somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পঞ্চম সর্বোচ্চ চূড়াঃ কেওক্রাডং জয়

২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাটা শুরু,কাধে বিশাল এক ব্যাগ নিয়ে ৷ মাথার উপর প্রচন্ড রোদ ৷ গাইডের ভাষ্য মতে বহুদিন পর আজ গরম পড়েছে ৷ প্রায় ১ ঘন্টার মতো এই পাহাড় উঠে আবার নেমে আমরা পৌছাই চিংড়ি ঝিরি তে ৷ ভরা বর্ষায় এই চিংড়ি ঝিরি মারাত্নক খরস্রোতা, কিন্তু এখন সেই হিসেবে পানি ই নেই ৷ হাত,মুখ ধুতে যতটুকু লাগে সেটুকুই!! ঝিরি তে শরীর জুড়ানো ঠান্ডা ৷ কিছুক্ষন বিশ্রাম করে আবারও হাটা শুরু ৷ মাত্র ৪ ভাগের ১ ভাগ ই এসেছি ৷ প্রায় আরও দেড় ঘন্টা গেটে পেলাম একটা মাচাং ঘর,ডান পাশে বিশাল এক পাহাড়ের হাতছানি ৷ হীম ঠান্ডা বাতাস,মনে হচ্ছিলো কিছুক্ষন বসে ঘুমানো দরকার! কিন্তু বিকেল তো শেষের পথে ৷
দ্রুত পদচারণা শুরু করলাম ৷ সন্ধ্যার আর অল্প সময়ই বাকি,প্রথম দর্শন পেলাম কেওক্রাডং এর ৷ মানে পৌছে গেছি অত্যন্ত পরিষ্কার খ্যাত দার্জিলিং পাড়া ৷ সেখান থেকে ২০ মিনিটের ই পথ কেওক্রাডং ৷ শেষ ১০ মিনিটের পথ একটানা ৫০০ মিটার উঠে গেছে ৷ সন্ধ্যা নেমে গেছে পাহাড়ে,আমরা পৌছালাম পঞ্চম সর্বোচ্চ চূড়ায় ৷ অনেক গুলো টিম কে ফিরিয়ে দিচ্ছে আর্মি,কেওক্রাডং এ থাকার কোনো যায়গা নেই ৷ ভাবতেই কেমন জানি প্যারাদায়ক লাগছিলো ৷ মাত্র ৪ ঘন্টা হেটে এসে চূড়া না দেখেই আবার ৪ ঘন্টা হেটে রাতের আধারে ফিরে যাওয়া! হয়তো জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য ৷ আমরা গেলাম ক্যাম্প এ, হোটেল তো নেই ৷ তবে এ যাত্রায় আমাদের বাচিয়ে দিলো তাবু ৷ তাবু সাথে এনেছি বলে অনুমতি মিললো রাতে কেওক্রাডং থেকে যাওয়ার ৷ আমরা ছাড়াও আরও ১৭০ জন টুরিস্ট সেদিন কেওক্রাডং এর লালা কটেজ এ ৷ সাদেক ভাই(গাইড) মারাত্নক বুদ্ধিমান একজন মানুষ,যার কারনে প্রতিটা পদক্ষেপ আনাদের একদম সহজেই শেষ হয়েছে!! কী ভাবে?
চলুন বুঝি ৷
৭ টার সময় ই আমরা খেতে বসে গেলাম, ভাত,ডাল,ডিম আর আলুভর্তা ৷ খেয়ে বের হয়ে আমরা তাবু সেট করে নিলাম ৷ পরবর্তী তে খাবার না থাকাতে শেষে প্রায় ৩০ জনের মতো খাবার পায়নি :'(
গান বাজনা করলাম বেশ কিছুক্ষন ৷ রাত ১১ টায় সবায় ঘুমের রাজ্যে ৷ ভোর হলো,অপার্থিব এক ভোর ৷
