somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাফস

৩১ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান সূত্রপাত হয় গ্রিস থেকে; তার ধারক ও বাহক ছিলেন মুসলিম মনীষীরা এবং এই ইউনানী চিকিৎসা থেকেই উদ্ভব হয় বর্তমানের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান।

ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, হাইওয়ানিয়াত হল প্রাণময়তা বা প্রাণীজতা। যেমন, হাত-পা চালানো ও খাদ্য গ্রহণ করা বা শ্বাস গ্রহণ করা হল হাইওয়ানিয়াতের অংশ। হাই অর্থ জীবন বা জীবিত।

এরপরে আসছে রূহের কথা। ইউনানী চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, যা না থাকলে হাই পরিণত হয় মৃততে, তাই রূহ বা প্রাণ।



সবচে মজার ব্যাপার হল, সেখানেও আলোচনা হয়েছে নাফস নিয়ে। নাফসকে তারা মন আকারে সংজ্ঞায়িত করেছেন। মানুষের মনের একেক সময় একেক অবস্থা থাকলে তাকেই নাফসের একেক অবস্থা হিসেবে আমরা বিবেচনা করতে পারি।

আরো মজা লাগে, যখন দেখি যে, মানুষ হাশরে ইয়া রূহুন বা ইয়া হাইওয়ানিয়াত বলে আফসোস করবে না, বরং ওরে আমার মন বা ইয়া নাফসি বলে আফসোস করবে। এই নিয়ে লালন সাঁইজির সেই বিখ্যাত কবিতা,

সত্য বল, সুপথে চল, ওরে আমার মন!
সত্য সুপথ না চিনিলে পাবিনে মানুষের দরশন!

মনকে নিয়ন্ত্রণ করা, মনকে খোদার কাছে সমর্পিত করার নামই ইসলাম, আর ইসলাম ও সূফিজম একই কথা।

মনের বা নাফসের অবস্থিতি কোথায়?

শরীরে যখন প্রাণের সঞ্চার হয়, তাকে আমরা জীবিত বলি, যা পশুত্ব বা হাইওয়ানিয়াত বললে ভুল হয় না। কারণ জীবদ্দশাই হল প্রাণিজতা। প্রাণ, যা সঞ্চারিত হয়, তাকেই বলি রূহ। রূহ যেটুকু অংশ ছেড়ে যায়, তাকে বলি মৃত বস্তু। আমরা মারা যাব, তখনি আমাদের শরীর রূহ ছেড়ে যাবে, আধুনিক বিজ্ঞান কিন্তু শুধু তা বলে না, বরং বলে, আমাদের দশ লক্ষেরও বেশি কোষ ঝরে যাচ্চে প্রতিদিন, শুধু পাকস্থলিতেই মারা যাচ্ছে কোটি কোটি কোষ। সে হিসাবে আমাদের ওই অংশগুলো রূহবিহীন হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। আবার, প্রতিদিন কোটি কোটি কোষ নতুন জন্মাচ্ছে শুধু পাকস্থলীতেও। সেটাতে প্রাণসঞ্জীবন চলছে অবিরত।

এই জীবন ও মৃত্যু, এই ক্ষুদ্র কিয়ামত সব সময় প্রবহমান।



তাহলে রূহ ও জীবের মাঝখানে নাফস কোত্থেকে এল?

আমি যে চিন্তা করতে পারছি, আমি যে একটা ধারণা তৈরি করে রেখেছি, সেই চিন্তা করতে পারাটা ও ধারণা তৈরি করে রেখে সে অনুযায়ী চলতে চাওয়াটাই হল নাফস বা মন । নাফসের সাত স্তর যেমন পুরোপুরি সত্যি ধারণা, তেমনি সত্যি ধারণা চার স্তরও, আবার অধুনা রূহীবিদ্যার ধারণা করতে গেলে নাফতের তিন স্তর। সচেতন মন- আমরা যা ইচ্ছা করে করি। অবচেতন মন- যা আমাদের অজ্ঞাতে কাজ করে যায়, কিন্তু করে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত সেটিঙ অনুযায়ী। আর আছে মহাচেতন বা অচেতন বা অতিচেতন মন- এ স্তরের দেখা পাওয়া যায় না। কেউ হয়ত সারা জীবন চেষ্টা করেও তার দেখা পাবে না।

কারণ কী?

সচেতন মন যুক্ত দেহের সাথে- শুধু দেহ রিয়্যাক্ট করছে, দেহের সাথে সাথে মনও রিয়্যাক্ট করছে।
অবচেতন মন যুক্ত স্মৃতি ও পুর্ববর্তী মনের অবস্থার সমন্বয়ের সাথে- তাই মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন পাই না।
আর মহাচেতন/অতিচেতন/অচেতন মন চেতনার ক্ষেত্রে শুধু রুহের সাথে যুক্ত বিধায় সে সকল সৃষ্টিজগতের সাথে যুক্ত এমনকি এর স্রষ্টার সাথেও তার লেনদেন হয়। তাই রূহী প্র্যাকটিশনার ছাড়া কেউ এর দেখা পায় না।



