somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাপিত সময়...

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে হচ্ছে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার হিট স্ট্রোক হবে।কিন্তু হতে হতেও কেন জানি হচ্ছে না,কই মাছের প্রাণ নিয়ে জন্মেছি মনে হয়।সৃষ্টিকর্তা আর কিছু সময় পেলেন; এবার আয়েশ করে চ্যাপ্টা পার্টিদের জন্যে ইস্পেশাল দোজখ বানাচ্ছেন,যারা লেগুনায় বসে চিড়া চ্যাপ্টা হয়ে গেছি,যাদের ওজন ৬০ থেকে ৫০ এ নেমে গেছে -এইটা কেবল তাদের বাসযোগ্য হবে।পরকালের কথা ভাবতে ভাবতে ইহকালের দিকে ঢুলু ঢুলু নয়নে তাকালাম-দুই পাশেই রাস্তা বন্ধ।পুরো ঢাকা শহর অভিমান করে চুপ করে আছে-“আর কতো কাল একা সইবো?”সত্যিইতো একা একা এই শহর আর কতো ঘাঁনি টানবে।নতুন রিক্সাড্রাইভার,নয়া নতুন ফকির,অন্যদিকে ললনার ঈদ শপিং ,নেত্রীদের ইফতার পার্টি-সবতো তাকে একাই সামাল দিতে হচ্ছে,আমরাতো ভর খানা দিয়েই খালাশ।
টিস্যুতে আজকাল কোন কাজ হয় না,বোশেখ হোক আর আষাঢ় –এই রোদ পোড়া গরমে হাতের রুমাল খানাই ভরসা।ঘাড়ের কাছে ঘাম মুছতে মুছতে বসের মুখখানা ছবির মতন হেসে উঠলো-“আপনার গলায় যে দাগ দেখা যাচ্ছে,তা শরীরের আর কোথাও আছে নাকি?”হোয়াট এ কোশ্চেন????আমি প্রথম প্রথম এই ধরনের ইঙ্গিতপূর্ন কথা শুনলে খুব রেগে যেতাম ,এখন রাগি না।পাটকেল খুঁজি,আপাতত যা পেলাম তাই ছুঁড়লাম-সেকি স্যার ,আপনি না রোযা রেখেছেন,মাকরু হয়ে যাবে তো।
-না,আমিতো কোন কিছু মিন করে বলিনি।মনে হলো,আপনার এলার্জি খুব বেশি।জায়গায় জায়গায় দাগ পড়ে গেছে।
(আমার অতি হ্যান্ডসাম বস প্রোজেক্টের কাজ দিয়ে আমাকে সামনে বসিয়ে রেখে আমার জায়গার দাগ খুঁজছে।)
আঠা্রো ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেটে চলমান স্প্লিট এসির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম-স্যার,আমাদের এত্তো বড় অফিস, সেন্ট্রাল এসি কবে হবে?গরমের জন্যেইতো আমার শরীরে র‍্যাশ পড়ে গেছে।(মোক্ষম অস্ত্র,জায়গায় পড়লো)
-কিযে বলেন,ভাতই পাই না ।আবার এসি,জানেন এবার সাড়ে তিন লাখ টাকা লস হয়েছে।পকেট থেকে স্টাফদের বেতন দিলাম।
(ষোলশ স্কয়ারফিটের অফিসে তুমি একা এসি খাবা,আর আমরা হইলাম আবাল।তোমার লস গুনো আর আর আমার শরীরের র‍্যাশ।তোর কপালে আরো খারাপি আছে।)
হঠাত আমার বসের কি যেন হলো,তার আড়াই বছরের মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল।
-জানেন,মেয়েটা সারা রাত আমার বুকে একা একা ঘুমিয়ে থাকে।মাঝে মাঝে ওর ঠান্ডা লেগে গেলে আমি গায়ের কাঁথাটা দিয়ে দেই।
আমি আহা মার্কা একটা চেহারা করলাম,যেন আমার কলিজা এক্ষনি বের হয়ে আসবে কষ্টে।বাচ্চার এসিতে ঠান্ডা লাগবে।(আহা,আমগো বাচ্চারা এসি ছাড়াই নাক ডাইকা ঘুমায়।)।
বস থামেননি ,আবার বলতে শুরু করলেন-ও কিন্তু ওর মায়ের কাছে ঘুমায় না,জানেন।আমার কাছেই থাকে।
(এই জায়গায় স্বভাবতই আমার প্রশ্ন হওয়া উচিত-সেকি আপনারা আলাদা ঘুমান??)
কিন্তু তাকে নিরাশ করে আমি কোন প্রশ্নই করলাম না।
তিনি নিজ থেকেই ট্রেন চালাছেন-এক রাতে সুজানা কি বলে জানেন,মানে আমার মেয়ে বলছে-বাবা,ওই রুমে মা কিন্তু একা ঘুমাচ্ছে।দেখেন ,বাচ্চাদের কি বুদ্ধি।
(তোর বাচ্চা বুঝলো বউ ছাড়া ঘুমানো ঠিক না,তুই সেই গল্প আবার মহিলা এমপ্লয়িরে ফলাশ,তোর সমস্যা কি।এই কষ্টে কি আমি তোর লগে গিয়া ঘুমামু?)
