somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা সাইন্স ফিকশনঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দা হোম মিনিস্টার ;) ;)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
মহাকাশ যাত্রীদের মন খারাপ হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমারও হয়। সেটা মনে হয় এই মহাকাশ যানের অন্যদের তুলনায় একটু বেশি।
অবশ্য এই মহাকাশযানে মানুষ খুব বেশি নেই। শীতল ঘরে শুয়ে থাকা এক তরুনী নাম নিকি, আমি আর আমাদের দলনেতা। দলনেতাকে এখানে ডাকা হয় "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী"। দলনেতার নাম "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী" রাখার একটা কারণ আছে। এই শতাব্দিতে যেসকল মহাকাশযান মহাশূন্যে পাঠানো হয় সেগুলোতে অতীত পৃথিবীর কিছু ছোঁয়া দিয়ে দেওয়া হয়। যাতে অন্য কোন মহাজাগতিক প্রানী আমাদের সাথে মিশলে আমাদের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে একটা ধারনা পায়। যেমন এই মহাকাশযানে দলনেতার নাম "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী" রাখা হয়েছে প্রাচীন পৃথীবির বাংলাদেশ নামক একটা দেশের একটা গুরত্বপূর্ণ একটা পদবী অনুসারে। এরকম বিচিত্র নিয়ম বিজ্ঞান একাডেমী কেনো আবিষ্কার করলো কে জানে!

যা বলছিলাম, আমার মন খারাপ। এই মহাকাযানটিতে বিনোদনের সব রকম ব্যাবস্তাই রাখা হয়েছে। তারপরেও একজন রক্ত মাংসের মানুষের অভাব আমি প্রায়ই অনুভব করি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। তবে তিনি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া বের হন না। আর উনার সাথে আমার বোঝাপড়াও বেশি ভালো না। এই মহাকাশযানের নিয়ম অনুসারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করা ৫ম মাত্রার অপরাধ। এবং এই অপরাধের শাস্তিও ভয়াবহ। না হলে আমি কবেই.........


মন খারাপ হলে আমি সিডিসি-র সাথে কথা বলি। সিডিসি ৭ম মাত্রায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার। সব রকম মানবিক গুনাগুনই এর মাঝে দেওয়া হয়েছে।
আজকেও কথা বলছিলাম। কথার মাঝখানে সিডিসি হঠাৎ সিকিউরিটি এলার্ম বাজাতে শুরু করলো। সিডিসির এলার্ম মানে ভয়াবহ বিপদের আশংকা। আমি তৎক্ষনাৎ সিডিসি-কে ডিটেইলস জানাতে বললাম। সাথে সাথে হলোগ্রাফিক স্ক্রীনে বিস্তারিত লেখা দেখা গেলো-
“৭ম মাত্রার বিপদ। হিংস্র কিন্তু শক্তিশালী মহাজাগতিক প্রানীর আক্রমন। মহাকাশ যান দ্ধংশ হওয়ার সম্ভবনা অনেক। বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার সম্ভবনা ২.১০০৯ ভাগ।"

৭ম মাত্রার বিপদে দলনেতা মানে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বের হওয়ার কথা। কিন্তু বিচিত্র কারনে তিনি বের হচ্ছেন না। আমি বুঝতে পারলাম যা করার আমাকেই করতে হবে। আমি সিডিসির সামনে বসে কিছু কোড টাইপ করলাম। এই কোডগুলার প্রবেশের সাথে সাথে ৮ম মাত্রার সিকিউরিটি সিস্টেম একটিভ হয়ে গেলো। মহাজাগতি প্রানীর আক্রমন এই সিকিউরিটি সিস্টেমকে ভেদ করতে পারবে বলে মনে হয় না।

২।
সিডিসেকে আমি সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বললাম। হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে যে মেসেজ উঠে এলো সেটা অনেকটা এরকম।
“সপ্তম মাত্রার সিকিউরিটি সিস্টেম পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। মহাকাশ যানটির অনেক অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। মহাজাগতিক প্রানী এবার ফেরত গেছে। কিন্তু অতি দ্রুত আবার ফিরে আসবে। পরেরবার সিকিউরিটি সিস্টেম ১১ চালু করতে হবে। ১১ চালু হলে মহাকাশযানে জ্বালানী অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে।"

আমি একটা ঢোক গিললাম।

৩।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের ঘর থেকে বের হলেন। সোজা চলে এলেন আমার সামনে। আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলা শুরু করলেন।
“রুখ, টেনশনের কিছু নেই। পরিস্থিতি সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রনে আছে X((।"
আমার একটু হাসি পেলো। পুরো বিপদটা যতটুকু কাটানো গেছে তার পুরোটাই করেছি আমি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে সান্তনা দিচ্ছেন!

