somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ মুজিব: খোলামেলা চিত্রায়ণ

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুরুটা কীভাবে করব, বুঝতে পারছি না। পাঁড় কিম্বা অপার লীগার কোনটাই নই, যে লীগীয় চোখে ব্যক্তিটাকে দেখব। রগ ফুলিয়ে তাঁর মহত্বমূর্তি স্থাপন করব। আবার নই অ্যান্টিলীগীয় বা অলীগীয় কোন রাজনৈতিক চেতনার- কারণ সব রাজনীতিই দেশপ্রেম। দেশপ্রেম হল বড়প্রেম। বড়প্রেম শুধু কেন, কখনোই কাছে টানে না,শুধু ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। সেজন্যই সব বড়প্রেমীর অস্থায়ী নিবাস নিজ এলাকার বাইরে ঢাকা শহরে, আবার তাদের সম্পদ, সন্তান ও স্ত্রীদের স্থায়ী নিবাস যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড, ক্যানাডা ও মার্কিনমুলুকে- সবচে বড় কথা,তাদের বড়প্রেম তাদের বিবেক থেকে যুক্তিকে মাশাল্লাহ আন্তনাক্ষত্রিক দূরত্বে স্থাপন করে- এরচে বড় আর কোন উদাহরণ হতে পারে যে, বড়প্রেম শুধু দূরে পাঠায়।

বিরক্তিকর শীবস্তুতি শেষ করে বলছি, আজকের দিনে শেখ মুজিব নামে একটা লোককে বিদ্রোহী একদল মানুষ ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলেন।

হ্যা, লোকটার শাসনকাল সম্পর্কে অনেক রকম সত্যিকার অনুভূতি পাই আমরা। তাঁর সময় সন্তান ও পোষ্যরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়েছিলেন (এই ডিজিটাল যুগেও সন্তানরূপ পোষ্যদের জ্ঞানশূণ্যতার মাত্রা দেখে আমরা তা সহজেই অনুমান করে নিতে পারি- এজন্য অনুমানশাস্ত্রতে পি্ইচডি করার দরকার পড়ে না।)।

তাঁর সময় মাটিখাওয়া দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। পুষ্টিকর মাটি খেতে না পেয়ে অনেক মানুষ মারা গেছে।

তাঁর সময় সদ্যসাবেক যোদ্ধাদের হাতে অতুল অস্ত্র ছিল। আমার বাপধনের হাতেও ছিল। অনেকদিন। যোদ্ধারা তার সহিহ এস্তেমাল করেননি সর্বক্ষেত্রে।

তাঁর সময় সবচে বড় যে বিরোধী দল, সেই কমুনিস্টদের তুলোধূনো করা হয়েছিল। একদম শেষ করে দেয়া যাকে বলে। আবার তখন বিম্পির জন্মই হয়নি। জমাত তো কল্পনার অতীত।

তাঁর সময় একদলের স্বরাজ ছিল, দেশে গণতন্ত্রর পাশাপাশি সমাজতন্ত্রকে একটা স্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য সন্তান ও পোষ্যদের আন্তর্জাতিক ট্রেনিঙ শেষ করিয়ে গভর্নর রূপে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বন্দোবস্ত করা হচ্ছিল। অনেকটা উত্তর কোরিয়ার পরিবারতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের মত।

আর রক্ষী বাহিনী নিয়ে ছিল অনেক কথা। নিশ্চই সব ভাল কাজ করেনি তারা। যদি করত, তাহলে এত কথা থাকত না।

কিন্তু এইযে সব বাস্তবতা, এসব শুনেও বিশ্বাস হয় না, শেখ মুজিব মরল, আর সারা দেশের মানুষ মিষ্টি খাওয়া শুরু করে দিল। সবাই পেট ফুলিয়ে হাস্যকরা শুরু করে দিল। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলল সাতকোটি মানুষ।

আজকে যদি হারামজাদা গোলাম আজমও গুলি খেয়ে মরে, বা খালেদা বা হাসিনা, দেশের পনের কোটি মানুষ এর সবাই কিন্তু অট্টহাস্য করবে না।

আর শেখ মুজিবুর রহমানের এই দেশটার উপর যা ছিল, তা এই তিনজনের চেয়ে অনেক অনেক বহুগুণ বেশি অবদান। তাহলে তার ছিন্নভিন্ন মৃততুতে সারা দেশের মানুষ অট্টহাস্য করবে। প্রত্যেকে। এতবড় বেজন্মা হারামি হাউত্তা পোলা পুরো জাতি বাঙালি হতে পারে না।

আমার কাছে শেখ মুজিবের শাসনের ওই সময়টায় তাঁর দুর্বলতা থাকতেই পারে। ভুলও থাকতে পারে। ভুলগুলো সংখ্যায় বড়ও হতে পারে। কিন্তু,

পৃথিবীতে জালিম শাসনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে বা নিজ ভূখন্ডে স্বাধীনতা পেয়ে কোথাও কোন দেশ এই পরিস্থিতির বাইরে যায়নি। অ্যামেরিকা দেখুন, মিসর, তিমুর, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, দক্ষিণ সুদান, স্বশাসিত ফিলিস্তিন-

কারণ, মুক্ত দেশ কখনো জীবিত বিপ্লবী চায় না।

মুক্তদেশ কখনো বিপ্লবের নায়ককে চায় না।

মুক্তদেশে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য। এক কোটি উদাহরণ আছে মানব সভ্যতায়।

মুক্তদেশে কঠোর শাসন অনিবার্য। কারণ, পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রণোদনা আসে অন্যদেশের সাথে যুক্ত হবার। বাংলার ওই কমুনিস্টরা দেশটাকে চীনের অঙ্গরাজ্য বানানোর পথে এগুচ্ছিলেন। এর ফল কী হত, আজকে মুজিব সমালোচকরা তা বলেন না।

তার পরও, মুজিব ভুল করতেই পারেন। তার চারদিকে চাটার দল। চাটার দলের দোষ তো তারই!

