somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুখ্যাত আলবাদর ঘাতক নিজামী ও তথাকথিত শান্তি কমিটি !!!!

১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার নায়ক লে. জে. নিয়াজীর গণসংযোগ অফিসার ছিলেন কর্নেল সিদ্দিক সালেক। নিয়াজীর গণসংযোগ অফিসার থাকার সুবাদে কর্নেল সিদ্দিক সালেকের পক্ষে সামরিক জান্তা এবং এদেশীয় স্বাধীনতাবিরোধী গাদ্দারের চক্রান্ত ও কর্মকা- খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর স্মৃতিচারণ করে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার গ্রন্থটির নাম ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’। এই বইতে তিনি তথাকথিত শান্তি কমিটির গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- ‘বয়স্ক ও নামীদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠিত হলো, আর যারা তরুণ ও কর্মক্ষম দেহের অধিকারী তাদের রাজাকার বাহিনীতে রিক্রুট হলো’।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশীদের উপর বর্বর হত্যাকা- চালানোর জন্য সারা বিশ্বে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন নিন্দার ঝড় বইছিল, ঠিক তখনই নিজামীর গুরু গোআযম ১২ জন বিশ্বাসঘাতক সাথে নিয়ে খুনি লে. জে. টিক্কা খানের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকের তারিখটি ছিল ৪এপ্রিল, ১৯৭১ সাল। পরদিন ভোরে সব জাতীয় দৈনিকে বৈঠকের ছবিসহ সংবাদটি গুরুত্ব সহকারে পরিবেশিত হয়। এই বৈঠকে গোআযমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দমনের জন্য টিক্কা খানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
৬ এপ্রিল গোআযম পুনরায় আরেক দল গাদ্দার নিয়ে টিক্কা খানের সহিত দেখা করেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কিভাবে বানচাল করা যায় সে বিষয়ে টিক্কা খানকে শলা পরামর্শ দেন। গোআযামের সাথে শলা পরামর্শের ভিত্তিতেই ৯ এপ্রিল টিক্কা খান ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি কমিটি ঘোষণা করেন। ঘোষণাটি টিক্কা খানের হলেও এর মূল রূপকার ছিলেন গোআযম স্বয়ং। যেহেতু শান্তি কমিটির রূপকার ছিলেন নিজামীর গুরু, তাই শান্তি কমিটির প্রতিটি কর্মসূচি সফল করার জন্য নিজামীর উপর দায়িত্ব এসে পড়ে।
তথাকথিত শান্তি কমিটির প্রতিটি সভা, সমাবেশ ও মিছিল সফল করার জন্য নিজামী তার ছাত্র সংঘের কর্মীদের নিয়ে উপস্থিত থাকতেন। তথাকথিত শান্তি কমিটির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি।
তথাকথিত শান্তি কমিটি গঠিত হবার পর গোআযমরা ১২ এপ্রিল যোহরের নামাযের পর বায়তুল মোকাররম থেকে প্রথম মিছিল বের করেন।
নিজামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের নিয়ে মিছিলে যোগদান করেন এবং মিছিলের পুরোভাগে থেকে গোআযমের সাথে নেতৃত্ব দেন। নিজামীর ছাত্র সংঘের কর্মীরা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান ও পাক সামরিক জান্তা ইয়াইয়ার বৃহৎ ছবি মিছিলে নিয়ে আসে। বাংলাদেশী গণহত্যার নায়ক ইয়াহিয়ার ছবি নিয়ে নিজামীরা সেদিন মিছিলে নির্লজ্জভাবে নর্তন কুর্দন করেছিল। মিছিলের জমায়েতে লোক বাড়ানোর জন্য গোআযম ও নিজামীরা বিহারী মোহাজেরদেরকে মিছিলে শরিক করে।
নিজামীর চ্যালা চামু-া ও বিহারীরা মিছিলে ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে উৎসবে মেতে উঠে। ইসলামে জায়িয না হওয়া সত্ত্বেও নামাযের পর ছবি ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার এটাই প্রমাণ করে যে, ইসলাম ছিল নিজামীদের মুখোশ মাত্র।
