somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“থামেন ভাই-এইটা মহিলা বাস সার্ভিস।”

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে দিন বিকেলে বৃষ্টি নেমেছিলো খুব।াকাশে কোন মেঘ ছিলো না; এক দম হঠাত করেই-গন গনে রোদের আকাশে হঠাত বারির আওয়াজ।হাতে নেই ছাতা,অফিস থেকে বেরিয়ে ফার্মগেট নামতেই পড়লাম বিপত্তিতে।যারা মিরপুরবাসী , ভালো করেই জানেন ওখানে দাঁড়িয়ে বাসে ওঠা কতোটা কঠিন কাজ।কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা একটাই তেজগাও থেকে টেম্পোতে ওঠা।সেই লাইন বড় হতে হতে ওভারব্রীজের মাথা অব্দি গেছে।হা করে বাসের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোন গতি নেই।বৃষ্টি আমার বরাবরই পছন্দের,কিন্তু কাঁদা পানিতে পা ডোবানো মোটেও পছন্দ না।
চোখের সামনে দিয়ে একটা করে বাস যাচ্ছে-একতলা-দোতলা-এসি-নন এসি।আহা,ঢাকা শহরের বুক জুরে কতো যানবাহন, কিন্তু তার একটাতেও তিল পরিমান দাঁড়ানোর জায়গা নেই।কিসের আশায় মানুষ এই শহরে এতো ভীড় করে তা কে জানে।আমার বাড়ী-ঘর না থাকলে কবেই জঙ্গলে গিয়ে থাকতাম।মানুষগুলো এমন ভাবে ঝুলছে মনে হচ্ছে –এক্ষনি বাসটা উল্টে যাবে।কিন্তু কি বিচিত্র কারনে গাড়ি উল্টে না।মানুষই ক্রমশ বানর হতে থাকে।
হঠাত দেখলাম একটা দোতলা বি আর টি সি আমার দিকেই এগিয়ে আসছে,আহা কি আনন্দ ড্রাইভার এতো ভালো হলো কে্মনে,আমার সামনেই স্লো করলো।ভেতর থেকে একজন মাড়দাঙ্গা টাইপ মহিলা ঊঁকি দিয়ে বললো-“হা কইরা কি দেখেন,উইঠা পড়েন।”আমি তখন শুন্যে তাকিয়ে ভাবছি-কই উঠবো,পুরো বাস ভর্তি মহিলা।একজনের শরীরে আর একজন লেপ্টে আছে,এখানে উঠেতো বানরী হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নাই।তবে একটাই শান্তি কোন পুরুষ মানুষের গা ঘেষে দাঁড়াতে হবে না।সো-ডোন্ট চিন্তা।উঠে গেলাম।
লম্বা বানরী হওয়াতে উপুরের হ্যান্ডেল ধরতে আমার খুব একটা কষ্ট হলো না,আমাকে পেয়েই বেটে বানরীরা লুফে নিলো সুযোগটা।দুই পাশে দুটি মেয়ে দু কাঁধে হাত রেখে দিব্যি দাঁড়িয়ে গেলো।বাস চলতে শুরু করেছে।রোজার দিন ছিলো, সবারই পেটে ঈঁদুর দৌড়চ্ছে,বাসায় যেতে হবে ইফতারের আগেই।কিন্তু খামার বাড়ী গিয়েই পথ আগলে দাঁড়ালো ট্রাফিক জ্যাম।আমাদের মাড়দাঙ্গা কন্টেক্টর দরজার সামনে এক খানা পা তুলে দাঁড়ায় গেলো-“উফ,এই মরার জ্যাম যে কবে ছাড়বো।আইজ সক্কাল সক্কাল আইসি খালি গাড়ী লইয়া।বুঝছেন আপা,এখন দেখেন ঢাকা শহরের হগল মাইয়া তুইল্যা লইয়া আরসি।”
আমি পেছনে তাকালাম –ঘটনা সত্য।এটা অফিস থেক ফেরার সময়।এতো মহিলা কখনো হয় না।কারন সবার অফিস এক টাইমে শেষ হয়না।রোযার জন্যেও সময় পাল্টেছে।কিন্তু বেশীর ভাগ মেয়েদের হাতে শপিং ব্যাগ,এবার বুঝলাম আসল কাহিনী।সবাই শপিং করতে বেরিয়েছিলো।যাক, তাহলে নিরাপদে শপিঙ্গে যাবার ব্যাবস্থাও সরকার করে দিলো মেয়েদের।আমি যতো দূর জানি এই বাসটি খুব সকালে মিরপুর থেকে ছেড়ে যায়,আবার ফিরে বিকেল বেলা।মাঝে আর কোন সার্ভিস নেই।অফিস ফেরত মহিলারা ড্রাইভারের নম্বর নিয়ে রাখেন,ফোন দিয়ে জেনে নেন বাস মতিঝিল থেকে ছেড়েছে কিনা।ভাগ্য ভালো থাকলে অনায়াসে নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারেন।সত্যি মুগ্ধ হবার মতোন ব্যবস্থা।
শ্যাওড়া পাড়া এসে বাস আবার সজোরে ব্রেক কষলো।একজন মধ্যবয়সী মহিলা তার মেয়ের হাত ধরে অবাক বিস্বয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটি বলছ্যে-“দেখো মা,সব মেয়ে মানুষ।”এরি মধ্যে মাড়দাঙ্গা কন্টেক্টার হাক ছাড়লো-“আপনে কি বাসে উঠবেন নাকি কোলে কইড়া লইয়া যামু?”
