somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনমনে...(১০)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না না, না!
সমানে চেচিয়ে যাচ্ছে তানিয়া! কিছুতেই হবে না! হায় আল্লাহ! দু হাতে মুখ ঢেকে রাখছে। কিভাবে আমি যাব সবার সামনে! সাগর!!
চেহারা দেখে মনে হল কান্না শুরু করতে আর বাকি নেই।
আরে এত ভয় পাচ্ছ কেন? আমার পার্টি! তুমি আসলে তাতে কি হবে?
তাই বলে এভাবে? তোমার গাড়িতে করে! নাকি সুরে বলল। লোকে কি ভাববে? চিন্তিত দেখা গেল তাকে।
কেনো, লোকে কি ভাববে? এমন ভাব ধরলাম যেন আমি কিছুই বুঝি না!
লোকে… তুমি… ফাইজলামি করো আমার সাথে, না? ফাজিল!
হাসতে হাসতে ফেটে পরলাম। কিছু হবে না! পার্টি মিন্স পার্টি।
তুমি আগে জানাতে! এখন ক্লাশ করে, এই ক্লান্ত চেহারা নিয়ে, এই ড্রেসে কি অনুষ্ঠানে যাওয়া যায় নাকি! নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল তানিয়া।
আরেহ আমি নিজে জানতাম নাকি! আর আমি যে অফিস থেকে দৌড়ে আসলাম, আমার কোন প্রিপারেশন আছে নাকি? প্রিপারেশন করেছে তো সব শোভনেরা! ওর নাম মনে করতেই মেজাজটা বিগরে গেল। ধুর…
ব্যাগ থেকে চিরুনী বের করে চুল আচড়াতে থাকল সে আনমনে। আমি যে তাকিয়ে দেখছি প্রথমে খেয়াল করল না। আমাকে দেখে আলতো করে চিরুনী নামিয়ে রাখল। এমনি, আরকি কৈফেয়তের সুরে বলল। আমি হাসলাম, স্নেহের হাসি হয়তো একে বলে। নিজের প্রিয়জন কোন প্রিয় কাজ করছে দেখলে বোধহয় এই হাসিটিই মুখে চলে আসে।
থামলে কেন? হেসে বললাম।
কারণ তুমি যদি সামনে না তাকাও তো এক্সিডেন্ট করবো আমরা! কঠিন সুরে বলার চেস্টা করল। খুব একটা সফল হল না!
আতে ঘা লাগল যেন একটু! কই আমি তো সামনেই তাকিয়ে আছি!
আচ্ছা! তাই না?
হা তাইইইইইইই!
দুজনেই হাসে ফেললাম। দু তলা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্কিং করলাম। এরপর তানিয়ার দিকে তাকালাম। তার মাঝে টেনশান ভাবটা চলে এসেছে। লুকিং গ্লাসটা সরিয়ে নিজেকে একবার দেখল।
তুমি আমার সাথে থাকবে কেমন? কোন ভয় নেই!
আমি একা দেখেই তো ভয় লাগছে! আহত স্বরে বলল।
বোকা মেয়ে, তুমি একা হতে যাবে কেন? তোমার কেয়া, আরো কি যেন নাম, তোমার রবীন্দ্রসংগীত টীম, আনিকা, নিহিন এদের সবাই আছে! হেসে বললাম। সবাইকেই নিয়ে এসেছি, সো কোন ভয় নেই!
সত্যি! তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।
হ্যা রে বাবা! তো শুরু করা যাক?
নার্ভাস ভঙ্গিতে মাথা ঝোকালো তানিয়া।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম, নেমে তার পাশের দড়জা খুলে দাড়ালাম। আলতো করে নেমে আসল সে। রেস্টুরেন্টের গেইটেই দেখতে পেলাম শোভন, জনি আর হিমেলকে। জনি শীশ দিয়ে উঠল।
প্রত্যেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম তানিয়াকে। বিশেষ করে জনি ও হিমেলের সাথে। জনি আমাদের বেস গীটারিস্ট, হিমেল ভোকাল এন্ড গিটার… গাইস! ইটস তানিয়া!
হাই! তারা কথা বলতে শুরু করল। সারা পথে যতই নার্ভাস থাকুক না কেন এখন তানিয়াকে ভালোই কনফিডেন্ট দেখাচ্ছে! সবার সাথে হেসে হেসে পরিচিত হতে থাকল একে একে… যেন্… যেন আমার… আমার কেউ আমার পৃথিবীর সাথে একে একে পরিচিত হচ্ছে… অদ্ভুত ভালোলাগা ঘিরে ধরল আমাকে…

