somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যগপ্প: ত্রিমূর্তির ঈদ শপিং

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের সময়। তিন মূর্তি মানে আমরা তিন বোন হামেশা একসাথে শপিং করি। আমাদের বোনেদের মাঝে খুব মিল। একজন যা বলে অন্য জন তাইতেই ঘাড় নেড়ে একমত হয়ে যাই।

'আমরা এরপরে থেকে ঈদ আসার অন্তত দেড়মাস আগেই সব কেনাকাটা সেরে ফেলব।' বড়বোন সাদিয়াপা হয়ত শুরু করে ।

'হ্যাঁ, নাহলে রোজা রেখে ঘোরা বড় কষ্ট। আর কি জ্যাম হয় রে বাবা।' আমি- সেকেন্ড ইন কমান্ড সামিয়া সম্মতি দেই সাথে সাথে।

'দেরী হলে টেইলরেরা ঠিকমত কাপড় টাপড় নেয় না । কথা ভালো করে না শুনেই অধৈর্য্য হয়ে পরে । ভাব কি একেকজনের! কোনোবার যদি এইজন্য মনমতো একটা কিছু পেলাম!' ছোটবোন সামিনাও তাল ঠুকে সায় দেয়।

এখন কথা হলো এই কথোপকথন কোন স্মরণাতীত কাল থেকে আমদের মধ্যে চলে আসছে - তা বলে যারা এই গল্প যারা পড়তে এসেছেন তাদের আর বিরক্ত করতে চাই না। কিন্তু ঐ যে বললাম , আমাদের মধ্যে খুব মিল আছে তাই ট্রাডিশনালভাবেই করুণ অতীত অভিজ্ঞতায় নিজেদের মধ্যে করা রক্ত থুরি শ্রম ও ঘামের উপলব্ধিতে আসা এই শপথ আমরা বারে বারে ভঙ্গ করি । চিরন্তন ঐতিহ্য! যথারীতি হরবছরের মতো ১৫ রোজার আগে আমরা কেউই আর আর সব কাজ থেকে 'ফ্রি' হতে পারিনা।

ব্যাপারনা , প্রতিশ্রুতি তো করাই হয় না পালনের জন্য তাইনা?

যাহোক ,শপিঙে যাবার বেলা শুভদিনে সব মোট বোচকা নিয়ে আমরা বেরুই । সবে কিনতে যাচ্ছি এর মাঝে বোঝার কথা কোথা থেকে আসলো? বলে রাখি আমাদের ছোটটা, সানি একটা স্বঘোষিত বিশিষ্ট প্রতিভাশালিনী ডিজাইনার। যে কোন '''জিনিয়াসে''র মতই ওকে নিয়ে প্যাড়ার শেষ নাই। প্রতি ঈদে তার বাতিক ওঠে নিজে নিজে জামা তৈরী করবে। রোজা আসার ছ'মাস আগে থেকে সে মার্কেটে গেলে জামার কাপড় কিনে কিনে জমাতে থাকে। যখনই নতুন কিছু কেনা হবে বাড়িতে ফেরার পরে বলবে, 'থাক অমুক অমুকটা রেখে দিচ্ছি , এত ভালো ভালো কাপড় এখন বানিয়ে নষ্ট করবো না, ঈদের জন্য থাকুক..।' এই করে করে আধমণ কাপড় সে জমিয়েছে। ওর একার হলেও কথা ছিল, সাথে আমাদেরগুলোও আছে।একই ডিজাইনের কাপড় কিনে ,'রেখে দে। একরকম পড়বো' , বলে জোর করে রেখে দিয়েছে। ফলাফল তিনবোনের একসারি একরঙা কাপড় , দেখলে ঠিক মনে হবে ইউনিফর্ম পড়ে ত্রিমূর্তির দল এই বুঝি বহু আগে ফেলে আসা ইস্কুলে ফের লেফট রাইট করতে যাব!