না, আমার কাছে মুজিব মানে একটা মানুষ, যে বিশ্বাস করতে জানে।
যে বেঈমান বাঙালি জাতি আবার জামাতি হওয়ার সাহস দেখায়, যে বেঈমান বাঙালি জাতি নিজেকে পাকি বা ব্রিটিশ বা মুঘল পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে, সে বেঈমান বাঙালি জাতির ভিতরে কী বিষ যে মুজিব সঙক্রমিত করলেন, এক আল্লাহ জানে।

বাঙালি জাতি শাবল-গাঁইতি-কোদাল আর গুঁড়া মরিচ দিয়ে, তিন মিলিয়ন ব্লিডিঙ হার্টের বিনিময়ে আকাশে ওড়া পাকিদের হিঁচড়ে মাটিতে নামিয়ে আনল মুজিবের একটা মাত্র ভাষণে।

এ ছাড়া আর কোন পরিচয় মুজিবের দরকার নেই। আর সব পরিচয় ফালতু।

তাও একটা কথা না বলে চলে না,

মুজিব, একটা তরুণ ছেলে। ঘরে সদ্য বিয়ে করে আনা ফুটফুটে স্ত্রী। ওকে রেখে ছেলেটা জেলে গিয়ে বসে থাকত। আহা, একদিন, এক সপ্তাহ বা এক মাস নয়, দুই দশকেরও বেশি শুধু জেলে গিয়ে বসে থাকত।

ভাবি, লোকটা কি পাঁড় গোয়াড় রে! লোকটা একেবারে কমন সেন্স বিহীন।

নাহলে এ কাজ করতে পারে?

দেশের মানুষের অধিকার- এই সম্পূর্ণ ফাঁপা ‌'বড় প্রেম' মাথায় নিয়ে একজন তরুণ তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে এক পলক না দেখে কঙক্রিটের মেঝেতে মাথার নিচে হাত দিয়ে কয় রাত শুয়ে থাকতে পারে?

আরে, আপনার তো ভাবার দরকার ছিল, আমি এই যে মেঝেতে শুয়ে আছি, তাতে দেশ ও জাতির কী উন্নতি হচ্ছে?

একদিন না, এক বছর না, দুই যুগ!

মুজিব একজন বদ্ধ উন্মাদ।

নেলসন ম্যান্ডেলা, আউন সান সুকি, শেখ মুজিব- এই তিনজন মানুষ বদ্ধ উন্মাদ।

তাঁরা কোন লাভ ছাড়াই দুই যুগ করে কংক্রিটের মেঝেতে শুয়ে ছিলেন। তাঁদেরও সায়ানোসাইটিস হয়, তাঁদরেও নার্ভাল রিসেপ্টর আছে, ঠান্ডা লাগে, নিউমোনিয়া-নার্ভাল শক হয়, তাঁদেরও গায়ে রক্ত ছিল, তাঁরাও স্পষ্টভাবে আমাদের মতই হতাশা দেখতে পারেন, হতাশার ঘ্রাণ নিতে পারতেন, প্রাকৃতিক নিয়মে একটু ভাল খেতে ইচ্ছা হত তাদেরও, মুখ ভরে উঠত লালায়, জীবনসঙ্গীকে একটু কাছে পেতে ইচ্ছা হত, সময়মত পেত প্রস্রাবের বেগ বা আর সবকিছু।

আশার সূর্য ছিল তাঁদের কল্পনায়। আর আল্লাহ বলি বা প্রকৃতি, ঈশ্বর। তিনি বললেন, দাঁড়া, তোদের পুরো বৃথা কল্পনাটাকে আমি সুদসমেত ফেরত দিব।

যেভাবে আমরা ফেরত পেলাম, সেই ফেরত পাবার পন্থার কারণেই আমরা বাংলাদেশের মানুষরা, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষরা, আমরা বার্মার মানুষরা-

মুজিব-ম্যান্ডেলা-সুকির মনের প্রতিটা ভাবনাকে দেবপ্রতীম শ্রদ্ধা করি। তাঁদের গায়ের প্রতিটা রক্ত-মাংসবিন্দুকে পবিত্র বস্তুজ্ঞান করি।

তবে মুজিব চালাক মানুষ।

তিনি আবার এই মন ও দেহের প্রতিটা বিন্দুকে ছিন্নভিন্ন করিয়ে নিলেন। আহা, ওই হাড়গুলোই এভাবে দু যুগ ঠান্ডা গা কাঁপানো মেঝেতে পড়ে ছিল! আহা, ওই পেশীগুলো, ওই পাগলাটে সাহসী বাঘের চোখজোড়াই কংক্রিটে শুয়ে বুজে এত। এখন, এই পবিত্রতার অনুভূতিকে স্থান দেয়া হয়ে গেল আর দুজনেরও অনেক অনেক উপরে।

এই দেশটা আবারো একদিন বড় হবে। সেদিন, এই মুজিবের মতই কোন একজনের দু চার যুগের নিরন্তর 'অবোধ' আত্মত্যাগ এর বিনিময়ে প্রকৃতি আবার বলে উঠবে, আর পরলাম না, নে, তোর কৃতকর্মের ফল তুই সুদে আসলে নে।

সেদিনও কিন্তু সেই অনাগত মহামানব মুজিবের স্থান নিতে পারবে না। কারণ, কিছু স্থান হয়, যেখানে সংকুলান মাত্র একজনের। কুৎসা তাকে সেখান থেকে ঠেলে ফেলতে পারে না।
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×