.
মোবাইলে অনবরত রিং বেজেই চলেছে।একটু আলসেই এই বন্ধের দিনটা,কিছুতেই যেন কোন কাজ করতে ইচ্ছে করে না।এমন কি মোবাইলে কথা বলাটাও এখন অসহ্য মনে হয় মিতার কাছে ।তবু খুব আনমনে যন্ত্রটাকে কানে ধরে হ্যালো বললো।নামটা সেইভ করাই ছিল ,গেল পাঁচ বছরে ওপ্রান্তের মানুষটা বদলালেও নম্বর ঠিক আগেরটাই আছে।চেনা কন্ঠস্বর বলে উঠলো-কেমন আছো মিতা?
মিতা নির্বিকার,কারো সাথে কথার শুরুতেই শুনতে হয় -কেমন আছো।আদৌ কি বলা সম্ভব -ভালো নেই নয়তো বলা যেতে পারে -ভালো থাকার চেষ্টা করছি।মিতার আর তেমন কিছুই বলতে ইচ্ছে করে না ,কেবল বলে চলে-চলে যাচ্ছে,তুমি হঠাত শুক্রবারে ফোন দিলে,বৌ কোথায়?
-ও তার বাবার বাড়িতে ,আস্তে দেরী হবে।তুমি কি আজ ফ্রী আছো?
এই ফ্রী শব্দটার মধ্যে কেমন অন্যরকম একটা কিছুর আভাস পায় মিতা।এই ফ্রী দিনটার জন্যে একটা সময় মিতা উন্মুখ হয়ে থেকেছে।এই ফ্রী দিনটায় মিতা ফুয়াদের দরজায় কড়া নেড়েছে।ভেতর থেকে দরজা খুলেই ফুয়াদ বলে দিয়েছে-ভেতরে হবু বৌ আছে।তার মানে এই ফ্রী দিনে ফুয়াদের জীবন মোটেও ফ্রী নেই।কিন্তু মিতা এখন পর্যন্ত ফ্রীই আছে,হয়তো ফুয়াদের জন্য হয়তোবা না।
কিন্তু এতো বছর পর হঠাত মিতার ফ্রী থাকা নিয়ে এতো আগ্রহী কেন মানুষটা ,খুব জানতে ইচ্ছে করে মিতার ।তাই প্রশ্নটা সরাসরিই করে-কি ব্যাপার তোমাদের জীবন কেমন চলছে?
-এইতো কেটে যাচ্ছে।
-কি কোন সুখবর আছে নিশ্চই?
-হুম,তা বলতে পারো ।সীমা কন্সিভ করেছে।
-কয় দিন হলো?
-প্রায় দু”মাস।
-ও ,তাহলে তো ওর কাছাকাছিই থাকা উচিৎ তোমার।
প্রসংগ পাল্টায় ফুয়াদ।
-তোমার সময় কিভাবে কাটে?
-এইতো কেটে যায় ।
-কোথায় কাজ করছো এখন?
-কোথাও না।
-আগের জব ছেড়ে দিয়েছো ,তাহলে কি করে চলে ?
-চলে ,মাঝে মাঝে কলে যাই।এতে যা আয় হয় একলা মানুষ দিব্যি কেটে যায়।
এমন কথা মিতার মুখে শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না ফুয়াদ।মনে হচ্ছে মোবাইলের মধ্য দিয়েই তার কন্ঠ বের হয়ে আসবে।
-তুমি কি বলছো?
-কি আবার বললাম,অবশ্য আমি আবার সবার সাথে যাই না,ক্লায়েন্টের স্ট্যাটাস বুঝে যাই।যারা তোমার মতোন ভালো আর্ন করে,দামী গাড়ি চালায় তাদের কাছেই যাই।
ফুয়াদ বুঝতে পারে না -তার কি এখন কথা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ নাকি রেখে দেওয়া উচিৎ ।কিন্তু মিতার মতোন একটি উচ্চ শিক্ষিত-সুন্দরী মেয়ে এমন একটা কাজে কিভাবে নিজেকে জড়ালো সেটা ভেবেই কুল পাচ্ছে না।আবার মিতার সাথে কাটানো সময়গুলোকেও উপেক্ষা করতে পারছেনা।মিতা একটা সময় ফুয়াদকে ভীষনভাবে চাইতো,ফুয়াদের বাড়িতে যখন তখন আস্তো সে।অফিস থেকে দু’জন একসাথেই বাড়ি ফিরতো ,তারপর আদরে আদরে কতো রাত কেটে গেছে তার হিসেব রাখা মুশকিল।কিন্তু সীমাকে বিয়ে করাতে তীব্রভাবে দূরে চলে যায় মিতা।
কিছুক্ষন সময় নিয়ে ফুয়াদ সাহস করে বলে-আজ কি তুমি বাড়িতে একা?
মিতা খুব করে হাসে,তারপর হাসি থামিয়ে স্পষ্ট করে বলে-হুম একাই,আমি কিন্তু পাঁচের নীচে নেই না।
কথাটা শোনা মাত্র অসম্ভব ক্ষেপে যায় ফুয়াদ-কি ব্যাপার ,তুমি আমার সাথে বার্গেনিং করছো কেন প্রস্টিটিউটদের মতোন?
-বেশ্যারা বেশ্যাদের মতোনই বার্গেনিং করবে ,কিন্তু তুমি কোন জায়গার প্রস ? বৌকে প্রেগনেন্ট করে প্রাক্তন প্রেমিকার এক্সক্লুসিভ ফ্রী টাইম চাও?
ফুয়াদ দ্রুত মোবাইল রেখে দেয়।মিতা যন্ত্রটা কানে ধরেই থাকে,যন্ত্রের যন্ত্রণার সাথে নিজের যন্ত্রনাটা কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।