তো বেরুবার সময় যার যার গাট্টি নিয়ে নিলাম। আইডিয়া ক্রেডিট ছোটজনের হলেও একা ওকে দিয়ে সবার বোচকা টানাতে আমাদের দয়ার শরীরে বাঁধে।


রাস্তায় বের হয়ে দেখি , ভয়াবহ জ্যাম । যেমন গরম সাথে গাড়ি নট নড়ন চড়ন। জ্যান্ত কাবাব হচ্ছি। একসময় সানি সাদিপাকে জিজ্ঞেস করল ,' আমার ব্যাগটা দে তো আপা।'

'আমার কাছে শুধু আমার কাপড়।' শঙ্কিত গলায় সাদিপু উত্তর দেয়।


' তোর আর আমরা কাপড় তো একসাথে রাখা ছিল। তোর হাতে পোঁটলা দেখে আমি ভাবলাম দুইজনেরটাই নিয়ে আসছিস।'

'কই আমি আমারটা আগেই বাইর করে মাপের কাপড়সহ রাখছিলাম। আসার সময় আলাদা করে রাখা ঐ ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছি।কেমনে জানব যে তুই নিজেরটা ঠিকমত নিস নি? এই তো দেখ সামু কি সুন্দর গুছিয়ে নিজেরটা এনেছে।'
তর্কে সুবিধা না করতে পেরে সানির মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। এখন কি হবে?

আমরা ত্রিমূর্তি নিরুপায় চোখে তাকাই রাকিবের দিকে ।' লক্ষী ভাইটা , প্লিজ , বাসায় গিয়ে নিয়ে আয়। 'ঘোরতর অন্যায় আবদার ।তাও সানন্দে যে রাকিব ফিরে যায় তার কারণ ওকে লেটেস্ট গেমস আর বাছা বাছা কয়েকটা মুভির অরিজিনাল সিডির প্রতিশ্রুতি। সে হামেশাই এইধরণের বিপর্যয়ের অপেক্ষায় থাকে যাতে বাগে পেয়ে তার এমনিতে মিটানোর অসাধ্য খায়েশগুলি পূরণ করতে পারে। সে অবশ্যই এইসবকে তার 'পারিশ্রামিক' বলে হালাল করার অপচেষ্টা করে। নইলে শপিং করার সময় ভারবাহী ভূমিকায় ওকে রাজী করানো শক্ত হতো।

যা বলুন, জানি- দন্ডি সবে শুরু। ভয়ে আছি আরও কি হয় কি হয়!


২ নং কুফার শুরু মার্কেটে পদার্পন করার সাথে সাথে - দুম করে সব বাতি নিভে গেল। আর কি ? কারেন্ট গন । 'এসির তলে থেকেও ঘামতে থাকা 'কথাটার মানে হাড়েহাড়ে বুঝতে পারলাম। চারিদিক বদ্ধ অতএব গুমোট অন্ধকার। জামাকাপড় ভালো করে দেখবো কি কোনটা সাদিপা আর কোনটা সানি সেইটাই ঠিকঠিক ঠাহর হচ্ছিলো না। তবে যেটার পাশে আরেকটা ক্ষুদে কালো ছায়া বেশী নাচানাচি করছে ধরে নিলাম ঐটাই আপা হবে। পিচ্চি ছায়াটা ওর ছানা মানে কোয়েলের।


অতঃপর আমার শুরু করলাম পুরো মার্কেট উদাসীন পরিভ্রমণ। এই মাথায় একটা দোকানে হুদাই ঘোরাঘুরি , ঐ মাথায় আরেকটা দোকানের মাথার কাঁটা, চুড়ি ,ফিতা, মোবাইল , সানগ্লাস পরে কাকে কত কম ভূতনীর মত লাগছে তার এক্সপেরিমেন্ট।কারেন্ট আসার আগে টাইম পাস আরকি। টানা তিনঘন্টা ঘুরে ঘুরে কোন কানচিতে দিনের কোন সময় দাঁড়ালে বাতাসের গতি কত ও কোনদিক থেকে গায়ে কতটুক লাগে এইসব মহামূল্য আবিষ্কার করতে করতে বিল্ডিং প্লান খোদ আর্কিটেক্টের চেয়েও ভালোভাবে মুখস্থ হয়ে গেল ।

