১ম মানব আদম আঃ সৃষ্টির পূর্বে শিরক ছিল অন্য ধরনের । তখন আল্লাহ সুবঃ তাঁর ইবাদতের জন্য শুধু জ্বীন জাতিকেই সৃষ্টি করেছিলেন কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে ফিতনা ফাসাদ যুদ্ধ বিগ্রহ রক্তপাত করে সৃষ্টির মাঝে চরম বিপর্যয় এনে দিয়েছিল , এর কারন বোধ হয় তারা নিজেদের নফসকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছিল, তখনও কিন্তু ধোকা দেয়ার জন্য আলাদা সত্ত্বা ইবলিসের জন্ম হয়নি । জ্বিনেরা নিজেদের নফসকে ইলাহ বানিয়ে নেয়ায় জ্বীনরুপী নবী রসুলদের হত্যা করত এবং নিজেদের নফসের পছন্দ অনুযায়ি চলত এবং অন্যের সাথে শক্তি ক্ষমতার দাপট দেখাত অর্থাৎ তখনকার সময়ে জ্বীনদের যখন ধংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন থেকে শুরু করে ১ম মানব আদম আঃ সৃষ্টির পর পর্যন্তও শিরক ছিল নিজের নফসের পুজা বা নিজের নফসের প্রাধান্য দেয়া , আর আদম আঃ কে সিজদা না করে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের কথা নিজেই রবের কাছে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরে ইবলিস যে অহংকার করল তার মুলেও রয়েছে নিজের নফসকে ইলাহ বানিয়ে নেয়া অর্থাৎ শিরক । এরপর আদম আঃ ও মা হাওয়ার দুনিয়াতে আসার পর কাবিল সম্ভবত আল্লাহর মুর্তি তৈরীর রীতি প্রবর্তিত করে একেও আল্লাহর আকারের ক্ষেত্রে শিরক বলা যায়। এই ফিতনা সম্ভবত শীষ আঃ আসার পর দুরিভুত হয়েছিল কিন্তু নুহ আঃ এর সময় পুন্যবান মানুষের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য চেয়ে আবার সমস্ত মানুষ শিরকে লিপ্ত হল। একেও আল্লাহ সুবহানা তায়ালা গজব দিয়ে দূর করে দিলেন । তার পরে ইব্রাহিম আঃ এর সময় হতে আবার ১ ধরনের মুর্তি পুজো এবং রাজা বাদশাদের নিজকে রব বা পালনকর্তা মানার শিরক শুরু হয়ে গেল একই ধরনের শিরক মুসা আঃ এর যুগেও বিদ্যমান ছিল এগুলোকেও প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ সুবঃ সমুলে উতপাটন করে দিলেন। সবশেষে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সময়েও দেখা যায় যে মুর্তি পুজার মাধ্যমে আরেক ধরনের শিরকের উতপন্ন হয়েছে । আর তা হল আল্লাহ সুবঃ কে পরম ঈশ্বর বানিয়ে তাঁর ফেরেশতা এবং বিভিন্ন পুন্যবান ধার্মিক বীর জ্বীনদেরকেও ইশ্বর বানিয়ে পুজো শুরু হল এবং আল্লাহ সুবঃ কে অকেজো ঈশ্বর বা শুধুই স্রষ্টা বানিয়ে দেয়া হল আর রব বা পরিচালক এসব বিভিন্ন দেব দেবীকে বানানো হল এর পাশাপাশি রাজা বাদশাদেরকেও পরিচালক বিধান দাতা মানা হত আর নফসের পুজা তো ছিলই অর্থাৎ অতীতের প্রায় সব শিরকই সেসময় উপস্থিত ছিল কম বেশী হলেও। সেগুলোকে তিনি আল কুরানের আলোর মাধ্যমে এবং অনেক কাফের মুর্তিপুজারী মুশরিকদের ধংসের মাধ্যমে আবারও শিরক দুরিভুত করা শুরু করলেন । এই দুরিভুতকরন চলতেই ছিল কিন্তু বিগত কয়েক শতাব্দী হল সমস্ত মানব জাতির মাঝে শিরকের আবারও বিবর্তন চলে এসেছে। এখন আর কোন মানুষ মুর্তি পুজো বা আল্লাহ ভীন্ন কোন সত্ত্বাকে মন থেকে পুর্বের মত ইলাহ বানায় না। মুর্তি পুজো বা নিজেদের ধর্মীয় আচার