somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-৬

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্পেসস্যুট পড়ে অভিযাত্রীদের মধ্যের তিন জন দাঁড়িয়ে আছে। হেড-মাস্কটা বা হাতে ধরে মিটিংরুমে দাঁড়িয়ে আছে লিও। তার সামনে জিম, ইরা স্যুট আপ হয়ে আছে। কিরু২ ও তাদের সাথে অভিযানে যাবে কিন্তু তার কোনপ্রকারের স্যুট পরার প্রয়োজন নেই।

আরেকটা বার ভেবে দেখো লিও। শেষবারের মত চেষ্টা করল জেনা। আমাকে হয়তো প্রয়োজন হতে পারে। নরম্যান্ডিতে বসে থাকার চেয়ে নিচে যাওয়া বেশি দরকার! তার উপর স্পেস স্টেশনটার সেন্ট্রাল কম্পিউটারে যাবতীয় রুটিন চেক আপ তো আমারই করার কথা…

দুঃখিত জেনা, তাকে থামিয়ে দিল লিও। তোমার যাওয়ার কথা হলেও ইরাকে নেয়াই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেষ হিসেব পর্যন্ত দেখা গেছে যে অজানা ভাইরাসটি কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সাবধানে চেকআপ করে ফিরে আসার জন্যে ইরাকে ওখানে আমাদের বেশি দরকার হবে। আর রুটিন চেক কিরু২ই ভালো করতে পারবে।

ইতস্তত করে মেনে নিল জেনা। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো নিজেকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।

হ্যা চিন্তা করো না জেনা, কিরু২ বলল। আমি সব প্রটোকল চেক করে আসব।

তোমরা সবাই স্কাউটশীপ ২ তে অপেক্ষা কর, ২ নম্বর স্কাউটশীপ দিয়েই নিচে যাওয়ার কথা আমাদের? কিরু২ এর দিকে তাকালো লিও।

হ্যা সূচক মাথা ঝাকালো কিরু২। প্রথম স্কাউটশীপটার চেকআপ চলছে…

যাই হোক, আমি এখুনি আসছি। বলল লিও। সবাই ধীরভাবে মিটিংরুম ত্যাগ করল। শুধু লিও আর জেনা রূমটাতে আছে।

জেনা। হালকা স্বরে ডাকল লিও।

একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলল জেনা। বলো?

তোমার মিশনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেনা। তার পাশে এসে দাড়ালো লিও। আমার মন বলছে স্পেসস্টেশনটাতে কিছু হতে যাচ্ছে, এক পলক জানালাটা দিয়ে বাক্সাকার স্পেসস্টেশনটা দেখে নিল লিও। যতই নিরীহ দেখাক না কেন।

আমি নিজে ডেটাবেস চেক করতে গিয়েছিলাম… তারা আমার হাইপার ওয়েভ আটকে দিয়েছে…

চমকে তার দিকে তাকালো জেনা। এটা কিভাবে সম্ভব?

জানি না। নরম্যান্ডি থেকে আমাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ থাকবে তোমার… বলতে বলতে জেনার হাতের দিকে চোখ পরল লিওর। তার কব্জিতে চারকোণা একটা পুরু স্ক্রীন বেল্টদিয়ে আটকানো। উজ্জ্বলভাবে কিছু দেখাচ্ছে ডিসপ্লেটা।

এটা কি?

কিছু না। তাড়াতাড়ি অন্য হাত দিয়ে হাতটা ঢাকল জেনা। অবসর সময় টুকিটাকি কাজ করি… শখ বলতে পারো।

দেখতে আদিম আমলের হাতঘড়ির মতো, হেসে বলল লিও। প্রাচীন এক আর্কাইভে দেখেছি। কিন্তু সে জিনিসে কোয়ানিটিভ ডিসপ্লে থাকতো বলে শুনি নি।

জবাব না দিয়ে মুচকি হাসল জেনা।

তার দিকে ঝুকে এল লিও, যদি আমরা ফিরতে না পারি কোন কারণে, সরাসরি হাইপার ডাইভ দিয়ে অন্য কোন সিস্টেমে চলে যাবে। বুঝতে পেরেছ?

লিও! ছোট একটা আর্তনাদ করে উঠল জেনা। না আমি এ কাজ করতে পারবো না! আমাকে তোমাদের সাথে যেতে দাও মিশনে…

জেনা! তোমার মিশন হচ্ছে এটা! কাউকে না কাউকে বিজ্ঞান একাডেমিতে জবাবদিহীতা করতে হবে। আমি চাই তুমি নরম্যান্ডি নিয়ে চলে যাও। হাইপারডাইভ এক্টিভেট করে রেখেছে ট্রিনিটি। তুমি বললেই কয়েক আলোকবর্ষদুরে ওড়াল দিবে…

অন্যদিকে তাকিয়ে রইল জেনা। তার শক্ত গম্ভীর ভাবটা চেহাড়া থেকে খসে গেছে। কেমন ক্লান্ত মলীন দেখাচ্ছে তাকে।

ঠিক আছে তাহলে… আমি গেলাম স্কাউটশীপের দিকে… পা বাড়ালো লিও।
লিও, দড়জার কাছে পৌছতে জেনার ডাক শোনা গেল। অনেক হারিয়েছি… আর কাউকে হারাতে চাই না… ঠিকভাবে ফিরে এসো মহাকাশযানে, সবাই!

