somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবিসিতে প্রচারিত মহানবীর (সা) জীবনীভিত্তিক ডকুমেন্টারি ‘দ্য লাইফ অব মোহাম্মদ’ অবলম্বনে 'লাইলাতুল মিরাজ'

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেরাজের ঘটনা
৬২০ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদের (সা) সবচেয়ে বড় দুজন শুভাকাঙ্খী মৃত্যুবরণ করেন। একজন হলেন তাঁর ২৫ বছরের বিশ্বস্ত জীবনসঙ্গী খাদীজা (রা)। অপরজন হলেন তাঁকে গোত্রীয় নিরাপত্তা প্রদানকারী চাচা আবু তালিব। ওই সময়টি ছিলো তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুঃসময়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এমন এক অনন্যসাধারণ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, যা তাঁর এই দুঃসহ যাতনাকে মুছে দিয়েছিলো।

মুসলিম বর্ণনা মতে, এক রাতে মোহাম্মদ (সা) কাবার আঙিনায় ঘুমিয়েছিলেন। সেই রাতেই তিনি মক্কা থেকে কয়েক শত মাইল উত্তরে অবস্থিত জেরুজালেম নগরী ভ্রমণের এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ইহুদী-খ্রিস্টানরা নগরীটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করে। মহানবীর (সা) এই নৈশভ্রমণের ঘটনার ফলে মুসলমানদের কাছেও মক্কা-মদীনার পরেই তীর্থযাত্রা ও গভীর ধর্মীয় অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য জেরুজালেম নগরী পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত।

বর্তমানে জেরুজালেম নগরী মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার এটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ইসরাইলী ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে চলমান সংঘাত কার্যত এই ভূমির জন্য দুই পক্ষের লড়াই। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব জুড়ে এই ইস্যুটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো? কেনইবা মহানবীর (সা) জন্মস্থান থেকে প্রায় আটশত মাইল দূরের একটি নগরী জেরুসালেমকে মুক্ত করার আহ্বান অসংখ্য মুসলমানকে এখনো উজ্জীবিত করে? জেরুসালেমের সাবেক প্রধান মুফতি শায়খ ইকরিমা সাবরী এ ব্যাপারে বলেন,

"জেরুসালেম হলো মুসলমানদের ঈমান-আকীদার প্রতীক। তাই এটি আমাদের নিকট এতো গুরুত্বপূর্ণ। মহানবীর (সা) রাত্রীকালীন ভ্রমণের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। এখান থেকেই ঊর্ধ্বারোহণ তথা মিরাজের ঘটনা ঘটে। আল্লাহ তায়ালা মোহাম্মদকে (সা) প্রথমে মক্কা থেকে জেরুসালেমে পাঠিয়েছিলেন। তারপর এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশপানে রওয়ানা হয়েছিলেন"।

মুসলিম সূত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, সেই রাতে ফেরেশতা জিবরাইল এসে মহানবীকে (সা) জাগিয়ে তুলেন। তারপর বোরাক নামের একটি উড়ন্ত ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে যান। এতে চড়ে তিনি অলৌকিকভাবে বিস্তৃত মরুভূমি পাড়ি দিয়ে জেরুসালেমে পৌঁছেন। এখানে এসেই তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী ও অনন্য সাধারণ অভিজ্ঞতাটির শুরু হয়। এই ভ্রমণে তাঁর সাথে ইবরাহীম (আ) থেকে শুরু করে মুসা (আ), ঈসা (আ) সহ অতীতের সকল নবী-রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ হয়। সবাইকে নিয়ে সেখানে তিনি নামাজ আদায় করেন। তারপর তাঁকে পানি, মদ ও দুধ অফার করা হয়। তিনি সেখান থেকে শুধু দুধ পান করেন। তিনি সারাজীবন যে মধ্যপন্থার পক্ষে কথা বলেছেন, দুধ পান করে তিনি তাঁর সেই অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করলেন। তারপর একটি স্বর্গীয় সিঁড়ি দৃশ্যমান হয়ে ওঠলো এবং মোহাম্মদ (সা) এক আধ্যাত্মিক ঊর্ধারোহণ শুরু করেন। সপ্ত আসমান পেরিয়ে তিনি আরশে আজীমে পৌঁছেন এবং স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলেন।

আধুনিক যুক্তি-প্রমাণের এই যুগে একে অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা মনে হলেও মুসলমানদের নিকট এটি হলো মোহাম্মদের (সা) জীবনে সংঘটিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। অবশ্য, এই ভ্রমণ কি স্বশরীরে ছিলো, নাকি এটি ছিলো নিছক একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা– তা নিয়ে অমুসলমানদের মধ্যে তো বটেই, মুসলিমদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে। মুফতি শায়খ ইকরিমা সাবরী এ ব্যাপারে বলেন,

“এটি ছিলো একটি অলৌকিক ব্যাপার। আর অলৌকিকতায় বিশ্বাস রাখা ঈমানেরই অংশ। এই ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই এবং এটি স্বাভাবিকতার বিপরীতও বটে। তবুও কোরআন ও হাদীসে এ ঘটনার বর্ণনা থাকায় আমরা তা বিশ্বাস করি”।

অধ্যাপক তারিক রমাদান বলেন,

“আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, এটি ছিলো একটি আধ্যাত্মিক তাৎপর্যবহ ভ্রমণ। অর্থাৎ, তিনি প্রথমে জেরুসালেম গিয়েছিলেন এবং তারপর তিনি মহান স্রষ্টা তথা এক আল্লাহর খুব সন্নিকটবর্তী হয়েছিলেন”।

জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্যা রক’ খ্যাত সোনালী মসজিদটির ভেতরে একটি পবিত্র স্মারক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, মেরাজের রাতে ঠিক সেখান থেকেই মহানবী (সা) ঊর্ধ্বারোহন শুরু করেন। অতীতকাল থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ কেউ বলে থাকেন, মহানবী (সা) স্বশরীরেই ভ্রমণ করেছিলেন। তাদের মতে, তিনি চোখের পলকে মক্কা থেকে প্রায় আটশত মাইল দূরের জেরুসালেমে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে অনেকে মনে করেন, রাত্রীকালীন ভ্রমণ একটি প্রতীকী ব্যাপার। আসলে সেটি ছিলো একটি আধ্যাত্মিক সফর, যে সফরে মহানবী (সা) এক নতুন স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। আব্দুর রহীম গ্রীন এ ব্যাপারে বলেন,

“এই ঘটনার প্রতীকী গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, সেই রাতে ইবরাহীম, নূহ, মুসা, ঈসা, ইয়াকুবসহ অতীতের সকল নবী-রাসূল মোহাম্মদের (সা) নেতৃত্বে নামাজ আদায় করেছেন। সেদিন স্বয়ং আল্লাহ মহানবীর (সা) সাথে কথা বলেছেন। সেই কথোপকথনেই আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সা) ও তাঁর অনুসারী মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন”।

বারনাবি রজারসন এ ব্যাপারে বলেন,

“কোরআনে ঘটনাটির বর্ণনা খুঁজতে গেলে আপনি মাত্র তিনটি ছোট্ট রেফারেন্স পাবেন। কিন্তু ঘটনার বিস্তারিত অর্থাৎ, মহানবীর মেরাজে যাওয়া, বোরাকে চড়া, অতীতের নবী-রাসূলদের সাথে সাক্ষাৎ, জেরুসালেমে যাওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ লাভ, বেহেশত-দোজখ পরিদর্শন, আরশে আজীমে গমন– এই সমস্ত বর্ণনা মুসলিম বিশ্বে এক ধরনের বিস্ময়কর ও মহাজাগতিক আবহ তৈরির জন্য পরবর্তীতে যোগ করা হয়েছে। কোরআনে এসবের কোনোটিরই উল্লেখ নেই”

ম্যারল ওয়েন ডেভিস এ ব্যাপারে বলেন,

“ধর্মের ইতিহাস মাত্রেরই নানা রকম বাহুল্য বর্ণনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকে। তাই ব্যাপারটি কোরআনে কতবার রয়েছে, সেটি বড় কথা নয়। কোরআনে এ ঘটনার উল্লেখ থাকার মানেই হলো এটি তাৎপর্যপূর্ণ”।

উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন,

“মহিমান্বিত আল্লাহ্,যিনি তাঁর বান্দা (মুহাম্মাদকে) রাত্রিতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে দূরবর্তী মসজিদ মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত। যার সীমানাকে আমি করেছিলাম আমার আশীর্বাদ ধন্য,যাতে আমি তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই একমাত্র যিনি সব শোনেন এবং দেখেন।” (১৭:১) [ কুরআনের আয়াতটুকু লেখক সংযোজন করেন]

রাত্রীকালীন সফরে জেরুসালেম যাওয়া এবং বেহেশতে গিয়ে ইহুদী-খ্রিস্টানদের অতি পরিচিত নবী ইবরাহীম (আ) থেকে শুরু করে অতীতের সকল নবী-রাসূলের সাথে সাক্ষাতের ঘটনা ছিলো মহানবীর (সা) জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুসলমানদের দৃষ্টিতে, এই ঘটনার মাধ্যমে অন্যান্য নবী-রাসূলগণও ঐশীবাণীর সর্বশেষ বাহক হিসেবে মোহাম্মদকে (সা) স্বীকার করে নিয়েছেন। এটি ছিলো আল্লাহরই হুকুম। ইসলাম ও তার অনুসারীরা যে সনাতন ইবরাহীমীয় ধারারই ধারাবাহিকতা মাত্র, এই সফরের মাধ্যমে সেই স্বীকৃতিও পাওয়া গেলো। এই ঘটনার আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, মোহাম্মদ (সা) এখন তাঁর গোত্রীয় অতীতকে পেছনে ফেলে পুরো দুনিয়ার সামনে তাঁর বাণী তুলে ধরতে প্রস্তুত। ক্যারেন আর্মস্ট্রং বলেন,

“মহানবীর মেরাজের ঘটনার মাধ্যমে গোত্রবাদকে পেছনে ফেলে মানবতাকে আলিঙ্গন করা হয়েছে। বলা যায়, ঘটনাটি হলো গোত্র পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানোর একটি উদ্যোগ। এটিই হলো এই ঘটনার ধর্মতাত্ত্বিক তাৎপর্য”।

মেরাজের ঘটনাটি ছিলো মহানবীর (সা) জীবনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি। একইসাথে তাঁর নবুয়তী মিশনের নতুন একটি ধাপের সূচনাও বটে। তবে এটি একটি নতুন পর্যায়ই শুধু নয়, এটি ছিলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। এ পর্যায়ে তিনি তাঁর গোত্রীয় জীবন চিরতরে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। মক্কা শহরে কোরাইশদেরকে পরাভূত করার পরিবর্তে তিনি এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে নব উদ্যমে মিশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এরই ফলশ্রুতিতে ৬২২ সালে মহানবী (সাঃ) মদিনায় হিজরত করেন। [লেখক]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×