somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-৩

০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিটিংরুমে আবার বসেছে দলটি। টেবিলের সামনে দলপতির আসনে বসে আছে লিও। হাতদুটো গালে ধরে রেখেছে। তার উল্টোদিকে বসে আছে ইরা। তার বা পাশে জিম ও ডানপাশে কিরু২। জেনা ইরার পাশে বসেছে।

তো, গলা খাখরি দিল লিও। স্কাউটশীপ স্ক্যান করে ডেটা পাঠিয়েছে। তোমরা কি কি ইনফরমেশন পেয়েছো শুরু করো।

কিরু২ দাঁড়িয়ে গেল। লেজার স্ক্যানের মাধ্যমে পুরো স্পেসস্টেশনটারই ম্যাপ করে ফেলা হয়েছে। অত্যন্ত পুরোনো একটা মহাকাশ স্টেশন এটা। শেষবারের মত এখানে কোন মহাকাশযান ডক করেছে ২৭ বছর আগে। কোন প্রাণের অস্তিত্ব আর নেই। কার্বন টেস্টের মাধ্যমে আরো সূক্ষ্ণভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। কোন ভয়ঙ্কর ধরণের থ্রেট নেই।

স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল লিও। আর কিছু কিরু?

আপাতত আর কিছু নেই। আরেকটা কথা। স্টেশনটার মেয়াদকাল শেষ হয়েছে প্রায় দশবছর হলো। তাই এর ডিফেন্সিভ শীল্ড ভেঙ্গে পড়েছে। রেডিও এক্টিভিটি অনেক বেশি। স্যুট ছাড়া সেখানে অবস্থান করা যাবে না। বসে পরল কিরু২।

তুমি ছাড়া। হেসে বলল ইরা। তুমি তো স্যুট ছাড়াও যেতে পারবে!

ট্রিনিটির উচ্চস্বরে সতর্কসংকেত বেজে উঠল সাথে সাথে। সবাই বুঝতে পারল ইরা একটা প্রথম মাত্রার অপরাধ করেছে। দশম জেনারেশন রবোটকে মানুষের চেয়ে আলাদা করে তুলনা করা প্রথম মাত্রার অপরাধ। অবশ্য লিও এসব ব্যপারে অনেক ছাড় দিয়েছে তাদের। তার ভাস্যমতে মহাকাশে একসাথে থাকতে হলে এসব ছোটখাটো ব্যপারে ছাড় দেয়াই ভালো। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকে এতে। কিরু২ ও মৃদু হাসল।

ঠিকই বলেছো ইরা। আমি বাদে সবাই ওখানে রেডিয়েশনে মারা যাবে।

হেসে উঠল বাকিরা। জেনা বাদে। তাকে বরাবরের মতই গম্ভীর দেখাচ্ছে। মহাকাশযানটার ছাদের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।

তাহলে এখন আমরা কি করবো? জানতে চাইলো জিম। এখনি চলে যাবো?

হাসল লিও। এত সহজ হলে তো হয়েই যেত জিম। প্রথমে দূর থেকে ডেটা কালেক্ট করে দেখেছি আমরা কোনো ডেডলি থ্রেট নেই এখানে। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে স্পেসস্টেশনটাতে নেমে তার সেন্ট্রাল কম্পিউটার চেক করে দেখা। সেখানে অবস্থান করা। এক্ষেত্রেও যদি কোন বিপদের দেখা না দেয় তাহলে আমরা রিপোর্ট করে চলে যেতে পারি।

তো কবে স্পেসস্টেশনটায় নামবো আমরা? ভ্রু কুচকালো ইরা।

তাড়াতাড়ি। আরো একবার ডেটাগুলো ভেরিফাই করে নাও। তারপর আমরা ডক করবো…

দাঁড়াও! হঠাৎ উচ্চস্বরে বলে উঠল জেনা। সবাই তার দিকে ঘুরে তাকালো।

কি হলো? লিও একটু অবাক হলো।

এখনি ডক করতে চাচ্ছো ঐ স্টেশনটাতে! তোমরা কি একটা জিনিস একবারো ভেবে দেখ নি! স্কাউটশীপের ডেটা ঠিক আছে মানেই কি ঐ স্টেশনটাতে কোন থ্রেট নেই? একটানা কথাগুলো বলে গেল জেনা।

