আমার ছোটবেলায় বর্ণ পরিচয় হয়েছিলো সীতানাথ বসাক-এর ‘আদর্শ লিপি ও সরল বর্ণ পরিচয়’ বইটির মাধ্যমে। খুব মনে পড়ে, জোরে জোরে শব্দ করে পড়তাম, অ-তে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো, আ-তে আলস্য দোষের আকর...।
সামরিক শাসনামলে আমার পরবর্তী প্রজন্মকে পড়তে দেখেছি, অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে... কী ভয়াবহ ব্যাপার! একজন শিশু তার শিক্ষা জীবন শুরু করছে তার দিকে একটা অজগর তেড়ে আসছে এটা কল্পনা করে!
ক্রমেই আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আমরা এখন শিখছি, সীতানাথ বসাক ছিলেন ‘হিন্দু লেখক’। তার লেখা বই পড়লে শিশুরা হিন্দু হয়ে যাবে। তাই, এখনকার বর্ণ পরিচয় শুরু হয়, অ-তে অজু করো সকাল বেলা, আ-তে আজানের সুর অতি মধুর...
এই প্রজন্মের এ ধরণের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সাথে আমার মতো ‘অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো’- শেখা প্রজন্মের বিরোধ অবশ্যম্ভাবী। আর তাই, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ’ যখন বলে, “প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখার পরিমাণ ৭১ ভাগ, যার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয় ভুলিয়ে হিন্দুধর্মে প্রবেশ করানো হচ্ছে” এবং এ ধরণের মন্তব্য করার পরেও যখন সরকারকে নিরব থাকতে দেখি তখন চরমভাবে হতাশ হই। এটাই কী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার!
হেফাজত যে ১৩ দাবি করেছিল সেই দাবিগুলোই এখন করছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ।
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ-এর দাবি, সুন্নতি বাল্য বিবাহ চালু করে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বা ১৮ নির্দিষ্ট না করা (হেফাজতের ৯ দফার ৫ম দফা)।
প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষা তাদের ভাষায় ‘ব্যাভিচারিতা ও অশ্লীলতা’ (হেফাজতের ৯ দফার ৪র্থ দফা)।
মুক্তমনা ও মুক্তচিন্তা যারা করেন তাদেরকে ইসলাম অবমাননাকারী নাস্তিক আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আইন করার দাবি করেছে তারা (হেফাজতের ৯ দফার ২য় দফা)।
সম্প্রতি মানব্বন্ধন করে তারা পাঠ্য পুস্তক থেকে হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের লেখা বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে (হেফাজতের ৯ দফার ৫ম দফা)।
ওলামা লীগ বিভিন্ন সময়ে হেফাজতের দাবিগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দাবির পাশাপাশি একই ধরণের নানা দাবি পেশ করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
ইতঃপূর্বে ওলামা লীগের দুটি অংশের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
একাংশের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী বলেছেন, ‘ওলামা লীগের আখতার হোসাইন গ্রুপ জামায়াতের এজেন্ট। হেফাজতের চর। এ জন্যই ওলামা লীগের প্রকৃত কর্মীরা ওদের পিটিয়েছে।’
হেলালী গ্রুপের অভিযোগের বিষয়ে ওলামা লীগের অপর অংশের সভাপতি আখতার হোসাইন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিজে এবার হজে পাঠিয়েছেন। আমি ১/১১ এর সময় প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির দাবিতে প্রথম মিছিল করেছি। পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী চিনেন, জানেন। আমরাই ওলামা লীগের প্রকৃত অংশ।’
অর্থাৎ যাদেরকে ‘জামায়াতের এজেন্ট’ ‘হেফাজতের চর’ বলা হচ্ছে; তারা বলছেন- তারা নাকি প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক!
জামায়াতে ইসলামী ও তাদের মতো ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল দল নিয়ে শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। এই প্রসঙ্গে বদরুদ্দীন উমর যুগান্তর-এ লিখেছিলেন, ‘শামসুর রাহমান বেঁচে থাকলে তার মাথায় যে এখন আওয়ামী লীগও থাকত এটা মনে হয়। কারণ, আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটও এখন একই ধরণের উদ্ভট এক উটের পিঠে চড়ে জনগণের ওপর লাঠি ঘোরাচ্ছে ও দেশের সর্বনাশ করছে।’
আমরা কী আবার শেখা শুরু করতে পারি না- ‘অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো, আলস্য দোষের আকর... ’
বিঃ দ্রঃ বাংলাবাজার থেকে সীতানাথ বসাক-এর ‘আদর্শ লিপি ও সরল বর্ণ পরিচয়’-এই বইটির অনেকগুলো কপি কিনেছি। এই প্রজন্মের শিশুদের পড়তে দিব।
ফেসবুক লিঙ্কঃ
https://www.facebook.com/rakibul.hasan.dhaka/posts/10153457989722981