নিজামীর এক অনুসারী পাকিস্তানের একটি বিরাট পতাকা নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে উপস্থিত হয়েছিল। ধর্মীয় শ্লোগানের আড়ালে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপথগামী করতে চেয়েছিল। তাই তারা উর্দু এবং বাংলায় ধর্মের নামে শ্লোগান দিয়েছিল। সেদিন মিছিলের শ্লোগান ছিল, ‘পাকিস্তানের উৎস কি- লা ইলাহা ইল্লাহ, কায়েদে আযম জিন্দাবাদ, আল্লাহ তায়ালার মেহেরবান ধ্বংস করবে হিন্দুস্তান, ব্রাহ্মণ্যবাদ সাম্রাজ্যবাদ মুর্দাবাদ, ওয়াতনকে গাদ্দারোসে হুঁশিয়ার ইত্যাদি’।
মিছিলটি শেষ হলে গোআযম ও নিজামীরা পাকিস্তান রক্ষার জন্য লম্বা মোনাজাত করেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন নিজামীর গুরু গোআযম। পরদিন গোআযমের মোনাজাতের খবরটি ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পরিবেশন করতে যেয়ে লেখে- গোলাম আযম পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সত্যিকারের মুসলিম সৈনিক হিসাবে দেশ রক্ষার যোগ্যতা অর্জনের জন্য আল্লাহর দরগাতে দোয়া করেন। সত্যিকারের মোসলমান ও পাকিস্তানি হিসেবে বেঁচে থাকার ও পাকিস্তানকে চিরদিন ইসলামের আবাসভূমি হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি সর্বশক্তিমানের নিকট দোয়া করেন।
মোনাজাত শেষ হলে নিজামীর লোকজন ‘আজিমপুর কলোনী, শান্তিনগর, শাখারী বাজার প্রভৃতি স্থান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়, বেশ কিছু মুক্তিকামী লোককে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জানায়, নিজামীর ছাত্র সংঘের কর্মীরা এই হামলা সংঘটিত করেছিল। এভাবেই তথাকথিত শান্তি কমিটি এ দেশের মুক্তিকামী মানুষদের নিধনের কাজ শুরু করেছিল।
১৯৭১ সালে ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের ‘আযাদি দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি আয়োজিত সভায় গোআযমের সাথে উপস্থিত ছিলেন নিজামী। এ সভা সফল করার জন্য গোআযম নিজামীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিজামীও গুরুর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। সেদিন পাক সেনাদের পাশাপাশি গোআযম সভাটির নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছিলেন নিজামীকে। সেদিনও সভাটির মূল জমায়েতের দায়িত্ব ছিল নিজামীর উপর। কিন্তু এসব সভায় সিল মারা দু’একজন দালাল ছাড়া কোনো লোক উপস্থিত করা যেতো না। তাই নিজামী সেদিনের সভা সফল করার জন্য মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থেকে বাস ভর্তি করে বিহারীদের উপস্থিত করেছিলেন। এই সভায় ভাষণ দানকালে গোআযম বলেন, আল্লাহ না করুক, যদি পাকিস্তান না থাকে তাহলে বাঙালি মুসলমানদের অপমানে মৃত্যূবরণ করতে হবে। এই সভায় তিনি পাকিস্তানের দুশমনদের মহল্লায় মহল্লায় তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাদের অস্তিত্ব বিলোপ করার জন্য দেশপ্রেমিক নাগরিকদের কথিত শান্তি কমিটির সাথে সহায়তা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।’
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস গোআযমের শিষ্য নিজামী তার সহচরদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করার’ কাজটি নিষ্ঠার সাথে করেছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ১১:৩৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×