , তাদের বাসা পর্যন্ত । সেই সংগে বোনের অগ্নিমূর্তি ...
> তুই কিরে ,বিয়ে করতে না করতেই তুই বৌ এর আঁচল ধরা হয়ে গেলি?
কালো বউ এর এমন তো কোন রুপসৌন্দর্য ও দেখিনা। কিভাবে তোকে এমন ভেড়া বানাইল ?
তোর বৌ আসলে কি চায় ? আলাদা সংসার ?
আমার মায়ের মত মায়ের সাথে যদি মিলে চলতে না পারে তো কার সাথে মিলে চলবে ।
আজকেও আম্মা কাঁদতে কাঁদতে ফোন দিল । ২ দিন পর পর একই কাহিনী ।
বৌ এর বাপের বাড়ি এমন কিছু না যে সে এমন ডাঁট দেখায় ।
আর তোকে ও তারা এমন কিছু দেয় নাই বিয়ের সময়।
আরে মেয়ের বাবা মেয়ের সুখের জন্য গিফট তো দিবেই , এতো বলে দেয়া লাগে না ।
বাচ্চাদের স্কুলের ভাবীরা আমাকে জিজ্ঞেস করে , মেয়ের বাপের বাড়ী থেকে কি দিল , আমি কিছু বলতে পারিনা ।বিরাট লজ্জায় পড়া লাগে ।
এই বয়সে ঝাড়ি খেয়ে মনটা যথেষ্ট খারাপ হয়ে গেল সরলের ।সে ভাবল ,বিয়েটা যৌতুক মুক্ত , বিয়ের সময় এটা বলাই ছিল । আমরা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করি না , এটা কি লজ্জার ?আজ কাল ভাল কাজ করাই দেখা যাচ্ছে লজ্জার বিষয় ।
এই কথা বললে তো আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়ার মত ব্যাপার ঘটে যাবে । তাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে হল ।
ঝাড়ি পর্ব শেষ হইছে কিনা বুঝার আগেই দুলাভাই আসল ।
" আসসালামু-আলাইকুম ভাইয়া ,কি খবর, ভাল আছেন ?"রিফলেক্সলি বলে উঠল সে ।
ওয়ালাইকুম আস সালাম ,আছি ভালই ,একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে গেছো ..বিয়ের পর ।সেইসাথে ইঙ্গিতময় হাসি হাসলেন ,দুলাভাই
কিহে মুখ শুকনা কেন ? বলেই মূল প্রসঙ্গে চলে গেলেন ।
ভাইয়ার কথা শুনে ভাবতে লাগল ,আজ কি জাতীয় জ্ঞান দান ও ঝাড়ি দিবস নাকি ?
"বুঝলা , খোদার পরেই মা । মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত । তোমাকে বুঝতে হবে মা বড় না বৌ বড় । আরেকটা কথা ,বৌ গেলে বৌ
পাবে, মা গেলে মা পাবেনা হাজার সাধন করে । "
ধম ধম শব্দগুলো যেন বেড়ে গেল
" তখনই কইছিলাম ,চাকরিজীবী বিয়ে কইর না ।
এরা কাওরে দাম দিতে চায়না ।
তোমরা তো কথাটা, আমলে নিলানা । আমার বস তার ভাগ্নির জন্য তোমার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড ছিল । ফ্ল্যাট দিতে চাইল তারা ।
এখানে বিয়ে করে কি পাইলা বল ?
চা দিয়ে গেল ।খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না । তবুও মুখে দেয়ার সাথে সাথে বুঝল , চা টা আগুন গরম । জিহ্বা পুড়েই গেছে মনে হয় । চা খাদ্যনালী ধরে পাকস্থলী পর্যন্ত যে পোড়াতে পোড়াতে নামল এটাও টের পেল ।
সরল বুঝল ,ভাইয়া বেশ হোম-ওয়ার্ক করেছে কথাগুলো শুনানোর জন্য মা রিলেটেড যত গুলো বাণী জানে সব এক জায়গায় করেছে ।
এখনো কিন্তু মেয়েটার বিয়ে হয়নি ।এই কথাটার অর্থ কি ?
নিজেকেই দোষ দিতে লাগল ,আগেইতো মন টানেনি ,তবু যাওয়া কেন ? বিয়ে না করে চিরকুমার থাকাই ভাল ছিল ।অস্থির অনুভব করতে থাকে ।
আজকে বাসায় গিয়ে অবশ্যই মিনা কে কিছু একটা বলবে ।
আহারে, এত সুন্দর একটা সম্পর্কে ঝগড়া শুরু হবে আজ থেকে। যেভাবে হন হন করে যাচ্ছ রিকশার নিচে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে । একটা রিকশা এসে খেঁচ করে শব্দ তুলে ব্রেক কষে থেমে গেল একেবারে পায়ের কাছে । রিকশা আলা হয়ত এখুনি বলত , কি দেইখা পথ চলতারেন্না ?
