somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

XX , XY ক্রোমোজম ও রুপার স্বামী আর বৌমা দিবস ।

১৪ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিবারই রাহেলার মেয়ে হয় । এটা তার ৮ নম্বর মেয়ে । বলল রুপা ।

আমি তাজ্জব হয়ে বলি ৮ নম্বর ? আজকাল এতগুলো বাচ্চা কেউ নেয় ? বুঝাই যাচ্ছে ছেলের আশায় আশায় এত গুলো মেয়ে হয়েছে ।
রুপা আমার নতুন রোগী । আমাকে নানা রকম গল্প বলেই যাচ্ছে । প্রতিবেশীর গল্প , স্বামীর গল্প , শাশুড়ির গল্প ।


পড়ন্ত বিকেল । জানালা দিয়ে গোধূলীর আলো এসে ঢুকে পড়েছে । হরতাল , রোগী পত্র কম । জানালা দিয়ে কাছের একটি সরকারি ভবনের চারপাশের গাছপালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ওখানে বাঁশঝাড় আছে , যেগুলি বাতাসে আর মায়াবী রোদে কেমন এক হৃদয় আকুল করা পরিবেশ তৈরী করেছে । হঠাৎ চোখ চলে গেল , বাঁশঝাড়ের সংগে থাকা দুটি তালগাছের দিকে । কচি তাল চকচক করছে । আজ জৈষ্ঠের ১ তারিখ । জৈষ্ঠ মাস মধু মাস । সব ফলফলালি এখন পেকে যাবে । কিন্তু তাল পাকার জন্য ভাদ্রের গরম চাই ।

কচি তালের ডাব , কচি তালের ডাব খেতে চাওয়া, ঘর ভরে যাওয়া তালের ডাবে এসব নিয়ে আমি আনন্দময় অতীতে ডুবে যাচ্ছিলাম , সে সময় রুপা র আগমন ।

রুপা কাছে ঘনিয়ে এসে বেশ আগ্রহ নিয়ে গল্প করে যাচ্ছে ।রোগীদের কমন কমপ্লেইন ডাক্তার রা কথা শুনতে চায়না । আজ সেই অভিযোগ কিছুটা কাটানো যাক । আজ বাঁধা দিবনা ।

আমি মনে মনে বললাম , রুপা বলে যাও , তোমার মনে যা যা আছে । স্বামীর গল্প ,শাশুড়ির অবহেলার গল্প , পাড়া প্রতিবেশীর গল্প , যা ইচ্ছা । আজ হাতে সময় আছে , শুনি তোমার গল্প ।

>> হু , তার ৮ নম্বরটাও মেয়ে হইল ।

রুপার মুখে এই কথা শুনলে আমি অবাক হলাম ।

ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট । বরঞ্চ এখন বলা হয় , ১ টি সন্তান হলে আরো ভাল হয় । ৮ নম্বর সন্তান হয়েছে শুনে আমি যে তাজ্জব হলাম , এটা দোষের মধ্যে পড়েনা ।

রুপা এরপর কি বলবে ? ৮ নাম্বারটাও মেয়ে হওয়ার পর রাহেলার স্বামী , ছেলের আশায় আরেকটা বিয়ে করার চেষ্টা করছে , এরকম কিছু শুনার মানুষিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রুপার মুখের দিকে তাকালাম ।
রুপা সেদিকে না গিয়ে বলল , রাহেলার স্বামী প্রতিবার মেয়ে হওয়ার পর আঁজ ঘরে রেখেই ( আঁতুড় ঘরে ) রাহেলারে দেয়া শুরু করে মাইর ।

>ওহ ,ওহরে আল্লাহ । তারপর ?
>>তারপর মেয়েগুলাকে পালক দিয়ে আসে ।

আমি এক ধাক্কা খেলাম যেন তাই আর কি বলব ভেবে পেলাম না ।

রুপা এবার তার স্বামীর প্রসংসা মুলক ঘটনা হাজির করল । বলা বাহুল্য আমিও রুপার স্বামীর কাজের প্রসংসা না করে পারলাম না ।

রুপার স্বামী ই রাহেলাকে এবার মেয়ে হবার পর মারার হাত থেকে বাঁচাল ।
>> আমার স্বামী রাহেলারজামাইটারে গিয়া বুঝাইছে ,

মহিলারা ছেলে বা মেয়ে পাবে কোথায় , আমরা যা দেই তাই তারা পায় । তুই ব্যাটা এই সব এইসব মারমারি বন্ধ কর ।


রুপার স্বামী এই কথা বলেছে ? ভাবার কোন কারণ কোন কারণ নেই যে রুপার স্বামী শিক্ষিত মানুষ । তাই একজন অশিক্ষিত মানুষের মুখে এরকম সায়েন্টিফিক কথা?
আমি কি সত্যি শুনলাম?
>কি বলছে তোমার স্বামী ? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম ।
>> মহিলারা ছেলে বা মেয়ে কোথায় পাবে , আমরা ছেলেরা যা দেই তাই তারা পায় ।

> রুপার স্বামী তো একেবারেই ঠিক কথাটাই বলেছে । এই কথা কিন্তু সত্যি । আহারে যদিও ছেলে মেয়ে হওয়া আল্লাহর কাছ থেকে নির্ধারিত , তবুও বাঁচতে হলে জানতে হবে মহিলাদের কোন ভুমিকাই নেই । এরকম জ্ঞানী স্বামীই যেন সব মেয়ে পায় ।


