somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশিরভেজা ভালোবাসা (পর্ব #১) {বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যান-ফিকশন}

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জায়গাটা সুন্দর। কিন্তু কেমন যেন নির্জন। প্রায় ১২ঘন্টা বিমান-ভ্রমণ করে ৮০০০কিমি দূরের এই দেশে নামতে হয়েছে সাকিবকে। হোটেলের ১২তালায় তার জন্য রুম বুকিং দেয়াই ছিলো। ক্লান্ত শরীরে কোনোভাবে হাতমুখ ধুয়ে হোটেল লবী থেকেই খাওয়া সেরে রুমে এসেছে প্রায় একঘন্টা আগে। কিন্তু এখন আর ঘুম আসছে না।
“দেশে এখন কয়টা বাজে?দুপুর-টুপুর হবে হয়তো। জেটলেগ তো ভালোই পেয়ে বসেছে। কাল তো আবার ভোর থেকেই অনুশীলন। প্রথম দিনে দেরী হলে ব্যপারটা ভালো দেখাবে না। ”-সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আরো একঘন্টা পর ঘুম নেমে এল তার চোখে।
কাউন্টি লীগে ওরচেস্টারশেয়ারের হয়ে খেলার জন্য ডাক পেয়েছে সাকিব। দেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রেন্ডস লাইফ টিটোয়েন্টি খেলবে সে। প্রথম যখন শুনেছিলো তখন বেশ উত্তেজিত হয়েছিল। এখানে নামার পর তাকে একটা সীম কার্ড দেয়া হয়েছে। সাথে কোচ এবং আরো কয়েকজনের ফোন নাম্বার। কোচকে সে কল দিয়েছিল। তার কথা শুনে সাকিবের বুঝে গেছে যে তাকে প্রথম থেকেই একাদশে রাখা হবে। এই নিশ্চয়তাটুকু তার দরকার ছিল। দীর্ঘ ১২ঘন্টা প্লেনে তার মনে হয়েছে যে,যদি সে একটাও ম্যাচ খেলার সুযোগ না পায়!এখন কিছুটা প্রশান্তি নিয়েই ঘুমাতে পারছে সে।

________________________________________________________________

আজ সাকিবের প্রথম ম্যাচ ছিল। সত্যি বলতে কি,সে কিছুটা নার্ভাস ছিল। তবে বেশ আত্নবিশ্বাসীও ছিল। গত দুদিন অনুশীলনে সতীর্থদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে সে। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ম্যাচটাতে তাই খুব একটা খারাপ করেনি সে। নিজের চার ওভারে দুটি উইকেট শিকার করেছে সে। তবে প্রায় ৩২ রান খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু সাকিবের আফসোস তার ব্যাটিং নিয়ে। ৬টা বল খরচ করে মাত্র তিন রানেই ফিরেছে সে। তার দল দুই রানের জন্য হেরেছে। নিজেকেই দোষারোপ করছে সে। বিষণ্ণ একটা রাত কাটলো তার।


