somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউশনি বৃত্তান্ত (পর্ব-২): অত:পর মুনিয়া

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার টিউশনি জীবনের প্রথম ছাত্রী, মুনিয়া। নামে অপূর্ব, সুরতে সুরতী বানু। অতটা তাকাইনা তাই। পড়িয়ে দায়িত্ব পালন করি। প্রথমদিনের অংক ভুলের আত্নগ্লানি দুই রাতের আত্ন অনুশীলনে শোধে নিলাম।এবার পারফর্মেন্স অশ্বতুল্য। বেশ চলছিল আমার গণিত ঘোড়া। হঠাত ক্ষুরে হোচট। পায়ের আঙুলে কিসের পরশ !!!! বিড়াল নাকি? কলম থামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। দেরি হলনা বুঝতে। মন মুনিয়ার পা আর কি। ভালই ঘষতে শিখেছে। বুঝা গেল অনেক দিনের অনুশীলনপ্রাপ্ত দক্ষতার ফল। ভদ্র ছেলের মত (আমি তো ভদ্রই) পা সরিয়ে নিলাম। নাছোড়বান্দার মত পা টা এগিয়েই আসছে বারবার। আমি এবার সাহস নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালাম। দেখি কোন ভাবান্তর নেই। উল্টা আমাকে বলছে, স্যার, কিছু বলবেন? আমি অসহায়ের মত মাথা নাড়ালাম। ঠোট নড়ালাম বহু কষ্টে, এক গ্লাস পানি আনো। মুনিয়া পানি আনতে গেলে আমি দ্রুত রুমের একপাশে রাখা একটা টোল এনে পায়ের প্রতিরক্ষা দেয়াল বানালাম।

রাতে ঘুম হলনা তেমন একটা। টিউশনিটা তো যাবেই, সাথে ইজ্জতটাও।

পরের দিন দেখি টোলটা আর ঐ ঘরেই নেই। বুদ্ধি করে সরিয়ে রেখেছে। আমি পায়ের ঘসা খেতে খেতেই কোনমতে পড়া শেষ করলাম ঐদিন। রাতে হলে ফিরে মুভি দেখছিলাম। এমন সময় মুনিয়ার কল। "স্যার, একটা অংক অনেক্ষণ ধরে করার চষ্টা করছি, মিলেনা।" সিরিয়াস গলায় জিজ্ঞেস করলাম, কি অংক? ও বলল, "একটা বাদর তালগাছে(আমি লম্বায় পাচ ফিট এগারো) ঘন্টায় বিশটি ঘসা দিতে পারে। দুইদিন পর বাতাসের ধাক্কায় তালগাছটিও বাদরকে ঘসা দেয়া শুরু করল এবং ঘন্টায় দশটা ধাক্কা দেয়া শুরু করল। তাহলে তারা একত্রে কয়টা ধাক্কা দিলে তালগাছটা বাদরের উপর ভেঙে পড়বে?" আমি এবার মহা ক্ষেপে ধমকে উঠলাম, এই ফাজিল মেয়ে, তুমি কি শুরু করেছ এসব? মন মুনিয়া এবার ঠান্ডা গলায় বলল, স্যার, এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? অংকটা করে দিন না। আমি রেগে বললাম, জীবনেও তালগাছটা বাদরের উপর পরবে না।ছাত্রীর কথা থামেনা, স্যার, ভেঙে না পরলে তো কর্তৃপক্ষের সাহায্য নেতে হবে।আজই আম্মুকে বলব যে, এই টিচারে পোষাবে না।সাথে সাথে আমার পাওনাদারদের মুখগুলো ভেসে উঠল।সাথে সাথে কন্ঠস্বর নমনিয় করে বললাম, তুমি আসলে কি চা্ও বলতো? মুনয়া বলল, ঘষতে চাই। নো সাইন্ড। আর মাঝে মাঝে রিক্সা দিয়ে ঘুরতে চাই আপনার সাথে। এই তো। আমি মনে মনে বললাম, তুই হইলি বাংলা ছবির দিলদারের নায়িকা। একটা দিলদার ম্যানেজ কর। আমারে ক্যান? প্রকাশ্যে রাজী হলাম। আর বললাম যে আমার কাতুকুতু আছে। আস্তে ঘষা দিতে।
পরের কয়দিন চলল অমানুষিক নির্যাতন। এর মধ্যে আমি নানাভাবে নিজেকে কুতসিত বানানোর চেষ্টা করলাম। নোংরা কাপড় পরি, চুল আচড়াই না, আঙুল দিয়ে নাকের ময়লা বের করে প্যান্ট এ মুছি, কফ মুছি হাত দিয়ে। নাহ, তবু কাজ হলনা।
অবশেষে একদিন আমার এক পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা মালিবাগ মোড় এ। জানতে পারলাম ও এই এলাকাতেই একটা টিউশনি করায়।আরেকটা ধানমন্ডি। সাথে সাথে প্রস্তাব দিয়ে বসলাম, আমার তো ধানমন্ডিতে আরেকটা টিউশনি আছে, আমরা বদল করতে পারি। ও রাজি। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙলনা।

পুনশ্চ: অনেকদিন পরে সেই বন্ধূর সাথে দেখা টিএসসি তে। দেখি সাথে মন মুনিয়া। তাও আবার আমার বন্ধুর হাত ধরে। জানতে পারলমি ওরা সাম্প্রতিক বিয়ে করেছে। মুনিয়া হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। যেন এতদিন পর তার কাঙ্খিত দিলদারকে খুজে পেয়েছে। কিন্তু আমার বন্ধুর মুখে ঘোর অমাবস্যা আর আমার প্রতি একগাল অভিমান। কোনমতে কূশল বিনিময় করে আমি হাটা দিলাম।তখন বুকে আমার বন্ধুর জন্য একরাশ মনোকষ্ট।
২১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×