somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউশনি বৃত্তান্ত (পর্ব-৩): ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিউশনি নিয়ে যত রোমাঞ্চকর কথাই বলিনা কেন,মূল উদ্দেশ্য তো পেটচর্চা। তাই চাতকের মত পাচ তারিখের জন্য অপেক্ষা করতাম। আর সারামাস ঐ একটা তাকিখের উপর ভরসা করে ধারের বন্যা বয়ে দিতাম। তো, এমন দুটো মাস আমার জীবনে এসেছিল যে দুইমাস পাচ তারিখ এসেছিল মাগার সেলারির খবর নাই। ছেছড়ামি কাহাকে বলে শুনুন এবার:



সেটা ছিল ছাত্র। ক্লাস টেন। বাপ উকিল। আমি পড়াই এক ঘন্টা আর উকিল মশায়ের উপদেশ শুনি দুই ঘন্টা করে। যেন উনি উকিল না, এডুকেশনিষ্ট। তবে সব কথার মূলকথা হল, মাইরের উপে কোন ওষুধ নাই। ও ঘর থেকে কান খাড়া করে থাকত আর ছেলে পড়া না পারলেই কোন আওয়াজ ছাড়াই মাইর। তাও আবার আমার সামনে। ছেলেটাও চুপ করে থাকত মার খেয়ে। আমার বড় কষ্ট লাগত। উকিল ছেলেকে মেরে আবার আমাকেও উপদেশ দিত, স্যার শুনেন, এইটা কোন মাইর ই না। আমার বাপে তো আমারে বাশের উপরে রাখত। এই জন্যই মানুষ হইছি (!!!)।
মাইরের উপরে রাখবেন । নইলে আপনার মুখেও ছাই দিবে আমার মুখেও।
এভাবে চলতে থাকলো। ছেলেটি এত পড়ার প্রেসারে থাকে যে কিছুই মাথায় থাকেনা।আমি ওর বাবা চলে গেলে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করতাম যতটুকো পারি। তো, মাসের শেষের দিকে একটা পরীক্ষার রেজাল্ট এলো। সে ফেল করেছে। আর যায় কই। এবার বাপ পারলে ছেলেকে মেরে হাসপাতালে পাঠাবে।আর আমাকে নোটিশ দিয়ে দিল যে, আপনার মত শিক্ষকের আর দরকার নেই। আমি তো অবাক। ছাত্র মার খেয়েও এবার প্রতিবাদ করলো, আমি ফেল করেছি তাতে স্যারের কি দোষ? অমনি কান বরাবর আরেক থাপ্পড়।আমার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। বললাম, শুনুন, আমিও আর আপনার বাসায় এই অসুস্থ পরিবেশে পড়াতে আগ্রহী না। আমার বেতন দিয়ে দিন, চলে যাই। অমনি সে পকেট থেকে একটা পাচ শো টাকার নোট বের করে দিয়ে বলল, আপনি আসতে পারেন। আমি অবাক হয়ে বললাম, বাকী পচিশশো? সে দাত খিচিয়ে বলল, কিছু যে দিয়েছি এটাই তো আপনার ভাগ্য। ছেলেতো ফেল করেছে। অনেক তর্ক করলাম। লাভ হলনা। উল্টা সে আমাকে নানান ধারায় মামলার হুমকি দেয়। আমি আর কথা না বাড়ীয়ে বেরিয়ে আসি।
সব কথা শোনার পর আমার এক ঘনিষ্ট বান্ধবী নীলা (ছদ্মনাম)যায় ক্ষেপে।ও বলে, অত সোজা নাকি? ওর মামলা আমি ওর ইয়ে দিয়ে বের করব। আমি বললাম বাদ দে। না ও বাদ দিবে না। ও উকিলের মোবাইল নাম্বার নিল আমার কাছ থেকে। তারপর বলল, এবার খেলা দেখবি।

পরের কয়দিন নীলার দেখা নেই। হঠাত সপ্তাখানেক পর নীলার ফোন, তাড়াতাড়ি ছবির হাটে আয়। ওর নির্দেশনা অনুযায়ী গেলাম ছবির হাটের গেটে। নীলাকে কল দিলাম। ও ফিসফিস করে বলল, ডানে তাকা। তাকিয়ে দেখি নীলা উকিলের সাথে চা খাচ্ছে আর হেসে হেসে ঢলে পড়ছে। এবার আর বুঝার বাকি রইলনা। আমি আর আগালাম না। ওদের সুযোগ দিয়ে চলে এলাম।
পরের দিন নীলা তিন হাজার টাকা নিয়ে আমার কাছে হাজির, নে, তোর টিইশনির টাকা। পাচশো লাভ। এটা দিয়ে ভরপুর লাঞ্চ হয়ে যাবে দুইজনের।
আমি বললাম, কিভাবে। ও বর্ণণা করল, বেটার কাছে চেয়ে নিয়েছি। আরও অনেক নিতে পারতাম, নিলাম না। বাড়তি পাচশো হল সার্ভিস চার্জ। নে, এবার বেটাকে কল দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার কর। আমি বোকার মত কল দিলাম।

উকিল: হ্যা, কেমন আছেন?
আমি: ভালো।
উকিল: হঠাত কি মনে করে?
আমি: না মানে, টিউশনির বাকি টাকাটা পেয়েছি এটা জানানোর জন্য কল দিলাম আর কি। নীলা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আর আপনাকে বলতে বলেছে,
ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে।

(আগাগোড়া সত্য কাহিনী)
১৮টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×