somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগে যাওয়াটা আসলেই ভুল হয়েছে।

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৌদিকে জিগির দেখে একটুখানি লগিন না করে পারলাম না। বিরতিতে যতি দিয়ে তাই ফিরে আসা। শুধু এই পোস্টটার জন্যই।

শাহবাগ রক্তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। শাহবাগ, পবিত্র, বিনিদ্র রজনীর পর ফোলা লাল চোখকে জুটিয়ে দিয়েছিল 'গাঁজাখোরের' অপবাদ। আহা, সেই প্রথম দিন, ভয়ে ভয়ে যাচ্ছি। সাথে ছোটভাই, ওর বন্ধু আর শুধু আমি। ভয়ে ভয়ে যাচ্ছি, জামাত না আবার বোমা মারে!

ঘুরে বেড়াই।

আমি বৈশাখি মেলায় যাই না, শ্রদ্ধা লাগে, টান লাগে না আর খুব একটা। বইমেলায় যাই না, এখন আর বইমেলা টানে না। ভিড়বাট্টায় কক্ষনো না। দশটা ন্যায্য দাবি নিয়ে বিশটা জনসমাবেশ হয়, যাই না। পোষায় না। জনারণ্যে ঘুরে বেড়ানোর শখ মরে হাড়-হাড্ডি বেরিয়ে গেছে বহু আগেই।
অথচ জুলজুলে চোখে চেয়ে থাকি রাজাকারের দিকে।

জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে থাকি ভূমিজুড়ে বিছানো সস্তা পলিস্টারের সাদারঙা থানকাপড়ের দিকে। সেখানে বীভৎস রাজাকারের ছবি আঁকা। খালি ঘুরেই বেড়াই। মানুষগুলোর দিকে তাকাই। গর্বে বুক ফুল ওঠে। চোরাচোখে তাকাই ছেলেগুলোর দিকে- মেয়েগুলোর দিকে- বাংলাদেশ এখনো আছে। মরে নাই। মরে নাই।

তাকাতেই চিনতে পারি কয়েকজন ব্লগারকে। শরৎ এবং আরো অনেকে। কেমন যেন মজা লাগে, টান টান লাগে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকি দশ মিনিট, বিশ মিনিট। নাম ধরে একজনের আরেকজনকে ডাকতে শুনি। খুব ভাল লাগে।

দেখি শক্ত চোয়াল, দেখি শান্ত প্রতিবাদ, মৌন চাপা ক্ষোভ।

ছোটভাইয়ের বন্ধুটা বলল, ভাই, চলেন, যাইগা। আমরা কি এদের কিছু মোমবাতি কিনে দিতে পারি না?
-অবশ্যই!

শ দুয়েক টাকার মোমবাতি কিনলাম। রাস্তার এখানে সেখানে জ্বালাই, যেখানটাই ম্রিয়মাণ সেখানেই জ্বালাই। তারপর, আরো ঘন্টাখানেক পর শ্রান্ত হয়ে চলে যাবার আগে বসে বসে যে ছেলেগুলো ন্যায়বিচারের স্বপ্ন দেখছে, তাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম কিছু মোম।

ফিরে আসতে আসতে বললাম, খালি তিন দিন! তিনটা দিন যদি পার করতে পারে, বাংলাদেশ জ্বলবে! বাংলাদেশের মানুষের ভিতরে নতুন করে নিজের জ্বলন ফিরে আসবে।

এরপর তো গড়পড়তা প্রতিদিন গেছিই।
রাত কাটিয়েছি কতকত তার হিসাব নেই। আমার বাসা থেকেও খাবার গেছে শাহবাগে, সরকারি বিরানির খোঁজ তো পেলাম না। মানুষের টাকায় খাবার রান্না করতে দেখতাম।

এই যে একটা গণবিষ্ফোরণ, এই গণবিষ্ফোরণে দিনপাত, প্রাণপাত করা কিছু মানুষ আজকে উচ্চকিত কন্ঠে বলছে, শাহবাগে গিয়ে ঠিক করি নাই। এ ধারা কাজে আর যাব না।

