ব্লগে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের লিঙ্কের অভাব নেই। অনেকেই এমন অনেক ছোটোখাটো,কিন্তু দারুণ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের কথা জানেন, যা অনেক অ্যাডভান্সড ইউজারও জানেন না। অবশ্য আমি যে সফটওয়্যারের কথা বলতে যাচ্ছি, তা ইতিমধ্যেই অনেক অ্যাডভান্সড ইউজার ব্যবহার করেন। তবে আমার মতো সাধারণ অনেক ইউজার এসবের চমৎকার সুফল থেকে বঞ্চিত হন। তাই আমি কয়েকটা ধাপে কিছু প্রয়োজনীয় ও আনন্দ দেয়ার মতো সফটওয়্যারের কথা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি কাজে লাগবে।
১.ফ্র্যাপস
গেমার আর মুভি ওয়াচারদের জন্যে এটি বেশ কাজে লাগতে পারে। এ সফটওয়্যারটি যে কোনো গেম বা মুভি চলার সময় সেটার ফ্রেম রেট শো করতে পারে, যার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার গেমটি অথবা মুভিটি পুর্ণাঙ্গ পারফরমেন্সে চলছে কিনা। এছাড়াও যে কোনো গেম বা মুভি চলাকালীন সেটার যে কোনো দৃশ্যের ফটো তুলতে পারবেন ফ্র্যাপস দিয়ে। এখানে বলে রাখি, ফ্রেম রেট বা FPS(Frame Per Second) যতো বেশি হবে, গেম ও মুভির গতি ও পারফরমেন্স ততো ভালো হবে। তবে ভালো ফ্রেম রেটের জন্যে অবশ্যই ভালো একটি গ্রাফিক্স কার্ড এবং ভালো প্রসেসর প্রয়োজন। একটি গেম নিজস্ব গতিতে চলার জন্যে নূন্যতম 30 FPS প্রয়োজন হয়। ৩০ থেকে ১০০ ফ্রেম রেট হল চোখের জন্যে আদর্শ।এবং কোনো মুভির ক্ষেত্রে ফ্রেম রেট ৫০-৬০ হলে ভাল হয়।গেমের জন্যেও ৬০+ ফ্রেম রেট আদর্শ।
ফ্র্যাপস ডাউনলোড করুন এখান থেকে...
২. স্মার্ট ডিফ্র্যাগ
এই হালকা, কিন্তু চমৎকার সফটওয়্যারটি বর্তমানে অনেকেই ব্যবহার করছেন। এর মূল কাজ হচ্ছে অতি সুক্ষ এবং সুন্দরভাবে আপনার হার্ড ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেণ্ট করা। সাথে এটি পিসি অপটিমাইজের মাধ্যমে পিসি থেকে বিভিন্ন জাঙ্ক ফাইল, অপ্রয়োজনীয় ফাইল রিমুভ করতে পারে। এধরনের অনেক সফটওয়্যার থাকলেও এ সফটওয়্যারটির ব্যতিক্রম দিক হচ্ছে, আপনি Deep Optimize and Defrag অপশনটি রান করার পর সাথে সাথেই পিসির পারফরমেন্স বৃদ্ধি উপলব্ধি করতে পারবেন। অন্য অনেক সফটওয়্যারের চেয়েই এটি ইউজ করা বেশ সহজ। এর ডিফ্র্যাগমেণ্ট অপশন যে কোনো উইণ্ডোজের ডিফল্ট ডিফ্র্যাগমেণ্ট অপশন থেকে অনেক বেশি কার্যকরী। বলে রাখি, ডিফ্র্যাগমেণ্ট হল আপনার হার্ড ডিস্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমস্ত ফাইলকে একসাথ করার পদ্ধতি। আপনি পিসিতে নতুন কোনো অ্যাপ্লিকেশন, মিডিয়া লোড করলে সেটা হার্ড ডিস্কের ফাঁকা স্থানগুলোয় নিজের মতো করে জায়গা করে দেয়। আবার পিসি থেকে কোনো কিছু ডিলিট করলে হার্ড ডিস্কে সে স্থানটি ফাঁকা হয়ে যায়। এভাবে অনেক জায়গা খালি থাকে এবং ফাইলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এ সফটওয়্যারটি এইসব