চোর পালাল বুদ্ধি বাড়ে। ইফতারের বাকি আর মোটে ঘন্টা দেড়েক। কি করা যায়? রাকিব গেছে সেই কখন আর ইলেকট্রিসিটিরও কোন খবর নাই। রোড ক্রস করে এলিফেন্ট রোডে চলে গেলে কেমন হয়? অন্তত কোয়েলের জামাটা দেখা যেতে পারে।'- এই আইডিয়া কেন যে এতক্ষণে কেউ দিলো না সেই পরস্পরকে ১৫ মিনিট ধরে দোষারোপ করে আরো মিনিট বিশেক ধরে একটা রিকশাকে রাজি করানোর প্রাণপণে চেষ্টা করি। প্রতিটাই ঘাড় নেড়ে , প্রথম সন্দেহের চোখে জিজ্ঞেস করে ,' একটায় কয়জন?' ২টাতে ২ জন করে বলায় বাড়তি ভাড়া পাওয়া যবে না ভেবে বেশ নিরাশ হয়। অনেক রাস্তা বন্ধ , অমুক দিয়ে দিয়ে পুলিশ ঘুরায় দিবে, তমুক গলি দিয়ে গেলে কম টাইম লাগবে , তাতে অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে জানায়। ব্যাপক দরকষাকষি করে হয়রান আমরা , শেষে রাজি হই। আজকে গচ্চা দেবারই দিন। যেই রিকশাতে পা রেখে উঠতে যাব , 'পরক্ষণে রিকশাওয়ালা বলে ,' আফা আমি তো ঐদিক যামু না । মেলা জ্যাম।'
-বাপের জন্মে এমুন কান্ড দেখি নাই ভাই!আমরা রীতিমত টাসকি লেগে থাকি। সব ঠিক ঠাক হবার পরে এতক্ষণ বাদে ব্যাটা বলে কি? যাবি না - না এতক্ষণ এত ভনিতা করলি ক্যান? আর ঢাকার কোন রাস্তাটা কোন নবাব সাহেবের জন্য গাড়িঘোড়া ফ্রি করে রাখা হয়েছে যে সেখানে জ্যাম নাই? বলে মনে মনে গজরাই। বাছা বাছা গালিগুলো প্রয়োগ না করার দুঃখ সীমাহীন।আমাদের হুমায়ুন স্যার যেমন বলেছিলেন , 'মানুষ হবার একটি বড় যন্ত্রণা হলো যা বলতে প্রাণ কাঁদে তা কখনো বলা হয় না!'

''কেয়ামত নজদিক। সবই কেয়ামতের আলামত।''মনের কথাটা বেশ ভদ্রস্থ করে সজোরে উচ্চারন করে আপা।

''বেশী দূর না। চল হেঁটে যাই । এমনিতেও রিকশায় গেলে আরো বেশী সময় লাগতো । হাঁটাই ভালো ।টাকাও বাঁচল।।'' আরও যোগ করে ।

ছোট বেরসিক ফোড়ন দেয় ,' আর তোর ভূড়িটাও কমবে সাদিপা।'

আমি না শোনার ভান করে বলি,' আঙুর ফল টক..'

ইঁচড়ে পাকা কোয়েলও বলে ওঠে, ''হাঁটলে ভালো ব্যায়াম হয়, আদর্শ ব্যায়াম ,মিস বলেছে'।

এলিফ্যান্ট রোডের আপার প্রিয় মার্কেট যেখান থেকে হরবছর কোয়েলের ফ্রক কেনা হয় , আচ্ছামত চষেও কিছু পাওয়া গেল না। কারণ অবশ্যি কোয়েল । মাত্র তো হাঁটতে শিখেছে কয় দিন হলো- তার কি বায়নাক্কা। এটা না ওটা না।হেন তেন । খুব জেদী হওয়ায় ওকে এবার শিখিয়ে আনা হয়েছিল কাপড় যতই ভালো লাগুক বলবি 'মোটামুটি ' । আমরা তাহলেই বুঝব চয়েজ করেছিস।দোকানে নাছোড়বান্দা, পছন্দ করেছে জানলেই সবসময় আকাশছোঁয়া দাম চড়ায়। আজ কিন্তু কপাল বেজায় খারাপ।একবার সামনে থেকে পেছনে, ডান থেকে বামে , বাম থেকে ডানে চষে ফেলার পরে মাথা কেমন জানি ঘুরতে লাগলো। আপা শেষ বারের মত প্রস্তাব করলো,' লাস্ট পিছনে থেকে সামনে আরেকবার দেখি?' ''না পেলে অন্য কোথাও চল' , না এখান থেকেই কিনতে হবে ।