>> আপা আমার কি বাচ্চা হবে ?
রুপার অবস্থান এখন আল্ট্রাসনোর প্রবের নিচে । জানতাম এই প্রশ্নই ও করবে । সব্বাই এই প্রশ্ন করে । যে সব মহিলা জীবনে ডাক্তারের কাছে আসেনি , তারাও জানে ৭ মাসে খুব ভাল ভাবে বাচ্চার সেক্স বুঝা যায় । তারা নিজেরা নিজেরা আল্ট্রাসনো করাতে চলে আসে । ছেলে কি মেয়ে এটা জানার জন্য । অতি উৎসাহী মা বা শাশুড়িও চলে আসে ।

শাশুড়ি বলতে থাকে
কন না আফা , কন , কি বাচ্চা হইব । আমাদের আল্লাহ যেইটা দিব , আমরা তাতেই খুশি । আমরা কি ছেলে বা মেয়ে বানাতে পারুম নি । আল্লাহ ই তো দিব । যাই হোক আমাদের কোন সমস্যা নাই ।



এইসব মিষ্টি কথা বলে তারা আসলে ডাক্তারের মন ভুলানোর চেষ্টা করে । তারা ডাক্তার কে নিশ্চিত করতে চায় , মেয়ে হলেও এই বউ টাকে তারা কোন গালমন্দ করবেনা । ।


কিছু রোগী আবার এক কাঠি বাড়া ।

>>আমার বাচ্চা XX নাকি XY
আপা রিপোর্টে XX লিখে দিলে মেয়ে , XY লিখলে ছেলে , ঠিক না আপা ?


কোন কোন ডাক্তার লিখে দেন ।
আমারো ছেলে হলে বলতে সমস্যা নাই । কিন্তু যখনমেয়ে , তখন বাসায় গেলে তার কি অবস্থা করবে এটা নিয়ে ভেবে খারাপ লাগে । মেয়ে হবে এটা বলতে গেলে গলায় আটকে যায় । যদি বলতেই হয় তখন বিরাট ভূমিকা করতে হয় ।

গ্রামের এই অল্প শিক্ষিত মেয়েরা আজ ক্রোমজমের ব্যাপারটা বুঝতে পারে । সবাই কে তাহলে সবকিছু বুঝানো যায় , সায়েন্স কি বলে ।

মেয়ে সামাজিক অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে ছেলে বা মেয়ে তোমার কারণে হয়না । তোমার দুটি ক্রোমোজম থকে দুটোই XX , কিন্তু তোমার স্বামীর দুটি ক্রোমোজম আলাদা ধরনের XY । তোমার স্বামীর X তোমার সাথে মিললে তোমার মেয়ে হবে আর Y মিললে ছেলে হবে ।

এই কথা বুঝতে হবে । শুধু নিজে বুঝলে হবেনা । স্বামীকে বুঝতে হবে শাশুড়িকে বুঝতে হবে । বা যারা সমস্যায় আছে , তাদের ও বোঝাতে হবে ।


রুপা তুমি আর তোমার স্বামী যেটা জান এটা ছড়িয়ে দাও , সবাই জানুক । এইটুকু অনেক বেশী , অসহায় মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ।


>> আপা বিয়ের ৯ বছর পর্যন্ত আমার কোন বাচ্চা হয়নি । আমার শাশুড়ি বলছে আমাকে বিদায় করে দিতে ।
আমার স্বামী বলল , না , আমার যা কর্তব্য আমি তা করব । আমি ডাক্তার দেখাবো ।
তারপর আমার সন্তান এল । ছেলে হোক , মেয়ে হোক আমার কোন আফসোস নাই । আমার স্বামীটা ভাল । শাশুড়ির জ্বালা সহ্য করে পড়ে আছি , স্বামী ভালর গতিকে ।


>> হুম , কি আর বলব । সামাজিক ভাবেই মহিলাদের আসলে অটোইমুন ডিজিজ আছে । এক মহিলা আরেক মহিলাকে দেখতে পারেনা । এর কারণ টা কি ? মা হিসেবে অসাধারন কোন মহিলা , যখনি শাশুড়ি হন , ছেলের জীবনের সাথে জড়ানো মেয়েটাকে দেখতে পারে না । শিক্ষিত , অশিক্ষিত সবজায়গাতেই এই ।


এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মা দিবসের সাথে সাথে বউ মা দিবস পালন করা উচিত । বউ মা দিবসে আধুনিক শাশুড়ি ফেসবুকে পুত্রবধূর প্রশংসা করে নানা রকম স্ট্যাটাস দিবে । আর হোম পেইজ ভরে যাবে অন্য শাশুড়িবউ এর ছবি দিয়ে । শাশুড়ি গোপনে তার জন্য গিফট কিনে এইদিনে বউ কে দিয়ে অবাক করে দিবে ।


গ্রামের শাশুড়ি সেদিন বউ কে খাওয়ানোর জন্য ভালমন্দ রান্না করবে । আহ্লাদ করে বলবে , তুই নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখতে পারছ না ? কেমন শুকাই গেছে চেহারা ।আয়নায় দেখছোছনি ?


হাহাহা , এরকম দিন আসতেও পারে । আশা করতে দোষ কি ।ভালবাসায় ভরে যাক সবার জীবন । ।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×