somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায়ী বছরের আধ্যাত্মিক ভাবনা।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদায় ২০১৭। গোধূলি বেলায় রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেলো ঘটনাবহুল একটি বছরটি। গত এক বছরের সকল সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ভালোবাসা-সংঘাত, পাওয়া-না পাওয়া, অর্জন-বিসর্জন সবকিছুই ঠাঁই নেবে স্মৃতির পাতায়।

মহাকালের গর্ভে একটির পর একটি বছরের বিলীন হলেও নিয়মানুযায়ী নতুন স্বপ্নকে ধারণ করেই প্রতিটি নতুন বছরকে মানুষ স্বাগত জানায়। বিদায়ী বছরের পাওয়া-না পাওয়া, আনন্দ-বেদনা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসেবভূমিতেই রচিত হয় নতুন স্বপ্ন-আশা। নতুন স্বপ্ন ও আশা নিয়েই আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে আর একটি বছর; ২০১৮। গোটা বিশ্বের মানুষ ব্যাপক আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নিল নতুন বছরটিকে।

একটা বছর বদল হলেও জীবনযাত্রায় হয়ত বিশেষ কোন পরিবর্তন আসে না। তবে বছর শেষে দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডার বদলানো আবশ্যক। দেয়াল থেকে ২০১৭ সালের ক্যালেন্ডার নামাতে গিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি হল। নিস্প্রাণ একটা ক্যালেন্ডারের প্রতি কেমন যেন মায়া অনুভব করলাম। গত এক বছর মানে ৩৬৫ দিন; ৮৭৬০ ঘন্টা; ৩১৫৩৬০০০ সেকেন্ড ধরে সে ক্লান্তিহীন, বিরতিহীনভাবে সেবা দিয়ে গেছে। এই সমগ্র সময়ে এক মুহূর্তের জন্যও তাকে গুরুত্বহীন মনে হয়নি। আর আজ? এখন সময় একে ছুড়ে ফেলে দেয়ার। তাই এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ক্যালেন্ডারের স্থান হবে আস্তাকুঁড়ে। আর কখনোই আমরা এর মুখ দেখব না। কি রুঢ়, নিষ্ঠুর বাস্তবতা!



ক্যালেন্ডারের এহেন করুণ পরিণতির সঙ্গে মানুষেরও অদ্ভুত মিল আছে। মানুষও একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই দুনিয়াতে বিচরণ করে। যতদিন সে জীবিত থাকে ততদিন তার প্রয়োজন আছে, গুরুত্ব আছে। বেঁচে থাকাকালীন সে অনেক মানুষের কাছেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, অনেকের চাহিদা সে মেটায়; আবার প্রয়োজনে তার চাহিদাও অন্যে মেটায়। এটাই জগতের চিরাচরিত নিয়ম। কিন্তু যখন সে জীবনের শেষ বিন্দুতে এসে উপনীত হয় তখন ক্যালেন্ডারের মত তাকেও ছুড়ে ফেলা হয় চিরতরে। তাকে আমরা আর কখনো দেখতে পাব না। এটাও নির্মম সত্য।

ছুড়ে ফেললেই কি সব শেষ হয়ে যায়? না। আমেরিকান লেখক ন্যাথানিয়েল হাওথ্রোন বলেছিলেন, ‘Time flies over us, but leaves its shadow behind’. মোদ্দা কথা, পাখি উড়ে যায়, ফেলে যায় তার পালক। তেমনিভাবে মানুষ বা ক্যালেন্ডার যাই আমাদের মাঝে থেকে বিদায় নিক না কেন, কিছু স্মৃতি, কিছু চিহ্ন, কিছু কর্ম সে রেখে যায়, যার দ্বারা সে মানুষের মাঝে আরও কিছুকাল স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে। কেননা, ‘মানুষ বাঁচে তার কর্মে’। ঠিক এইখানে চিন্তাশীলদের জন্য ভাবনার খোরাক আছে।



কেউ যদি মৃত্যুর পরও মানুষের মাঝে সম্মান-ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় তাহলে তাকে পরিবার-সমাজ-দেশের জন্য অবশ্যই মহৎ কিছু কাজ করতে হবে। মানুষের মাঝে তার অপরিহার্যতা, গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে হবে। তাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে করে মানুষ যেন তার চিরবিদায়ের দিনে আবেগভরে বলে ওঠে, ‘আহা! বড় ভাল মানুষ ছিল সে’। পাশাপাশি মনের অজান্তেই যেন সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়ার হাত উঠে যায়। সময়ে অসময়ে মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তবেই না মানবজীবন কিছুটা হলেও স্বার্থক বলে বিবেচিত হবে।

আর হ্যাঁ, এই যে আমাদের জীবন থেকে প্রতিনিয়ত সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর হারিয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয়। প্রতিটা ক্ষণ, প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক এবং তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেছেন,

‘আদম সন্তান! তুমি কেবল কয়েকটি দিনের সমস্টিমাত্র। যখন একটি দিন চলে যায়, তখন তুমি তোমার একটি করে অংশ হারিয়ে ফেলো’।
আর এভাবেই একটা একটা দিন আমাদের অংশ থেকে খসে পড়ছে। আর এভাবেই একদিন আমাদের স্টক শুন্য হয়ে ‘শেষদিন’ হাজির হবে।

সবার জীবনের প্রতিটা দিনই, প্রতিটা অংশই যেন সুন্দরভাবে কাটে - এই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×