somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দু কাপ চা আর দু জন অতিথি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








সকাল ১০ টা বাজে।ছোট্ট মফস্বল শহর।রিপন আর নাহিদ দুই বন্ধু।বয়সে দু জন সমান।একই স্কুলে পড়ত।কিন্ত রিপন ম্যাট্রিক পাসের আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।এখন একটা গ্রোসারী সপ চালাচ্ছে।বাবা প্রবাসী।তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ও মেজো ভাই।বাবার পাঁচ তলা বাড়িটির নীচ তলা ছোটখাট শপিং মল।ওখানটাতেই ওর দোকান।নাহিদ স্থানীয় কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।বাবা পুলিশে চাকরি করে ।ওর বাবা এ এলাকাতেই ছিল।বদলি হয়ে এখন বান্দরবন।কিন্ত নাহিদের পরীক্ষার কারনে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা। টেষ্ট পরীক্ষা শেষ।
এখন শুধু প্রাইভেট পড়া আর কোচিং।সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা শেষ করতে করতে ৯টা বেজে গেলো।১১ টায় শ্যামল স্যারের কাছে ম্যাথ পড়তে যেতে হবে।আম্মু আমি প্রাইভেট পড়তে গেলাম।বাসা থেকে বের হয়ে রিপন কে একটা কল দিল।

নাহিদঃহ্যালো,রিপণ,তুই কই?
রিপণঃনাস্তা করছি
নাহিদঃকতক্ষন লাগবে
রিপণঃ১০ মিনিট
নাহিদঃআচ্ছা আমি ইয়াছিন ভাইয়ের চায়ের দোকানে গেলাম,তুই আয়।
রিপনঃঅকে,যা।আমি আসতাছি।

নাহিদ প্রাইভেট যাওয়ার আগে আর রিপন দোকান খোলার আগে প্রতিদিন ইয়াছিন ভাইয়ের চায়ের দোকানে চা-সিগারেট খায় (সঙবিধি বদ্ধ সতর্কীকরন ধূমপান সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর) ।সিগারেট প্রসঙ্গ আসাতে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেলো।আমি জীবনেও ভুলব না।ঢাকা শহরেই ভাংতির বড় আকাল।মফস্বল হলে তো কথাই নেই।তো তখন ২০০৪-০৫ হবে,গোল্ডলিফ দু টাকা করে।আমার পকেটে শুধু একটা ৫০০ টাকার নোট।সিগারেট এর খুব বিকার ঊঠলো।তো বিকারের তাড়নায় এক দোকান্দার মামুকে বললাম,একটা গোল্ডলিফ দাও।ভুলে গেছি আমার পকেটে ৫০০ টাকার নোট।সাথেই সাথেই মনে পড়লো।তখনো আমি ধরাইনি,মামুরে খুইলা বললাম।মামু কয় সমস্যা নাই।আমি তো তাজ্জব।দুই টাকার গোল্ডলিফের জন্য ৫০০ টাকা ভাংতি!!(আহা!! সবসময় যদি এমন হত)

ইয়াছিন ভাইয়ের দোকানটি পৌর উদ্যান টির পাশে ডাকাতিয়া নদী ঘেষে গড়ে উঠা পানের আড়ত গুলোর প্রথম দোকানটি।এখানের কাস্টমার পানের আড়তদার,শ্রমিক,পান কিনতে আসা আগত বিভিন্ন ক্রেতা সাধারন। মফস্বল শহর বলে এখনও দোকানপাট খোলেনি,দু একটা হোটেল(খাবার) খোলা।সরু ৭-৮ মিনিটের রাস্তা পার হয়ে পৌর উদ্যান।এর মধ্যে নাহিদ ইয়াছিন ভাইয়ের দোকানে পৌছে গেলো।পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার ভানে রিপনের জন্য অপেক্ষা করছে।ও আসলেই চা-সিগারেট দিতে বলেব।৫ মিনিট পর ও এল। ইয়াছিন ভাই দুই কাপ চা আর দুটা গোল্ডলিফ সিগারেট দেন তো।সিগারেট ধরিয়ে চা পান করছি।যারা সিগারেট পান করেন তারা নিশ্চই জানেন চা-সিগারেট একসাথে কি মজা।সিগারেট ধরেছি সেই সময়(২০০৬)আজ থেকে চার বছর আগে।নাহিদ এর আরেক বন্ধু আছে নাম পলিন।অনেকই ভাবতে পারেন মেয়ের
নাম কিন্তু ইহা একটি ছেলের নাম।যাই হোক হিস্ট্রিটা বলেই ফেলি।নাহিদ একদিন কৌতুহল বশত পলিন কে বলল দোস্ত সিগারেট খামু। পলিন বলল তুই সিরিয়াস।আগে কখনও খেয়েছিস।(সিগারেট খায় না পান করে)। পলিন ডেট ঠিক করল।২৩ ডিসেম্বর ২০০২।তখন বিজয় মেলা চলছে।বিজয় মেলা যে মাঠে হচ্ছে তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি লেক।লেকের পাশে ব্রিটিশ আমলে করা রেল লাইন।তার পাশে হাঁটছে নাহিদ আর পলিন।হাতে বেন্সনের প্যাকেট ও দিয়াশ্লাই।সিগারেট কিনেছে পলিন।নাহিদ তখন অত সাহসী নয়।যাই হোক,প্রথম পলিন ধরালো।ও খুব নরমাল ভেবে টেনে যাচ্ছে।নাহিদ বেচারা কাশতে কাশতে শেষ।পলিন বার বার দেখিয়ে দিচ্ছে।এভাবে না এভাবে।এভাবে হাতে খড়ি।

