somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষ্ঠুর অভিশাপ, বিধ্বংসী পরিণতি

১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভিশপ্ত নীল হীরাঃ



জুলাই ২০১২, সিরকিট- থাইল্যান্ড এর প্রাণপ্রিয় রাণী হৃদরোগে আক্রান্ত হন।এরপর থেকে তাঁকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।এটি মোটেও কোন সন্দেহের উদ্রেক করতো না যদি না থাইল্যান্ড জুড়ে একটি জনশ্রুতি প্রচলিত থাকতো যেটি গড়ে ওঠে বেশ কিছু বছর আগে সংঘটিত হওয়া এক ভয়ংকর গয়নাচুরি কে কেন্দ্র করে।
সাল ১৯৮৯, সৌদি পরিবারের প্রসাদ।একজন থাই দ্বাররক্ষী সৌদি রাজুপত্রের কক্ষ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারের গয়না চুরি করে, যা সে একটি ভ্যাকুয়াম ক্লীনারের মধ্যে ঢুকিয়ে থাইল্যান্ডে পাচার করতে সক্ষম হয়।সে গয়নার মধ্যে ছিল রাজপুত্রের সবচেয়ে প্রিয় ৫০ ক্যারেটের একটি হীরা - ‘ব্লু ডায়মন্ড’।
রাজ পরিবারের আদেশে থাই পুলিশ কিছুদিনের মধ্যেই সে রক্ষীকে গ্রেফতার করে এবং একটি চোরাই মার্কেট থেকে কিছু গয়না উদ্ধার করতে সক্ষম হয়, কিন্তু এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিল নকল।কাঁটা ঘাযে নুনের ছিটা লাগলো তখন যখন পুলিশ জানালো লুট করা গয়নাগুলোর মধ্যে নীল হীরাটি ছিলই না! সৌদি পরিবার অত্যন্ত ক্রুব্ধ হয়।
যে হীরকখন্ডটির কোন অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি, লোকমুখে প্রচলিত ছিলে সেটি অভিশপ্ত।হীরকখন্ডটির উদ্ধারকাজে নিযুক্ত ৩ জন গোয়েন্দা ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে একইসাথে খুন হন।থাই পুলিশ দাবী করে এ হত্যাকান্ড কোনভাবেই ব্লু ডায়মন্ডের সাথে সম্পর্কিত না, কিন্তু রাজ পরিবার তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়।
সৌদীদের সন্দেহ আরো জোরদার হয় যখন একটি স্থানীয় পত্রিকা রিপোর্ট করে, থাইল্যান্ডের সম্ভ্রান্ত পরিবারের স্ত্রীলোকদের গলায় পরিহিত গয়না রাজপরিবারের চুরি যাওয়া গয়নার সাথে হুবহু মিল।
কাকতালীয়ভাবে এর কিছুদিন পরেই রাণী সিরকিটকে এমন একটি হীরার অলংকার পরে জনসম্মুখে আসতে দেখা যায় যেটির সাথে রাজকুমার ফয়সাল এর হারিয়ে যাওয়া ব্লু ডায়মন্ড এর সামঞ্জস্য ছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, সত্যিকারের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া না হলে হীরক খন্ডটি এরকম আরো ক্ষতি করতে থাকবে।

