somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউশনি বৃত্তান্ত (পর্ব-১)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোড়ার কথা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পর একটা গান লিখেছিলাম, যাকে লোকে বলে জীবনমুখী গান। তবে আমার পকেট তখন মরণমুখী। তাই টিউশনির খোজে মিরপুরের একটা বিশাল এলাকা পোস্টারে ছেয়ে ফেললাম। গানটাও তার কয়দিন পরের ই লেখা। গানটা নিন্মরুপ:

পড়াইতে চাই পড়াইতে চাই
সাইনবোর্ডে ঝুলছে,
দিনের শুরুয় ভাবি বড়ই
কপাল আজ বুঝি খুলছে।
দিন গড়িয়ে বিকেল এলে
দুয়েকটি কল কোনমতে এলে
আশা নিয়ে কল ধরি,
প্লে গ্রুপ থেকে দশম শ্রেণী
কথা থামিয়ে বলে কে জানি
রং নাম্বার সরি।।

গত মাসটা মিল চলেছে
কিছুটা ধারের টাকায়,
মেসে সিট ভাড়া হয়নি মেটানো
চেনা বাড়ীওলা থাকায়,
এই মাসে না পেলে টিউশনি
পাড়ী দিতে হবে খেয়ে হাওয়া পানি
আশ্রয় হবে পার্কের ছায়া
ফুটপাত হবে বাড়ী।।

বাড়ী থেকে মা চিঠি লিখেছে
ওষুধের টাকা নাই,
বাবা যিনি সে তো আরামে নিয়েছেন
কবরের দেশে ঠাই,
ছোট ভাই এবার মেট্রিক দেবে
ফর্মফিলাপের টাকা দিতে হবে,
জীবনের বোঝা আর কতদিন
বইবো এমন করি।।

গানটা পুরোটা আমার জীবনে সত্য না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের অধিকাংশ ছেলেদের এ এক আদর্শ প্রতিচ্ছবি বলা চলে। যে টিউশনির টেবিলে বসে প্রেমিকার মধুর ক্ষুদে বার্তা পড়েছি, আবার সেই টেবিলে বসেই মায়ের ক্যান্সারের প্যাথলজি রিপোর্ট পড়েছি। তাই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে এতপথ পাড়ি দিয়ে আজ সেই দিনগুলোকেই তবু বড় অমলিন মনে হয়। এত ভাববাদী কথা ছেড়ে এবার দিনগুলোতে একটু খুচিয়ে দেখি জীবনানরন্দের সেই কথাকে ভুল প্রমান করা যায় কিনা, ‌‌কে হায় হৃদয় খুড়িয়া বেদনা জাগাতে ভালবাসে। আমি ভালবাসি, বড় বেশী ভালবাসি।

অংক তো মিলেনা
জীবনের প্রথম টিউশনি। পড়াতে হবে নবম ক্লাসের উচ্চতর গণিত। একমূহুর্তের নোটিশ এ মালিবাগ। গণিত তখন আমার কাছে মান্না দে র প্রিয়া, কতদিন দেখিনি তোমায়..... গণিতের মুখখানিও মনে পড়ে না। ভাবলাম আজ উপদেশ দিয়েই ইতি টানব, তারপর দুইদিন প্রিপারেশন নেব। ব্যাপারস না। ক্লিন সেভ করে বন্ধু পরিবহন। নিজেকে বিয়ের পাত্র মনে হচ্ছিল। শুটিংয়ের আগ মুহুর্তের নায়কদের মত বারবার চুল ঠিক করতে করতে পৌছালাম। চদ্দৌ গোষ্টির সব ব্রত্তান্ত আন্টিকে সাপ্লাই দিয়ে টেবিলে রিজিকের টেবিলে বসলাম। এক বাংলা সিনেমার আটার বস্তা আমার প্রথম ছাত্রী। ভীড় করা সকল গল্পেরা উড়াল দিল দূর বনে। হতাশ হয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনার ঝুড়ি খুলে বসলাম। ও মা। সে মুখের উপর বলে বসলো, স্যার, আমার পরশু এক্সাম, আমাকে কয়টা ম্যাথ দেখান। আমার ঘর্মগ্রন্থি তখন তেজে উঠল। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললাম, মুনিয়া, আসলে আজ তো শনিবার, বারটা কোন শুভ কাজ শুরু করার জন্য ভাল না। তার চেয়ে কাল থেকে শুরু করলেই মনে হয় ভাল হয়। মুনিয়ার বাচাল জিহবা নেড়ে উঠল, স্যার, আমরা তো কোন বিয়ে সাদি বা আকিকা মুসলমানি করতে যাচ্ছিনা যে শুভ অশুভের হিসাব করতে হবে, তাইনা? পরশু পরীক্ষা, এত দিন বার হিসেব করার সময় নেই। আমি তখন কিছু উদ্ভট মিথ বানিয়ে বলা শুরু করলাম। যেমন, বললাম যে স্টিফেন হকিং এর আজকের শারিরিক অবস্থার জন্য দায়ী এই শনিবার, কারন তিনি শনিবারই বিংব্যাঙ থিওরী দেন। কিন্তু কোন তত্বেই ফায়দা হলনা। শেষ অব্দি খাতা কলম নিয়ে লেগে পড়লাম। এবার নতুন সমস্যা। আমি করাতে চাই সেটের অংক, সে করবে গাণিতিক আরোহ পদ্ধতি। আমার তখন ইচ্ছে পঙ্খিরাজে আরোহন করে পালাই এ আজাব থেকে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে শুরু করলাম। তবে উদাহরণ থেকে শুরু করলাম। সে উদাহরণ করবে না। অনুশীলনী করবে। অনেক বঝানোর পর বাধ্য হয়ে শুরু করলাম। স্মুতির উপর ভরসা করে কিছুদূর গিয়ে একজায়গায় আর মেলাতে পারলাম না। শুধু কলম ঘসছি আর বলছি, আসলে, এটা হল... উম...এখন...না মানে... এক পর্যায়ে ছাত্রী বলল, স্যার, আজ থাক, কাল দেখে আইসেন, ব্যাপার না। আমার কান গমর হয়ে উঠল। গা ঝেড়ে বললাম, আরে না, এটা কোন অংক হল? এটা আবার দেখা লাগে নাকি? এইত হল বলে। এভাবে আরও অনেক্ষণ। নাহ্.. হচ্ছেনা। ছাত্রী যতবার বলে আজ থাক, আমি ততই উঠে পড়ে লাগি। এক পর্যায়ে ছাত্রী মুচকি হেসে বলে ফেলল, স্যার, আসলে আজ শনিবার বলেই বোধহয় মিলছেনা। ব্যাপার না। আমি বোকার মত তাকিয়ে রইলাম।
পরে রাতে হলে ফিরে ছাত্রীকে কল দিয়ে মিস্টি সুরে বললাম, আমি লজ্জিত। আসলে অনেকদিন প্র্যাকটিস নেই তো। তাছাড়া প্রথমদিন... ছাত্রী মধুর হাসি দিয়ে বলল, স্যার আমি সবই বুঝতে পেরেছি। ব্যাপারস না।
২৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×