somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকতলীয়তা (২)

১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এলার্মের একটানা কর্কষ ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি। আশেপাশের সব কিছুই অপরিচিত ঠেকছে। ধীরে ধীরে মনে পড়ল সব কথা।

একটা হোটেলের রুমে পড়ে ঘুমাচ্ছি আমি! আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলাম। স্লাইড গ্লাসের মাঝ দিয়ে সকালের কোমল রোদ এসে পড়ছে। ঘড়ি দেখলাম, বারোটা বাজে প্রায়।

কি করা যায় ভাবছি! যেহেতু বাড়ি থেকে পালিয়েই এসেছি তাহলে একা একা একটা অ্যাডভেনচার করলে কেমন হয়? কেউ জানবে না কি হচ্ছে! ভাবতেই ভালো লাগল!

পকেট থেকে ওয়ালেটটা বেড় করে দেখলাম। ২ টা কার্ড এখনো আছে! খুশি হলাম এবছর থেকে বন্ধুরা মিলে একটা স্টার্টআপ শুরু করার জন্যে। ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি বন্ধুরা অবসর সময়ে ওয়েব ডিজাইনের একটা ফ্রীল্যান্সিং স্টার্টআপও শুরু করেছি। তাই একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড সবসময় পকেটে থাকে। আর এখন সময় এসেছে খরচ করার!

রাশিককে ফোন করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করে নিলাম। বাবা মা নাকি তাকে জ্বালিয়ে মারছে। বেচারার আমার জন্যে অনেক ভুগতে হচ্ছে মনে হল!

তাকে আস্বস্থ করলাম ফিরে এসেই কেএফসি তে ট্রিট দিব একটা! ট্রিটের কথায় কাজ হল!

ফ্রেশ হয়ে ফোনের কল লিস্টে চোখে পড়ল অজানা একটা নাম্বার। মনে পড়ল মেয়েটা কল করেছিল। কেমন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল। আরেকবার দেখা হলে ভালো লাগত। কি যেন নাম… ইপ্সিতা… চোখগুলো অনেক সুন্দর তার… সে এমন মেয়ে যে চোখ দিয়েও হাসতে পারে। কাল ব্যাপারটা খেয়াল হচ্ছিল না বাট এখন মনে পড়ল! মায়াময় চোখগুলো বড় বড় করে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল যেন বলছিল আমি বুঝে ফেলেছি তুমি কিছু লুকাচ্ছো!

দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে উঠে দাড়ালাম। কিছু কাজ করা দরকার!

প্রথমেই গেলাম চট্রগ্রাম ডক ইয়ার্ডে। সেখানে আমাদের কার হাউজের একটা শো রুম আছে। জাপান থেকে ইম্পোর্ট করা গাড়িগুলো প্রথমে এখানে রাখা হয়। পরে অর্ডার অনুযায়ী ঢাকায় পাঠানো হয়। গোডাউনের ছেলে ইশতিয়াকের সাথে পরিচয় ছিল আমার। ঢাকায় তার সাথে অনেক কাজই করা লাগত। তাই ফেলে রাখা একটা ২০০৫ মডেলের টয়োটা এলিয়ন নিয়ে বেড় হয়ে এলাম খোলা রাস্তার মাঝে। অবশ্যই কোন প্রকারের স্ক্র্যাচ লাগানো যাবে না এই শর্তে সে গাড়িটা দিল কয়েক দিনের জন্য।

শীতের সকালের চট্রগ্রামের ফাকা হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজের অজানতে মুখে হাসি ফুটে উঠল। অনেক শখ ছিল আমার অজানার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলার! আজ তা পূরণ হয়েছে। জানালার গ্লাস নামিয়ে দিলাম। হু হু করে আসা ঠান্ডা হাওয়া আমাকে প্রায় জমিয়ে দিচ্ছে। এক পাশের দিগন্তে সমুদ্রের হালকা আভাস দেখা দিচ্ছে। এই প্রথমবারের মত মনে হল live is beautiful!



