somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নটর ডেম কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক জনাব বিদ্যুৎ কুমার ভদ্র স্যারের কিছু ডায়লগ ( পর্ব-১)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনাব বিদ্যুৎ কুমার ভদ্র, স্বনামধন্য নটর ডেম কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক । তাঁর ছাত্রদের তিনি "বন্ধু" বলে সম্বোধন করেন । সব সময় হাসি-খুশি থাকেন । ক্লাসে অতি হাস্য রসের সঙ্গে তিনি ছাত্রদের পড়ান । আমিও তার হাজারো ছাত্রের একজন। তিনি ক্লাসে আমাদের যেসব ডায়লগ বলতেন সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু ডায়লগ তুলে ধরলামঃ-

"বন্ধুগণ, বাস্তবে ফিরে আসো ।"

"আরে ও বন্ধু ঘুমায়ো না,........ তুমি শুনতে কি পাও?"

"আরে এই তুমি এত কথা বল কেন? তুমি কোন স্কুল থেকে আসছ? পাছায় লাথি মেরে বের করে দেব ।"

"তোমরা যে সব গান শোন, সব ধুম-ধারাক্কা ।"

"দেও, আকাশ- পাতাল রুট দেও ওরফে মোটাতাজা রুট ।"

"এই তুমি অংক ক্লাসে প্রাকটিকাল কর কেন? তোমাকে তোর জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা যাবে না, প্রাকটিকাল শিট ধরে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেব ।"

"আমি বিশ্বাস করি, আমার জনগণ ১১-- ২০ পর্যন্ত সব অংক পারবে ।"

"আছে কোন পাবলিক যে এই অংকটা বুঝে নাই?? থাকলে জায়গায় দাঁড়িয়ে যাবে..................... হু-ম, কোথাও কেউ নেই,... তারমানে আমি মারাত্মক পড়াচ্ছি । এইজানুয়রি মাস থেকেই টের পাবে যে বিদ্যুৎ ভালো পড়াত ।'

"এই তো কিছুদিন পরেই যখন তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে তখন তোমরা লিফলেট বিলি করবে যে থাপড়াইতে চাই ওরফে পড়াইতে চাই । তখন কোন অংকে আটকে গেলে আমাকে ফোন করবে । .... হ্যাঁ, ফ্রি সার্ভিস ।"

"আরে, জিরোও তো একটা নম্বর রে বাপু । যে পরীক্ষা দেয় না সে শূন্যও তো পাবে না । এজন্য পরীক্ষা দেবা আর বীরের মতো শূন্য পাবা । মনে রেখ, পরাজয়ে ডরে না বীর । বুঝেছ কথাটা?"

"আমি প্রথম দিন থেকেই দেখতিসি, তুমি অনেক অবান্তর প্রশ্ন কর । আর যদি করেছ তবে তোমাকে পিটিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব । বু-ঝে-ছ?"

"শোন বন্ধুগণ, আমার ক্লাসে আসতে কয়েক মিনিট লেট হতেই পারে । এজন্য তোমরা ক্লাসের বাইরে হই-হল্লা করো কেন???আমি অন্য একটা গ্রুপে ক্লাস নিয়ে আসি, তারপর আবার মাঝে মাঝে প্রকৃতির ডাকেও তো সাড়া দিতে যেতে হয় । আমি তো আর দেবতা না যে আমাকে প্রকৃতি ডাক দেবে না । এজন্য আমার আসতে যদি কয়েক মিনিট লেট হয় তবে তোমরা ক্লাসেই বসে থাকবে । বুঝেছতো কথাটা??"

"এই যে দেখ, OA হল একটা ভেক্টর । মনে কর, এই OA বরাবর একটা বল আসতিছে । আর আমাদের সাকিব ভাই OB বরাবর বলটাকে পিটা দিছে । এখন OB হল আরেকটা ভেক্টর । এখন সাকিব ভাই যেদিকে বলটা পিটা দিল বলটা সেদিকে না গিয়ে OC বরাবর চলে গেল । এই OC ই হল OA এবং OB এর লদ্ধি । বুঝেছতো কথাটা??"

"এই ছেলে, তুমি এত কথা বল কেন?? তুমি কোন স্কুল থেকে আসছ?? এমন পদাঘাত করব যে, যেখান থেকে এসেছ সেখানেই গিয়ে পড়বে । বু-ঝে-ছ??

"তোমরা হয়ত এখন কেউ বিড়ি-সিগারেট খাও না । কিন্তু কিছুদিন পর দেখা যাবে আরামবাগের বিড়ি-সিগারেটওয়ালারা তোমাদের উপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে । বুঝেছতো কথাটা??"

