somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৪রাত ৩দিন

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বাংশে থাকা বা অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ । এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার এর উপকূল হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত । এখানে প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে অনেকে এখনো একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলেন ।



কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা এখনো জানা যায় নি । তবে খোঁজ খবর নিয়ে বা তথ্য মোতাবেক যতটুক জানা যায় তা হলো প্রথম প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিলেন জিঞ্জিরা নামে । এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতেন । কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো । ১৮৯০ সালের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসেন । তারা ছিলেন মূলত মৎস্যজীবি । যতটুকু জানা যায় প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিলেন ১৩টি পরিবার । তারা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ । কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয় । আগে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিল । সম্ভবত বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিল । কালক্রমে পুরো দ্বীপটি একসময় 'নারকেল গাছ প্রধান' দ্বীপে পরিণত হয়ে যায় । সেই সূত্রেই স্থানীয় অধিবাসীরা এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করেন ।



১৯০০ সালের দিকে ব্রিটিশ ভূ জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করেন । জরীপে তারা স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিষ্টান সাধু মার্টিনের নামানুসারে সেন্ট মার্টিন নাম প্রদান করেন । তারপর থেকে ধীরে ধীরে এই অঞ্চলটি অন্য স্থানের মানুষের কাছে সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে ।

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর ও দক্ষিণে লম্বা । এই দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় আবার পূর্ণ জেগে ওঠে । এগুলোসহ ধরলে এর আয়তন হবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বর্গ কিলোমিটার । এই দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা । দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার । দ্বীপটির পূর্ব দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার । সেন্ট মার্টিন্সের পশ্চিম উত্তর পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর ।



সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে ব্লু-মেরিন হোটেলঃ

ভৌগোলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত । উত্তর অংশকে বলা হয় নারিকেল জিনজিরা বা উত্তর পাড়া । দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশকে বলা হয় দক্ষিণ পাড়া এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে দক্ষিণ ও পূর্বদিকে বিস্তৃত একটি সঙ্কীর্ণ লেজের মতো এলাকা । এবং সঙ্কীর্ণতম অংশটি গলাচিপা নামে পরিচিত । দ্বীপের দক্ষিণে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের ছোট দ্বীপ আছে যা স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া নামে পরিচিত । এটি একটি জনশূন্য দ্বীপ । ভাটার সময় এই দ্বীপে হেঁটে যাওয়া যায় । তবে জোয়ারের সময় নৌকা প্রয়োজন হয় ।



সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপটির ভূ-প্রকৃতি প্রধানত সমতল । তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায় । এ দ্বীপটির প্রধান গঠন উপাদান হলো
চুনাপাথর । দ্বীপটির উত্তর পাড়া এবং দক্ষিণ পাড়া দু’জায়গারই প্রায় মাঝখানে জলাভূমি আছে । এগুলো মিঠা পানি সমৃদ্ধ এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক । দ্বীপটিতে কিছু কৃষি উৎপাদন হয়ে থাকে । তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম । সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১শ ৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১শ ৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১শ ৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২শ ৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১শ ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় । স্থানীয়ভাবে পেজালা নামে পরিচিত Sea weeds বা অ্যালগি (Algae) এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল সেন্ট মার্টিন্সে প্রচুর পাওয়া যায় । এগুলো বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে তবে লাল অ্যালগি Red Algae বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় । এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ।

অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি । মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি । [সামুদ্রিক কচ্ছপ সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত । দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেই । তবে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় আছে । দক্ষিণ দিকে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ আছে। অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি ।



সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের প্রধান জেটিঃ

আনুমানিক ১০০ থেকে ১২৫ বছর আগে এখানে লোক বসতি শুরু হয়েছিল । বর্তমানে এখানে সাত হাজারেরও বেশি লোক বসবাস
করে । দ্বীপের লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এখানকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা হলো মাছ ধরা । পর্যটক ও হোটেল ব্যবসায়ীরাই প্রধানত তাদের কাছ থেকে মাছ কেনেন । ছোট মাছ পাটিতে বিছিয়ে আর পিটকালা মাছ বালুতে বিছিয়ে এবং বড় জাতের মাছ পেট বরাবর ফেড়ে মাচায় শুকানো হয় । তাছাড়াও দ্বীপবাসী অনেকে মাছ ও নারিকেল, পেজালা এবং ঝিনুকের ব্যবসা করেন ।





সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে কেয়া গাছের বন । তাছাড়াও কিছু মানুষ দোকানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে । ছোট ছোট শিশুরা দ্বীপ থেকে সংগৃহীত শৈবাল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকে । সম্পূর্ণ সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপেই প্রচুর নারিকেল এবং ডাব বিক্রি হয় ।



মায়ানমারের আরাকন থেকে বাংলা ভাষি রোহিঙ্গাদের দ্বীপ অঞ্চলে প্রায়শই দেখা যায় । দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র । পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করে । সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে । একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে । সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল ।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×