দানে দানে ৪ দানে একটা পছন্দ হলো। দাম কত ? ছয় হাজার !এত টাকা দিয়ে কেনার সাধ্য আর ইচ্ছা কোনটাই নাই। তাহলে অবধারিতভাবে আবশ্যক অনেক কিছু বাজার লিস্টি থেকে কাটা পড়বে। মানে মানে নিজের মান বাঁচাতে বললাম, 'না ভাই তেমন ভালো লাগে নি।বাচ্চার ভালো না লাগলে ওর উপর তো আর জোর করতে পারি না।' মনপসন্দ জিনিস এভাবে হাতছাড়া হয় দেখে বদ পিচ্চি সাথে সাথে বলে উঠলো, 'না না আঙ্কেল ভালো লেগেছে তো। ' আর আমাদের দিকে ঘুরে বলল, 'কই মামণি তুমি না বললে ভালো লাগলেও বলতে মোটামুটি লেগেছে।এখন কেন বলছ পছন্দ হয় নাই?এইটাই আমি কিনবো।' একেবারে প্রেস্টিজ পাংচার।দোকানময় হাসির হুল্লোর ওঠে।

বাধ্য হয়ে চোখের মাথা খেয়ে সোজাসাপটা বলি,' এত দাম দিয়ে ড্রেস কিনবো না।'

'আচ্ছা আপনাদের সাথে কথা বলে ভালো লেগেছে , ম্যাম , শুধু আপনাদের জন্য ৫০ টাকা অনার করছি। একেবারে কেনা দাম, আর শেষ পিস । না নিলে আর ঘুরে এসে পাবেন না।' বলে দোকানী কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়। আবার কোয়েলের উপর এই মন্তব্যের ড্রামাটিক আসর হয় । কান্নাকাটি করে একেবারে দোকানের খুঁটি আকড়ে ধরে থাকে। এই জামা না পেলে তার জীবন বৃথা। দোকান থেকে তাকে হাতি দিয়েও নড়ানো যাবে না। লাস্ট পিস তাকে কিনতেই হবে এবং এখনই! কি করা , বড় আপার একমাত্র আদরের মেয়ে। নতি স্বীকার করতে হয়।


মার্কেট থেকে যখন বেড়িয়েছি বিজয়গর্বে নিজের সাইজের একটা ব্যাগ নিয়ে আগে আগে নেতৃত্বদানকারিনী কোয়েল ছাড়া আর আমরা সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে চূড়ান্ত বিপর্যস্ত।


'আল্লাহু আকবার' আজান দিল এর মধ্যে। হুড়াহুড়ি করে রাস্তার পাশের মামার শরবত দিয়ে রোজা ভাঙলাম। উনার ফুসকার কালেকশন দেখে মুখে পানি আসে। এই ব্যাপারে তিনটাই আমরা সমান পেটুক। এক প্লেট করে দিতে বললাম। ' একমিনিট পরে দিতাসি' বলেই মামা কইজানি উধাও হলো ।অনতিকাল পরে ছ'মিনিটে একমিনিট কাটিয়ে লুঙ্গিতে হাত মুছতে ফিরে এল। সানি ফিসফিস করে বলল, 'মামা মনে হয় ছোট কাজ সারতে গিয়েছিল রে।'ফুসকা নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে উঠে পড়লাম । এরপরে আর খাওয়া অসম্ভব।