শাহবাগের গণফিষ্ফোরণ ছিল শুদ্ধ অনুরণন। মন-মগজে ঝড়। কলঙ্কমুক্তির কামনা মাথার ভিতরে গেঁথে যাওয়া। মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে এর বিন্দুমাত্র তুলনা চলবে না, স্যাক্রিফাইসের দিক দিয়ে, কিন্তু লক্ষ্য ও অনুরণনের দিক দিয়ে ক্ষুদ্রতরভাবে তুলনা চলে।

এখন, মহান মুক্তিযুদ্ধের দুই বছর পর বঙ্গবন্ধুর চ্যালাচামুন্ডারা যখন স্বরাজ কায়েম করলেন, তখন একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি বলতেন, শালার এই দেশটাকে স্বাধীন করে তো ভুল করলাম!

অথবা, জেনারেল জিয়ার ডিপ্লোম্যাটিক চাপের বশে রাজাকার পুনর্বাসনের সময়? অথবা, এরশাদের ক্ষমতালিপ্সার সময়? অথবা, বিএনপি-আওয়ামীলীগের একের পর এক দেশবিরোধী চুক্তি, দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত, গণস্বাস্থ্যবিরোধী অনুমোদন, ক্রসফায়ার-গুম, অর্থনীতি অথর্ব-করা প্রক্রিয়া আর সবচে বড় কথা চুরি-চোট্টামির মহোৎসবে যদি কোন মুক্তিযোদ্ধা বলতেন, দেশটা স্বাধীন করে ভুল করলাম???

হ্যা, তারা অহরহই এ কথা বলেন। বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু আমরা, কস্মিন কালেও বিশ্বাস করি না, যে, এই প্রায়-মহামানব পর্যায়ের ব্যক্তিটা মুক্তিযুদ্ধে মরতে মরতে বেঁচে গিয়ে সন্তান হয়ে নিজের মাতৃরূপী দেশের জন্ম দিয়ে ভুল করেননি। করতে পারেন না।

ব্যতিক্রম শুধু রাজাকার ও তার পারিবারিক-সামাজিক বাচ্চাবৃন্দ।

ঠিক তেমনি, লজ্জাপ্রাপ্ত মুখ লুকাতে অপারগ হে অবসরপ্রাপ্ত সাবেক 'শাহবাগী', আপনি যতই যিকির তুলুন না কেন, শাহবাগে গিয়ে ভুল করলাম, কস্মিন কালেও সে কথা আমরা বিশ্বাস করছি না।

হ্যা, বিষয়টা এমন হতে পারে, যে আপনি বুঝে যান নাই। হুজুগেই চলে গেছেন। হুজুগে মানুষের একটা সমস্যা হল, সে কোন কাজটা ঠিক করেছে এবং কোন কাজটা ভুল করেছে সেটা নির্ধারণ করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে ভাল কাজ করেও পস্তায়। ভাবে, মানুষ যেহেতু বলছে চৌধুরীদের নতুন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আমি ভুল করেছি, আলবৎ আমি কোন একটা ভুল করেছি। সেটা আর একটু হলে ডিটেক্টও করে ফেলছি...

তবে, 'হুজুগে অবসরপ্রাপ্ত শাহবাগী', আপনাকে অ্যাশিওর করতে পারি, হুজুগে সারা জীবন এক লক্ষ একটা ভুল করে থাকলেও, আপনি এবার একটা ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বন্ধুকে দেখে গিয়েছিলেন অথবা স্বত:প্রণোদিত হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আপনার যেহেতু ডিপার্টমেন্ট অভ মেজারমেন্টে কিছু গলতি আছে, আমাদের ডিপার্টমেন্ট অভ মেজারমেন্টের নিন্মোক্ত বিশ্লেষণ আপনার দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করতে চাইছে-