কে যেন ডাকছে মনে হল । সরল যেন কোন এক জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো ।সে দেখল তার অবস্থান এখন ৪ নং সেক্টরে । লেকের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তার বোজম ফ্রেন্ড, নাসিম , তাকে ডাকছে ।
>> থাম ,থাম রিকশা ।
ভাড়া দিয়ে নেমে এলো ।
> অনেকদিন পর দেখা ।তোর নতুন কোন গুড নিউজ আছে? দন্ত বিকশিত করে ক্লোজ আপ টাইপের হাসি দিয়ে বলল নাসিম ।
এখানেও শব্দ তুলে মেশিনে আখের বের করছিল । তাই হয়ত ভাল মত শুনতে পায়নি সরল।
সে বলল , "কী ? "
> গাধা ,নতুন মেম্বার আসবে টাসবেনি ?
>> ও এই কথা ? আমি মরি আমার কষ্টে ...
> কি হইছে তোর ? আচ্ছা ,চল চল একটু লেকের পাড়ে বসি …বহুদিন পর দেখা ..বিয়ে করে তুই তো আরও সুন্দর হয়ে গেছিস ? বউ কি নিয়ম করে ফেয়ার এন্ড লাভলী লাগায় দেয়নি ?
> দেখ , রসিকতা বাদ দে ...ঝাড়ি খেয়ে মেজাজ মর্জি খারাপ , এমনিতেই ।
>> কি হইছে বলত ?
>একদিকে সারাদিন অফিসে দুনিয়ার কাজের চাপ ।বেসরকারি জব দিনের সব প্রাণ শক্তি অফিস আখের রস বের করার মত বের করে রেখে দেয় ,একটা মাত্র ছুটির দিন এই শুক্রবার ,কিন্তু বাসায় অশান্তি ,একেবারেই মাথা-নষ্ট অবস্থা ।
নাসিমের চাপাচাপিতে তারপর সরল রেখে ঢেকে কিছুটা বলল ।
> তোর বৌ না চাকরি করে ? ঝামেলা করার টাইম পায় কখন ?
>> আল্লাহই জানে। আম্মার মতো মানুষ হয় বল ? তা ও যদি এত প্রবলেম হয় ?
> আন্টি আসলে কি বলে ?
>> আপার কাছ থেকে শুনলাম আম্মা নাকি প্রায়ই মিনার ব্যবহারে কান্নাকাটি করে । আম্মার শরীরও ভাল না । হাত পা জ্বালাপোড়া ।
> আচ্ছা ,ওনার ঘুম ক্যামন ?
>> রাত জেগে বসে থাকে । নামাজ পড়ে। বলে, ঘুম আসেনা
> শুন খালাম্মার বয়স কত ৪৬ ,৪৭ তো হবেই না ? ৫০ ও হতে পারে ।
>> হ্যাঁ ,এমনই ।
শূন্য দৃষ্টিতে সামনে তাকাল । এই লেকটাকে পুকুর বলাই ভাল ।
। কয়েকটা হাঁস পুকুরে নেমে গেল নিঃশব্দে । শহরে পানিতে হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে খুব একটা কমন দৃশ্য না , বরং বলা চলে খুবই আন কমন ।
সরল আরও অবাক হয়ে গেল ,যখন দেখল, একটা মা হাঁস বেশ কত গুলো ছানা নিয়ে পানিতে নেমে এলো । ছানা গুলো ছোট্ট চিঁ চিঁ করে ননস্টপ শব্দ করে যাচ্ছে ।
মনে হয় কেয়ার টেকারের হাঁস ।
মা হাঁস টা নিজে খাচ্ছেনা , খাবার খুঁজে দিচ্ছে আর ছানা গুলো খাচ্ছে ।
নাসিম ও খেয়াল করল । তার পর বলল ,
> মা একটা আলাদা জিনিস রে ভাই । আলাদা কিছু থাকে এদের শরীরে । বিস্ময় কর এক গ্রুপ ।
একটা মেয়েকে মা হবার জন্য তৈরি করতে প্রকৃতি বিরাট কর্মযজ্ঞ হাতে নেয় রে । নানা রকম হরমোন আসে শরীরে তার একটা হল ইস্ট্রোজেন ।
সর্বংসহা ,ধৈর্যশীল ,ঠান্ডা মাথার না হলে ,এত কষ্টের গর্ভধারণ , সন্তান জন্মদান , রাত জেগে বসে থাকা ,সন্তান বড় করে তোলা , স্বামীর যত্ন নেয়া , সংসার দেখা সব যেন দশভুজা দুর্গার মতো সামাল দেয়া সম্ভব হত না ।
