somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মার্ট বাদাম বিক্রেতা ‘তাহমিনা কথা’

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকা: রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে ছোট-ছোট কালো ঠোঙ্গায় করে কী যেন ফেরি করছিলেন একটি মেয়ে। শিশু ভেবে ভুল করলেও বয়স তার কমও নয় আবার। হিসেবে তরুণী। প্রথম দেখায় যে কারোই ফেরিওয়ালা মনে হবে না তাকে। কারণ কানে সাদা হেডফোন, নেভি ব্লু রঙের শার্ট, পায়ে কনভার্স ও পরনে জিন্স, আর কী লাগে! এতেই তো অভিজাত পরিচয়।

কাছে গিয়ে দেখা গেলো- পিঠে ব্যাগ ও গলায় ঝুলানো বাঁশের মাঝারি ঝুড়ি থেকে ছোট-ছোট ঠোঙ্গায় ভরে বাদাম ফেরি করছেন তিনি। কিন্তু ক্রেতারা তাকে ‘বিক্রেতা’ ভাবতে নারাজ! প্রত্যেকেই অবাক!



কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই নাম জানালেন তরুণী- তাহমিনা রহমান। বয়স ২৩। পরিবার ও বন্ধুরা ডাকেন ‘কথা’ নামে। লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। জন্ম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায়। এখন বসবাস ধানমন্ডিতে। বাবা হাবিবুর রহমান সাটুরিয়া হাসপাতালে চাকরি করেন; একই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন মা আয়েশা হাবিবও। কিন্তু ২০০৮ সালে মা মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়েন বাবা, এদিকে পড়াশোনা সূত্রে মেয়েকেও বাবাকে ছেড়ে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে।

উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) শেষে মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য চাপ এসেছিল। এরপরে পুরো পরিবার মালয়েশিয়ায় স্থায়ী হতে চাইলেও বেঁকে বসেন কথা। দেশের মাটিতেই কিছু একটা করার ইচ্ছে তার।




সবাই যেন যেকোনো পেশাকে প্রাধান্য দেন সেই প্রবল স্বাধীনচেতা ইচ্ছা জন্মলগ্ন থেকেই। তবে প্রথমে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু নগরীর হ্যান্ডসাম ফেরিওয়ালা তাজুল ইসলাম লিখনের (২৯) ‘ড্রিম ভ্যান’ কথার মনে-প্রাণে সাহস যুগিয়েছে। যে কারণে এক অভিজাত পরিবারের মেয়ে হয়েও লিখনের মতো যেকোনো কাজকে মহান ভেবে নগরীর রাজপথে বাদাম বিক্রি শুরু তার।

এখন ধানমন্ডির বিভিন্ন পয়েন্টে বাদাম বিক্রি করছেন স্মার্ট কথা। সাটুরিয়া থেকে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বাদাম কেনেন তিনি। বাসায় বাদামগুলো ভালোমতো ভাজাসহ বাছাই করেন। পরে দেখতে নান্দনিক কালো ঠোঙ্গায় ঢুকিয়ে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। এতে করে দিন শেষে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় দুই থেকে আড়াইশ টাকা আয় করে ঘরে ফেরেন কথা।





যে কোনো মানুষই যেন যে কোনো কর্মকে গুরুত্ব দেন, সমানভাবে দেখেন এটাই চাওয়া কথার।

বাদাম বিক্রি প্রসঙ্গে তাহমিনা কথা বাংলানিউজকে বলেন, ভালো একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে জব (চাকরি) করতাম। জব ছেড়ে বাদাম বিক্রির পেশা নেমেছি। স্বাধীন জীবন আমার অনেক পছন্দ। সব কাজই মহান। কাজ সবসময় কাজই। কাজের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। বাদাম বিক্রি ও ট্রাভেল এজেন্সির কাজের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনি! কারণ দু’টি পেশাই আমার কাছে মহান। আর এমন চিন্তা-চেতনাই মানুষকে বদলে দিতে পারে। আমাদের ছোট একটি বাংলাদেশ- এতো বড় বড় জব পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সব হতাশা ছেড়ে যে কোনো কাজে মন দেওয়াই উত্তম।






তিনি আরও বলেন, অনেকে পণ করেন যে চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এতে করে সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না। হতাশা কাজ করে। আবার অনেকে চুরি-ডাকাতিসহ খারাপ পথ বেছে নিয়ে থাকেন। কিন্তু যে কোনো কাজে নিজেকে খুশি রাখতে পারাই ব্যক্তিগত অর্জন। আমি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেছি কিন্তু আমার ভালো লাগেনি। প্রতিদিন রোবটের মতো সময় মেনে চলা আমার জন্য কঠিন ছিল। তবে এখন নিজে কিছু একটা করছি অনেক ভালো লাগছে। বাদাম বিক্রির মধ্যেও স্বাধীনতা আছে...।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরেন কথা। এরপরে বন্ধুদের নিয়ে যেসময় আড্ডা দিতেন সেই সময়ে বাদাম বিক্রি করছেন এই তরুণী।




মেয়ে হয়ে বাদাম বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা রহমান কথা বলেন, আমি বাদাম বিক্রেতা; অনেকে বিশ্বাস করতেই চান না। কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসেন- আমি কি কাউকে সাহায্য করতে (তহবিল সংগ্রহ) এসেছি কিনা। তখন তাদের আমি বলি- আমি নিজেকে সাহায্য করতে এসেছি, আই ওয়ান্ট টু ডু সামথিং।

তিনি আরও বলেন, বাদাম বিক্রি করে কত টাকা আয় হলো বড় কথা নয়। দেশের সব ছেলে-মেয়েদের আমার বার্তা: ‘চলো কিছু একটা করি’। অলস সময়ে বসে না থেকে দেশের সব কাজকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭
২৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×