somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে.....

৩০ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তালা চাবি’র বিষয় একটু কম বুঝতেন। তালা-চাবি, আলমারী, সিন্দুক এসব ব্যাপার গিন্নি আর সরকার বাবুই দেখাশুনা করতেন। জমিদার হলেও কবি মানুষ, তালা-চাবি বুঝে কি কাজ! কিন্তু তিনিই হঠাৎ করে তালা-চাবি নিয়ে একটা গান লিখে ফেললেন। ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে..... না পেয়ে তোমার দেখা একা একা দিন যে আমার কাটে নারে....। গানটার মধ্যে একটু গোলমেলে ব্যাপার আছে। বিশ্বকবি বলে কথা, ভুল হলেও সই। চাবি ভেঙ্গে ফেললে তালা কিভাবে...? গানটি যথারীতি মার্কেটে খুব হিট করল।
এইসময় কোলকাতার এক পোদ্দারের মেয়েকে ডাকাতরা কিডন্যাপ করল। পোদ্দারকন্যার নাম মালতি। ডাকাতারা মালতিকে নিয়ে দুরের এক জঙ্গলে নিজেদের ডেরায় আটকে রাখল। তারা দুজন ভয়ংকর দর্শণ জাঁদরেল ডাকাতকে পাহাড়ায় বসিয়ে পোদ্দারের কাছে মুক্তিপন দাবী করতে গেল। ডেরাটি ছিল মোটা কাঠের তৈরি একটা ঘর। পোদ্দারকন্যা প্রথমে দুই পাহাড়াদার ডাকাতে কাকুতি মিনতি করতে লাগল ছেড়ে দেয়ার জন্য। তারা কি ছেড়ে দেয়ার জন্য তাকে ধরে এনেছে! তারপর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল। এবং অবশেষে গান গাইতে লাগল- ভেঙ্গে মোর ঘড়ের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে? ডাকাতদের কোন ভাবান্তর হল না, তারা বসে বসে গান শুনতে লাগল। ঠিক তখনই ওই ডেরার অদুরে বুনোপথ দিয়ে যাচ্ছিল আর এক পোদ্দারপূত্র। এই রকম পরিস্থিতিতে অর্থাৎ কোন রাজকন্যা যদি বন্দি থাকে তবে কাছাকাছি কোন রাজপূত্র শিকার করতে বা বনে ঘুরতে বা কোন কারন ছাড়াই আশেপাশে বিচরন করাই নিয়ম। পোদ্দারপূত্র বঙ্কু বিহারী’র কানে পোদ্দারকন্যার গানের আকুতি গিয়ে পৌছুল। সে তৎক্ষণাৎ ছুটে এল ডাকাতদের ডেরায়। সে ডাকাতদের মালতিকে ছেড়ে দিতে বলল। ডাকাতরা তাকে মারতে উদ্যত হল। বীর পুরুষ বঙ্কু বিহারী তাদের কুপোকাত করে মাটিতে শুইয়ে দিল। দুজনের শরীরে খুজে সে চাবিটা নিয়ে নিল। তারপর মালতির গানের নির্দেশনা অনুযায়ী চাবি তলোয়ার আঘাতে ভেঙ্গে ফেলল। তারপর ভাঙ্গা অংশ সে তালায় ঢুকাল। কিন্তু চাবি ঘুরাবে কি করে। ভাঙ্গা অংশ সবটাই ভেতরে ঢুকে বসে আছে। ঘটনা বুঝতে পেরে বঙ্কু বেকুব হয়ে গেল। আর ভেতর থেকে মালতি শুধাল, ”ওহে, রাজকুমার তালা খুলিতেছ না কেন? আমাকে তাড়াতাড়ি বাহির কর, ডাকাতরা চলিয়া আসিতে পারে।’ বঙ্কু উত্তর করল, ’সুন্দরী আমি রাজকুমার নই, পোদ্দারকুমার। তালা খুলিতে পারিতেছি না। তোমার কথামত চাবি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি। এবং ভাঙ্গা অংশ পুরাটাই তালার ভেতরে।’
’ওকি! তুমি একি করিয়াছ? আমাকে উদ্ধার করিবার শেষ উপায়টুকো তুমি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ! আমি তো গান গাইতেছিলাম।’ বঙ্কু তরবারি দিয়ে কুপিয়ে তালা ভাংতে ব্যার্থ হল। মালতি খবর দিল যে ভেতরে একখানা মুগুর আছে। কিন্তু মুগুরটি কিভাবে বের করবে? বঙ্কু ডেরা ঘরটির চারদিক পর্যবেক্ষণ করে একটু আশা দেখল। সে কাঠের বেড়া বেয়ে উপড়ে উঠে ফোকরটাকে বড় করে সে ভেতরে ঢুকল। ভেতরে বঙ্কু ঢুকার পর একটি রোমান্টিক দৃশ্যেও অবতারনা হল। আমরা তালা চাবির কারবারি, আমাদের তা দেখে কাজ নেই। মুগুরটি নিয়ে বঙ্কু একই পথে বেরিয়ে এল। তার পর সেটা দিয়ে আঘাত করে তালা ভেঙ্গে মালতিকে বের করল।

এই তালা চাবি সংক্রান্ত ঘটনায় বঙ্কু আর মালতির দুই ক্ষুব্ধ পিতা রবিবাবুর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিল। আর কয়েক দিন পর ওকিলগণ একটি বিয়ের দাওয়াত পেল।
এভাবে তালা-চাবি সংক্রান্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই লাগল। তারপর একদিন কোলকাতার সব তালা চাবি মেরামতকারী এক সাথে দল বেধে জোরাসাকোঁর দিকে গেল। ব্যাপারটা কি?! জানা গেল তারা কবিগুরুকে সংবর্ধণা দিতে যাচ্ছে। কারনটা কি? জানা গেল, জমিদার বাবুর একটি গান লেখার পর তাদের ব্যবসা দিন দিন উত্তর দক্ষিণ উন্নতি করছে। অনেকেই তালা খুলার আগেই চাবি ভেঙ্গে ফেলছে। আর ডাক পড়ছে তাদের। তাই তারা কবিকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবে।
এর কয়েক দিন পর আর একটা মিছিল গেল জোড়াসাকোঁর দিকে। এবার আবার কারা সংবর্ধণা দিতে যাচ্ছে! না, কোন সংবর্ধণা নয়। এরা শহড়ের ছাতা মেরারমতকারী। তারা কবির কাছে একটা দাবী নিয়ে যাচ্ছে। কবি তালা-চাবি মেরামতকারীদেও জন্য গান লিখলেন। কিন্তু তারা কি দোষ করেছে? তাদের জন্যও গান লিখতে হবে, যাতে তাদের ব্যবসারও উন্নতি হয়। কিন্তু তারা ফিরে এল ভগ্ন হৃদয়ে, ভারাক্রান্ত মনে। কবি জানিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য কোন গান লিখতে পারবেন না। এভাবে চললে শহড়ের সব ধরনের ব্যবসায়ীরা তদের জন্য গান লেখার দাবী করবে। তখন ফরমায়েশী গান লিখতে লিখতে জীবন হবে সারা। তাদের ফিরিয়ে দেবার পর কবি নিজেই একটা কক্ষে ঢুকে তালা বন্ধ করে দিয়েছেন।


বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ইহা একটি রম্য রচনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৫০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×