"শোন, ক্লাসে তোমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলো না । যা কথা বলার আমার সাথে বলো । আমি কিন্তু তোমাদের সব কথা শুনি । বন্ধুদের সাথে অবশ্যই কথা বলবে তবে সেটা ক্লাসে না । বন্ধুদের সাথে তোমরা পড়া নিয়ে আলোচনা করবে, সিনেমা নিয়ে আলোচনা করবে, খেলা নিয়ে আলোচনা করবে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবে, বান্ধবীদের বিষয় নিয়ে আলোচনা করো । তবে সেটা ক্লাসের বাইরে । বুঝেছতো কথাটা???"

"সিনেমা দেখ তো তোমরা??? হুম... দেখবে,.. সিনেমা দেখবে ।"

"এই যে বন্ধু, তোমার চুল ছোট করবে । তোমার যদি শখ থাকে তো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর যাতে তোমাকে মেয়ে বানিয়ে দেয় । আর এতে করে তুমি চুলও বড় রাখতে পারবে আর হাতে চুড়ি-বালাও পরতে পারবে ।"

"এই ছেলে, তুমি ওর কাধে হাত দিয়ে আছ কেন??? ও কি তোমার বান্ধবী নাকি??"

''শোন, সারা জীবন তো আর তোমাদের বাবা-মা তোমাদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারবেন না, তাই এই তো কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তোমরা অলরাউন্ডার মাষ্টার হিসেবে টিউশনি শুরু করবে । তখন যদি তোমার ছাত্র তোমাকে বলে যে -- স্যার, এই অংকটা করে দেন -- আর তখন যদি তুমি ঐ অংকটা না পারো তখন কি করবে??????????????????? ............................................................................................................................................................................................................................................... শোন, তখন তোমার ছাত্রকে কষে একটা ধমক দেবে, বলবে, এই সহজ অংকটা পারো না!!!!!! আগামীকাল করে দেব । ছাত্রের বাসা থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে ফোন করবে । আমি তোমাকে বলে দেব । তারপর তোমার ছাত্রকে তুমি সুন্দর করে অংকটা করে দেবে । বু-ঝে-ছ???????????????? তোমাদের জন্য এটা আমার ফ্রি সার্ভিস ।"

"ছেলেরা ছোট বেলায় মার সাথে লুডু খেলে আর বড় হয়ে বান্ধবীর সাথে লুডু খেলে..."

"শোন, ছেলেদের ভবিষ্যৎ খুব দ্রুত বদলায় । ভালোমত পড়াশোনা কর । তুমি যদি প্রতিষ্ঠিত হতে পার তবে তোমার গর্ব হবে, তোমার বাবা-মায়ের গর্ব হবে, আমাদেরও গর্ব হবে । তুমি যখন বিয়ে করতে যাবে, তখন যাকে তুমি বিয়ে করতে চাও সে যদি দেখে যে তোমার বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, তুমি প্রতিষ্ঠিত তখনই সেই মেয়ে তোমার গলা জড়িয়ে ধরবে । আর যদি এমন হয় যে তোমার বউ প্রতিষ্ঠিত আর তুমি কিছুই না তখন তোমার ভাত রাঁধা ছাড়া কোন পথ থাকবে না । এজন্য বলি একটু পড়াশোনা করো ।"

"বন্ধুগণ, ঘন্টা পড়ার আর দুই মিনিট বাকি আছে । অংকটা করতে থাকি । যদি অংক শেষ হওয়ার আগেই ঘন্টা পড়ে যায়, তবে কোন চিন্তা করো না । তোমাদের বসিয়ে রাখব না । ঘন্টা পড়বে আর আমি ডাস্টার ফেলে দিয়ে চলে যাব ।"

"শোন, আমি সহজ অংকগুলো করে দিচ্ছি, কঠিনগুলো তোমরা করবে । শোন, কমান্ডার নিজে কিন্তু যুদ্ধ করে না । আমি তোমাদের ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দেব, যুদ্ধ তোমরা করবে । বু-ঝে-ছ? " ( এটা স্যারের নিছক ফাজলামি)

"এই তো অংক শেষ । এখানেই ডট কম । বু-ঝে-ছ??"

" শোন, মাল্টিমিডিয়া ফোন কলেজে আনা নিষিদ্ধ হলেও তোমরা অনেকে দু-তিনটে করে নিয়ে আস । আমি যদি চেক করি তবে তোমাকে সহ তোমার আসে পাশে তোমার যত বন্ধু আছে সবাইকে চেক করব । কোন কিছুই বাদ দেব না । তোমার মোজাও চেক করব ।.................. আর দরকার হলে ওই জায়গাও চেক করা হবে । বু-ঝে-ছ??"

"আমি জানি তোমাদের অনেকের কুইজের নম্বর মূলবিন্দু (0,0) দিয়ে চলে যাবে ।"

"তো, বন্ধুগণ, বাস্তবে ফিরে আসো ।"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৫
২৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×