যাই হোক ফিরে আশি ইয়াছিন ভাইয়ের চায়ের দোকানে।দু জন ই চা পান করছি,সিগারেট টানছি।পলিন তখন ঢাকা কলেজে পড়ে।এমন সময় ধূলোমাখা শরীরে ছেড়া জামা,মুখে দাড়ি, লম্বা মত চুল রোগা এক লোক দোকানে ঢুকলো।রিপনের পাশে বসে একটা গ্লাসে পানি ঢেলে চোখ বন্ধ করে ফুঁ দিয়ে বল, খা(পানি খায় না,পান করে)।নাহিদ একটু পান করলো বাকিটা রিপন তারপর বলল আগামী বছর এই দিনে তোরা দুইজন বিদেশ থাকবি। তারপর বলল ১০ টাকা দে।তারে ভয়ে ১০ টাকা দিলো নাহিদ।লোকটি চলে গেলো।(বিদায় ভন্ডবাবা বা গাঞ্জা বাবা)।
পানের আড়তের দোকানিগুলির সামনেই একটি পার্ক। এই পার্কটি পৌর ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার হ্য়।আবার খেলার মাঠ হিসেবেও।মাঝে মাঝে প্রেমের মধুকুঞ্জ হিসেবে।আর রাতের কাহিনী না ই বললাম। আমি আর রিপন বসে গলপ করছিলাম। এমন সময় দেখি একটিই জুটি বেঞ্চে বসে প্রেম করছে। বলে রাখা ভালো এইসব ছোট শহর গুলিতে প্রেমিক জুটির আনাগোনা বড় শহরের তুলনায় অনেক কম। ঠেক(ইংরেজীতে যাকে বলে কট) খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।আর যদি অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় পায় তো ধরে বিয়ে পড়িয়ে দিতে পারে। আর এই জুটি যেখানে বসে আছে এখানে অবশ্য কিছু করা কঠিন। ভদ্র জুটি তবে সুযোগের অভাবে।নাহিদের মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধি খেলে গেলো।নাহিদ রিপনরে বলল আয় দোস্ত একটু মজা লই। তারপর ইয়াছিন ভাইকে বলল, প্রেমিক জুটিরে দুই কাপ চা দিয়া আসতে পারবেন।টাকা আমি দিমু। ঈয়াছিন ভাই তো একপায়ে খাঁড়া কারন মজাও হইব আবার দুই কাপ চা ও বেচা হইব। যাই হোক নাহিদের কথামত ইয়াছিন ভাই চা নিয়া গেলো।দুর থেকে নাহিদ আর রিপন দেখছে।ইয়াছিন ভাই যাওয়ার পরে ছেলেটি জিজ্ঞেস করল কে পাঠিয়েছে?ইয়াছিন ভাই বলল, আপনাদের দু জন শুভাকাঙ্ক্ষী।ছেলেটি বলল নিয়ে যান।আমরা এখন চা খাব না।কিন্তু মেয়েটি বলল পাঠাইছে যখন খাই।ছেলেটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল প্রেমিকাকে।ছেলেটি ভেবেছিলো হয়ত চায়ে কিছু মেশানো থাকতে পারে।কিন্তুমেয়েটি খুব আয়েশী ভাবে চা পান করল।(অপচয় কারী শয়তানের বোন)।মেয়েটি শয়তানের বোন হতে চায় নি। তারপর ইয়াছিন ভাই ফেরত আসল।প্রেমিক জুটি অতি দ্রুত কেটে পড়ল(কিসের জানি ভয়)।ইয়াছিন ভাই তো হাসতে হাসতে শেষ।নাহিদ আর রিপণ দোকান থেকে বের হয়ে হাসতে হাসতে আর মজা করতে করতে যে যার রাস্তায় চলল। সময় টা ছিলো ২০০৬।বি,এন,পির ক্ষমতা প্রায় শেষ।আওয়ামী লীগের আন্দোলন শুরু হয়েছে।তারপর ইন্টার পরীক্ষা শেষ করে নাহিদ ঢাকা চলে আসে কোচিং করতে।


ইয়াছিন ভাই বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে(মালেয়শিয়া)।তার এক ভাই(নজরুল) কয়দিন নাকি সেই দোকান চালিয়েছিলো।পরে নজরুল ভাই নাকি এক গারমেন্টস এর মেয়ের সাথে পালিয়ে গেছে।এখন নাকি গাজীপুর থাকে।এরপর ওনাদের বাবা এই দোকান চালাত।

রিপণ এখন ও দোকান চালায়।বিয়ে করেছে কিছুদিন আগে।ওই লোকটার কথা অনু্যায়ী ওর বিদেশ থাকার কথা ছিলো।চেষ্টা ও করেছিলো কিন্তু......।।



জীবন থেমে নেই।দু কাপ চা আর সেই দু জন অতিথিকে শ্রদ্ধা।

কফি হাউজের সাত জনের মত আমরাও সাতজন আছি। গল্পে তিনজনের নাম এসেছে বাকিদের ও স্মরণ করছি শ্রদ্ধা ভরে। বাবু(বিবাহিত + ব্যবসায়ী), রিজভী(মামা বলে ডাকতাম) এখন দুবাই,হাসেম আই,আই,ইউ,সি(চট্রগ্রাম)-ট্রিপল ই, মনির( ইনস্যুরেন্স কোঃ চাকরিরত + উন্মুক্ত তে (বি,এ) পড়ছে।ভালো থাকিস তোরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:১৯
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×