আশে পাশে টো টো করে ঘুরতে ঘুরতেই সারাটা দিন চলে গেল। একবার হোটেলে ফিরে গিয়েছিলাম ফ্রেশ হতে, এরপর আবার বের হলাম ঘুরে দেখতে। ফয়েজ লেকে গিয়ে নৌকা চড়লাম, কর্ণফূলীর তীরে একা বসে রইলাম। কিন্তু বারবার অই মেয়েটার কথা মনে পড়তে থাকল… ইপ্সিতা… তার কি মনে আছে আমার কথা? নাকি…

মনে থাকার কথা তো না। ট্রেনে তো কত মানুষেরই সাথে দেখা হতে পারে… মনটা খারাপ হতে থাকল। কোন কাজ নেই তাই মমিন রোডে গিয়ে সেন্ট্রাল হসপিটালটা খুজে বেড় করলাম। নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম উদ্দেশ্যহীন ভাবে… হয়তো কারো জন্যে অপেক্ষা… হয়তো না…

নয়টার দিকে হঠাৎ হুশ ফিরল! অজানা শহরের কোথাও এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটা অস্বস্থিকর বটে। গাড়িতে ফিরে এলাম… উদ্দেশ্য হোটেলে দিরে যাওয়া… ভাবছি আরো একদিন অপেক্ষা করব এখানে… যদি মেয়েটাকে খুজে পাই… আর না হলে কক্সবাজার কিংবা বান্দরবান কোন এক দিকে রওনা দিয়ে দিব। অবশ্য বান্দরবন গেলে গাড়িটা ফেরত দিয়ে আসতে হবে। বান্দরবানে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবাও যায় না!

হঠাৎ করে চোখে পড়ল কিছু! তাড়াতাড়ি ব্রেক কষে গাড়ি থামালাম! অন্ধকার রাস্তার পাশে কেউ যেন বসে আছে। হেডলাইটের আলোতে মনে হলো কেউ রাস্তার পাশে বসে অঝোরে কাদছে! কিছুটা পরিচিত মনে হল!

আরে এতো ইপ্সিতা! এখানে কি করছে? পারিপার্শিকের পরিস্থিতিতে বেকুব হয়ে গেলাম। কি হচ্ছে? গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে তার কাছে গেলাম, দড়জাটা হা করে খোলা রইল…

ইপ্সিতার সামনে ঝুকে বসলাম। হালকা গলায় বললাম, ইপ্সিতা, কি হয়েছে তোমার?

মুখ তুলে তাকালো সে, চোখ দিয়ে অবিরাম পানি পড়ে যাচ্ছে! চিনতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না। হেডলাইটের আলোতে তার কান্নারত চেহারা চিকচিক করছে। অবাক হয়ে ভাবলাম কাদতে থাকলে কাউকে কি করে এত সুন্দর লাগতে পারে!

ইপ্সিতা, আমি! রাসেল! ট্রেনে যে দেখা হয়েছিল মনে নেই? কি হয়েছে তোমার? এখানে কেন?

রা…রাসেল? ফুপিয়ে উঠল সে। গলা শুনে মনে হল একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। আমার মন চিড়ে একটা কষ্টের স্রোত নেমে গেল ওর কথা শুনে…

তুমি… কোত্থেকে এলে… আমি…

উঠো এখান থেকে! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম! নির্জন রাস্তা যেন কালিগোলা অন্ধকার। রাস্তার কোন লাইটও চোখে পড়ল না। জায়গাটা ভালো ঠেকল না আমার।
জায়গা টা ভালো লাগছে না আমার। উঠো অন্য কোথাও যাই… ওঠো!
উঠার চেষ্টা করে আবার বসে পড়ল সে। এখনো ফোপাচ্ছে। দাড়াবার শক্তি পাচ্ছে না এখনো। হাত বাড়িয়ে ধরে উঠালাম তাকে। কাধে ভর দিয়ে গাড়িতে বসালাম। ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়াই ছিল, উঠেই টান দিয়ে অন্য দিকে সরে গেলাম। Somewhere safe!

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×