“রুখ, তুমি নিশ্চিত থাকো। মহাজাগতিক প্রানী আবার এলে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তাছাড়া সিকিউরিটি ব্যাবস্থা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো আছে" :D
“তাই নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?” আমার মুখে আবারও হাসি খেলে গেলো।
“ হ্যা। অবশ্যই। কোন ধরনের নাশকতা বরদাস্ত করা হবে না।" B-)

তার কথা মাঝখানেই আবার সিডিসি এলার্ম বাজাতে শুরু করলো। আবার আক্রমন করেছে মহাজাগতিক প্রানীরা।
এখন কি করবেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
- "কিছুই করবো না। চুপচাপ বসে থাকবো।"
আমি বললাম, "সে কি!! আপনিই না বললেন- মহাজাগতিক প্রানী আবার এলে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে!"
এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি রেগে উঠলেন।
-শুন রুখ। তুমি কি জানোনা যে দলনেতাকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করাটা ৮ম মাত্রার অপরাধ? এই অপরাধের শাস্তি কি জানো? ডাইরেক্ট "বন্দুকযুদ্ধ" ;)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাত দিয়ে বন্দুক ধরার একটা ভঙ্গী করলেন।
“আমি তোমার প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করছি। :|"
আমাই ভয় পেয়ে গেলাম। বন্ধুক যুদ্ধ, ক্রশফায়ার, এগুলো হলো মহাকাশ ইতিহাসের সব চেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকরী শাস্তি।

৪।

মহাজাগতিক প্রানীর দ্বিতীয় দফা আক্রমনে আমাদের মহাকাশযানটা প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেলো। বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা প্রায় নুয়ে পড়লো। জ্বালানী অর্ধেকটার বেশী নিয়ে গেলো মহাজাগতিক প্রানীরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মানে আমাদের দলনেতা তখন পর্যন্ত নির্বিকার। তিনি আস্তে আস্তে বলে যাচ্ছেন-
- "পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনে।"
তিনি আরো বললেন- আমি নাকি মহাকাশযানে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি। আমি নাকি প্রতিহিংসার মহাকাশনীতি অনুসরণ করছি। ;);) তাছাড়া তিনি সিডিসি-কে ব্যান করে দেওয়ারও হুমকি দিলেন।।
আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। এতো বড় কথা! আমার হাতের কাছে একটা রড ছিলো। আমার রডটা হাতে নিয়ে আচমকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথায় একটা বাড়ি দিলাম।
ওমা!! এ কি!! মাথা থেকে টুপ করে একটা কপোট্রন বেরিয়ে আসলো। তার মানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথায় কোন মস্তিস্ক নেই! যা ছিলো তা একটা কপোট্রন!

তৎক্ষনাৎ সি ডি সি আমাকে একটা রিপোর্ট ধরিয়ে দিলো।
“ মহামান্য রুখ। আমি এই মাত্র জানতে পারলাম আসলে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা রোবট ছিলেন। আগে থেকে তার মাঝে কিছু প্রোগ্রাম সেট করা ছিলো। তিনি সেই অনুযায়ী কাজ করতেন।
যাই হোক, মহাকাশ যানের নীতিমালা ৪৫৬ অনুযায়ী আপনিই এখন এই মহাকাশযানের দলনেতা। এই প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া যানটি দিয়ে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। আশা করি আপনি পারবেন। আমি সাথে আছি।"

মহাকাশযানের দলনেতা হিসেবে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিলাম শীতল ঘরে শুয়ে থাকা সুন্দরী "নিকি"কে জাগিয়ে তুলতে হবে। এই মেয়েটাকে আমার অনেক আগে থেকেই পছন্দ। এই দীর্ঘ ভ্রমনে নিকি-কে আমার ভীষণ প্রয়োজন।


বিঃ দ্রঃ
** এই মহাকাশযানের প্রথম দলনেতার সংলাপের সাথে আর কারো সংলাপের মিল খোজতে গেলে তা নিজ দায়ীত্বে খোজবেন।
** আমার অন্য সব লেখার মতো এটাকেও ফাইজলামী লেখা হিসেবে ধরলে খুশি হবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:০৪
৮৩টি মন্তব্য ৮৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×