Fragmented ফাইলকে গুছিয়ে এক জায়গায় নিয়ে আসে, যার ফলে প্রসেসরের উপর বাড়তি চাপ পড়েনা এবং পিসির স্পীড তাৎক্ষণিক বৃদ্ধি পায়। পিসির ওভারল পারফরমেন্স ঠিক রাখার জন্যে মাসে একবার হলেও ডিফ্র্যাগমেণ্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।
স্মার্ট ডিফ্র্যাগ ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
৩. প্রগসেন্স
যাদের পিসিতে প্রচুর পরিমাণে গেম এবং সফটওয়্যার থাকে তাদের জন্যে এটি বেশ কাজের। এ সফটওয়্যারটি আপনার পিসির সব অ্যাপ্লিকেশনের একটি লিস্ট তৈরী করে এবং এদের নিয়মিত আপডেটের খবরাখবর এবং আপডেট লিঙ্ক আপনাকে দেয়। আপনার পিসিতে যদি দশটি সফটওয়্যার থাকে তাহলে তাদের আপডেট করার জন্যে (যারা অটোমেটিক আপডেট হয় না) আপনার দশবার ঘাঁটাঘাঁটি করা লাগবে। কিন্তু প্রগসেন্সে একটি ক্লিকের মাধ্যমেই অটোমেটিক আপডেট শুরু করতে পারেন।এবং সফটওয়্যারের পাশাপাশি গেমের জন্যেও এটি বেশ কাজ দেয়।ধরুন আপনি FIFA 10 গেমটির আপডেট নামাবেন। তার জন্যে আপনাকে EA Sports -এ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং বিভিন্ন ঝামেলা পার করতে হবে। কিন্তু এ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে আপনি এক ক্লিকেই প্রয়োজনীয় আপডেট নামিয়ে নিতে পারবেন। প্রগসেন্স মুলত আপনার পিসির সব সফটওয়্যার ও গেমের জন্যে একটি আপডেট লিঙ্ক নিজস্ব সার্ভারে রেখে দেয়, তাই আপনাকে আর ঝামেলা পোহাতে হয়না। বলা বাহুল্য, আপডেট ছাড়া যে কোনো অ্যাপ্লেকেশনের কাছ থেকে পূর্ণ পারফরমেন্স আশা করা যায় না। অনেকেই (আমিও!!) আলসেমির জন্যে এ কাজটি করতে চান না, কিন্তু প্রগসেন্স ইউজ করে সহজেই এই সুবিধাটি আদায় করতে পারেন। তবে এ সফটওয়্যারটির একটি ছোটো সমস্যা হলো অ্যামেচার ইউজারদের জন্যে এটি ব্যবহার করা মাঝে মাঝে কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে।
ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
৪. ফেসবুক চ্যাট হিস্টরী ম্যানেজার (মজিল্লা অ্যাড-অন)
ফেসবুক ইউজারদের জন্যে এটি সত্যি বেশ কাজের সফটওয়্যার। ফেসবুকে বহুদিন পর খুঁজে পাওয়া বন্ধুর সাথে প্রথম চ্যাট করার আনন্দ, কিংবা ফেসবুকের প্রেমিকাকে প্রথম 'আই লাভ ইউ' বলার আনন্দঘন মুহূর্ত খুব সহজে এ অ্যাড-অনের সাহায্যে সেভ করে রাখতে পারেন। এটি আপনার সব চ্যাট হিস্টরী সেভ করে রাখে এবং যে কোনো মুহুর্তে তা দেখতে পারবেন। Tools > Facebook Chat History Manager থেকে আপনি এটি কাস্টোমাইজ ও ইউজ করতে পারবেন।
এই অ্যাড-অনটি ইন্সটল করতে Tools > Add-ons -এ গিয়ে সার্চ বক্সে
Facebook Chat History Manager লিখলেই অ্যাড-অনটি চলে আসবে। এরপর এটি ইন্সটল করে নিন।
৫. হোয়াইটক্যাপ (মিডিয়া প্লাগ-ইন)
