somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন উত্তম চাকুরিজীবির আবশ্যকীয় গুণাবলী

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা গ্রহণ শেষে আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ একটা চাকুরীর প্রত্যাশায় থাকেন। প্রায় সকলেরই প্রধান উদ্দেশ্য থাকে একটা সরকারী চাকুরিতে যোগদান করা। কিন্তু বাস্তবিক কারণেই সবার ভাগ্যে সরকারী চাকুরি জোটে না। অগত্যা তারা বেসরকারী কোন চাকুরিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সরকারী-বেসরকারী চাকুরির বাইরেও কেউ কেউ ভিন্ন পথে নিজেদের জীবন গড়েন। এরা নিজেকে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে তৈরী না করে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই শ্রেণিকেই অধিক শ্রদ্ধা করি। কারণ তারা চাকুরির পেছনে না ছুটে নিজেই চাকুরি সৃষ্টি করে অনেকের ভাগ্য খুলে দেন। যাইহোক, আজকে আলোচ্য বিষয় অবশ্য চাকুরিজীবিদের নিয়েই; আরও স্পস্ট করে বললে, একজন উত্তম চাকুরিজীবির আবশ্যকীয় গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করা।

মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে চাকুরিজীবির সংজ্ঞাটা একটূ ঝালাই করে নেই। শিক্ষানবিশ সহ কোন ব্যক্তি, তাহার চাকুরির শর্তাবলি প্রকাশ্য বা ঊহ্য যে ভাবেই থাকুক না কেন, যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে বা কোন ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি বা অর্থের বিনিময়ে কোন দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানিগিরির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন তিনিই চাকুরিজীবি।



সহজ কথায়, অর্থের বিনিময়ে যে অন্যের কাজ করে দেয় সেই চাকুরিজীবি বা কর্মী। এজন্য অনেকে মজা করে করে চাকরকেই চাকুরিজীবি বলে থাকেন।

এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া যাক। একটা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ-অদক্ষ দু’রকমের চাকুরীজীবীই থাকেন। যারা কাজে দক্ষ তারা যেকোন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হন। আর যারা অদক্ষ তারা যেকোন প্রতিষ্টানের ‘বোঝা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। একজন দক্ষ চাকুরিজীবি হতে হলে কি কি গুণাবলী থাকা আবশ্যক? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তা নিম্নরুপঃ

যোগ্যতা ও সক্ষমতাঃ প্রথমেই দরকার কাজের উপযুক্ততা। মানে কেউ কোন কাজে যোগদান করতে চাইলে সেই কাজ করার যোগ্যতা বা সক্ষমতা তার আছে কি না অবশ্যই প্রতিষ্টানের কাছে প্রমাণ করতে হবে।



সততাঃ ‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’। কাজে-কথায়-আচরণে তা প্রমাণ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশে প্রচলিত একটা কথা আছে, ‘আর্থিক ও নারীঘটিত কেলেংকারী ব্যতিত চাকুরী যায় না। কথাটা সত্য।



ইতিবাচক মনোভাবঃ খুব জরুরী একটি গুণ। একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা জরুরী। এটি চাকুরিজীবিকে সফলতার পথে নিয়ে যায়।

নির্ভরযোগ্যতাঃ- একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বহুবিধ দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। সেগুলো যথাযথভাবে পালন করাই তার মূল কাজ। অর্পিত দায়িত্ব সূচারুরূপে পালন করে প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজের নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।

আন্তরিকতাঃ- যেকোন কাজে আন্তরিকতা থাকা আবশ্যক। আন্তরিকতাহীন কাজ কখনোই নিখুত হয় না। তাই অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরুপে পালনে যথেস্ট আন্তরিকতা থাকতে হবে।



প্রো-একটিভ এটিচ্যুডঃ- ‘বস কাজ দিলে করি, অন্যথায় বসে থাকি’ মনোভাব আপনাকে গতানুগতিক চাকুরীজীবীতে পরিণত করবে। আপনাকে সক্রিয় মনোভাব দেখাতে হবে; স্ব-উদ্যোগী ও সৃজনশীল হতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। যদিও আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে এই গুণটি অনেকের কাছে হিংসার পাত্র করে তোলে।



টীম-ওরিয়েন্টেডঃ- একটা প্রতিষ্ঠানে নানা মন-মানসিকতার মানুষ একসাথে মিলেমিশে কাজ করে। সবার মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া থাকতে হবে অন্যথায় বিশৃঙ্খ্ল পরিবেশের সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই দলবদ্ধভাবে মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব অবশ্যই থাকতে হবে।

যোগাযোগে দক্ষতাঃ- বলা হয়ে থাকে সুন্দর করে কথা বলা একটা শিল্প। যেকোন মূল্যে এই শিল্পকে রপ্ত করতে হবে। আপনার প্রস্তাব/কথা সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় অথোরিটির কাছে তুলে ধরতে বিশেষ দক্ষ হতে হবে।

পারস্পারিক সদ্ভাবঃ- ব্যক্তিগত পর্যায়ে অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে ভাল সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিকল্প নাই। কেউ যদি একে ‘ওয়েলিং’ বলেন তবে আপত্তি নেই। হাহা



প্রশংসা করতে হবেঃ কেউ যদি ভাল কাজ করে তবে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে। এতে করে কাজের প্রতি তার উৎসাহ আরও বাড়বে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে কাজের প্রশংসা খুবই কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

এসবের বাইরেও বুদ্ধিমত্তা, দায়িত্বশীলতা, আত্ববিশ্বাসী, নম্র-ভদ্র, উচ্চাকাংখা, সময়ানুবর্তিতা, লিডারশীপ কোয়ালিটি, কঠোর পরিশ্রমী, সংযমী, সুসংগঠিত, নমনীয়তা ইত্যাদি বিষয়গুলোও রপ্ত করতে হবে।

এখন হয়ত অনেকেই ভাবছেন, ‘এত্ত কিছু লাগে’? মনে রাখবেন, বাজার থেকে টাকা দিয়ে কেউ কখনো ‘পচা মাল’ কেনে না। তাছাড়া উপরিল্লেখিত গুণাবলীসমূহের মধ্যে অনেকগুলোই সহজাত। আর বাকীটা শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে রপ্ত হয়ে যাবে। অতএব, সবার উচিত অফিসের ‘বোঝা’ না হয়ে সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হওয়া।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


কৃতজ্ঞতায়ঃ চাকুরিজীবির সংজ্ঞা একটি অনলাইন লিঙ্ক থেকে নেয়া; ছবিগুলো গুগল থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:০১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×