somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওহ মাই রিক্সাপুলার...।(রম্য)

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকার রাস্তায় এখন চোখ বুলালেই কেবল রিক্সা আর রিক্সা,প্রাইভেট গাড়ির সাথে ভীষন রকম পাল্লা দিয়ে চলছে এই তিন চাকা।রিক্সাওয়ালাদের পিঠে জমতে থাকা ভেজা ঘাম দেখে কেবল মনে হয়-“উফ,কি নিষ্ঠুর এই পেশা।শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে প্যাডেল মাড়া কি চাট্টি খানি কথা।কি এমন ক্ষতি ছিল যদি ব্যাটারী চালিত থাকতো,কেন যে এভাবে হুট করে বন্ধ করে দিল।“এহেন বিচিত্র ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে আমার রিক্সা উড়ে যায়।আমি চিৎকার করি-মামা,আস্তে যান,সা্মনে স্পিড বেকার।(এই মামা আমার মায়ের ভাইনা,কিন্তু বিচিত্র ভাবেই এই সম্বোধনের উৎপত্তি)কিন্তু আমার মায়ের ভাই সে কান্না উপেক্ষা করে গর্জে ওঠে-আপনের সমস্যা কি?
-আমার তেমন কোন সমস্যা নাই মামা,আমি খালি হাত পা নিয়া বাড়ি ফিরতে চাই।এর একটা যদি রাস্তায় ফালায় যাই তাইলে আমারে বসাইয়া কেউ খাওয়াইবোনা।
মামা যেন আরো আগ্রহী হয়ে উঠলেন,যে করেই হোক আমার একটা হাত না ভেঙ্গে তিনি গন্তব্যে পৌঁছাবেন না।আমি আবার বললাম-মামা,আপনার যদি আমেরিকার ফ্লাইট মিস হয়ে যায় তাইলে আমারে নামায় দেন,আমার তেমন তাড়া নাই।অন্য রিক্সায় চইলা যাব।
আমার মায়ের ভাই চরম বিরক্তি মুখে নিয়ে ছুঁড়ে দিলেন একটাই বাক্য-মাইয়া মানুষরে এই জন্যই রিক্সায় উঠাইতে হয় না।
আসলেও তাই মাইয়া মানুষরে রিক্সায়-লেগুনায়-বাসে কোথাও উঠাইতে হয় না।এরা বিরাট ক্যাচাল করে ।হেল্পার ভাড়া তোলার জন্যে যখন ঘাড়ের কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাকে ধকম দিয়াও সরানো যায় না।তারপর ইঞ্জিনের উপর নারীদের জন্যে সংরক্ষিত আসনে(সংসদ ভেবে কেউ ভুল করলে লেখক দায়ী নয়)বসে যদি ড্রাইভারকে বলেন –ভাই,সিগারেটটা ফ্যালেন তো।তাহলে আপনার ভাই খুবি অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে-কেন?
আপনি ততক্ষনে রেগে গেছেন-এমনিতেইতো শহরে ধোঁয়ার অভাব নাই,আপনি বাড়তি ধোঁয়া ছড়াচ্ছেন।
নির্বিকার ড্রাইভার ভাইয়ের প্রতিউত্তর-আপনের ভালো না লাগলে নাইমা যান।
এখন নামা না গিলা –পছন্দ আপনার।
কোলকাতায় যখন টানা দেখলাম আমার এমন বুকে ব্যথা উঠেছিল আমি সেটাতে বেশি চড়িনি।ওদের খুব ভালো একটা বাস সার্ফিস আছে,আছে টেক্সি ক্যাব।আমাদের দেশেও ক্যাব আছে,কিন্তু কোথায় যে লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করা বড়ই কঠিন।
আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আজিজ সুপার মার্কেট থেকে ইস্টার্ন প্লাজা যাবো ঠিক করলাম,খুব কাছের পথ -হাতিরপুল।হেঁটেই যাওয়া যায়,কিন্তু গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় পড়ছিল,আর এক ছাতায় দুই মাথা আটছিল না।যথা্রীতি রিক্সাপুলার আমাদের ইন্টারভিউ নিলেন-একজন যাবেন ,নাকি দুই জন?
আমিও কম ত্যাদর না,পাল্টা প্রশ্ন করলাম একজন গেলে কতো ,আর দুই জন কতো?
সে একটু ভ্যাবা চ্যাকা খেল –দুই জন ত্রিশ টাকা ।
-তাহলেতো একজন পনের টাকা হয়া উচিৎ?
রিক্সাপুলারের ভ্রু কুঁচকে গেছে-কেন তা হইবো কেন?
