somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের প্রয়োজন রক্তাক্ত বিশ্বজিতের ছবি

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বজিত দাশ ‘মরিয়া প্রমাণ করিল’আমরা অন্ডকোষহীণ। ভণ্ড এ স্বার্থপর সমাজে বিশ্বজিতের মতো বহু কোরবানি আমরা কবুল করে নিয়েছি নিঃশব্দে। এ সহ্যসীমায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন এক মাত্রা। এ ধরণের অন্যায় এখন আর আমরা মুখ বুজে সহ্য না করলেও ফেসবুক পর্যন্ত গড়ায় আমাদের প্রতিবাদী স্ট্যাটাস। এই সুযোগে বেশ সচেতন আর প্রতিবাদী একটি জাতি হিসেবে আমরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে পিঠ চাপড়ানি পাই!

এ দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই নরবলি আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সরকার বদলের প্রাক্কালে এরকম দু’একটি ‘বলি’র ঘটনা যেন মামুলি মামলায় পরিণত হয়েছে আমাদের কাছে। এভাবে রক্ত আর আগুনের মহড়ায় আমরা জেনে যাই, সাপের খোলশ বদলের সময় এসেছে। আমাদের মোড়ানো মাথায় সামান্য কেশের আভা দেখা যায়, যা আবারও মোড়াবার পায়তারা করতে হয়।

দেশটির জন্মলগ্ন থেকে যতবার সরকার বদলের লগ্ন আসে, ততবারই শেখ মুজিব, কর্নেল তাহের, নূর হোসেন, আসাদরা আমাদের লাশের তালিকায় এসে নাম লেখান। এ ক্রান্তিকাল আমাদের সঞ্চয়গুলো খেয়ে ফেলে যেমনি করে মায়ের আঁচলের গিট থেকে শেষ সময়ে বের হয়ে আসে শেষ আধুলি। মায়েরা অপেক্ষা করেন -- রাক্ষস এলে এবার কার কোল খালি হবে। সরকার বদলের কালে এ যেন এক অবিশ্বম্ভাবী ঘটনা।

শহীদ নূর হোসেনের বলির গল্পটি গেল বছর একজন কবির মুখে জানতে পারি। মানসিক প্রতিবন্ধী নূর হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে স্বৈরাচারী বুলেটের মুখে তুলে দেয়ার সে গল্প আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। ঠিক একইভাবে আমাদের চোখের সামনে মঞ্চ তৈরি করে একের পর এক জীবন্ত নাটকের প্রদর্শনী আমরা আর কতকাল উপভোগ করবো!

আমরা বাংলাদেশীরা জাতি হিসেবে অপদার্থতর। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা ভয়াবহ সচেতন। সচেতনতার সঙ্গে আমরা যে যেখানে যে অবস্থায় যে দায়িত্বে থাকি, ক্ষমতা প্রদর্শনের তাগিদে দায়িত্বের সঙ্গে আমাদের কাজটি আটকে দেই। পুলিশের কাজ যদি হয় অপরাধ দমন (?), তবে তারা অপরাধীকে যথেষ্ট সহায়তা করেন। এতে প্রজাতন্ত্রের বেতনের পাশাপাশি অপরাধতন্ত্রের কাছ থেকেও তাদের মাশোহারা নিশ্চিত হয়। কিংবা একজন ছাত্ররাজনীতিকের কাজ বিপক্ষ দলের ছাত্রের রগ কেটে নেওয়া কিংবা কুপিয়ে হত্যা করা নয়।

মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্বও আমরা সঠিক ভাবে পালন করি না। জলে ডোবা মানুষকে উদ্ধারের চেয়ে তার নাকানি-চুবানি খাবার দৃশ্য মোবাইল ফোন, ক্যামেরায় ধারণ করার ক্ষেত্রে সর্বচ্চ দক্ষতার পরিচয় দিতে আমরা তৎপর।

সরকারের সময় শেষ হয়ে আসার মুহূর্তে হরতালঅবরোধখুন একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এর অর্থ হচ্ছে, বিরোধী দলকে ক্ষমতা না দেয়া পর্যন্ত তারা জনগণকে রক্তাক্ত করতেই থাকবে। সরকারও চালিয়ে যাবে তার শক্তির প্রদর্শনী, যেন সত্যিকারের টম এবং জেরি, প্রকৃতপক্ষে এরা বন্ধু । এর বিকল্পটি এখনও এদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও আবিষ্কার করতে পারেননি।