এটি উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার, জেট অডিও, রিয়েল প্লেয়ার ইত্যাদির জন্যে চমৎকার একটি ভিজুয়ালাজিং প্লাগ-ইন। এসব মিডিয়া প্লেয়ারের ডিফল্ট ভিজুয়ালাইজেশন সাধারণত খুব বেশি উচ্চমানের হয়না।উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারের ক্ষেত্রে বলা যায়, এর ভিজুয়ালাইজেশনগুলো গত ৩-৪ বছরে তেমন আপডেট হকরা হয়নি। যদিও নেট থেকে বিভিন্ন ভিজুয়ালাইজেশন নামিয়ে নেয়া যায়। তবে হোয়াইটক্যাপের সাথে কোনোটারই তুলনা চলে না। মিউজেকের রিদম ও হারমোনির ছন্দে এটি অপূর্ব সব ভিজুয়ালাইজেশন তৈরী করে। অনেক অনুষ্ঠানেই দেখা যায় গানের সাথে প্রজেক্টরে মিডিয়া প্লেয়ারের ডিফল্ট ভিজুয়ালাইজেশন চালানো হয় উপস্থিত দর্শক/আমন্ত্রিতদের মনোরঞ্জনের জন্যে। এক্ষেত্রে হোয়াইটক্যাপের ভিজুয়ালাইজেশন ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে ভালো গ্রাফিক্স কার্ড ব্যতীত এটির পূর্ণ পারফরমেন্স পাওয়া যাবেনা।
হোয়াইটক্যাপ ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
৬. ফাস্ট কপি
ভিস্তা ও সেভেন ইউজাররা জানেন, এক্সপির তুলনায় এ দুটি উইণ্ডোজের কপি স্পীড কতো বেশি। ১ জিবি ফাইল যদি এক্সপিতে কপি হতে লাগে ১৫ মিনিট, একই মেমোরী ও প্রসেসরে সেভেনে লাগবে ২-৩ মিনিট। কিন্তু ফাস্ট কপি ইউজ করে আপনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক্সপির কপি স্পীড সেভেনের চেয়েও বাড়াতে পারেন! আর ভিস্তা অথবা সেভেন ইউজাররাও সর্বোচ্চ কপি স্পীড পেতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এ প্রোগ্রামটি সমসময় টুলবারে অবস্থান করে এবং যে কোনো ফাইল কপি করার সময় সক্রিয় হয়।
ডাউনলোড করুন এখান থেকে।
৭. সুপার F4
পিসি ইউজারদের জন্যে অন্যতম বিরক্তিকর একটি বিষয় হল হ্যাং হয়ে যাওয়া পিসির সামনে বসে থাকা, আর Ctrl+Alt+Del চাপতে থাকা।এ সমস্যা খুব সহজে দূর করা যায় সুপার F4 -এর সাহায্যে। পিসি হ্যাং হয়ে গেলে Ctrl+Alt+F4 চাপবেন। ব্যস,নিমেষেই পিসি ঠিক হয়ে যাবে। তবে চলমান প্রোগ্রামটি সেভ করা না থাকলে তার সব প্রগ্রেস নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ এটি প্রসেসরের মতো সমস্যার সমাধান নিয়ে মাথা ঘামায়না, যে প্রোগ্রামটি হ্যাং করেছে সেটি ও তার সাথে সম্পর্কিত সব কিছু অফ করে দেয়। এখানে উল্লেখ্য, অনেকেই হ্যাং হলে নির্দ্ধিধায় রিস্টার্ট বাটন চাপা দিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, কম্পিউটারের যেকোনো ধরনের সমস্যার জন্যে ৫০% দায়ী এই আকস্মিক রিস্টার্ট? তাই মন্দের ভালো হলেও সুপার F4 ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত।
ডাউনলোড করুন এখান থেকে...
পরবর্তীতে আরো কিছু সফটওয়ার দেয়ার চিন্তা আছে।ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১২:১৮