-তোমার হিসাবে যা হয়,ঠিক আছে নাহার প্লাজায় নামায় দিও।
-২০ টাকা লাগবো দুই জন।
হাতির পুলের বাম পাশে গেলে ত্রিশ টাকা আর ডান পাশে নামলে বিশ টাকা।এহেন দড়াদড়ি আমার মাছের বাজারের কথা স্মরণ করায় দিল।সকালে এক দর ,বিকালে আর এক ,আর রাতে অন্য এক গুপ্ত দাম।
এই শহরে রিক্সা ভাড়ার দামো খুবি বিচিত্র।রোদ উঠলেও বাড়ে,বৃষ্টি হলেও বাড়ে আর হরতাল হলেতো কোন কথাই নাই।
তারপরো রিক্সায় চড়তে আমার ভীষন ভালো লাগে।টিপটিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টুং টাং ছুটে চলা ,ভাবতেই শিহরীত হয়ে যাই।আর আমার শরীরের সমস্ত শিহরণে অতর্কিতে হামলা করে ঢাকার ঐতিহাসিক ট্রাফিক জ্যাম।
গত্কাল মিরপুর শ্যাওড়া পাড়া এসে এমন জ্যামে আটকালাম যে রাস্তার দু’কূল বন্ধ হয়ে গেল।এ এমন এক পথ যেখানে আটকে গেলে ফিরে যাবার কোন বিকল্প রাস্তা নেই।যেভাবেই হোক হেলাল ড্যায়াগনস্টিক অব্দি যেতে হবে,তারপর রিক্সায় বা’পাশের গলি দিয়ে গেলেই মিরপুর দুই নম্বর।ওখানে রাস্তা এতো চওড়া যে ট্রাফিক কোন বিপত্তি করবে না।আমি হাঁটতে আরম্ভ করলাম,কাজিপাড়া ক্রস করে ফেলেছি কাঁদা পানি উপেক্ষা করে।আধঘন্টা একটানা হাঁটার পর জবুথবু শরীর ভাড়ি হয়ে এলো -আর সম্ভব না।আবার সরনাপন্ন হলাম মায়ের ভাইয়ের কাছে-মামা,দুই নম্বর যাবেন?
-কেমনে,দেখেন না কি জ্যাম লাগসে?
-না সোজা দিয়ে না,বাম পাশের রাস্তা দিয়ে মনিপুরী পাড়া দিয়ে ঢুকবো।
-উঠেন,আশি টাকা দিয়েন।
-কি বলেন মামা,এতো কম টাকায় এখান থেকে যাওয়া যায়।আমরাতো আগারগাঁও থেকেই দশ নম্বর যাই আশি টাকায়।আপনি চাইলে একশ দুইশ চাইতে পারতেন।
প্রথমটা একটু ধাক্কা খেয়ে আবার নিজেকে সামাল দিয়ে রিক্সা মামা বললেন-ঠিক আছে,একশই দিয়েন।
কি বিচিত্র এই মানুষ,নিজের অপমানটাও কেউ আজকাল গায়ে মাখে না।মনে হয় কেউ কটুক্তি করবে –এই বিষয়টাই খুব স্বাভাবিক।
বুঝতে পারলাম দু’পাই আমার শেষ ভরসা,একঢোক পানি গলায় ঢেলে আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম।আর মজার বিষয় হলো যখনি আমি হাঁটতে আরম্ভ করেছি তখনি ট্রাফিক জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে,কিন্তু এই টুকুন পথ আর কোন যানবাহনের আশ্রয় নিতে ইচ্ছে করলোনা।
শহর পরিষ্কারের কাজ চলছে।বাতিলের খাতায় চলে গেছে অকেজো যানবাহন।কেবল পার্সোনাল গাড়িগুলো পথ আটকে থাকে,আর থাকে বিশাল আকার চার চাকার গাড়ি যেখানে হুট করেই উঠে পড়া যায় না।ডাইরেক্ট ভাড়ার নামে চলছে ইন্ডাইরেক্ট সার্ফিস।বি আর টি সি সার্ভিস দিচ্ছে ঢাকার বাইরে তাও তিন গুন ভাড়ায়।একদিন এক মহিলা বলেছিল-ওটাতো অতিথি বাস ।আমি সে দিন খুব অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলাম-কেন?
উনিতো হেসেই খুন-ওরা জায়গায় জায়গায় থামে আর লোকজনকে ডাকতে থাকে,কিন্তু সমস্যা একটাই কোন চা পানি দেয় না।সেই হাসিকে ঠোঁটে রেখেই কন্টাক্টারকে বলেছিলাম-ভাই ,সবার ফোন নম্বর নিয়া রাখেন,যখনি এ পথ দিয়া যাবেন একটা মিস কল মাইড়েন।তখনি দেখবেন প্যাসেঞ্জার হাজির,গলার উপর আর চাপ নিয়েন না।
দেশটা ডিজিটাল হয়ে গেছে,রিক্সা-বাস সব সার্ভিস যদি এমন ডিজিটাল হয়ে যায় মন্দ কি।।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×