somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগুনের মুখে-জিরো ডিগ্রী।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহ ধরে জিরো ডিগ্রী হলে আসার পর থেকে একটার পর একটা কমেন্টস আর রিভিউ দেখে আমারতো অস্থির অবস্থা।এই ছবি দেখার জন্যে আমি দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করেছি।নাটক পরিচালনায় অনিমেষ আইচের দক্ষতার কথা নতুন করে বলার কিছু নাই,এবার দেখার পালা চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি কতোটা সার্থক।
ব্যস্ততাময় শহরের ঘেরাটোপে আপাত দৃষ্টিতে চোখে পড়া একটি সুন্দর সাজানো সংসার নীরা আহমেদের।স্বামী অমিত তার কর্মজীবন আর সংসারের প্রতি নিবেদিত,সাথে আছে ছেলে সন্তান অর্ক।ছবি শুরু হবার পর যে এনিমেশন দিয়ে কলাকুশলীদের নাম গুলো পর্দায় দেখা যাচ্ছিলো তা এক কথায় অসাধারন।আগেই বলে রাখি এখানে নতুন যে বিষটা চোখে পড়বে তা হলো-কিছুক্ষন বাদে বাদে দুই লাইন করে কবিতার দুটো চরণ যা অন্য কারও ,এমন কি কোলকাতার কোন বাংলা মুভিতে আমি আজ অব্দি দেখিনি।প্রতিটা পরিবেশের সাথে গানের ব্যবহার অনেক প্রাঞ্জল লেগেছে,যদিও বিমূর্ত এই রাত্রি আমার –গানটা তীব্র সমালোচনায় পড়েছে।এটা আবিদা সুলতানার অর্জিনাল কন্ঠ হলে আরো স্পর্শ করতো।কেন হলো না তা অনিমেষদাই বলতে পারবেন।সে যাক ,এবার পর্দার ভেতরে যাই।
সেই সাজানো সংসার ছেড়ে একদিন নীরা চলে গেলো সিঙ্গাপুর নিবাসী মুশফিকের কাছে।এয়ারপোর্টে স্বামী-সন্তান কে সাথে নিয়েই সে বিদায় হলো অফিস ট্যুরের কথা বলে।তবে সে যে ফিরবেনা তা অমিত বোঝেনি,বুঝেছি যারা দর্শক শারিতে বসে ছিলাম।পরে ফোনে নীরা জানিয়ে দেয় যে সে আর ফিরছেনা।এখানেই মাহফুজ আহমেদের অভিনয়ের কারিশমা।একজন সাধারন মানুষ থেকে কি ভাবে ধীরে ধীরে একজন হিংস্র দানব হতে পারে তাই চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুললেন।কোন পুরুষ মানুষের স্ত্রী অন্যের হাত ধরে পালিয়ে গেলে তার ভেতরকার যে যন্ত্রনা প্রকাশ পায় তাই বার বার অমিতের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিলো বন্ধুর প্রতি -আমাকে করুনা করতে এসেছো ?এরপর ছেলের মৃত্যূ তাকে পুরোপুরি অপ্রকৃতস্থ করে তোলে।সবাই তাকে ভর্তি করে মানসিক হাসপাতালে। মডেল রুহীর প্রথম ছবি , তাও এতো বড় অভিনেতার বিপরীতে-তার জন্যে বিশেষ ভাবে হ্যাটসঅফ।রুহী লম্বা দৌড়ে যেতে পারবে।
অন্যদিকে সোনিয়া ,বাবার অমানষিক নির্যাতনে অতীষ্ট সৎ মায়ের সহায়তায় বাড়ি থেক পালিয়ে যায়,সঙ্গী হয় মৃত মায়ের গহনা।এই খানে এসে অনিমেষ আইচ খুব তাড়াহুড়ো করেছেন ।এই সমাজে একলা একটা মেয়ে কিভাবে পুরুষ দের খাবারে পরিনত হয় তা নিয়ে আরো ডিটেইলে যাওয়া দরকার ছিলো।স্বামী-স্ত্রীর প্রেম যদি স্কাইপের মাধ্যমে এতো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যায় তাহলে একটা মেয়ে বার বার ধর্ষনের স্বীকার হচ্ছে এই বিষয়টা কেবল সাউন্ড ইফেক্ট দিয়ে প্রকাশ করতে হবে এটা কেমন কথা?নাকি সেন্সর বোর্ড কেবল এই জায়গাতেই ছুড়ি ধরার জন্যে বসে থাকে ?প্রেমিক রূপী ওয়াহিদ একটি কবিতার দুটি চরণ উচ্চারন করে প্রতিবার ফাঁদে ফেলে সাধারন মেয়েদের।এই ফাঁদ থেকে সোনিয়াও বাদ যায় না।সাতজন পুরুষের কাছে তাকে ধর্ষিত হতে হয়।খটকা লেগেছে হাসপাতালে নার্স সাজিয়ে নারী পাচারের ব্যাপারটা,এই বিষয়টা হয় কিনা –আমি জানি না।তবে জয়ার অভিনয় গুনে অনেক ছোট ছোট দৃশ্য খুব স্পর্শ কাতরতা তৈরি করেছে ,যেমন নাচের ওস্তাদ যখন তাকে আক্রমন করে।ছবিটা যেহেতু আরো এক সপ্তাহ হলে চলবে সেহেতু গল্পের বাকিটা বলা আমার ঠিক হবে না।