রাসেল ভাই এগিয়ে এসে হাত মিলালো। কনগ্রেচুলেশান্স মিঃ সাগর! টিটকারী মারল কি না বুঝতে পারলাম না। নাইস পার্টি, থ্যাঙ্কস ফর ইনভাইটিং!
ভদ্রতা করে বললাম না যে নিজেইতো ইনভাইট করেছেন নিজেকে! আমি আর ইনভাইট করলাম কখন!
বরং দেতো হাসি দিলাম। কোয়াইট ওয়েলকাম! আর এই হচ্ছে তানিয়া। আর তানিয়া, ইনি আমার ইমিডিয়েট সিনিয়ার রাসেল ভাই।
ও তুমি তানিয়া! একটু অবাক মনে হল রাসেল ভাইকে। সো নাইস টু মিট ইউ! সাগর তো তোমার কথা অনেক বলে। কানে কানে বলল, নাহ, তোমার টেস্ট তো খারাপ না!
আবার ফিরলো তানিয়ার দিকে, তোমার সাথে পরিচয় হয়ে খুশি হলাম! একদিন চলে আসো আমাদের অফিসে! সবাই মিলে জম্পেস আড্ডা হবে, কেমন?
আসলে… অস্বস্থিতে পরে গেল বেচারা। সবাই তাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ট্রিট করছে ব্যাপারটায় এখনো ধাতস্থ হতে পারছে না সে। হয়তো… কোন দিন!
রাসেল ভাই আর তানিয়া গল্প করতে থাকল। আমি সামনে এগিয়ে আনিকা, নিহিনদের সাথে যোগ দিলাম। মেয়েরা খুশি মনে তাদের আড্ডায় আমাকে নিল!
সাগর ভাই! থ্যাংক্স এরকম একটা পার্টি দেবার জন্যে!
পাশে থেকে শোভন বলে উঠল, এতো সামান্য আয়োজন! আমরা যতটুকু সাধ্যমত করতে পারি আর কি!
কটমট করে তার দিকে তাকালাম। একটা ঘুষি নাকি দুইটা দিব ভাবছি।
আনিকা তার কথায় ভালোই প্রভাবিত হল। সব দাত বের করে হাসি দিল। না কি যে বলেন! যা করেছেন এটাই অনেক, আপনার প্ল্যান এটা তাই না?
হ্যা! বুক ফুলিয়ে জবাব দিল শোভন। আর আমি বিড়বিড় করতে থাকলাম… আর চাপা মারিস না, দোহাই লাগে!
সো কুল! শোভনের দিকে তাকিয়ে থাকল সে! তাকানোর ভঙ্গিটা আমাকে ভাবনায় ফেলে দিল কিছুটা!
তাদেরকে আমার ব্যান্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবার উচ্ছ্বাস দেখে মনটা ভরে উঠল আমার…

সো… একটা টোস্ট করি কেমন?
সবার এটেন্সান নিল শোভন। তো, গ্লাস হাতে নিয়ে বলা শুরু করল। ব্যাপারটা হচ্ছে সাগর! সে কিছুতেই পার্টি দেবে না পন করে রেখেছিল, আর আমরা ভাবছিলাম শালা চাকরি তো পাইছিস, খাওয়াটা অন্তত আমাদের প্রাপ্য। তাই এই শর্ট প্ল্যান! যতটুকু পারা যায়। তো, সাগর! জীবনে সুখী হো, গার্লফ্রেন্ড বউ বাচচা নিয়ে হ্যাপী থাকবি এটাই এই পুরোনো বন্ধুর কাছে থেকে প্রত্যাশা!
আড় চোখে তানিয়ার দিকে তাকালাম, সেও তাকাতে গিয়ে ধরা পরে গেল।
থাক আর ইমোশনাল করিস না! ভাবছিলাম বের হয়ে কষে একটা কষে ঘুষি মারবো, কী ইমোশোনাল করে দিলি!!
হাহাহা! সো! ফর সাগর! গ্লাস উচু করল সে, সাথে সবাই। কে যেন মাঝ দিয়ে বলে উঠল অ্যান্ড ফর তানিয়া!
হাসিতে ফেটে পরল সবাই। আর বেচারী লজ্জায় মরে যাবার যোগার…
চারদিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। life is full of colors…. হয়তো অনেক অনেক বছর পর মনে পড়বে, যখন সময় ছিল তখন কি সব করে বেড়িয়েছি আমরা…সবাই। জীবনটা হয়তো উপভোগ করে গিয়েছিলাম, যখন সময়টা ছিল পথ চলে এগিয়ে যাবার…

তুমি পাগল! তুমি কি করেছ দেখেছো! এখনো আমার উপর রাগ ঝারছে তানিয়া। বাস স্টেন্ড থেকে হেটে হেটে বাসায় ফিরছি। আমার একটু সামনে হাটছে তানিয়া। তাকে আমি ফলো করে যাচ্ছি।
লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিল! দু হাতে মুখ ঢাকল। আই মিন কেউ এমন করে? সাগর! কি ভাবছ তুমি! কি করে আমি মুখ দেখাবো!! মেকি কান্নার ভাব ধরল সে।
তার কান্ড দেখে হাসতে থাকলাম। you did great there! অনেক ভালো দেখিয়েছো তুমি! কি হয়েছে আর এমন?
ওটা তুমি বুঝবা না! পিছনে ঘুরে ঝারি দিল! তারপর আবার হাটা ধরল।
তানিয়া… ধরা গলায় বললাম।
আবার পেছনে তাকালো মেয়েটা। চোখ বড় বড় করে আছে। কী?
থ্যাংকস… অনেক…
রেগে উঠতে গিয়েও থেমে গেল সে। হালকা হাসি ফুটে উঠল। তুমি পাগল! হাসল। আমিও কিছুটা ইঞ্জয় করেছি যদিও!
তাই! এতক্ষণ না গুষ্টি উদ্ধার করলে আমার!
হ্যা! ওটা তোমার প্রাপ্য ছিল। আংগুল নাচিয়ে এমন ভাবে বলল, যেন কিছুই না! তাছাড়া ভালোই ছিল, তোমার বসকে ভালো মনে হল! ওনি অনেক কিউট!!! চোখ বন্ধ করে দুই হাত ধরে আদুরে ভঙ্গিতে বলল সে।
কী? মাথায় রক্ত চড়ে গেল! আমার বসকে তোমার কাছে কিউট লেগেছে?
হ্যা! সে অনেক কিউট করে কথা বলে! তার উপর আমার অনেক খবরও নিয়েছে।
আজকে তোমাকে নিয়ে যাওয়াই উচিৎ হয় নাই! বিড়বিড় করলাম।
বাই! মুচকি হেসে হাত নেড়ে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল সে। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে তাকালো। জোরে জোরে হাত নারলাম আমি। হালকা স্বরে বললাম… বাই…তানিয়া…

আগের পোস্ট

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×