somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাকটিকিটে বিজয়: বিজয় দিবসের ডাকটিকিট

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারা দেশে যুদ্ধ। যখনি কোন রকম একটু জোড়ে কোন শব্দ পাওয়া যায়, ঐ মিলিটারি আইল! ছেলে বুড়ো সবাই গিয়ে লুকায় কোন মাটির ঢিবির আড়াল, কেউ ঘড়ের পেছনে পিড়ের মাটি আকড়ে পড়ে থাকে। ট্রেনিং নিয়ে আসা হায়াত আলী কয়েকদিন পর যুদ্ধে যাবে, খবর শোনর জন্য রেডিও আনতে গিয়ে পাক আর্মির হাতে ধরা পড়ে একটি বুলেটে জীবন দেয়। লুটিয়ে পড়ে উঠানে, পরবর্তী প্রজন্ম পায় একটি স্বাধীন উঠান। এমন যুদ্ধের মাঝে যেমন জীবন থেমে থাকে না, তেমনি থেমে না থাকা কয়েকজন অদম্য মানুষের প্রচেষ্টায় ২৯ শে জুলাই, ১৯৭১ তারিখে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রকাশিত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট। এই আটটি ডাকটিকিট পশ্চিম জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সুইজারল্যান্ড সহ অনেক দেশকে বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসে, বিদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানী ১৩১জন বাঙ্গালীর ১২২ জন পাকিস্তানের আনুগত্য অস্বীকার করে বাংলাদেশ পক্ষে চলে আসে। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চার বার বিজয় দিবসের ডাকটিকিট প্রাকাশিত হয়, ১৯৭২, ১৯৮২, ১৯৯৬ ও সর্বশেষ ২০০১ সালে। আর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে অনেক বার। আজ আপনাদের সামনে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ডাকটিকিটগুলো তুলে ধরব।
১৯৭২:
১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের প্রথম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ২০, ৬০, ও ৭৫ পয়সা মূল্যের একই নকশায় তিনটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়।

তিন রঙয়ে প্রকাশিত এই ডাকটিকিটে আতশবাজি ও শান্তির প্রতীক তিনটি পায়রার ছবি স্থান পায়।
ইস্যুর তারিখ: ১৬.১২.১৯৭২;
ডাকটিকিটের আকার: ৩০x৪২ মি.মি.; ছাপার প্রক্রিয়া: লিথোগ্রাফী
নাকশাকার: কে.জি. মুস্তাফা; মুদ্রাকর: ব্রাডবেরী উইলকিনসন এন্ড কোং, বৃটেন।
১৯৮২:
১৯৮২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ শিরোনামে প্রতিটি ৫০ পয়সা মূল্যের সাতটি ডাকটিকিট। সাতটি ডাকটিকিটে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার ছবি স্থান পায়। একই সাথে জানা যায় তাদের জন্মসাল।

নকশাকার: আহমেদ এফ. করিম;
ডাকটিকিটের আকার: ৪০x২৮.৫ মি.মি.; রং: মাল্টিকালার
ছাপার প্রক্রিয়া: অফসেট; মুদ্রাকর: উবারেটর পৃন্টার্স, অস্টৃয়া।
১৯৮৯ সালে উদ্বোধন করা হয় ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটি পৃন্টিং প্রেস’, যা গাজীপুরে অবস্থিত। এর পর হতে বাংলাদেশের সব ডাকটিকিট সেখানেই ছাপা হয়।
১৯৯৬:
১৬৯৬ সালের বিজয় দিবসে ‘বিজয় দিবসের রজত জয়ন্তী’ শিরোনামে ৪ টাকা ও ৬ টাকা মূল্যের দুটি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। চার টাকার ডাকটিকিটটির নকশায় জনগনের বিজয় উল্লাস ও ছয় টাকার ডাকটিকিটটিতে অপরাজেয় বাংলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় উল্লাসের ছবি স্থান পায়।

নকশাকার: মোহম্মদ শামসুজ্জোহা;
ডাকটিকিটের আকার: ৩২x৪২ মি.মি.; রং: মাল্টিকালার
ছাপার প্রক্রিয়া: অফসেট; মুদ্রাকর: দি সিকিউরিটি পৃন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ), গাজীপুর।
২০০১:
২০০১ সালের বিজয় দিবসে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ৩০ বছর’ শিরোনামে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের চারটি অনন্যসাধারন ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। অনন্যসাধারন বলছি এই কারনে যে ডাকটিকিটের নকশায় বীরউত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক ও বীরশ্রেষ্ঠ পদক-এর ছবি স্থান পায়। আমরা সাবাই এই পদকগুলোর নাম শুনেছি, কিন্তু দেখার সুযোগ হয় পাই নি। কেউ কেউ হয়তো অন্য কোথাও এগুলোর ছবি দেখে থাকতে পারেন, তবে সে সুযোগও খুব কম। এই চারটি ডাকটিকিট আমাদের পদকগুলো দেখার ও পরিচিত হবার সুযোগ করে দেয়।

নকশাকার: মাহবুব আকন্দ
ডাকটিকিটের আকার: ৩২x৪২ মি.মি.; রং: মাল্টিকালার
ছাপার প্রক্রিয়া: অফসেট; মুদ্রাকর: দি সিকিউরিটি পৃন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ), গাজীপুর।
আজ বিভিন্ন কারনে ডাকটিকিটের প্রসার কমে যাচ্ছে। কিন্তু এর আবেদন কমে যায় নি। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকেই জানার সুযোগ পাই। আমাদের এই বিজয় দিবসের, স্বাধীনতা দিবসের ও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ডাকটিকিটগুলো ডাকটিকিট সংগ্রাহক-অসংগ্রাহক নির্বিশেষে সকলের কাছেই সমান আদৃত।

ছবি সূত্র: http://www.bdstamps.com
তথ্যসূত্র: ১. Postage Stamps of Bangladesh, Bangladesh Post Office
২. মুক্তিযুদ্ধের ডাক ব্যবস্থা ও ডাকটিকেটে মুক্তিযুদ্ধ, এ.টি.এম. আনোয়ারুল কাদির, যায়যায়দিন, ২৩.০৩.২০০৪
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:২২
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×