কিন্তু জীবনের একটা সময়ে এসে শেষ হয় সন্তান ধারণ ক্ষমতা । প্রকৃতিও তুলে নেয় ইস্ট্রোজেন । যে হরমোন টা সারাজীবন ওনাকে কষ্টসহিষ্ণু মেয়েলি ধৈর্য দিচ্ছিল, ব্রেইন এতেই অভ্যস্থ ছিল । তাই
ব্রেইনের হাইপোথ্যালামাসে এর অভাব মনোজগতে বিচিত্র পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয় । এই মা যেন এক অচেনা মা । তৈরী হয় মেনোপজের পরবর্তী সময়ের মুড চেইঞ্জ ।
ঘুম কমে যায় । সবসময় হতাশা লাগে,বিষণ্ণতায় ভুগে ,মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ।ভুলো-মনা হয়ে যায়।অল্পতেই চোখে পানি চলে আসে ।
নিজেকে খুব অবহেলিত লাগে ।ছেলে বিয়ে করে ফেললো ..ছেলেটা বৌ এর হয়ে গেলো এই ভাবনা থেকে নিরাপত্তা হীনতায়ও ভুগে । কর্তৃত্ব , আধিপত্য সব বুঝি গেল । হীনমন্যতায় ভুগে ।
প্রভাব পড়ে সম্পর্ক গুলোর উপর । সহজে মনে কষ্ট পান ।
২ দিনের পুচকে মেয়ের কাছে নিজেকে হেরে যাওয়া হেরে যাওয়া লাগে । যদিও এগুলো অবান্তর ভাবনা । মা তো মা-ই , মায়ের জায়গা কেউ কি নিতে পারে ?
>> হতে পারে ,আমি বৌকে একটা শাড়ি কিনে দিলাম আম্মা কেমন জানি মন খারাপ করলেন । কিন্তু ২ দিন আগেই কিন্তু আম্মাকে কিনে দিয়ে ছিলাম ,আম্মার সেটা মনে নাই , নাকি আম্মা ভাবল ,বউ এর শাড়িটা বেশী সুন্দর , কি জানি !
কিন্তু তুই এগুলি জানলি কিভাবে ?
> বুঝছি আমি যে একজন ডাক্তার ,এটা আপনার মনে নাই । এবার রোগটা যে ডায়াগনোসিস করে দিলাম এজন্য ভিজিট টা বাহির করেন তাহলে মনে পড়বে ।
>>আরে ধুর আমি জানতে চাচ্ছি তুই তো
মহিলাদের ডাক্তার না , এই সমস্যার কথা জানলি ক্যামনে?
> আরে আমার মাও ভুগতেছিল । আম্মাতো আগে থেকেই রাগী ছিল ; আরও রাগ বেড়ে গেলো কোন ছোটখাটো সমস্যায় পুরা অস্থির …টেনশন দুশ্চিন্তা …
এফেক্ট পড়ছিল আমাদের উপর
আব্বার সাথে রাগারাগি
ছোটনের উপর মনে কষ্ট ,
কান্নাকাটি হৈ চৈ
ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম । ডাক্তার আরও পরীক্ষা করে ঔষধ দিলেন ..এখন অনেক ভাল ।
>>কি আন্টির ও ?
>মহিলারা এমনিতেই অবহেলিত ,শরীরের খোঁজ রাখে কয়জন তাও আবার মনের খোঁজ । অনেকসময় সামান্য ঔষধ পত্র আর জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন ম্যাজিকের মত কাজ করে । আন্টিরও একই প্রবলেম হচ্ছে ।
তবে মেয়েরা নিজেরাই জানেনা ...তাদের জীবনের এই মানুষিক পরিবর্তনের কথা ।
ফিজিক্যাল প্রবলেমও আসে । প্রেশার বাড়ে , হাড়ে ব্যথা করে , হাড় ভেঙ্গে যায় ।
>> এতক্ষণ ঝাড়ি আর উপদেশবাণী শুনতে শুনতে মনটা ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেছিল ।
এই আপা আর দুলাভাই একজায়গার পানি আরেক জায়গায় নিয়ে গেছে ।
আম্মার মানুষিক অবস্থা আসলে ই খারাপ , না হলে আম্মাকে আমি কাঁদতে দেখিনি , আম্মার কান্না দেখে আমারও মাথা খারাপ লাগছিল ।
তাহলে তুই বলছিস এখন থেকে কেয়ার নিলে আমার আম্মার কষ্ট একটু কমবে ?