মহিলা তরিঘরি উঠে পড়লো ,বাচ্চা মেয়েটা পড়লো আমাদের চাপে।মনে হচ্ছে রাস্তায় যতো মেয়ে মানুষ আছে আজ একটাও বাকী থাকবে না।সব তুলে নিবে এই মহিলা।বাস স্লো দেখে একটা ছেলে দৌড়ে চলে এলো গেটে ,অম্নি মাড়দাঙ্গার আক্রমন-“থামেন ,থামেন।আর দৌড়াইয়েন না।উপরে দেখেন –এইটা মহিলা বাস।”
ছেলে খুবি লজ্জা পেলো,মনে হলো রাস্তায় স্কুলগামী কোন কিশোরীকে টিচ করলেও সে এত লজ্জা পেতো না।
কাজী পাড়া আসতেই হুড় মুড় করে মেয়েরা একজন আরেক জনকে ধাক্কা মেড়ে নামা শুরু করলো।এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট কঠিন।এবার মাড়দাঙ্গার আবার চিতকার-“আসতে নামেন,উঠার সময়তো টাইন্যা তুলা লাগে।নামার সময় মনে হইতাসে বাস আপনেগো থুইয়া চইল্যা যাইবো।”
যাক,এবার একটু বসার জায়গা মিললো।আবার বাস জ্যামে আটকালো ।এবার এক ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে প্রথমে বাসে তুলে দিলো,তারপর যেই না নিজে উঠতে গেছে সবাই এক সাথে চিতকার-“নামেন ,নামেন,এটা মহিলা বাস।”বেচারা বিরাট হকচকিয়ে গেলো,কিন্তু বউটাতো ততোক্ষনে বসে পড়েছে।ট্র্যাফিক ছেড়ে দিয়েছে,লোকটা নামতে নামতে বউকে নামার জন্যে অনুরোধ করছে।বাস চলতে শুরু করেছে,বউটা কিছুতেই নামতে পারছে না।কন্ট্যাক্টর পিছন থেকে ড্রাইভারকে বললো-“ওই মিয়া ,তুমি মাইনষের বউ নিয়া কই যাবা,যার বউ তারে দিয়া যাও।”এই শুনে বাস শুদ্ধ মেয়েদের কি হাসি।বাস জোরে ব্রেক কষলো।
মিরপুর ১০ ক্রস করার পর বাস প্রায় ফাঁকা।মাগরীবের আজান দিচ্ছে,ব্যাগ থেকে মেয়েরা পানি বের করে খাচ্ছে।মাড়দাঙ্গা তখন বেজায় খুশী মনে টাকা গুনছে।এক হাজার টাকা জমা দিলেও তার অনেক লাভ থাকবে আজ।অনেকে ঈদের বকশীশ দিয়ে গেছে।তারপরেও তার মুখে আফসোসের সুর –“মাইয়া মানুষ বেজায় কিপ্টা।যতো গুলা পুরুষ মানুষ রাস্তায় দাঁড়াই ছিলো,ওইগুলারে যদি তুলতাম তাইলে আরো বকশিষ পাইতাম।”
হুম মেয়েরা একটু বেশীই হিসেবি হয়,তা না হলে সংসারের চাকা ঘুরবে কিভাবে।বৃষ্টি কখন থেমে গেছে টেরি পাইনি।সারাটা মাস এতো কাজ করি, এমন বিনোদন যে পথের মাঝে লুকিয়ে থাকতে পারে তা জানা হয় নি কোন দিন। মাড়দাঙ্গা খালার মোবাইল নম্বরটা টুক করে নিলাম,যদি পরদিন ঠিক একি সময় আবার বাস টাকে পেয়ে যাই।বাদরী হয়ে ঝুলে থাকলেও নিরাপদে বাড়ি ফিরছি এর চেয়ে স্বস্তির আর কি হতে পারে।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৫২
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×