somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনমনে...(৫)

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গীটারের ব্যাগটা কোলে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে বসে আছি আমি। অন্য প্রান্তে তানিয়া। দুজনেই ওয়েট করছি কখন বাসটা আসে!
একটু পর পর ঘড়ি দেখছে তানিয়া। দেখে মনে হচ্ছে বিরাট কোন ভুল করে ফেলেছে।
সরি! অনেক দেরি হয়ে গেল আজ! বললাম আমি। রাতের দিকে সাধারণত বাস কমে যায় এদিক দিয়ে। বাসায় গেলে ঝাড়ি খাবে নাকি?
না… তা না! একটু টেনে বলল সে। বাবা দুঃচিন্তা করবে শুধু শুধু…
ফোন করে বলে দাও!
দিয়েছি তো! কিন্তু তার পরও… কোলের উপর হাতদুটো রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
গান গেয়ে কেমন লাগল! তুমি দেখি আমার চেয়েও ফেমাস হয়ে গেলে আজ!
মোটেও এমন না! সবাই আপনাদের গান পছন্দ করে…
তুমি এখনো কর না…?
আসলে… এমন না। আপনি ভুল ভাবেন… এভাবে। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি মোটেও এমন বলি নি যে আপনাদের গান ভালো লাগে নি…
তার মানে ভালো লেগেছে…? মুচকি হাসলাম আমি
সেও হাসল। কিছু বলল না।
ভয় পেয়েছিলে? সবার সামনে গান গাইতে?
অস্বস্থি লাগছিল, কিছুটা। ভাবি নি হঠাৎ করে ওখানে গান গাইতে হতে পারে! আর ওডিয়েন্সের সামনে গান গাইবার এক্সপেরিয়েন্স আমার আছে…
মনে পরল, সে তো আবার ছায়ানটে গান গায়!
কিন্তু তুমি অনেক সুন্দর গান গাও! আমি তোমার ফ্যান হয়ে গেছি! অটোগ্রাফ দিবে?
ধুর…! হেসে ফেলল সে। আমিও হেসে ফেললাম।
এর মাঝে বাস চলে এল। মহিলা সিট ফাকা পেয়েও আজ তানিয়া সেখানে বসল না, বরং পিছনের দিকের পাশাপাশি দুটো সিটে বসলাম…
বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক কথাই হলো। বললাম গীটারে কিভাবে দিন শুরু হয়েছিল আমার। কিভাবে হঠাৎ লেজারের অ্যালবামে ডাক আসল আমাদের। কিভাবে হঠাৎ একদিন লিঙ্কন ভাই আমাকে বলেছিল তুমি অনেক ভালো করবে… আরো অনেক কথাই হলো। সে কিছু বলল না। আমার বলার আগ্রহ দেখে মাঝে মাঝে হাসছিল। ওর কথাও জানলাম… কিভাবে গান শুরু হল, হারমোনিয়াম বাজালো শিখল। সজল স্যার নামের কেউ ছিল যে তালের বাইরে গেলেই প্রচন্ড বকা দিত তাকে। আমার খুব রাগ হলো লোকটার উপর!
অন্ধকার রাত, মাঝে মাঝে রাস্তার হলুদ বাতির আলো জানালা ঘেষে ভেতরে ঢুকছে। অন্য রকম এক প্রশান্তি লাগল… জীবনে সুখী হলে হলে কি অনেক কিছু লাগে? হঠাৎ বাতাসের ঝাপটায় তানিয়ার চুল আমার মুখ ঢেকে ফেলল। আলতো করে মুখ থেকে তার চুল সরালাম আমি… তার নরম চুলের স্পর্শ লেগে থাকল আমার হাতে… অন্ধকারের মাঝে ঠিকই অনুভব করলাম সে অনেক লজ্জা পাচ্ছে! মুচকি হাসলাম আমি।
হেটে হেটে বাড়ির পথে যাচ্ছি। আজ তানিয়া অনেক ঘেষে হাটছে। হয়তো বুঝতে পারছে এই ছেলেকে ভরসা করা যায়! অনেক ভালো লাগল আমার। আকাশের চাদটা যেন আজ তার সব আলো ঝরিয়ে দিচ্ছে মাথার উপর! আচ্ছা চাদকি সব সময়ই এমন থাকে? নাকি আজকে অন্য রকম উজ্জ্বল?
থেমে দাড়ালাম আমি। এখান থেকে তানিয়া আলাদা যাবে।
তুমি একা যেতে পারবে তো? দুঃচিন্তা ফুটে উঠল আমার গলায়। রাততো অনেক হয়ে গেল…
হেসে মাথা কাত করল সে। পারব।
আমি এগিয়ে দিতে পারি… অস্বস্থির সাথে বললাম। আমার সমস্যা নেই…
না লাগবে না… হেসে ফেলল সে। মুখে হাত দিয়ে হাসি থামিয়ে আবার বলল ছয় বছর ধরে এখানে থাকি… কই কিছু তো আর হলো না!
কিছু হতে চাইছো নাকি? গোমড়া মুখে বললাম। ঠিক আছে যাও! সাবধানে যেও! সামনে দেখা হবে…
হুম! মাথা ঝাকালো তানিয়া।
আর… আমাকে তুমি করে বলবে এখন থেকে বুঝলে! আলতো ধাক্কা দিলাম! অবশ্য সবার সামনে না! বাসে করে আসার সময় বলবে বুঝছো?!!
বুঝলাম! ঠিক আছে ভাইয়া আসি!! ভালো থাকবেন! ঠাট্রার সুরে এক দিকে কাত হয়ে আদুরে ভংগিতে বলল।
কি বললে…
বাই! বলে অন্ধকার গলিতে ঢুকে গেল সে। হলুদ বাতিটার নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। তানিয়ার সাথে কথা বলে মনটা অনেক হালকা হয়ে গেল! মনে মনে বললাম ভালোইতো!!
আগের পর্ব
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×