এতক্ষণ সমানে বৃষ্টি পড়েছে , এখন থামলেও রাস্তায় পানি জমে নগরী প্রাচ্যের ভেনিস সেজেছে। পা টিপে টিপে হাঁটছি , তাও বলা নেই কওয়া নেই দুম করে স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেল। হায় কি কুক্ষণে আজ বেরিয়েছিলাম! মরিয়া হয়ে হাঁটতে চেষ্টা করে দেখি ডান দিকে পা বাড়ালে পাদুকা যায় বামে! আর বামে চলতে চাইলে যায় ডানে। তাজ্জ্বব কান্ড!
আমার অবস্থা দেখে সানি আর সাদিপা হি হি করে হেসে উঠলো।এক মুহূর্তের বিরাম আর গাড়ির শব্দ- ছপাৎ করে একরাশ পানি সোনার অঙ্গে মেখে হাতে হাতে ওদের পাপের প্রায়শ্চিত্তও হয়ে গেল। হু একেই বলে ,ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আর আমার সমস্যার সমাধান করলো কোয়েল। 'খালামণি ,দেখ ঐযে ডানে বাটার দোকান ।'

বাটা আমি দুচোক্ষে দেখতে পারি না। কোন ছিরিছাদ নাই।পড়লে কাজের বেটি রহিমার মত লাগে নিজেকে।তাও ঢুকতে হল, কিনতেও হলো। সাদিয়াপা সান্ত্বনা দিয়ে বলল,' যাক তোর ঈদের স্যান্ডেলটা তো কেনা হয়ে গেল,আমাদের মধ্যে সবচে আগে তোরই কেনাকাটায় বিসমিল্লাহ্‌।' কটমট করে ওর দিকে ঠায় কতক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।দ্বিতীয় জোড়া কেনা তো সম্ভব না। রাগ দেখিয়ে কি লাভ?

আগের মার্কেটে ফিরে দেখি কারেন্ট আর রাকিব দুটাই হাজির। আহ ! কি শান্তি।
আর কিছু না হোক এবার অন্তত কাপড়গুলো দিয়ে আসা যাক। এটাতেই সময় সবচে কম লাগার সম্ভাবনা। টেইলারের কাছে আগেই সানির কিছু কাপড় দেয়া ছিলো। দেখি যথারীতি কোনটাই ফরমায়েশমত হয় নাই।সালোয়ারে কাপড়ে কামিজ আর কামিজের কাপড়ে সালোয়ার বানিয়ে রেখেছে।অবশ্য কোনবারেই ওর কাপড় ঠিকমত হয় না । হবে কিভাবে? কাপড় দোকানে ফেলে গাড়িতে উঠে সানি ফোন দেবে, 'মামা , বলতে ভুলে গেছি, সালোয়ারের কাপড় দিয়ে কামিজে হাফবডি দিয়েন।'

বাড়িতে পৌঁছে ফোন দিবে, 'মামা গলাটা গোল না ভি শেপ কইরেন আর সালোয়ারটা চুড়িদার না লুজ পালাজ্জো হবে।'

পরেরদিন ,' মামা গলা আগেরটাই রাখেন, কামিজটা আরো চার ইঞ্চি লম্বা করবেন। কাপড়ে হবেনা?'

দুই দিন পরে,' মামা, কামিজ চার না, ২ ইঞ্চি লম্বা হবে আর সালোয়ার স্টেট প্যান্ট করবেন । ঐযে খুব ঢিলাও না , চাপাও না।'


অবাক হওয়ার কিছ নেই যে প্রতিবারই ডেলিভারী নিতে এলে ধুন্দুমার কান্ড বেঁধে যায়। অতএব প্রতিবারই ও রেগেমেগে ''এই টেইলারের কাছে জিন্দেগিতে আর বানাবো না বলে রায় দেয়। 'সন্দেহ হয় দর্জিমামাও তখন তখনি মনে মনে কমসেকম ১০ রাকাত শোকরানার নিয়ত করে ফেলে!

তারপরে আবার নবদ্যোমে নতুন দোকান সার্চ। তাজ্জ্বব ব্যাপার। এইবারে দেখি এক এক করে মার্কেটের সবগুলোতেই অন্তত একবার হলেও ছোটর পদধূলি পড়েছে।..........ইউরেকা! কোনার শোভা ফ্যাশনে এখনও যাওয়া হয়নি।দোকানে ঢুকে লাগলো আরেক চিত্তির। সানিয়া দেয়ার জন্য অনেকগুলো ডিজাইন ট্যাবে সেভ করে রেখেছিল। চার্জ শেষ হয়ে এখন ট্যাব বন্ধ হয়ে আছে। 'জানিস যখন আজকে লাগবেই, রাতে চার্জ দিয়ে রাখলি না ক্যান? ডেনজারেস বেখেয়াল মেয়ে।' বিরক্ত হয়ে বলি।