সম্প্রতি বিশ্বজিত বলির ঘটনায় আমাদের সাংবাদিক সমাজের প্রতি আঙুল উঠেছে। পত্রিকায় বিশ্বজিতের রক্তাক্ত ছবি দেখে জনমনে একটি শিশুতোষ চিন্তার উদয় হয়েছে। দেশের ২০টি পত্রিকা আর ১৫টি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা সেই ছবি তুলতে পারলো অথচ ছবি তোলার সাংবাদিকদায়িত্ব পালনের পর ‘মানুষ’র দায়িত্বটি পালন করতে পারেনি। মাত্র ৪ জন সন্ত্রাসীকে প্রতিহত করার মতো মানসিক শক্তি কোনও সাংবাদিকের ছিল না! নাকি তারাও মনে করেন যে শিবিরকে কোপানোই জায়েজ! কিংবা এটিও কি তাদের বোধে আঘাত করেনি যে, দেশে আইন আদালত থাকতে ছাত্ররা কেন একে অন্যকে রক্তাক্ত করবে!
গণমাধ্যম এ ছবির ক্যাপশনে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে উচ্চারণ করেছে ছাত্রলীগের নাম। এও আরেক প্রহসন। গণমাধ্যমকেও তাই ছাত্রলীগ বলে ডাকতে ইচ্ছে করে।

চাপাতিঅলার কি কোনও দল থাকে? হুমায়ুন আজাদকে যারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছিলো, তারা যে দলভুক্ত -- এই কথিত ছাত্রলীগও ঐ দলের। এদের কোন দলই আসলে নেই, এরা খুনির দল।

কারও উপর হামলা ঠেকানো ফটো সাংবাদিকের নয়, পুলিশের কাজ। ফটো সাংবাদিকের দায়িত্ব ছবি তোলা, হাউজের ক্যামেরা অক্ষত রাখা। রক্তাক্ত ছবি হাউজে জমা দিয়ে বাহবা নেবার জন্যতো তাদের রক্তাক্ত হলে চলে না! এই সাংবাদিক সমাজ নিজের জন্যও করতে পারেনি কিছুই! চলতি বছর সাগর-রুনি হত্যারহস্য উদ্ঘাটন না হওয়াই তার প্রমাণ।

এদেশের সম্পদশালীদের ব্যাংকঋণের নামে লুট করা কোটি কোটি টাকা, ফাঁকি দেয়া ট্যাক্স, পোষাকশিল্প মালিকদের শ্রমিক পুড়িয়ে মারা, চাকরিদাতাদের হাতে আত্মসাৎ হওয়া কর্মীর বেতনের সামান্য অর্থ, চলমান সময়ের প্রতিটি জাতীয় অসাবধানতায় দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দলীয় মদদপুষ্ট ধর্ষণ, আত্মীয়করণীয় দখলদারিত্বের বিচার না হওয়া আমাদের কাছে ম্লান করে দেয় যুদ্ধাপরাধের বিচারকে। যুদ্ধপরবর্তী অপরাধগুলোর বিচারকার্য যেন শুরু হবে আগামী ৪০ বছর পর। কোন প্রাগোতৈহাসিক কালে শেষ হবে কেউ জানে না।

একবার ধবধবে শাদা পাঞ্জাবী-পাজামা পরিহিত আমি প্রেসক্লাবের গেট থেকে বের হচ্ছিলাম। দেখলাম প্রতিটি চোখ আমার দিকে। পুলিশ-রাব-সাংবাদিক হিংস্র শ্বাপদের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পথে কোনও যান চলছে না, প্রেসক্লাবের সামনে ইটবৃষ্টি হয়েছে যেন। গা ছমছমে পরিবেশ উপেক্ষা করে একজন রাব সদস্যকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা! সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার পরিচয় জানতে চাইলো সে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অবিশ্বাসের সুরে সে জানালো, টুপিঅলাদের এক নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অনুসারীরা এ লঙ্কাকাণ্ড করেছে। আমি বুঝলাম, পাঞ্জাবী পরা আমাকে ছত্রভঙ্গ এক টুপিঅলা ভেবেছে সবাই। তাদের হিংস্র দৃষ্টির অগোচরে যাওয়ার সময় একটি শিক্ষা নিয়ে যাই মনে মনে, অবরোধের রাজপথে কখনই শাদা পোষাকে বের হওয়া যাবে না। যদিও একই কাজ একাধিকবার করেছি সম্মোহিতের মতো। বহুবার কল্পনা করার চেষ্টা করেছি, আমারই কোনও সহকর্মী রক্তাক্ত ছবির উন্মাদনায় আমাকেই লাশ করে দিচ্ছে! ধবধবে শাদা কাপড়ে রক্তের দাগ বেশ ফটোজেনিক। বিশ্বজিতের রক্তাক্ত ছবিতে নিজের মুখ দেখে বিভ্রান্ত হই -- এ যেন আমাদের সামাজিক বিভ্রম!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×