আপনি নিচের এই এই প্রত্যাশা করে শাহবাগ গিয়ে থাকলে ভুল করেছেন-

১. আমি যেহেতু শাহবাগে যাচ্ছি, এতে আমীলীগের ফেভার করছি, তার পাল্টা ফেভারে আমিলিগ হ-গ্গ-ল রেযাকারের ফাঁসি দিয়ালাইবো।

২. আমি যেহেতু বিম্পি করি, কিন্তু সেইসাথে বাংলাদেশও করি, তাই শাহাবাগে গেছি, কিন্তু পরে বিতর্কিত হওয়ায় সাথে সাথে নিজের হাত ধুয়া নিসি। শাবাগ খারাপ।

৩. আপনি কি কোন ন্যাতা মেনে শাহবাগে গেছিলেন? যদি গিয়ে থাকেন...

৪. কোন রাজণৈতিক দলকে বিশ্বাস করে গেছিলেন? রাজণৈতিক দলকে বিশ্বাস করার মত ইমম্যাচুর্ড যদি সত্য সত্যই হয়ে থাকেন, তাহলে শাবাগ না গিয়ে গলির বিড়ির দোকানই আপনার উপযুক্ত ছিল।

৫. আপনি কি এই ব্শ্বিাসে শাবাগ গেছেন যে, সে কখনো বিতর্কিত হবে না?

৬. শাহবাগ কখনোই হাইজ্যাক হবে না? প্রথমে কমুনিস্টদের দ্বারা, পরবর্তীতে আলীগের দ্বারা এবং সবশেষে ইন্সটল্ড নেতৃত্বের দ্বারা?

৭. শাবাগে যারা হিরো থাকবে তাদের সোনার চামচে খাওয়ানো হবে, মহান হিরো নাম দেয়া হবে, কিন্তু নাস্তিক ফাস্তিক চরিত্রহীন লম্পট বলা হবে না?

৮. আপনি কি গার্লফ্রেন্ড/হবু গার্লফ্রেন্ড/সাবেক গার্লফ্রেন্ড বা বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডকে (মেয়েদের ক্ষেত্রে ভাইস ভার্সা বয়ফ্রেন্ড শব্দ হবে) ইমপ্রেস করার জন্য, অথবা টিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য অথবা বন্ধুদের সাথে ঘুরে দেখার জন্য, অথবা সবাই যায়, নিজেও একটু যাবার জন্য অথবা, 'যদ্যপি আমার গুরু এম্নি এম্নি যায়, তদ্যপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়' গেছিলেন?

আইচ্ছা,
দশ কথার এক কথা,
আপনি যিনি শাবাগ গিয়া এমনধারা ভুলটা করলেন, সে কি আমাদের মত অবোধ বালককে একটু শোনাতে পারেন, শাবাগ গিয়া এক্সাক্টলি কোন্ ভুলটা করছিলেন?

আরো একটা ভাইস ভার্সা কথা আছে, আপনে শাবাগ গিয়া ভুল করছেন এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট সহি। এহন পশ্ন হইল গিয়া, শাবাগ গেছেন কী কারণে?

আমি জ্বলনে গেছি। রাজাকারের বিচার হয় না বাংলাদেশে, ধর্ষিতা দেশের জন্য পথে গেছি।

আমার দেশমাতৃকার ধর্ষণের বিচারের জিম্মা খালেদা-হাসিনা-এরশাদের হাতে তুলে দিয়ে যাইনি। জ্বালা জুড়াতে গেছি। আপনি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই জিম্মা ওদের হাতে তুলে দিতে গেছিলেন?

তাহলে আপনি আবারো ভুল করবেন, ম্যান। জীবনভর করতেই থাকবেন।
তবে আশার কথা হল, এত ভুলের মধ্যেও একটা ঠিক কাজ ক্যাম্নে যেন করে ফেলেছিলেন। শাহবাগে চলে গিয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮
২৮টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×