জেনার দিকে তাকালো লিও। সে ইরার মতো সুন্দরী নয়। তার লাবণ্যতা কমনীয়তা নেই যেমনটা ইরার মাঝে ভরপুর আছে। কিন্তু তার চেহাড়ায় একটা দিধাহীন ভাব আছে। মনে হয় সে তার কাজে বদ্ধপরিকর। জেনার চোখের তীক্ষ্ণতা অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য করে। তার মানে এই নয় যে সে খুব কঠোর প্রকৃতির মানুষ। তাকে দেখলে লিওর মনে হয় সে অনেক বেশি নিঃসংগ, অনেক ভঙ্গুর। তার কঠোর মুখোশের আড়ালে অনেক দুর্বল একটা প্রতিচ্ছবি লিওর চোখে ভাসে।

হা বলো… হালকা স্বরে তাকে উৎসাহ দিল লিও।

আমি স্ক্যানিং রেডারে কমান্ড দিয়ে রেখেছিলাম যখন স্কাউটশীপটা স্পেসস্টেশনের মাঝে ম্যাপ তৈরির জন্যে গিয়েছিল। কমান্ডটা ছিল স্পেসস্টেশনটার যে মডিউল তৃতীয় মাত্রার বীকনটা পাঠায় সেটা খুজে বের করা আর সেটা স্ক্যান করা। বলতে বলতে জেনা তার হাতের পডটার স্ক্রীনে যা ডিসপ্লে করা ছিল তা বড় স্ক্রীনটায় কাস্ট করে দিল। সবাই দেখতে পাচ্ছে এখন জেনা যা দেখাতে চাইছে।

তো স্কাউটশীপটা স্ক্যান করে আসার পর আমি বীকন মডিউলটার ডেটা দেখতে থাকি। নাটকীয় ভাবে থামলো সে।

বলে যাও! ইরার আর তর সইছে না। কি দেখলে।

দেখলাম যে মডিউলটা থেকে তৃতীয় মাত্রার বীকন বের হয়েছিল সেটা অনেক আগে থেকেই অকেজো হয়ে আছে। মানে অনেক অনেক আগে থেকে।

এর মানে কি? গনগনে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করল জিম।

এর মানে বিজ্ঞান পরিষদ যখন তৃতীয় মাত্রার বীকনটা ইন্টারসেপ্ট করলো তার বহু আগে থেকেই স্পেসস্টেশনটার ট্রান্সমিশন মডিউলটা নষ্ট হয়ে আছে।

সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

ভাষা খুজে পাচ্ছে না কেউ। তাহলে, কাপা কাপা গলায় বলল ইরা বিজ্ঞান পরিষদ ব্যপারটা জানল কিভাবে?

তুমি কি নিশ্চিত? সামনে ঝুকে এল লিও। বিজ্ঞান পরিষদ ভাবছিল ফলস এলার্ম হবে এটা। এমনকি ঘটতে পারে যে এই মডিউলটা নষ্ট দেখে অটোমেটিক সিগনালটা চলে গেছে?

শীতল হাসল জেনা। কম্পিউটারের ভাষায় অটোমেটিক বলতে কিছু নেই। হয় সিগনাল গেছে, নয়তো যায় নি। আমি নিশ্চিতভাবে বলছি এই মডিউল থেকে কোন সিগনাল যায় নি।

তার মানে এই স্পেসস্টেশন থেকে কোন সিগনাল যায় নি? অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জিম।

আমি তা বলি নি। কোন মহাকাশযান, ট্রুপারশীপ, রেঞ্জারশীপ কোনকিছু এটার মধ্যে ডক করে সিগনাল পাঠাতে পারে। সেক্ষেত্রেও মনে হবে সিগনাল এখান থেকে পাঠানো হয়েছে। তবে…

আরো কিছু কি আছে?

না তেমন কিছু না… স্রাগ করলো জেনা। আসলে প্রত্যেক বীকনই একটি ইউনিক নাম্বার থেকে পাঠানো হয়। সেই নাম্বারটা থেকে বোঝা যায় বীকনটা কোন শীপ বা স্টেশন থেকে আসছে। এই স্পেসস্টেশনটি থেকে যে বীকনটি বিজ্ঞান পরিষদ গ্রহণ করেছিল তারও একটা ইউনিক নম্বর আছে। আমি তাদের ডেটাবেসে বীকনটির ট্রেস করার জন্যে নাম্বারটি জানতে চেয়েছিলাম। তারা আমাদের আনঅথরাইজড বলে এক্সেস করতে দিচ্ছে না। ব্যপারটা ভারি অদ্ভূত।

জানি না লিও তোমার প্ল্যান কি। লিওর চোখে তাকালো জেনা। তবে যতটা সহজ এই মিশনটা হবে ভেবেছো ততটা সহজ নাও হতে পারে।

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×