আচরন করে শুধুমাত্র তাদের বাহ্যিক সংস্কৃতি রক্ষার্থে কিন্তু সব মানুষেরই মনে সেই কাল্পনিক মুর্তির ইশ্বর আর বাস করে না। বর্তমান বিশ্বে এখন মানুষের মনে ঈশ্বর হিসেবে বাস করে মানুষেরাই অর্থাৎ মানুষ আজ মানুষেরই পুজো করে । আরো ভালোভাবে বললে মানুষ আজ মানুষের জ্ঞানকে পুজো করছে তাই বর্তমান যুগে শিরক হল মানুষের পুজো । প্রশ্ন হল- মানুষ হয়ে মানুষকে কিভাবে ঈশ্বর মানতে পারে ? সাধারনত ঈশ্বর এর মানুষের উপর যে ধরনের অধিকার বা হক্ব রয়েছে সেই ধরনের অধিকার বা হক্ব যদি কোন মানুষকে দেয়া হয় তবে ঈশ্বরের সাথে ঐ মানুষকে শিরক করা হল বা তাকেও পুজো করা হল অথবা ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে তাকেই ঈশ্বর মানা হল। যেমনঃ ঈশ্বরের অধিকার এবং হক্ব যে তার সৃষ্ট জীব মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য তিনিই জীবন বিধান দিবেন এবং দিয়েছেনও তাই কিন্তু আমরা সেই জীবন বিধান বা দ্বীনুল ইসলাম পাওয়ার পরও যদি জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে বা পেছনে ফেলে মানুষের তৈরী বিধান মানি তবে এখানে আমি আল্লাহ সুবঃ কে বিধান দাতা বা ধর্মের স্রষ্টা হিসেবে না মেনে মানুষকে বিধান দাতা বা দ্বীনের স্রষ্টা হিসেবে মানলাম । তার মানে আমি আল্লাহর জ্ঞানের সাথে মানুষের জ্ঞানের শিরক করলাম । আমি যদি মনে মনে জীবনের কোন ১টি ছোট ক্ষেত্রেও যদি আল্লাহর দেয়া বিধানের চেয়ে মানুষের তৈরী বা অন্য কারো তৈরী বিধানকে যদি আমার বেশী উপাদেয় মনে হয় বা ভাল লাগে তবুও আমি আল্লাহর জ্ঞানকে খাটো এবং মানুষের জ্ঞানকে বড় ভাবলাম আর তা যখনি আমি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলাম তখনি আমি শিরকে লিপ্ত হলাম যদি এটা জেনে করি যে আল্লাহর বিধানই বড় বা ভাল কিন্তু কোন কারনে মানতে পারলাম না তবে শিরক হবে না কিন্তু না মানার কারনে পাপ হবে। এভাবেই মানুষ শুধুমাত্র মনে মনে ভাবাভাবির মাধ্যমেও অপ্রকাশ্য শিরকে লিপ্ত হয় । আর যদি সে বর্তমান সমাজে প্রচলিত ভোটে অংশগ্রহনের মাধ্যমে তার ব্যাক্তিগত ও সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে জীবন বিধান হিসেবে গনতন্ত্র/সমাজতন্ত্র বা মানুষের তৈরী কোন তন্ত্রকে মেনে নেয় তবে সে প্রকাশ্য শিরক করল । শুধু তাই না আমি যদি কুরান শরিফ মার্কায় কোন ইসলামিক দলকেও ভোট দিই তবু আমি জনগনকে ঈশ্বর মানতে বাধ্য থাকছি । যদিও আমি ভাবি যে ঐ দল জনগনের আইনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আল্লাহর আইনই বাস্তবায়ন করবে তবুও । কারন জনগন চাইছে বলেই সে আল্লাহর আইন ফলাতে পারবে নচেত নয় । কিন্তু আল্লাহর ভুমিতে আল্লাহর আইন জনগনের চাওয়ার উপর নির্ভর করে ফলানোর চেষ্টা করলে আল্লাহর চাওয়ার উপর জনগনের চাওয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হবে বলে এটাও শিরক। আবার অনেকে দ্বীনুল ইসলামকে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত নামাজ, রোজার মধ্যে সীমিত মনে করে এবং সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও যে