সবায় মিলে চলে গেলাম হেলিপ্যাড এ ৷ দূরের বড় বড় পাহাড়ের ভাজে মেঘের খেলা ৷ সূর্যোদয়,লাল টুকটুকে সূর্য! ঠান্ডা বাতাস,সবকিছুই অসাধারন ৷ গতকালকের সব টুরিস্ট সকাল সকাল ই কেওক্রাডং থেকে চলে গেছে ৷ আমরা ছাড়া আর কেও ই ছিলোনা ৷ খিচুড়ি দিয়ে নাস্তা সেরে নিলাম ৷ ১০ টার সময় ফিরতি পথ ধরি ৷ ফিরার সময় আর অত সময় লাগেনি ৷ ১২ঃ৩০ নাগাদ আমরা পৌছে যাই বগা লেক ৷ সিয়াম দিদির ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা চলছে আমাদের জন্যে ৷ সেই ফাকে আমরা আবারও বগা লেক এ গোসল করে নিলাম ৷ দুপুরে খাবার খেতে বসে তো দেখি,পুরোই এলাহী কান্ড ৷ ভাত,ডাল,আলু ভর্তা,পেয়াজ ভর্তা,ডিম ভাজি,বেগুন ভর্তা,টমেটো ডিমের দোপেয়াজা,ভাজা মুরগীর মাংস!! এরকম একটা ভোজন ই তো দরকার ছিলো ৷ আর আমাদের সাথে ইনসাদ তো আছেই, যার কাছে ৬ প্লেট ভাত খাওয়া কোনো ব্যাপার ই না ৷ এমনটা হয়েছিলো যে,ও ৬ প্লেট ভাত না খেলেই রেকর্ড হয়ে যাবে!
আর্মি ক্যান্প এ এক্সিট সাক্ষর করে আধ ঘন্টায় চলে এলাম কমলা বাজার ৷ কোনো গাড়ী নেই কমলা বাজার এ ৷ পূর্বে থেকেই আর ৩০ জনের মতো অপেক্ষা করছে ৷ ধরেই নিয়েছি যে গাড়ি পেতে অনেক সময় লাগবে!! ২ মিনিট যেতে না যেতেই গাড়ীতে উঠে বসতে বললো! আমাদের গাইড:সে আসলেই একটা মারাত্নক চালাক মানুষ!! সেই কেওক্রাডং থেকেই সে সিরিয়াল দিয়ে রাখছিলো! আমরা উঠে বসলাম গাড়ীতে,বাকি সবায় তাকিয়ে ছিলো নিরীহ এর মতো!! আবারও সেই রোলার কোস্টার জার্নি করে ৩ঃ৩০ এ পৌছাই রুমা বাজারে ৷ আর্মি ক্যাম্প এ সাক্ষর করে সোজা জ্বীপ নিয়ে চলে আসি বান্দরবান শহরে ৷ সন্ধ্যা গড়িয়েছে আসতে,তবে তাড়াহুড়োয় তাবু একটা রেখে এসেছি রুমা বাজারেই!! পরে ফোন করে সাদেক ভাই কে জানানো হয়েছে সে তাবু ঠিকঠাক মতো রেখে দিয়েছে ৷ বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম,সেখান থেকে ঢাকা ৷ ভোরে পৌছালাম ঢাকায়,শেষ হলো আমাদের আরও একটি ভ্রমন!!
কিছু ছবিঃ
১) পথচলা শুরু


২)চিংড়ি ঝিরি


৩)খাদক ইনসাদ


৪)সিয়াম দিদি ও সিফাত


৫)পৌছি গেছি কেওক্রাডং


৬)তাবুর যায়গা


৭)পরিষ্কার দার্জিলিং পাড়া


৮)আমরা সবায়


৯)সকালের খিচুড়ি ভোজন


১০)রাজসিক সেই ভোজন


১১)প্রস্তুতি চলছে এখন থেকেই


১২)ফ্রেমে আঁকা ছবি

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×