মৃদু হেসে রুম থেকে বের হয়ে এল লিও। জেনা নিশ্চিতভাবে খুব কাছের কাউকে হারিয়েছে… তাই সে এতটা বিষন্য থাকে…

****

দূরে নরম্যান্ডির লাল লাইটগুলো দেখা যাচ্ছে। কালো অন্ধকারের মাঝে সতর্কতামূলক লাইটগুলো মিটিমিটি জ্বলছে নিভছে। অন্যপাশে স্পেসস্টেশনটা আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করেছে। সোলারিসের হালকা আলোয় স্পেসস্টেশনটার উপর লেখা পড়ল ইরা, সোলারিস এক্সপ্লোরার, সোলারেক্স।

লিওও তাকিয়ে দেখল। স্পেসস্টেশনটার একটা বাহুতে সোনালী রঙের বড় হরফে লিখা, সোলারিস এক্সপ্লোরার, সোলারেক্স।

যত স্পেসস্টেশনটা কাছে আসতে শুরু করলো ততই সবাই অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করলো। দীর্ঘকালের পূরণো এক বিশাল বড় জনমানবহীন স্পেসস্টেশন সোলারেক্স। এককালে কত নভোচারীরা এখানে ডেটা বিশ্লেষণ করতো, তাদের সরগোলে মুখরিত হয়ে থাকত আদিম এই সোলারেক্স। কিন্তু এখন কালের সাক্ষী হয়ে প্রায় বিলুপ্তের পথে দাঁড়িয়ে সে।

স্পেসস্টেশনটা দেখতে জঘন্য লাগছে, নাক কুচকালো ইরা।

রেড ডুয়ার্ভটার হালকা আলো ঢাকা পরে গেল সোলারেক্সের একটা বাহুর আড়ালে। তারা চারকোনা বাক্সাকার স্পেসস্টেশনটির মাঝের ফাকা গর্তের ভেতর ঢুকে পরল। এর বিশালতায় সবাই নিঃস্ব বোধ করতে লাগল। নরম্যান্ডির মত Zc শ্রেণির মহাকাশযান কমপক্ষে ১০ টা একই সাথে ‘দ্য আই’ এর মাঝে ঢুকতে পারবে।

একমাত্র কিরু২ কে উৎফুল্ল মনে হলো! খুশি গলায় বলল আদিমযুগের মানুষদের তৈরি এত বড় মহাকাশ স্টেশন সত্যিই বিস্ময়কর। লিও, আমরা প্রায় পৌছে গেছি, ডক করার অনুমতি দাও।

মৃদু মাথা দুলিয়ে সায় দিল লিও।

স্কাউটশীপটার কন্ট্রোল নিয়ে নিল কিরু। তার কপোট্রনের নির্দিষ্টমাপের তরংগ স্কাউটশীপের কম্পিউটারে প্রবেশ করতেই তার হাতে সব কন্ট্রোল চলে এল।

স্ট্যাটাস আপডেট নরম্যান্ডি টু টিম! সবার কানে ভেসে এল জেনার গলা। ট্রিনিটি প্ল্যাটফর্ম ১৪ খুলে রেখেছে। সেখানে তোমরা ডক করবে। আমি তোমাদের উপর নজর রাখছি। জেনা আউট!

ধন্যবাদ জেনা, কমম লিংকে (comm link) লিও তাকে ধন্যবাদ জানালো। আর কতদূর কিরু?

আর প্রায় তিনশো মিটারের মত। কিরু২ এর চোখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তার কপট্রোন দিয়ে শীপটা কন্ট্রোল করে যাচ্ছে।


সামনের হ্যাঙ্গারের দড়োজাটা একরাশ ধুলো উড়িয়ে ধীরে ধীরে খুলে গেল। ট্রিনিটি সোলারেক্সের গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রোলগুলো নিয়ে নিয়েছে। আর জেনা সাতাইশ মাইল দূরে নরম্যান্ডিতে বসে সব খেয়াল রাখছে।

দ্য আইয়ের ভেতর ঢুকল তাদের স্কাউটশীপ। মাঝের গর্তটারই এক মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যায় না। লিও চিন্তা করলো তাহলে এর বাহুগুলো না জানি কত বড় হবে!

চোদ্দ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তাদের ল্যান্ড করালো কিরু২। তারপর উঠে দাড়ালো। আমরা নামার জন্যে তৈরি।

সবাই যার যার হেড-মাস্ক পরে নিল। তারপর স্কাউটশীপ ২ এর দরজা দিয়ে ধীরে নেমে আসল।
আশেপাশের প্যাটফর্মগুলো আলোর অভাবে দেখা যাচ্ছে না। ১৪ এর কিছু অংশে ট্রিনিটি আলো জ্বালিয়ে রাখছে।

বাহ! চারপাশে ঘুরে তাকালো জিম। শেষ পর্যন্ত নামলাম এই মৃত স্পেসস্টেশনটায়!

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:০২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×