টামেরলেইন এর ক্রোধঃ



১৯৪১ সালে সোভিয়েত নৃবিজ্ঞানীদের একটি দল রাষ্ট্রীয় অভিযানে উজবেকিস্তান যান।তাদের মিশন ছিল টামেরলেইন এর সমাধি খুঁজে বের করে এর ভেতরের মৃতদেহটা পরীক্ষা করা এবং তা সোভিয়েত ইউনিয়ানে নিয়ে আসা - যা স্বয়ং স্তালিন অনুমোদন করেন।টামেরলেইন ছিল ১৪০০ শতকের একজন কুখ্যাত সেনাপতি, যে উজবেকদের কাছে জাতীয় বীর হিসেবে সমাদৃত।সোভিয়েতদের কবর খোড়নজজ্ঞে উজবেকরা বাঁধা দিতে চেষ্টা করে।তারা জানায়, যদি তাদের সেনাপতির ঘুমে বিঘ্ন ঘটে তাহলে তৃতীয় দিনেই নেমে আসবে ধ্বংসের কালো ছায়া।মিখাইল গেরাসিমভ, যিনি এই উদ্ধারকার্যের প্রধান ছিলেন তিনি উজবেকদের এই কুসংস্কার অগ্রাহ্য করে নিজেদের অভিযান চালাতে থাকেন।জুন ১৯, ১৯৪১ এ তাঁরা টামেরলেইন এর কবর খুঁজে পান।
অনেকের কাছে অত্যাচারী সেনাপতির মৃতদেহ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত সাহসী হলেও অধিকাংশই মনে করেন এটি একটি ভয়ংকর বোকামী ছিল।টামেরলেইন এর দেহ যে কাঠের বাক্সের মধ্যে শায়িত ছিল তার গায়ে লিপি করে লেখা-
“যখন আমি মৃত্যু থেকে জেগে উঠবো, কাঁপবে এই পৃথিবী!”
এর তিনদিন পরেই জার্মান বাহিনী অপারেশান বারবোসা নিক্ষেপ করে, সোভিয়েত ইউনিয়ান কে অকস্মাৎ আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয়।কো-ইনসিডেন্স?হয়তোবা।পৃথিবী কিন্তু ঠিকই কেঁপে উঠেছিলো।
অনেকেই বিশ্বাস করে যে, টামেরলেইন এর ক্ষোভের ফলেই স্তালিনকে এত বিশাল আঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছে।বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে স্তালিনগ্রাডে সোভিয়েত ইউনিয়ান-জার্মানীর যুদ্ধের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ান জয়প্রাপ্ত হয়।এই যুদ্ধের ঠিক আগেই স্তালিন নির্দেশ দেয় টামেরলেইন এর মরদেহ যাতে আগের জায়গায় ইসলামিক রীতি অনুসারে দাফন করা হয়।
টামেরলেইন এর অভিশাপ পরিশেষে যদিও বা উঠে যায় কিন্তু তার আগে সোভিয়েত ইউনিয়ান কে অনেক বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।জার্মানীর অকস্মাৎ সেই আঘাতে মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫ লক্ষ!

হাওয়াইয়ান দেবীর শাপঃ



“তুমি যদি পেলে কে অসম্মান করো, সে তোমাকে খুন করবে”- সাবধান করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই এর প্রফেসার কামে’এলেইহিওয়া।
টিমোথি মারে হয়তোবা “হনুলুলু তে আসার আগে আমি যদি জানতাম” আফসোস করতেই পারেন।মারে একদিন ঠিক করেন তিনি হাওয়াই ভলকানো ন্যাশনাল পার্ক দেখতে যাবেন।মুগ্ধকর কালো বালি দেখে তিনি যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে তিনি সেখান থেকে কিছু একটি বোতলে ঢুকিয়ে সাথে করে বাসায় নিয়ে যান।এরপরেই তাঁর সাথে ঘটতে থাকে কিছু অপ্রীতিকর ব্যাপার।তাঁর পাঁচ বছরের গার্লফ্রেন্ড যাকে তিনি শীঘ্রই প্রপোজ করার কথা ভাবছিলেন হঠাৎ করে ছেড়ে চলে যায়, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে মারেকে এফবিআই এর কাছে গ্রেপ্তার হতে হয় (যা খুব কম সময়ই হয়ে থাকে) এবং একদিন তার পোষা কুকুরটি মারা যায়।কিন্তু অভিশাপটি সরাসরি মারেকে এখনো আঘাত করেনি।
হাওয়াইওয়ান উপকথা মতে, কেউ যদি আগ্নেয়গিরিটির কাছ থেকে কোন কিছু নিজ সাথে করে নেয় তা দেবী পেলেকে খুব ক্রোধান্বিত করে।কেউ যদি অসাবধানতাবশতও এই কাজ করে তবুও পেলে প্রতিশোধ নিবেনই।
হাওয়াইন ভলকানো ন্যাশনাল পার্ক প্রতিদিনই কিছু প্যাকেট পায় যাতে আগ্নেয়গিরি অঞ্চলের কিছু না কিছু নিদর্শন রাখা থাকে, কয়েকটার ভেতরে লিখা থাকে দেবী পেলেকে উদ্দেশ্য করে লিখা একটি ক্ষমাপ্রার্থনামূলক চিঠি- যাতে তিনি তার অভিশাপ থেকে হতভাগীদের নিস্তার দেন।