ফোন কলের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো সাকিবের। ৯টা বাজে। আজ তো প্র্যাকটিস বিকেলে। রাতে ম্যাচ। তার আগে দুঘন্টা হালকা প্র্যাকটিস। মোবাইল স্ক্রিনে অপরিচিত নাম্বার উঠে আছে। ইংল্যান্ডেরই নাম্বার। কে হতে পারে?-ভাবতে ভাবতে ফোন রিসিভ করতেই বাংলা কথা শুনতে পেল, “এতক্ষন ধরে ঘুমাচ্ছিস নাকি?কতক্ষন ধরে লবীতে বসে আছি সারপ্রাইজ দিব বলে…আর তোর নামার কোনো নামগন্ধ নাই…”-তামিমের গলা চিনতে কোনো অসুবিধা হবার কথা না সাকিবের। তামিম বরাবরই এমন। ফোন করে নাম-ঠিকানা বলার ধারও ধারে না ও। সাকিব খুব খুশি হলো। ও খবর পেয়েছিল তামিম আসবে। তবে কবে,কখন তা জানতো না। যাক,অন্তত একজন কথা বলার মানুষ তো পাওয়া যাবে। “আমি কি জানি নাকি যে তুই ওখানে অপেক্ষা করবি?আমি মাত্রই উঠলাম। ফ্রেস হয়ে নিচে নামতে সময় লাগবে। তারচেয়ে বরং তুই রুমে চলে আয়। ১২ তালায়, ৭৫০নং রুম। ”-সাকিব বলল। ঠিক আছে বলেই লাইনটা কেটে দিল তামিম। এরপর দুজনে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো। তামিমকে গতকালের ম্যাচের কথা বলতেই ও বলল, “আরে বাদ দে তো খেলার কথা। সারাদিন ম্যাচ ছাড়া কিছু থাকি না তোর মাথায়?আর দেখিস,আজকে জিতবি তোরা। ”সাকিব বুঝল যে,তামিম ম্যাচের খবর জেনেই এসেছে। এখন আবার সাকিবের মন খারাপ করাতে চাচ্ছে না সে। বিকেলে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই মাঠে গেল। ও ভাবছিল,আজ বোধহয় ওকে ড্রপ করবে। কিন্তু কোচ ওকে দেখেই বলল, “আজ আবার কালকের মতো বল করতে হবে কিন্তু। ” সাকিব ভেবেছিল সে ব্যাটিংটা একটু প্র্যাক্টিস করবে। কিন্তু কোচ তাকে বল হাতেই পুরো সময় ব্যস্ত রাখলেন।
ম্যাচে তিনটা উইকেট নিল সাকিব। নর্থহ্যাম্পটনের হাইয়েস্ট স্কোরার ওয়াকলেকে ব্যক্তিগত ৬২রানে সাজঘরে ফিরত পাঠিয়েছিল সে। নয়ত,রান ১৫০+ হয়ে যেত। ১৩৫ টার্গেট খুব সহজেই করে ফেলেছে সাকিবের দল। যদিও সে আজ শূন্যতেই আউট। তবু,দল জিতাতে আর আফসোস নেই। ম্যাচের পর ক্যাপ্টেন বলল, “কাল বিজয় উদযাপন করার পার্টি হবে। তৈরি থেক। সাথে চাইলে ডেট আনতে পারো। ” হাসল সাকিব। সে আর কাকে আনবে!
পরদিন সে ভাবছিল যে পার্টিতে যাবে না। কিন্তু নিয়তির লিখন যে ভাঙ্গা অসম্ভব। নইলে কেন শুধু শুধু,মইন আলী তার রুমে এসে তার সাথে যাবার জন্য বসে থাকবে?এখন তাকে তো “যাব না”-বলা যাবে না। তবু সাকিব একবার চেষ্টা করেছিল “দেখ,আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। ”-কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। বলল, “আরে চলো…একটু রিলাক্স হলে ভালো লাগবে। ”অনিচ্ছা সত্ত্বেও তৈরি হলো সাকিব। তখনো সে জানতো না,এই পার্টিতেই তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটা ব্যপার ঘটে যাবে।

(চলবে)


( লেখকের কথাঃ ফ্যান-ফিকশন হলো বিখ্যাতদের নিয়ে তাদের ভক্তদের দ্বারা রচিত কল্পিত সাহিত্য কর্ম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বড় ফ্যান-ফিকশন গ্রুপ খোলার ইচ্ছে ছিল বহুদিন থেকেই। তাই টুকটাক কিছু শেয়ার করছি। আমি টাইগারদেরকে অনেক সম্মান করি। তাই এসব কোথাও কোনো টাইগারকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কিছু লেখা হবে না। এবং, অবশ্যই গল্পটি আমার কল্পনা থেকে লেখা। বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। )
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×