কোন প্রশ্নই আমার করা হয় না।পেন ড্রাইভে বিরাট এক ফাইল ভরে দিয়ে বলে –আজ বিকেলের মধ্যেই শেষ করে ফেলবেন কিন্তু।
আমি ক্লান্ত হয়ে নিজের রুমে চুপ করে বসে আছি,খুব খারাপ লাগছে।দেড় বছরে তিনটা জব চেঞ্জ করেছি,মজার বিষয় হচ্ছে তাদের দুই জনই নারী।যেখানে এক নায়কতন্ত্র থাকে সেখানে নারী বা পুরুষ কারো কাছেই আমরা নিরাপদ না।আজ অফিসে ইফতার আয়োজন চলছে।চল্লিশ জনের জন্য পাঁচ হাজার টাকার ইফতার,জন প্রতি ১২৫ করে পড়ে।যাক,এসির বাতাস না হোক,ভালো কিছু খাবার তো খেতে পারছে সবাই মিলে।
আমি মনিটরে দেখতে পেলাম পেছন দিক থেকে সাদা পাঞ্জাবী এসে একদম আমার বাঁ ঘাড়ের পাশে দাঁড়ালো।আমার রুমে হুট করে কেবল একজনই ঢুকতে পারেন-অফিসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।
-কি,কাজ দিলাম,করছেন না?কি ভাবছেন বসে বসে?
-কিছু না স্যার,আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।
-কেন ,কি হয়েছে,পিরিয়ড?
এতো বয়স হয়েছে,কিন্তু অল্প চেনা কোন পুরুষ মানুষের মুখে এই শব্দ কেবল ডাক্তারের কাছেই শুনেছি মনে হলো।তাই অনভ্যস্ততায় আমি চমকেই গেলাম-আপনি কি করে বুঝলেন?
-বুঝবোনা কেন,এত মহিলার সাথে কাজ করি সারাদিন।আর এইটা বুঝবো না।
আমি খুব আশ্বত হলাম,ভাবলাম দয়াল পরবশ হয়ে বস আমাকে ছুটি দিয়ে দেবেন।
আর বাস্তবের ঘটনা হলো-চারটার অফিস শেষ করতে লাগলো সাড়ে পাঁচটা।
এইতো জীবন,এভাবেই চলে আমাদের।এভাবেইতো চলছে।যেমন থেমে থেমে চলছে এই শহর।মনে হচ্ছে পেছন থেকে ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছি,কিন্তু এক চুলো নড়ছে না।আমরাও ক্রমাগত ধাক্কাই আমাদের,কি নারী –কি পুরুষ; কারো জীবনের এক চুলো পরিবর্তন হয় না।কতো অশিক্ষিত লোক চোখের সামনে দিয়ে মার্সেডিজ হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছে,কতো ডিগ্রী পাশ ছেলে কেবল বেকারত্ব ঘোঁচাতে সি এন জি চালায় লুকিয়ে লুকিয়ে।এই শহরটা তারি স্বাক্ষী হয়ে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে।
কন্ঠ শুকিয়ে আসছে ক্রমশ,আমার ব্যাগে পানি আছে।কিন্তু রোযার দিনে প্রকাশ্য দিবালকে ঘুষ খাওয়া জায়েজ হলেও কোন এক অলিখিত নিয়মে কিছু খাওয়া হারাম।
আমি হারাম কাজটি সহজে করতে পারিনা,কারন আমি সমাজকে শ্রদ্ধা করি।কিন্তু যেই সমাজে মেয়েদের শরী্র থেকে একটা একটা করে কাপড় খুলে নেয়,সেই সমাজ কি নারীকে শ্রদ্ধা করে?কি আশ্চর্য ,আমি কাকে প্রশ্ন করছি?যে পৃথিবীতে প্রকাশ্যে “ভালোবাসি” শব্দটা উচ্চারন করা যায় না,কিন্তু প্রকাশ্যে চা- পাতি চালানো যায় সেই পৃথিবীর এক কোনায় আমার জন্ম।আমাকেতো শিখিয়েই দেওয়া হয়েছে-মেনে নাও,মানিয়ে নাও।সেই বুলি নিয়েই ঘুরছে পুরো ভ্রমান্ড।তবে আমি বা আমরা পরিবর্তনের কি কাব্য রচনা করতে এসেছি।
ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে,আমি ব্যাগের ফিতাটা জাপ্টে ধরলাম।কানের কাছে কেবল একটাই সুর বাজছে-
“শোন মমিন মুসলমানো,করি আমি নিবেদনো ,
এই দুনিয়া ফানা হবে কিছুই রবে না...”
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩০
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×