somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই বাংলায় শত্রুবধ করতে হয়না, শত্রু নিজেকেই গুটিয়ে নেয়

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইতিহাস তাই বলে।
আসুন দেখি বাংলার অস্তিত্বের উপর হামলার ইতিহাস।

প্রাচীণ ও বর্তমান বাংলা কেন অজেয়?

প্রাচীণ বাংলা অজেয় ছিল চারটা কারণে-

১. সীমান্ত: প্রাচীণ বাংলার দক্ষিণে সমুদ্র, সমগ্র উত্তর থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন হিমালয় পর্বতমালা, সম্পূর্ণ পশ্চিম ঢেকে ছিল অভেদ্য ঝাড়খন্ড বনাঞ্চলে, যা বর্তমানের বিহার ও উড়িষ্যা সহ পশ্চিমবঙ্গের সাথে মিশে ছিল। বাংলায় প্রবেশের একমাত্র পথ ছিল উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে। ওই সরুপথে প্রবেশ করে দখল বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব।

২. ভূ-গঠন: বাংলার শত শত নদী আর হাজার হাজার খালের সাথে যুক্ত ছিল গন্ডায় গন্ডায় বিল। এগুলোতে দক্ষিণে ছিল কামঠ, উত্তরে ঘড়িয়াল আর মধ্যাঞ্চলে কুমির। মেঘনার কুমির এখনো লিজেন্ডারি। গঙ্গার ঘড়িয়াল মানুষ খায় না বটে, কিন্তু ভয় পাইয়ে দেয়। কামঠ কখন যে পা কেটে নিয়ে যাবে দক্ষিণ বাংলায়, টেরই পাওয়া যেত না, এক ধরনের হাঙর। নদীগুলো ছিল খরস্রোতা। বিলগুলো গভীর। যে কারণে নাম হয় হাওর বা সাগর। তার উপরে পুরো ভূমি ছিল বৃষ্টিবিধৌত। এ অঞ্চলে অধিকার করার সামর্থ্য রাখত শুধুই অ্যাম্ফিবিয়াস বাহিনী। তার প্রমাণ আমরা পেলাম, ইংরেজদের হাতে দখল হয়ে।

৩. আবহাওয়া: তখন বাংলায় বর্ষাকাল ছিল প্রায় চারমাস জুড়ে। এরপরও কখন সব কাঁপানো বৃষ্টি নামবে তার নাই ঠিক। বরফ বা মরুতেও সামরিক অভিযান চালানো যায়, কিন্তু খরস্রোতা নদীর অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সমস্যায় পড়াটা খুব কঠিন।

৪. বাংলা যে কাউকে গ্রহণ করে: এই এক আজব বৈশিষ্ট্য। তাই এখানে শত্রু হয়ে এলে এক সময় মিত্র হয়ে যেতে হয়। শুধু মিত্র নয়, বাঙালি হয়ে যেতে হয়। অথবা পরাজিত হয়ে ফিরে যেতে হয়।


অপরদিকে বর্তমান বাংলার এই ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে জনসংখ্যার শক্তি এবং সারা পৃথিবীতে, বহির্বিশ্বে বাঙালির সংখ্যা। বিশেষ করে যে জনসংখ্যা 'যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' সে জনসংখ্যা অতি বেশি।


আল ইস্কান্দার ও মগধ রাজ্য


মহাবীর ও তরুণ আলেক্সান্ডার ইউরোপ থেকে উত্তর আফ্রিকা, আরব থেকে মধ্য এশিয়া বা ভারতের অনেক অংশ এমনকি চীনেরও অনেকটা দখল করেছিলেন। অথচ তিনি ফিরে যান এই এলাকা থেকে। বাংলার প্রবেশমুখ, মধ্যভারত থেকে ফিরে যান আক্রমণ না করেই। মগধ সাম্রাজ্য বা পূর্ব ভারতীয় সাম্রাজ্য, যা বাংলারও সাম্রাজ্য, সেটার হাতি বাহিনী এবং ভূ-প্রকৃতি আর নদীর খরস্রোত দেখে।


চেঙ্গিস খান ও তার দিগ্বিজয়


চেঙ্গিসের ম্যাপটা দেখুন, ঠিক বাংলাকে এড়িয়ে তার এগিয়ে যাওয়া। সেই সুদূর ইউরোপের গলি তস্য গলি পর্যন্ত।


