somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম, নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন পৌরভবনের গল্প।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের তাগিদে ঢাকায়ই বসবাস থাকতে হয়। অবশ্য নিয়মিত বিরতিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়। তবে বাড়ি গেলেও নানা কাজে ব্যস্ত থাকা হয় বলে ঘুরে বেড়ানো খুব একটা হয়না। তাই সদ্য নির্মিত আমাদের সুরম্য পৌরভবনটি যাকে স্থানীয় বাসিন্দাগণ বেড়ার ‘হোয়াইট হাউজ’ নামে আখ্যায়িত করেছেন তা আর দেখা হয়ে ওঠেনি। যদিও এটি আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা। এলাকার মানুষের কাছ থেকে ক্রমাগত নানা মুখরোচক গল্প শুনে এটা দেখার খায়েশ দিনকে দিন বাড়তেই লাগলো। একদিন সময় করে বের দেখতে বের হলাম সাধের পৌরভবন। অবশেষে আমি ইহাকে দেখিলাম। এটি দেখামাত্রই চোধুরী জাফরুল্লাহ শরাফতের মত করে বলতে ইচ্ছে হলো, ‘দৃষ্টিনন্দন মার, বাহারী মার, চোখ চেয়ে দেখার মত মার, এমন শট দেখার জন্যই তো দর্শক মাঠে আসেন’। বলাই বাহুল্য ‘মার/শট’ বলতে আমি এই ভবনকেই বুঝিয়েছি।

যাইহোক, ফান নয়, সত্যই অসাধারণ সুন্দর আমাদের এই পৌরভবন। একটা থানাতে এমন সুন্দর ভবন নির্মাণ করা চাট্রিখানি কথা নয়। কিন্তু অনন্তের মত অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন একটানা একযুগের চেয়েও বেশী সময় ধরে চেয়ারম্যান থাকা জনাব মোঃ আব্দুল বাতেন (যিনি আবার সাবেক স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রি জনাব শামসুল হক টুকুর ছোটভাই।) অন্তত এই কারণেই তাকে ধন্যবাদ। এটি দেখার পর আমার ব্যক্তিগত ধারণা হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম, সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন পৌরভবন আমাদেররটিই। আমরা এটি নিয়ে গর্বিত।

আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না আপনাদের? তাহলে চলুন এর কয়েকটি ছবি দেখি।

সামনে থেকে আমাদের পৌরভবনঃ



একটু কোনাকুনি থেকে



পৌরভবন চত্তর যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের সাহায্যে



এবার প্যানোরমিক ভিউতে দেখুন



পৌরভবন সম্পর্কিত টুকিটাকিঃ
যমুনা দুহিতা বেড়ায় (পাবনা) নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী পৌরভবন। গত ০২ ফেব্রয়ারি, ২০১৪ এটির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল আলোচিত, নান্দনিক ও নয়নাভিরাম এ পৌরভবনকে শুধু ইট কাঠ পাথরের বিশাল এক নির্মাণশৈলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে একে আগামী দিনের জন্য নানামুখী ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এখানে প্রশাসনিক কাজ যেমন হবে তেমনি পৌরবাসীর সুবিধা-অসুবিধার কথা বলার জন্য দরজা খোলা। আবার মানুষের মন ও মনন গঠনের জন্য নানা আয়োজন ও সুবিধা রয়েছে।

• এ ভবনে ঢোকার মুখেই দেশের ইতিহাসের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের সাহায্যে। লক্ষ্য করলে দেখবেন এখানে সাত বীরশ্রেষ্ঠ-র অভিভাবক হয়ে আছে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু।
• ৮৭ শতক জায়গার উপর নির্মিত ছয় তলার পৌরভবনে মোট ৫১ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এরিয়া রয়েছে।
• ভবনটি একশ’ বছরের গ্যারান্টিযুক্ত এবং রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্পসহনশীল।
• এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
• বেড়া পৌরসভা এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ ভবন নির্মিত হয়েছে।

ভবনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যঃ
এটিকে শুধু বহুতল বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন ভবনে সীমাবদ্ধ না রেখে এখানে কমিউনিটি সেন্টার, পাঠাগার, অডিটোরিয়াম, শিশু ও প্রবীণদের কক্ষ, বাগান, ছাদ বাগান, নামাজ ঘরসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবনটি এ অঞ্চলের মানুষের জ্ঞানচর্চার একটি দুয়ার খুলে দিয়েছে। আগামী প্রজন্মকে দক্ষ মানবশক্তিতে পরিণত করার জন্য এ ভবনটির বহুমুখী ব্যবহারে পৌর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

অবস্থানঃ
বেড়া বাংলাদেশের পাবনা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। বেড়া উপজেলার উত্তরে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা ও চৌহালি উপজেলা, দক্ষিণে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ ঘাট এবং রাজবাড়ি সদর উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জের চৌহালি এবং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা এবং পশ্চিমে পাবনা জেলার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা।

এক নজরে পৌরসভাঃ



পৌরসভার নামঃ বেড়া
স্থাপিতঃ ১৯৮৮
শ্রেণিঃ ক
উপজেলাঃ বেড়া
জেলাঃ পাবনা
বিভাগঃ রাজশাহী
আয়তনঃ ২০.৫ বর্গ কিঃ মিঃ
ওয়ার্ড সংখ্যাঃ ৯
জনসংখ্যাঃ 59190

বেড়া পৌরসভায় ৫টি কলেজ, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি মাদ্রাসা, ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। ২০টি মৌজায় পাকা রাস্তার পরিমান ৬০ কিমি এবং কাচা রাস্তার পরিমান ১০ কিমি। পয়ঃনিস্কাশনের জন্য ৬ কিমি ড্রেনেজ লাইন রয়েছে। এখানে আছে পাবনার অন্যতম এবং বেড়ার সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম। ১টি পৌর মার্কেট, ৫টি গ্রোথ সেন্টার, ১০টি কবরস্থান, ১টি শশ্মানঘাট সম্বলিত এই উপজেলাতে হিন্দু মুসলিমের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উল্লেখ করার মত। নদীতীরের নীচু এলাকা হওয়া সত্তেও পৌরসভা তাদের সেবাদানের ব্রত নিয়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে জনগনের সুখ-দুঃখ লাঘবে কাজ করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বেড়া পৌর এলাকার মধ্যে অনেক জায়গায় গ্যাসের সংযোগ বিদ্যমান। আছে সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা। যদিও পানির ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দারের আপত্তি আছে। রাজধানী ঢাকাতেই নাগরিক সুবিধাদির যে বেহাল অবস্থা তাতে গ্রামীন এলাকার কথা বলে লেখার কলেবর বাড়িয়ে কি লাভ।

আপনাদের সবাইকে আমাদের পৌরভবন দেখার আমন্ত্রণ রইল।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।


কৃতজ্ঞতাঃ
১. ছবিগুলো নেয়া হয়েছে গুগল, ফেসবুক থেকে
২. লিঙ্কঃ View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×