> ইনশাআল্লাহ । তবে তোর বোন আর আম্মা সারাদিন ফোনে ফোনে বউ এর গীবত করে বুঝাই যাচ্ছে ।
আমার মনে হয় মহিলাদের শারীরিক মানুষিক এই অবস্থাটার সুযোগ নেয় শয়তান । অত্যন্ত ভঙ্গুর হৃদয়টায় পরচর্চার মাধ্যমে শান্তি খোঁজার পথ দেখায় ।
কিন্তু আন্টির মনে অল্প কষ্ট থাকলেও সেগুলি আরও বেড়ে যায় । তিল হয়ে যায় তাল ।মা তো অনেকের উপরই মনঃকষ্ট পায় কিন্তু বলির পাঁঠা হয় বউ । ছোট খাট দোষ থাকলেও মার্জনা পায়না বরং আরও দোষ বের করে বউ এর ।
শেষ পর্যন্ত বউ পাশে কেউ থাকেনা । কারণ মা কে সবাই বিশ্বাস করে । মায়ের কথাই কিন্তু প্রায়োরিটি পায় ।গীবত একটা সামাজিক সমস্যা । এই পরচর্চার ফলে অনেক সুন্দর সংসার ভেঙ্গে যায় ।
দেখ সমাধান বের আচ্ছা ,তোর বউ এর কথা তো শুনলাম না কিছু … নালিস জানায় নাই ?
>> সে আর আমি দুইজনেই অফিসে থাকি রাত ছাড়া দেখাই হয়না …তাই হয়ত কিছু জানায় নি
> জানাতে চাইলে ফোনেও জানাতে পারতো । আমার মনে হয় ,ভাবি জানেই না , তার উপর যে সবাই এত রাগ ।
আচ্ছা, এই যে পরের একটা মেয়ে নিয়ে এলি তার কি সুবিধা অসুবিধা দেখাও তোর দায়িত্ব । যে মায়ের প্রতি কর্তব্য আছে তেমনি বৌও ইর্ম্পটেন্ট ।
>> ভালই হইছে তোর সাথে দেখা হয়ে । বউ এর উপর এত মেজাজ খারাপ হইছিল ..বাসাই গিয়েই কিছু বলে ফেলতাম হয়ত ।
> ভাবী তো ভাল মানুষ । ওনাকেও ব্যাপারটা বুঝিয়ে বল, তাকেও এক সময় এই সময়ের মুখোমুখি হতে হবে । দুজনে মিলে সমস্যা সমাধান কর ।
সঙ্গী র জন্য কত শত অখাদ্য কুখাদ্য গান কবিতা লিখে গেলি তাকে পেয়ে গেলে এত উদাসীনতা ঠিক না ।
স্বামীদের উদাসীনতার কারণে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বউকে মানুষিক যাতনা দেয় বুঝছ মামা
লেকের পাড়ে শীতের ফুল গাছ লাগানো । নানা রং এর কসমস আর ডালিয়া বেশ সুন্দর লাগছে । হালকা শীতের বাতাসে আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধ । বসন্তের আগমনী বার্তা ।ভাল লাগছে এখন সরলের ।
>> দোস্ত অনেকদিন শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটি নারে । আজ শিশিরের নিমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করতে পারছিনা ।
> আমিও পারছিনা রে । আমিও হাঁটবো ।
এটা গল্প । কিন্তু বাংলার ঘরে ঘরে আছে সরল , মিনা আর মা ।বাস্তবে কি ঘটেছে ?
নাসিম নামের এই ডাক্তার বন্ধুটির সাথে সাথে সরলের দেখা হয়না ।
কখনো কখনো ভালবাসা নামের পাখিটির ডানার পালক পুড়তে পুড়তে সে আর উড়তে পারেনা । তৈরি হয় বন্ধুত্ব হীন কয়েকটি সম্পর্ক ।
সন্তান হয় সরল ও মিনার ।এক সময় সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অশান্তিকর ও কষ্টদায়ক সংসারে মিনা রা পড়ে থাকে ।
আবার উল্টোটাও ঘটে । মা কে ছেড়ে যায় সরল মিনা ।
মায়েরই আশ্রয় হয় বৃদ্ধ নিবাসে । মা হয়ে যায় আরো একা ।
আবার কেউ কেউ সব দিক সুন্দর করে হেন্ডেল করে স্বর্গ গড়ে ।
মায়ের এই দিক তার অজানা ছিল । সে স্বর্গ গড়বে ।
___
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



