মুজিব স্বাধীনতার লেডু ঘোষনা দেয়নি এটা ঠিক তবে যারা বলে জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক তাদেরকে বলছি।
স্বাধীনতার ঘোষনা কি বৈদ্যুতিক লাইট যে ট-প-স কইরা একটা সুইস দিলাম আর লাইট জ্বলিতে থাকিল, জ্বলিতে জ্বলিতে কিছু ফাটিয়াও গেল। আমাদের দেশের কিছু জ্ঞানীগুনি প্রবীনের কথা শুনে ঠিক তাই মনে হয়, যেন ব্লেন্ডার মেশিনে টিপ দিলাম আর জুস বাইর হইতে থাকিল।
এই যুদ্ধটা যদি আজ অর্থাৎ ২০১০ এ লাগতো তাহলে আজই কয়েকশ ব্রাউজার ফেইসবুকে "আমরা স্বাধীনতার ঘোষনা দিলাম" নামে গ্রুপ খুইলা কয়েক হাজার দাওয়াত পত্র সেন্ড কইরা যুদ্ধের ঘোষনা দিয়া দিত। আর কয়দিন পর এক সকালে উঠিয়া সবাই আমি ঘোষক, আমি উপস্থাপক বলিয়া চিৎকার করিতে থাকিত (?)
একাত্তুরেও জিয়ার মত আরও অসংখ্য মানুষ, পুলিশ, বিডিয়ার, সেনা কর্মকর্তা তার পিঠের রেডিও দিয়ে, ওয়ারলেস সেটে, টকিতে, মাইকে, কোন ছাত্র বন্ধুদের ডেকে, হাটে বাজারে, মহল্লায় তাদের চারপাশে যুদ্ধের ডাক দিয়া মৃত্যু পথে ঝাপাইয়া পরিয়াছে। এদের সাথে জিয়ার পার্থক্য হচ্ছে তারা কেউ স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করবে না, এটা তারা দায়িত্ব মনে করে ছিল। এটাকে ব্যাবহার করে রাজনিতি করার মত অসৎ উদ্দেশ্য তাদের নেই।
আমাদের দেশের বেশ কিছু মানুষ আছে বয়সে প্রবীন যার মিথ্যা বলতে বলতে চেহারায় কুকুরের চেহারার একটা ছাপ ফেলে দিয়েছে যেমন মঔদুদ, সাকা, জয়নাল, দেলোয়ার, হালের ইরানের মীর্জা আলমগির এবং এমাজ উদ্দিন প্রমুখ। এরা যখন নির্লজ্জের মত গলার রগ ফুলাইয়া চিৎকার করিয়া জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক ঘোষক বলিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তখন প্রতারনাই বিএনপির মৌলিক আদর্শ এটাই তারা প্রতিষ্ঠত করে।
প্রকৃত পক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাব আমাদের স্বাধীনতার ঘোষনা হয়েছে ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল। বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে। আর সেই ঘোষনা পত্র পাঠ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেখানে একটা সংক্ষিপ্ত ধারাবাহীকতা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘোষনা সব কিছু সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে। ইতিহাসে এভাবেই কাজটা হয়। আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৭৭৪ সালে আর ঘোষনা ৪ জুলাই, ১৭৭৬, এই সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়াতে থাকলেও কেউ পরবর্তীতে অভদ্রের মত লাফ দিয়ে বলে ওঠেনি এই দেখেন আমার এক্স হাসবেন্ডে হেড ডিইকলেয়ার্ড ইট। আবার তখনকার সেই ঘোষনা পত্র নিয়ে পাকিস্তান রাজাকার এবং পরবর্তীতে অক্টবর প্রজন্মের আইএসআই এজেন্টরা ছারা কারও আপত্তিও ছিল না।
এদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৫২ সালেই। পুরো পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আন্দোলনের পরে এলো স্বাধীনতার চুড়ান্ত মুহুর্ত। ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ এর মার্চ পর্যন্ত একের পর এক ধারাবাহিক আন্দোলন। তেশরা মার্চ, ছয়ই মার্চ, সাতই মার্চ, তেরই মার্চ, সতেরই মার্চ, বিশ, পঁচিশ এরপর ছাব্বিশে মার্চ ও সাতাশে মার্চ সন্ধ্যা। কোথায় সে জিয়া ? এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বাংলাদেশে সেদিনের সেই কালুর ঘাটের বেতারের - কুমিল্লা পর্যন্তও না পৌছানোর ৫০ কিলোমাটার ক্ষমতা সম্পন্ন - বার্তা এদেশের লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার যে কারও জন্য দায়িত্ব হিসাবে যেখানে যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের ডাক দিয়ে ঝাপিয়ে পরার একটা সুন্দর উদাহরন হতে পারতো। অবশ্য জিয়া নিজেইও তার ঘোষনায় তার প্রকৃত ইনটেশন লুকাতে পারেনি।
