somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের পরিবার; আমাদের সমাজ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অামার সমবয়সী এক ছেলে। শহরের সব থেকে নামকরা স্কুলে পড়তো। নামকরা বলছি, কারণ সব ছেলে চাইতো ঐ স্কুলে পড়তে, সব অভিভাবক চাইতেন ঐ স্কুলে তার ছেলে ভর্তি করতে। কারণ ভর্তি করতে পারলে জিপিএ ৫ পাওয়া ৯৫% নিশ্চিত। ঘটতোও তাই। ফলে ভর্তি হওয়া খুব কঠিন ছিল। তো সেই স্কুলে তার ক্লাসের প্রথম ৫ জনের একজন ছিল ছেলেটি। অামি যদিও অন্য স্কুলে পড়তাম, দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে সেই ছেলেটিকে চিনলাম তার মায়ের কারণে। খুবই স্মার্ট মা ছিলেন তিনি। ছেলেটি এমনি ভাল ছাত্র ছিল তারপরেও তার অনেকগুলো স্যারের কাছে পড়তে হতো, অনেকগুলো ব্যাচে যেতে হতো। প্রতিটা জায়গায় তার মা সঙ্গে যেতেন। একেবারে শিশুশ্রেণি থেকেই এমন। স্কুলে, ব্যাচে, কোচিংয়ে মা সাথে থাকতেন। বিরতিতে মুখে তুলে খাওয়াতেন। মা উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন, সন্তানকে সময় দেয়ার জন্য চাকুরি করেননি। সারাদিন সন্তানের সাথে সাথে থাকতেন। স্কুল পার হয়ে কলেজ। মা কলেজে নিয়ে যান নিয়ে অাসেন। কলেজ পার হয়ে ভর্তি কোচিং। মা সাথে থাকেন। ছেলেটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এ+ পেয়েছিল, গোল্ডেন। গোল্ডেন শব্দটা কোথা থেকে এসেছে জানি না। কারণ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় 'গোল্ডেন এ+' বলে কিছু নাই। যাই হোক, ছেলেটি সরকারি মেডিকেলে চান্স পেল। কিন্তু মা তৃপ্ত না। কারণ মেডিকেল কলেজটি ছেলেটির মেধার অনুপাতে কম সম্মানজনক। ঢাকা মেডিকেল তার জন্য যথার্থ জায়গা। পরবর্তীবার রিএডমিশন দিল এবং ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেল। কয়েক বছর পর মেডিকেলে পড়ুয়া অামার অন্য এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম সেই ছেলেটার খবর কি? সে বললো, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির ৬ মাসের মধ্যে মাদক ও নারী দুটোতেই অাসক্ত হয় সে, তারপর অার কোনো খবর তার কাছে নাই। চিন্তা করেন সেই মায়ের কথা। শিশুকাল থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত সন্তানের হাত ছাড়েননি যিনি, কি অমানুষিক পরিশ্রমইনা করেছেন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু যখনি হাত ছাড়লেন, হারিয়ে ফেললেন সন্তানকে।
অারেকটি ঘটনা, চেনা-জানা একটি ছেলে, সবে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। সবসময় দেখি তার মা গাড়িতে করে তাকে স্কুলে, ব্যাচে, কলেজে নিয়ে যায়। স্মার্ট মা সন্দেহ নাই। হঠাৎ শুনি সে লাপাত্তা। প্রথমে ভাবলাম অাইএসে যোগ দিল নাকি? পরে জানলাম সে তার ক্লাসের একটি মেয়েকে নিয়ে অথবা মেয়েটির সাথে পালিয়েছে। বাংলা/হিন্দি নাটক/সিরিয়াল/সিনেমার কমন দৃশ্য। অবাক বিস্ময়ে ভাবলাম ১৬/১৭ বছর বয়সে এতো সাহস পেলো কি করে? অার এতো জাগ্রত প্রেম এতো অল্প বয়সে অাসলো কোথা থেকে?
এরকম হাজারো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত অামাদের সমাজে। অদ্ভুত থেকে অদ্ভুততর ঘটনা ঘটছে, কল্পনাতীত সব ঘটনা ঘটছে।
একবার নবীজী (সা)- কে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, 'একটি শিশুর যত্ন নেয়া উচিত কখন থেকে?' নবীজী (সা) বলেছিলেন, 'তার মা যখন শিশু ছিল তখন থেকে।' গভীর ভাবনার বিষয় অাছে এখানে। অাজ তরুণ প্রজন্মের এই যে নৈতিক অবক্ষয়, বিপথগামিতা, অবাধ্যতা, একগুঁয়ে ড্যামকেয়ার অাচরণ, এটা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনো বিপর্যয় নয়। কয়েক প্রজন্মের চর্চিত ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি, নৈতিকতার ধারাবাহিক অধঃপতন অার অন্যায়ের সাথে কম্প্রোমাইজ করার মানসিকতা থেকেই অাজকের এ প্রজন্ম প্রডিউসড হচ্ছে। এর সাথে প্রযুক্তির অপরিণামদর্শী ব্যবহার অার মিডিয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীন অাচরণ ইন্ধন যোগাচ্ছে অতিমাত্রায়।
নেপোলিয়ন বলেছিলেন- "তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।" নিঃসন্দেহে অামাদের মায়েদের ভাল সার্টিফিকেট অাছে, অনেকেই ভাল চাকুরি করছেন, ভাল ইংরেজী-হিন্দি জানেন, স্মার্ট নারী বলতে যা বোঝায় তারা ঠিক তেমনি। তারপরো অামাদের সমাজ অাজ শিক্ষিত মায়ের প্রচণ্ড অভাব বোধ করছে। অামাদের মায়েদের শিক্ষিত হতে হবে। বাবাদের দায়িত্বশীল করতে হবে। শুধু অর্থ উপার্জন অার সন্তানের চাহিদা পুরণ যে বাবার একমাত্র দায়িত্ব না, এটা বোঝাতে হবে। কারণ সমাজটা এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি। এখনো সময় অাছে পচন রোধ করার, পরিবর্তন ঘটাবার।


(লেখাটি ইতোপূর্বে আরেকটি ফোরামে অন্য শিরনামে ভিন্ন কলেবরে প্রকাশিত হয়েছিল)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×