এর বিধান আছে এবং এগুলোও মানতে হবে তা অনেকে জানেই না মনে করে ধর্ম ব্যক্তিগত আমল আর রাষ্ট্রীয় বিষয় মানুষ জ্ঞান খাটিয়ে যা করবে সেটাই মানতে হবে । এভাবে এরা মানুষের জ্ঞান পুজা না জেনে করলেও তাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে কেননা শিরক জেনে করুক বা না জেনে করুক শিরক ঠিকই হয় এবং শিরক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে তওবা না করে মারা গেলে আজীবন জাহান্নামী। তবে বর্তমান যুগে মানুষের জ্ঞান পুজাই সবচেয়ে বড় শিরক হয়ে দারালেও মুর্তি পুজার মত অন্যান্ন শিরক যে একেবারেই কম তা কিন্তু নয় । তবে সব যুগেই বড় ধরনের শিরককে কেন্দ্র করেই মহান আল্লাহ উতথান পতন ঘটিয়েছেন । আর বর্তমানে মানুষের জ্ঞান পুজাও হল সেই ধরনেরই শিরক যেটার পতন পরাক্রমশালী স্রষ্টা অতি শীঘ্রই ঘটাবেন । তাছারা মানুষের জ্ঞান পুজাই বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় শিরক কিনা তা বুঝতে হলে একটু ভাল করে লক্ষ্য করুন- মানুষ আজ কালেমার বানীর পরিবর্তে বার বার উচ্চারিত করে – আমার ১ম পরিচয় আমি ১জন মানুষ, তাই মানবতাই আমার আসল ধর্ম , ব্যক্তিগতভাবে আমি যে ধর্মেরই হই না কেন (আমি সম্মিলিত মানুষের সৃষ্ট নতুন ধর্মে দিক্ষিত হলাম), মানুষ আজ নামাজের পরিবর্তে জাতীর উদ্দেশ্য কয়েক মিনিট নীরবতা পালনকে বেশী উল্লেখযোগ্য মনে করে , রোজা রেখে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার চেয়ে অনশন করে জাতির কাছে চাওয়া বেশী ফলদায়ক মনে করে , সারাবিশ্বের মুসলিম নেতাদের যেখানে মুসলিমদের বাতসরিক সম্মেলন হজ্ব এ হাজির হবার কথা সেখানে সমস্ত রাষ্ট্রের নেতারা বাতসরিকভাবে জাতিসংঘে মিলিত হয়, আল্লাহর বিধান অনুযায়ি যেখানে শুধুমাত্র ধনীদের হতে সরকারের জাকাত নেয়া ফরজ ছিল আজ মানুষের জ্ঞানে নিয়ন্ত্রিত সরকার তা না করে মানুষের জ্ঞানে যত পরিমান ঠিক মনে হয় ততটুকু ট্যাক্স,ভ্যাট নিয়ে দেশ চালায় সুদ ও বিশ্বব্যাংকের ধার নিয়ে যা ইসলাম অনুযায়ি জগন্য পাপ । এখন একটু ভালভাবে লক্ষ্য করুন যে ৫টি মৌলিক জিনিসের উপর ভিত্তি করে ধর্ম দ্বরিয়ে আছে সেই ৫টি জিনিস কালেমা, নামাজ, রোজ়া , হজ়্ব ও যাকাত । সেই পাঁচটির বিকল্প ব্যাবস্থাও কিন্তু মানুষ আজ মানুষের জ্ঞান খাটিয়ে বের করে ফেলেছে, এরপরেও যদি কেউ বলে বর্তমানে সবচেয়ে বড় শিরক হল মুর্তি পুজা সে আসলে মধ্যযুগেই পরে আছে । আর শুধুমাত্র মক্কা আর মদিনায় জনগনের চাপে পরে সৌদি বাদশা কিছু ইসলামিক আইন জারি রেখেছে কিন্তু এছারা আজ সারা বিশ্বের কোন জায়গায় ঈশ্বরের বিধান রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ভাবে মানা হয় ? নাকি মানুষের জ্ঞান মাফিক বিভিন্ন তন্ত্রে বিশ্ব চলছে । মনে রাখবেন ব্যাক্তিগত ব্যাপার গুলোও কিন্তু রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিধান দ্বারাই নিয়ন্ত্রীত হতে বাধ্য হয় । সুতারং সাবধান ! আসুন আমরা প্রথমে শিরক হতে বাঁচি । আল্লাহ সুবঃ আমাদের তৌফিক দিন- আমিন ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