যা হউক এবার চলুন জিয়ার ইতিহাসটি দেখি। ১৯৫২ সালে মেট্রিক পাশ করে পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন। স্বাভাবিক ভাবেই কালে ভাদ্রে দু একজন সত্যিকারে টেলেন্ট বাংলা জাতীয়তাবাদ সচেতন কোন রাজনৈতিক সংসর্গ থাকা ভালো ছেলে সেসময়কার পাকিস্তান সেনা অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হত না। নেয়া হতো অপেক্ষাকৃত পাকিস্তান পন্থি আর বাঙালীর চেয়ে ইসলামী জাতীয়তাবাদ সচেতন ছেলেদেরই। এ বিষয়টির প্রভাব পরবর্তীতে বাংলাদেশ সামরীক বাহিনীর ইতিহাসে প্রকট ভাবে দেখা যায়। জিয়া তাদের মধ্যে ছিলেন চৌকশতম একজন অফিসার। ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে মেজর জিয়ার কোম্পানী ছিল দ্বিতীয় সর্বাধিক বীরত্ব পদক পাওয়া দল।
বলেনতো ২৭ মার্চের আগের সপ্তাহ থেকে জিয়া কি কি করছিল ? গত এক সপ্তাহ মেজর জিয়া চিটাগং বন্দরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা সোয়াত জাহাজ থেকে মাল খালাসের জন্য ডিটেইল্ড ছিল। সভাবতই সবচেয়ে বিশ্বস্ত বাঙালী কিন্তু পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমিতে সাচ্চা পাকিস্তানী দেশ প্রেমীকের পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তির্ন চৌকশ অফিসারের এক জনই দরকার ছিল ওখানে। ১৯৬৩ সালে আইএসআই এ কাজ করা অফিসার মেজর জিয়াই ছিল বিশ্বস্ততম। কারন ঐ সোয়াত জাহাজের ভেতরে আছে এদেশের গরীব দূঃখি মানুষের টাকায় কেনা অস্র, এদেশের মানুষেরে মারার জন্য।
অস্রের ব্যাপারটা জানজানি হয়ে গেলে ডকের শ্রমিক শহরের মানুষ রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে অসংখ্য বাধাও সৃষ্টি করে। সেদিনের চিটাগাং রাজপথের রক্তে কোনটা জিয়ার বুলেট কোনটা খানের বুলেট তার পার্থক্য আজ করা কঠিনই হবে। পচিশ তারিখ রাতে জিয়া অস্র নামাতে যখন ডকের দিকে যাচ্ছেন তখন পথে ঢাকার ক্রাক ডাউনের মেসেজ পান। চিটাগাংয়েও কয়েক দিন ধরে বাঙালী নিধন চলে আসছে। কোন কোন বাঙালী অফিসারকে নিরস্ররী করার খবরও শুনে একমাত্র চয়েস হিসাবে বিদ্রহ ঘোষনা করেন। কয়েকজন পাকিস্তানী অফিসার খতমও করেন।
এ সময় চিটাগাংয়ের বাঙালী সামরীক অফিসারেরা যে যেখানে যে দিকে পারে অনান্য বাহিনী, সৈনিক, সাধারন মানুষ নিয়ে দেশের অনান্য এলাকার বাঙালী সেনাদের মত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে থাকে। ২৬ তারিখ সারাদিন যায়, রাত যায়, ২৭ তারিখ সারাদিন এর মধ্যে সারাদেশ ফ্রীজ হয়েছিল কেউ টু শব্দটিও করেনি, তাই না ? এরপর সন্ধ্যা সময় জিয়া কালুর ঘাটের রাস্তার সোজা বিশ কিলো দূরের বাজরের কাছে আশ্রয় থেকে অনেক স্থানে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্তটা নিয়ে কালুর ঘাটের ৫০ কিলোমিটারের বেতার যন্ত্রে প্রথম ড্রাফটিতে খুবই সচেতন ভাবে ইনটেনশনাল্লী নিজেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ও সর্বাধিনায়ক হিসাবে বিদ্রোহের ঘোষনা দেন। উল্লেখ্য তিনি বলেছিলেন ইস্টার্ন ফ্রন্ট অব পাকিস্তান যা পরবর্তীতে জিয়ার স্বরুপ প্রকাশ করবে।
জিয়া প্রকৃত পক্ষে আইএসআই এর থার্ড লাইন এজেন্ট ছিল। যুদ্ধাকালিন সময়েও অক্টবর প্রজন্মের সেনা অফিসারেরা যেমন ডালিম নূর প্রমুখ যার অক্ষন্ড পাকিস্তানের পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক এবং যুদ্ধের শেষের দিকে আইএসআই এর এজেন্ট হিসাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ইনফিলট্রেট হয়। এরা সবাই ছিল জিয়ার সার্কেল মেট। যুদ্ধের শেষের দিনগুলোতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলাফল অন্য রকম করতে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থাটি নানা মুখি ষড়যন্ত্র চালায়। এই সব ষড়যন্ত্রে খন্দকার মোশতাক মওদুদ আহাম্মেদ সহ অনেক আওমীলীগ নেতা, অক্টবর প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে জিয়া এবং তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানে থাকা সেনা কর্মকর্তারা। যুদ্ধ পরবতর্ী কালেও দেখা যায় এরা এক সাথে ওঠা বসা শুরু করে। তখন এদের সাথে এসে সরাসরি যোগদেয় আইএসআই এর সেকেন্ডলাইন ইলিমেন্ট রাজাকারেরা। উল্লেখ্য বাংলার বিজয় যখন নিশ্চিত তখন জিয়ার মাধ্যমে এরা সেক্টর কমান্ডারদের রাজনৈতিক সমাধানে পক্ষে সমর্থন আদায়ের কাজ করে। খন্দকার মোশতাক সহ এই চক্রটিই সেদিন রাজনৈতিক সমাধানের প্রস্তাবে যুদ্ধ বিরতি করতে তৎপর হয়ে ছিল। মোশতাকের আইএসআই লিংকটি জানা জানি হওয়ায় তখন তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৯:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




