somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজপাখির জীবন ও আমরা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাজপাখি (Falcon)। আমাদের দেশের বেশ পরিচিত এক ধরনের দিবাচর শিকারি পাখি। চোখা পাখা, চৌকো লেজ, খাঁজ কাটা ঠোঁট এদের বৈশিষ্ট্য। এক সময় মানুষ ছোট পাখি ও ছোটখাটো অন্য জন্তু শিকারের জন্য অনেকে বাজপাখি পুষত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এই চর্চা বেশ জনপ্রিয়। তারা এখনো বাজপাখি পোষে। কিছুদিন আগেও একটা সংবাদ বেরিয়েছিল, "৮০ টি বাজপাখি নিয়ে আকাশে উড়লেন এক সৌদি রাজপুত্র"।

Read more at: Click This Link



বাজপাখি দক্ষ শিকারী। অনেক উপরে উঠে চক্কর দিতে দিতে হঠাৎ ডানা ভাঁজ করে উড়ন্ত জলপিপি বা অন্য পাখিকে ছোঁ-মেরে ধরে। এদের গতি অত্যন্ত ক্ষিপ্র, শূন্যে ঘা মেরে শিকারকে কাবু করে এবং ছোঁ-মারার সময় গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার (১১২ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছয়, যা পাখিদের মধ্যে দ্রুততম। এ ধরনের শিকারে যতদিন রাজা-বাদশাহরা আকৃষ্ট ছিলেন ততদিন এটি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়।

তবে বাজপাখির জীবন প্রণালী কিন্তু খুবই চমকপ্রদ। বাজপাখি প্রায় ৭০ বছর জীবিত থাকে। অথচবয়স চল্লিশ আসতেই তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ সময় তার শরীরের তিনটি প্রধানতম অঙ্গ দূর্বল হয়ে পড়ে।

১. থাবা (পায়ের নখ) লম্বা ও নরম হয়ে যায়। শিকার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২. ঠোঁটটা সামনের দিকে মুড়ে যায়। ফলে খাবার খুটে বা ছিড়ে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
৩. ডানা ভারী হয়ে যায়। এবং বুকের কাছে আটকে যাওয়ার দরুন উড়ান সীমিত হয়ে যায়।

ফলস্বরুপ শিকার খোঁজা, ধরা ও খাওয়া তিনটেই ধীরে ধীরে মুশকিল হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ওর কাছে তিনটে পথ খোলা থাকে।

১. আত্মহত্যা করা;
২. শকুনের মত মৃতদেহ খাওয়া শুরু করা এবং
৩. নিজকে পুনঃস্থাপিত করা।

বাজপাখি শেষ অবধি ৩য় পথটা বেছে নেয়। সে বাজপাখি একটা উঁচু পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে বাসা বাঁধে। আর শুরু করে নিজেকে নতুনরূপে উপস্থাপিত করা কস্টকর এক প্রচেষ্টা।

সে প্রথমে তার ঠোঁটটা পাথরে ক্রমাগত আঘাত করে ভেঙে ফেলে। কি ভয়ানক ব্যাপার! নিজের দাঁত গুতিতে গুতিয়ে ভেঙ্গে ফেললে কেমন লাগবে এটা ভাবতেই গা শিউড়ে উঠছে। সত্যি এর থেকে যন্ত্রণাদায়ক আর কিছু হতে পারে না। এমন করে সে এক সময় তার সমস্ত নখগুলোও উপড়ে ফেলে। এরপর তার অপেক্ষার পালা। একদিন সে অপেক্ষার শেষ হয়। নতুন করে তার নখ ও ঠোঁট গজায়।
নখ ও ঠোঁট গজালে বাজপাখি তার ডানার সমস্ত পালকগুলো ছিড়ে ফেলে। অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার! নিজের উদোম গা নিয়ে, অসহ্য কষ্ট সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে নতুন পালকের। এভাবে ১৫০ দিনের অসহ্য যন্ত্রণা ও প্রতীক্ষার পর সে সব নতুন করে পায়। ফিরে পায় আবার সেই লম্বা উড়ান আর ক্ষিপ্রতা। এরপর সে আরো ৩০ বছর জীবিত থাকে আগের মত শক্তি ও গরিমা নিয়ে।
সত্যি-ই অবিশ্বাস্য এক কাহিনী!

বাজপাখির এই পুনর্জন্মের কাহিনীতে থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। পথ চলতে চলতে মানুষ নানা দুঃখ-কস্ট, ব্যথা-বেদনায় পতিত হয়। কখনো কখনো বাস্তবতার বিষক্রিয়ায় অনেক মানুষ উদ্যোম ও কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে মানুষের বয়স চল্লিশ পার হলেই তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সক্রিয়তা ও কল্পনা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্যই লোকে বলে, ‘চল্লিশেই চালশে’। মাত্র অর্ধজীবনেই আমাদের সকল উৎসাহ, আকাঙ্খা, শক্তি সবেই ভাটা পরে।

কিন্তু ‘চল্লিশেই চালশে’ হওয়া যাবে না। ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য, পুরাতন গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের বাজপাখির মত নতুন করে নিজেদের তৈরী করতে হবে। আমাদের আলস্য উৎপন্নকারী মানসিকতা ত্যাগ করে, অতীতের ভারাক্রান্ত মনকে সরিয়ে জীবনের বিবশতাকে কাটিয়ে ফেলতে হবে, বাজের ঠোঁট, ডানা আর থাঁবার মত। আমাদের জীবনের গান গাইতে হবে,

‘চুল পাকিলেই লোকে হয় না বুড়ো আসল প্রেমের বয়স এই তো শুরু। পচিশ গেল চল্লিশ গেল ষাট বছরে ফের যৌবন এলো’।

আমার বিশ্বাস, ১৫০ দিন দরকার হবে না, ১মাসও যদি আমরা চেষ্টা করি তাহলে আবার আমরা পাবো নতুন উদ্যম, অভিজ্ঞতা ও অন্তহীন শক্তি।

গল্পের নৈতিক শিক্ষাঃ নিজেকে কখনোই হারাতে দেবেন না আর হার ও মানবেন না!!

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতায়ঃ সংগৃহীত আইডিয়া থেকে নিজের মত করে সাজিয়েছি।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×