কিছু অসংলগ্নতা নিয়ে কথা বলি।সিঙ্গাপুর থেকে নীরার ফোন পেয়ে অমিত তাকে মারার উদ্দশ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়।কিন্তু তাকে হাতের কাছে পেয়েও কেবল সন্তান মৃত্যূর খবরটা দেয়।সোনিয়া যখন খোলা বাজারে সবার চোখের সম্মুখে ওহাইদকে মারছিলো তখন কোথা থেকে যেনো অমিত তাকে বাইকে করে রেস্কিউ করে তার বদ্ধ ঘরে নিয়ে যায়।
সাতজন ধর্ষন কারীর মধ্যে একজনকে সোনিয়া ছুড়ি দিয়ে কোপায় ,তাকেই আবার ডিবি পুলিশ অক্ষত অবস্থায় খুঁজে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এক দম শেষের দিকে সোনিয়া গলায় রশি ঝোলায় কিন্তু অমিত তাকে মরতে দেয় না।পুলিশ ঘেরাও করার পর নীরার সাথে তার কপালেও গুলি করে।যেখানে তাদের তিন জনের উদ্দেশ্যই ছিলো মৃত্যূ,তাহলে মরতে দেওয়াটাই খুব স্বাভাবিক ছিলো।
হয়তো এই বিষয় গুলো নাটকীয়তা সৃষ্টি করতে পারে তার জন্যেই করা,কিন্তু তার পিছনে খুব ভালো যুক্তি না থাকলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়।
চরিত্র নির্বাচনে অনিমেষদা দারুন একটা বিষয় করেছেন।বাংলাদেশের ডি বি পুলিশদের যে ভুড়ি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক,তাই জন্যে ডি বি অফিসার চরিত্রে ইরেশ যাকের কে খুব মানিয়েছে ।তবে কবি চরিত্রে আরো প্রমিনেন্ট কাউকে দিলে গানের দৃশ্যায়ন আরো নজর কাড়া হতো।কিছু কিছু দৃশ্যে গানের ব্যবহার অনেক দীর্ঘ মনে হয়েছে।সব চাইতে আকর্ষনীয় বিষয় ছিলো শেষটায়।সোনিয়া মাটিতে পড়ে আছে,পুলিশ খোঁজাখোঁজি করছে অমিত কে ,ব্যাক গ্রাউন্ডে বাজছে –আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে ...।দু’পাশ থেকে দুটো পর্দা টেনে ছবির যবনিকা টানা হয়।
এই ছবিতে সেন্সর বোর্ড কতো খানি কেটেছে তা বোঝা যায় নি।সব কিছু ডিটেইল এসেছে কেবল সোনিয়ার মানসিক ইউটার্ন ছাড়া।কেবল জয়ার অভিনয় গুনে সোনিয়া উতড়ে গেছে।যে দৃশ্য যা ডিমান্ড করে তাই দেখাতে পারাই একজন দক্ষ পরিচালকের কাজ।যদি বাংলা ছবিতে নতুন কোন ধারার সৃষ্টি করতে হয় তাহলে পরিচালককে কেবল বেডরুমের দৃশ্যেই সাহসী হলে চলবে না।সমস্ত কুটিলতাকে ক্যামেরায় ধারন করে প্রকাশ করতে হবে যেমনটা আমাদের পাশের দেশে করে আসছে।আমাদের আছে উন্নত প্রযুক্তি,ভাবনার স্বাধীনতা।তাহলে কেন আমরা পিছিয়ে থাকবো?
ব্যাকশগ্রাউন্ডে বাচ্চার চিৎকার শুনিয়ে-আপনি বাবা হয়েছেন ,এই সব বলে বোঝানোর দিন শেষ।বাচ্চা হবার দৃশ্য আমরা না দেখাতে পারি,কিন্তু আবহটাতো তৈরী করতে হবে।না হলে আধুনিক দর্শক , যারা সারাদিন টরেন্টো থেকে মুভি নামায় তারা কি দেখতে হলে যাবে বলুন।
উহ,অনেক কথা বলে ফেলেছি।আমি এক জায়গায় কমেন্ট করেছিলাম-জিরো ডিগ্রী দেখে যদি ভাল না লাগে তাহলে আর হলে যাচ্ছি না।সেই কথা বাতিল করলাম।ছবিটা আমার অনেক ভাল লেগেছে,ভালো লাগেনি কেবল –নাম।বাংলা ছবির নাম বাংলাতেই হবে ,সুন্দর প্রাঞ্জল বাংলা শব্দের ব্যাবহার থাকবে।নামটা কেবল শূন্য রাখলেও যারা সিনেমা হলে নিয়মিত যাই তারা ঠিকি যেতাম।আপনারা এখনো যারা ছবিটা দেখেননি দেখতে পারেন,মন্দ লাগবে না আশা করি।শুভেচ্ছা।

২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×