somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (চতুর্থ পর্ব)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (তৃতীয় পর্ব)

বইয়ের নাম : ‘অন্তর্লীনা'
লেখক : নারায়ণ সান্যাল

আধুনিক লেখকদের মধ্যে নারায়ণ সান্যাল এক গোষ্ঠীর পাঠকের কাছে বিপুলভাবে জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার কারণ তাঁর অনবদ্য লেখার টান, বিষয়ের বৈচিত্র্য এবং সময়বিশেষে নিখুঁতভাবে পাঠকের আবেগকে ছুঁতে পারার ক্ষমতা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পাঠকেরা প্রথম নারায়ণ সান্যালের ভক্ত হয়ে পড়েন ‘বিশ্বাসঘাতক’ বা ‘প্রবঞ্চক’ পড়ে। বই দুটি ভালো লাগার মতো সত্যি, কিন্তু তার রচিত ‘হে হংসবলাকা’ আর ‘অন্তর্লীনা’ না পড়ে কেউ তার ভক্ত হলে তাকে আমরা অন্ধভক্তই বলবো।

গল্পের নায়ক কৃশানু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বুদ্ধিদীপ্ত। কিন্তু সাধারণের দৃষ্টিতে স্মার্ট নয়, কারণ সে লাজুক, ইন্ট্রোভার্ট। নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসে। এছাড়া তার মধ্যে আছে এক শিল্পীমন, সে সাহিত্যের ছাত্র, ছবিও আঁকে। অথচ তার স্কেচবুকে নেই কোনও নারীর ছবি। তার বয়সী এক যুবক শিল্পীর কাছে একটু অস্বাভাবিক ঘটনা, সন্দেহ নেই। শুধু স্কেচবুক বলে তো নয়, সে ট্রামে উঠে চেষ্টা করে লেডিজ সীট থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে, তার সহপাঠী মেয়েদের মুখের দিকে সে কখনও তাকায় না পর্যন্ত। এ হেন নারীভীতির কারণ কি শুধুই লজ্জা? ধীরে ধীরে পাঠকরা জানতে পারেন যে কেবল লাজুক স্বভাবের জন্য নয়, এই আচরণের পিছনে আছে তার এক অদ্ভুত মানসিক সমস্যা। সেই সমস্যা সম্পর্কে সে যথেষ্টই সচেতন, কেবল জানে না কিভাবে বেরিয়ে আসবে সেই সমস্যা থেকে, কিভাবে স্বাভাবিক আর পাঁচটা ছেলের মত হতে পারবে। এ হেন কৃশানুর জীবনে হঠাৎই একসাথে তিনজন নারীর আবির্ভাব হয়। তারপরই ঘুরে দাঁড়ায় গল্পের মোড়। তারপর এসবের টানাপোড়েনে প্রেম ভালোবাসা আবেগের জগতে ঘুরপাক খেতে থাকে কৃশানু। কিন্তু বুঝতে পারে না নিয়তি তাকে নিয়ে যাবে কোনদিকে। শেষপর্যন্ত কি হয়, কৃশানু তার সমস্যার সমাধান করতে পারে কিনা, সেসব জানতে গেলে পড়তে হবে মূল উপন্যাসটি।

কৃশানুকে ঘিরে তিনজন নারীর এই আবর্তনকে তাঁর কলমের জাদুতে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন লেখক নারায়ণ স্যানাল। কৃশানুর জীবনের প্রথম প্রেম সার্থক হোক না হোক, রোম্যান্টিক উপন্যাস হিসেবে অন্তর্লীনার সার্থকতা নিয়ে সন্দেহ নেই। অন্তর্লীনা শুধু রোম্যান্টিক উপন্যাস নয়, মনন-আশ্রয়ী উপন্যাসও বটে। নায়ক কৃশানুর মনের ভেতর যে আনন্দ, দুঃখ, সংশয় ভিড় করে আসে তার বর্ণনা দেওয়ার ব্যাপারে লেখকের মুন্সিয়ানা লক্ষণীয়। এই ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে লেখা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি নেই। সেদিক থেকেও এই বইটি স্বতন্ত্র। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বইটি ১৯৬০ এর দশকে লেখা। এখনকার লেখকেরা যতটা সহজে যৌন সমস্যার বর্ণনা দিতে পারেন সে সময় সেটা অসম্ভব না হলেও অনেক লেখকই সেটা এড়িয়ে যেতেন সমাজের একদল পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর ভয়ে। অন্তর্লীনায় কিন্তু লেখক রাখঢাক করেননি, যৌন বিবরণ সরাসরি না এলেও এ গল্পের মূলভিত্তি ওই যৌন সমস্যা।

সবশেষে গল্পের পরিণতি প্রসঙ্গে বলি, সারা উপন্যাসের তুলনায় শেষটা একটু যেন তাড়াহুড়ো করে করা, একটু বেশি মেলোড্রামাটিক। হয়ত এটাকে লেখকের একটা দুর্বলতা বলা যেতে পারে। তবু একটা কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না, যতই মেলোড্রামাটিক হোক, যতই আবেগের বাড়াবাড়ি থাক, উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলে ছাড়তে ইচ্ছে করবে না, এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ফেলতে চাইবেন। লেখকের অদ্ভুত সাবলীল লেখনীর গুণে তৃপ্তিটা পাবেন পুরোমাত্রায়ই। উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলে, ভালো লাগতে শুরু করবে।

পিডিএফ লিংক পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×