'আরে কি করি? কালকে সারাদিন ট্যাট ট্যাট করে শব্দ করছিল, ভেবেছি আবিরের ম্যাসেজ। ওর সাথে স্লাইট রাগারাগি হয়েছে তো , তাই খুলেই দেখিনি। এখন বুঝেছি, ঐটা ছিল চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার সিগনাল।'' বোকা বোকা গলায় বলে ছোট।

এখন আর কিছু করার নাই। আরেকবার এই জিনিস নিয়ে ফেরত গিয়ে আরেকদিন আসা অসম্ভব।
আগত্যা ক্যাটালগ দেখেই দরজিকে কাপড় দিতে হলো।

এইবার ঘুরতে শুরু করলাম আবার। অনেক যন্ত্রণার পরে এক দোকানে একটা থ্রিপিস পছন্দ হলো । দোকানী তিনটা নামিয়েছিল একটা ধরে জানতে চাইলাম কতো? ১০০০০! কি আছে এই সাধারণ সুতির কাপড়ে?এমন খুব যে বেশী ভালো তাও না, চলে আরকি।কিনব না ভেবে হাঁটা দিয়েছি। দোকানী পিছন থেকে বাজখাঁই হাঁক দিল ,'একশটা নামিয়ে এখন দাম বলে না , কিনে না, মশকরা পাইছেন?'

আগেই বলেছিলাম না কেয়ামত অতীব সন্নিকট? দোকানদার সেকেন্ডের মধ্যে মারমুখো হয়ে এমন হৈ চৈ আরম্ভ করলো আশেরপাশের অন্য দোকানীরা চাঁদাবাজ আসছে মনে করে লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়ে আসতে লাগলো। আমাদের তো আত্নারাম খাঁচাছাড়া!

ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি পড়ছি এমন সময়........... খাস আল্লাহ্‌র রহমত। আবার ইলেকট্রিসিটি চলে গেল।' আল্লাহ্‌ বাঁচাইছে, বেরো বেরো ' বলে অলক্ষ্যে তড়িৎগতিতে কাট মারলাম। সেলুকাস! বিচিত্র বিজলীর একই অঙ্গে এত মহিমা!

বিদ্যুৎ নিজে চলে গিয়ে আমাদের উদ্ধার করেছে ঠিকই কিন্তু বিপদের বন্ধু আবার কখন ফিরে তার জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ হবে না। কমসেকম আবার কয়েকঘন্টার মামলা। হতাশ হয়ে ভাবছিলাম,আজকে খালি হাতেই বাড়িতে ফিরতে হবে মনে হয়। খামাখা টাইম নষ্ট না করে বরং ফিরে গেলেই ভালো। আশ্চর্য! আমার কথার সাথে আর বাকিরাও সবাই একমত হল। বলেছিলাম না, বোনে বোনে এত মিল মহব্বত জগতে দূর্লভ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
না, সেদিন একেবারে শূন্যহাতে ফেরার দূর্ভাগ্য আমাদের হয় নি। সকল দূর্বিপাকেই আমরা লড়তে জানি , বিজয়ী হতে জানি। দুহাতে উপচে পড়া শপিং হয়েছে শেষমেষ। একহাতে জনপ্রতি একটা করে হাওয়াই মিঠাই স্টিক, অন্যহাতে সবাই ভাগাভাগি করে নিয়েছি কোয়েলের জন্য আধ ডজন বেলূন, টম এন্ড জেরির মুখোশ, ওর জামা, চকলেটের ইয়া বিশাল দু'টা টিন। প্রাণপ্রিয় ছোটভাইসাহেবও আমাদের রেহাই করেনি। ওর জন্য একটা ফুটবল, আধডজন গেমস আর একহালি লেটেস্ট হরর মুভির সিডি। সবকিছুতে কি আর কারেন্ট লাগেরে ভাই? মোমবাতির আলোয় করুণ রস আর ভৌতিক রস দুটাই সমান জমে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৫৪
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×