হার্মাদ ও বাংলার উপকূল

কী পরিমাণ চেষ্টা যে করেছে ইউরোপীয় নৌবহরগুলো, তার লেখাজোকা নেই। সেসব দেশ অন্যান্য অঞ্চলে কলোনি করতে পারলেও বাংলাতে তারা বড়জোর কিছু লুটপাটের চেষ্টা করেই ক্ষান্ত দিয়েছে। তাদেরও হত্যা করতে হয়নি। বাংলার মানুষের দৃঢ়তা ও আতিথেয়তা তাদের কাউকে মিশিয়ে নিয়েছে, বাকিদের করেছে তফাত।


মগ ও লুটের রীতি

বর্মি বা মগরা জাতিগতভাবেই ফেরোশাস। আরাকান বা বার্মা থেকে তাদের আক্রমণের ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু দাঁত বসানো যায়নি বাংলাতে। নিজেরাই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে।


আকবরের মানসিং ও আমাদের ঈসাখাঁ

মানসিংহ এলেন, দেখলেন এবং বাংলার মহানুভবতার কাছে পরাভূত হয়ে সন্ধি করলেন। এ ধারার উদাহরণ বিশ্বে অনেক আছে, বাংলাতেও।


ব্রিটিশের প্রত্যাগমন


আমরা কিন্তু ব্রিটিশদের মেরে তাড়াতে পারিনি। তবে প্রতিরোধ করে তাড়িয়েছি তা সত্য। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতার প্রতিরোধের সাথে যুক্ত ছিল বাঘের পতাকার নেতাজীর দল। ছিল অহিংস আন্দোলন আর সিপাহী বিদ্রোহ। ছিল ডালে ডালে দেশি সিপাহিদের লাশ। কংগ্রেস আর তৎকালীন ব্রিটিশ বাংলার মুসলিম লিগের প্রতিরোধ। এবং বাংলা ছেড়ে গেছে তারাও।


জাপানি বাহিনী

হারিকিরির ভয়ানক মন্ত্রে উজ্জীবিত জাপানি বাহিনী বাংলা পর্যন্ত আসার সাহস দেখায়নি। ব্রিটিশরাজ বাংলার তিনভাগের একভাগ মানুষকে না খাইয়ে মেরেছে। মরেছি আমরা, কিন্তু জাপানি দখল করতে পারেনি আমাদের। এই ভূ-প্রকৃতিও তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছে। জাপান বাংলা দখল করতে পারলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যেত। আমরা পেতাম নতুন দখলদার।


পাকিস্তানি, নিহত হয়ে নয়, নিহত করে পরাজিত

কতটা পাকিপশু মেরেছি আমরা? হাতেগোনা কয়েক হাজারই হবে? আমরা মরেছি ত্রিশ লাখ। দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা। হত্যা করে নয়।


ভারতীয় বাহিনী, আর কোন মিত্রপক্ষ এত দ্রুত ছেড়ে যায়নি পৃথিবীতে

ভারতীয় বাহিনী ছিল মিত্র। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস বলে, মিত্রবাহিনী সবচে ভয়ানক জগদ্দল পাথর হয়ে বুকের উপর চেপে বসে।
অথচ বাংলাই একমাত্র উদাহরণ, যেখানে মিত্রবাহিনী অবস্থান করে মাত্র মাসাধিক কাল।
পরাজয় বা দখল বাংলার সাথে যায় না।


নকশাল ও চীনে পরিণত হওয়ার জুজু


নকশাল আন্দোলন বা সর্বহারা আন্দোলন সম্পর্কে আমরা খুবই অস্পষ্ট জানি।
এই আন্দোলনের মূল কথা ছিল, চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান। (অর্থাৎ বাংলা হবে চীন)। তা হয়নি। হবার নয়।
চীনের এই বাংলাকে খুব বেশি দরকার। চীনের মানচিত্র দেখুন। ওদের পুরো পশ্চিম কোণ এখনো ধুঁকছে উন্নয়নের আশায়। আর সে উন্নয়ন সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। চীনের পূর্বকোণ দেখুন, উন্নত। কারণ, সেখানে সাগরের ছোঁয়া আছে। সাগর মানেই বাণিজ্য। চীন সেই অভিসন্ধি আজো পূর্ণ করতে পারেনি।


বাংলার ইতিহাস বলে, এখান থেকে শত্রু নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নিবে। এখানে সবাই সব হয়ে সবার সাথে মিশে যেতে পারে, কিন্তু বাংলার প্রতি শত্রুতা পোষণ করে টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেয় না।
এম্নি এম্নি পাইনি, দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১
৩৭টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×