তাহলে হাইওয়ানিয়াতের অবস্থিতি কোথায়? শুধু জৈবিক দেহটায়। যা নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিষ্কের অতি ক্ষুদ্র অংশ হাইপোথ্যালামাস এ। মজার ব্যাপার হল, এই হাইপোথ্যালামাসকেই অনেক সাধকরা নাম দিয়েছেন মঞ্জিল, কাদিরিয়া চিশতিয়া নাম দেন খফি, আর কেউ নাম দেন মাকামে মাহমুদা। এই মাকামে মাহমুদা তথা দু চোখের মাঝখানের অংশ, যার পিছনে হাইপোথ্যালামাস বিদ্যমান, সেখানেই মুর্শিদকে বসাতে হয় অনেক তরিকায়। কেন? কারণ, আমাদের সমস্ত পশুত্ব নির্ভর করে ওই একটা জায়গার উপর, ব্রেনের আর কোথাও না। এজন্যই মুজাদ্দিদিয়া নকশবন্দিয়ায় একে বলা হচ্ছে নফস। এই মাকামে মাহমুদা বা প্রশংসিত স্থানে যখন আমরা শয়তানকে বসিয়ে রাখি, তখনি আমি জৈবিক তাড়নায় তাড়িত হই। আর জৈবে মুরশিদ বসাতে পারলে তখনি আসল বিজয় সাধিত হবে যার নাম সমর্পণ। তাকেই বলে ইসলাম।

এখন প্রশ্ন হল, তাহলে এই হাইপোথ্যালামাস, যা নিজ নিজ এক হাতের বুড়ো আঙুলের চেয়ে তেমন বড় নয়, এই এটুকু যদি আমার চিন্তার ছিয়াশি ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে, আর তাহলে বাকি মস্তিষ্ক কী কাজে লাগবে?

বাকি মস্তিষ্কটা এই বিশাল বলেই সেখানে আল্লাহ সমস্ত জ্ঞান ঢেলে দিয়েছেন। এজন্যই তিনি বলেছেন, আমি আদমকে শিখালাম সমস্ত নাম। আর ফিরিশতাদের বললাম, বল সেগুলো কী? তারা পারল না। আদম পেলেন সিজদা। আদম আজো সেই জ্ঞান ও সেই জ্ঞানের ইশারা ধারণ করে তার মস্তিষ্কে। এই হাইপোটুকুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই বাকি দরজা খুলতে থাকে আপনাআপনি।

সেখানেই ঘাপাটি মেরে বসত করে নাফসের তিন স্তর।
সচেতন স্তর নিয়ন্ত্রিত হয় ছিয়াশিভাগ শুধু জৈবে, শুধু কাম-ক্রোধ-ক্ষুধা-তৃষ্ণা-শীত-গ্রীষ্ম-ঘুম-আরাম ও কষ্টে। বাকি চোদ্দ ভাগ মাত্র আধ্যাত্বিকতা, বাকী চোদ্দভাগ সৃষ্টিশীলতা।

আর অবচেতন মন নিয়ন্ত্রিত হয় আমি সব সময় যা ভাবি, সেই পরতের পর পরত ছাপের দ্বারা। তার মানে, আমি যদি সব সময় সচেতনভাবে ওই কামক্রোধ দিয়েই ভেবে থাকি, তবে আমার অবচেতনও তাই করে যাবে। আমি না চাইলেও ব্যাক পকেটে হাত চলে যাবে সিগারেটের প্যাকেটের জন্য।

তাহলে অচেতন আর মহাচেতন? অচেতন তাদের জন্য, যারা একবারো জানেনি মনের ওই স্তরকে। আর মহাচেতন হল অতিচেতনের আরো সামনে এগিয়ে যাওয়া। এ যেন মহামানবের চেতনা। এখানে স্থান, কাল ও পাত্রে কোন বিভেদ নেই। স্রষ্টা যে গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেই রূহী গুণই এই অচেতন বা মহাচেতন মনের নিয়ন্তা। এই গুণের কথাই তিনি বলেন, আমি আপন রূপে সিজিলাম মানব। তাই মহাচেতন মনের আদেশ চলে সৃষ্টি জগতের প্রতিটা অণু পরমাণুতে। তাই যখন মানুষ মহাচেতন মনকে জাগ্রত করে, তখন প্র্যাকটিস করতে করতে বা ইবাদত রিয়াজতে থাকতে থাকতে আপন রূহের রূপ দেখে ফেলে। সেই রূহ নারী ও না, পুরুষও না। তার কামনা বাসনা কিছু নেই । তার আছে শুধু ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা, যা আল্লাহ দান করেছেন আপন খলিফা জ্ঞান করে। তখনি মানসুর হাল্লাজ বলে ওঠেন, আনাল হক্ক। আর আমরা ভয় পেয়ে বলে উঠি, কাফিরটাকে শূলে চড়াও।



আরো মজার ব্যাপার হল, এই মহাচেতন মনের অনেকটা অংশ লুকিয়ে থাকে নিউরনেই, কিন্তু মস্তিষ্কের নিউরনে যেমন থাকে, তেমনি হৃদয়েও কিন্তু নিউরন আছে। এখানেই আগমন ক্বালবের। এতক্ষণ আমরা ব্যস্ত ছিলাম হাই, নাফস, রূহ নিয়ে, তার সাথে এবার যুক্ত হল ক্বালব। রাসূল দ. বলেন, শরীরের একটা অংশ আছে, হৃদপিন্ডের দিকে, যা পবিত্র তো সব পবিত্র। কী সেটা? সেটা হল হৃদপিন্ডের নিজস্ব নার্ভাস সিস্টেম। চল্লিশ হাজারেরও অনেক বেশি নিউরন সেখানে আলাদা মাকাম বানিয়ে বসে আছে।

তৃতীয় সহস্রাব্দে তাসাউউফের স্বরূপ এভাবেই উন্মোচিত হচ্ছে।

প্রত্যাশা করছি, এসব বিষয়ে আমাদের জানাগুলো মতামত সহ আরো সমৃদ্ধ হবে।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×