মৃত ব্যক্তির কেদারাঃ



থমাস বাসবির কুখ্যাত চেয়ার এর ঠাঁই হয়েছে ইংল্যান্ডের দ্যা থার্স্ক মিউজিয়াম এ।মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষে চেয়ারটিকে মাটি থেকে বেশ কিছুটা উপরে দেয়ালের সাথে আঁটকিযে রেখেছে- কেউ যাতে বসে এর মূল্য কমায় সেজন্যে না, যাতে তারা এখানে বসে অভিশাপের শিকার না হয় যা শুরু হয়েছিল ১৮শতকের দিকে।কথিত আছে যেই বাসবির এ চেয়ারে বসবে তাকেই কিছু সময় পর মুখোমুখি হতে হবে মৃত্যুর।
নর্থ ইয়র্কশায়ার, সাল ১৭০২।শহরের এক পাড় মাতাল থমাস বাসবি নানা ছল-চাতুরী করে সুন্দরী এলিজাবেথ অটি কে বিয়ে করে।অটির পিতা এই বিয়ের প্রবল বিরোধী ছিলেন।
একদিন বাসায় এসে বাসবি দেখে শ্বশুড়মশাই তার প্রিয় চেয়ারে বসে আছে।তিনি বলেন তিনি তার মেয়েকে নিয়ে যেতে এসেছেন।এ কথা শুনে বাসবির মাথায় রক্ত চড়ে যায় এবং সে ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে শ্বশুড়কে আঘাত করে তাকে মেরে ফেলে মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলে।কিছুদিন বাদে তদন্তের পরে বাসবি এ হত্যাকান্ডের জন্য মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত হয়।যখন তাকে ফাঁসি দেয়ার জন্য কাষ্ঠের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সে চীৎকার করে বলে যেই তার প্রিয় চেয়ারটিতে বসে তার পরিণতি হবে তার শ্বশুড়ের মতো, তাকে মরতে হবে। বেশ অনেকজনই এই ঘটনার সাক্ষী ছিল।
যে বাসাটিতে বাসবি থাকতো পরে সেটিকে একটি ছোট্ট হোটেল হিসেবে গড়া হয়।অটি এর নাম দেয় বাসবি স্টুপ ইনন।বাসবির প্রিয় চেয়ারটি এই ইনন এ রাখা হয়।
দাবি করা হয় গত ৩০০ বছরে এই চেয়ারটি অসংখ্য জীবণ কেড়ে নিয়েছে।
১৯৬৮ সালে টনি আর্ণশ এই হোটেলটি কিনে নেয়।আর্ণশ বাসবির দেয়া অভিশাপটিকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়।সে বলে পুরা ব্যাপারটাই একটি কো-ইনসিডেন্স।কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সে এর সত্যতা পরীলক্ষিত করতে থাকে।
একদিন সকালে সে দেখে দুইজন এয়ারম্যান চেয়ারটায বসা নিয়ে বাজি ধরেছে. দুইজনই চেয়ারটায় বসে।সেদিন রাতে একটা কার অ্যাক্সিডেন্ট এ দুইজনেরই মৃত্যু হয়!
কিছুদিন পর বাসবি ইনন এ একদল শ্রমিক আসে।তাদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ যে জন তাকে বাকিরা চ্যালেঞ্জ করে চেয়ারটায় বসার জন্য।সে সাহসী হয়ে চেয়ারটায় গিয়ে বসে।ওইদিনই ইনন থেকে খাওয়া শেষে কাজ এ যাওয়ার পর সে ছাঁদ থেকে পড়ে যায়, কংক্রীট বেছানো পথে পড়ে তার খুলি পুরোপুরি থেঁতলে যায়!
এরপর বার্ণশ আর চেয়ারটি নিজের কাছে রাখতে সাহস করেনি।সে থার্স্ক মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে অভিশপ্ত চেয়ারটি থেকে তাকে নিস্তার দিয়ে নিয়ে যেতে, কিন্তু সে বলে দেয় কখনো যাতে এ চেয়ারে কাউকে বসতে দেয়া না হয়।
প্রায় ৩০ বছর ধরে চেয়ারটি যাদুঘরে রক্ষিত আছে, আর কেউ ওখানে বসার সুযোগ পায়নি।সাহস ও দেখায় নি।

সোর্স: লিস্টভার্স
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:১০
৪২টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×