somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁটা

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তামান্না আপার বিয়ে- এটুকুই যথেষ্ট ছিলো আলাদা করে সময় বের করে নেওয়ার জন্য। ভেন্যুও ইশরাতের বাসার কাছাকাছি। ধানমন্ডির প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টার। মিরপুর রোড থেকে ধানমন্ডি- এমন আর কি দূরত্ব? বিয়েটা পড়েছে শনিবারে, ইশরাতের অফিসে ডে অফ। সবকিছু এতো নিঁখুতভাবে মিলে যাওয়ার পরে সেকেন্ড থট দেওয়ার কোন যুক্তি ছিলোনা।

নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টার ভেতরেই ইশরাত পৌঁছে গেলো। দাওয়াত পেলাম, এলাম, খেলাম, বর-কনের সাথে দুই চারটা খুচরা কথা বলে বিদায় নিলাম; তামান্না আপার জায়গা ইশরাতের জীবনে তার চাইতেও অনেক বেশী তাৎপর্য্যপূর্ণ। সামাজিক অনুষ্ঠান; তাও কিনা বিয়ের মতো গেট টুগেদার- ক্যাজুয়ালভাবে সকলের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে এমনটা ইশরাতের কাছে অকল্পনীয়। তাই যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে মুখে আরোপিত হাসি ঝুলিয়ে রাখা, পরিচিত-অপরিচিতের ফারাক না করে হেসে হেসে ননসেন্স কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া, কারণে অকারণে মানুষজনের উইটলেস হিউমারের জবাবে মেপে মেপে দাঁত বের করা এবং চিরাচরিত অন্যান্য আবোলতাবোল যা যা করলে চমৎকারভাবে নিজেকে কাটিয়ে নিয়ে আসা যায় এসবের কোনটা করতেই তার কোন জড়তা কাজ করেনা।

কিন্তু তখন সবেমাত্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের গালে হাত রেখে যখন অনুভব করলো বেশ হালকা লাগছে তখনই দেখলো দৃশ্যটা। রাহুল এসেছে। সুপ্তির সাথে। বর্তমান প্রেমিকার সাথে প্রাক্তন প্রেমিকের এখানে আগমন ইশরাতের কাছে বিস্ময়কর কোন ঘটনা নয়। তাদের সম্পর্কচ্ছেদের পরেও তামান্না আপার সাথে সম্পর্কটা উষ্ণই থেকে গেছে রাহুলের। তাছাড়া তামান্না আপার হাজবেন্ড মোর্শেদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছোট ভাই রাহুল। এই তথ্যটাও ইশরাতের জানা আছে বলে রাহুলের সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভবপরতা তার কাছে অপ্রত্যাশিত কিছু ছিলোনা। সে ভেবেছিলো বিয়েতে তাদের আই কনটাক্ট হলে রাহুলের পরিচিত মিষ্টি হাসিটাই তার উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেবে ইশরাত। কিন্তু যা দেখলো তাতে সেই পরিকল্পনা দূর কি বাত স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে কিনা এই নিয়েই ইশরাত সন্দিহান হয়ে পড়লো।

সপ্রতিভ থাকতে সচেষ্ট ছিলো সে। তাই হাসিতামাশা করে বেশ কেটে গেলো সময়টা। রাহুলের সাথেও সাবলীল ভঙ্গিমায় কথা বলতে পারলো। সুপ্তিকেও শত্রু বলে ঠাহর করলোনা। দিব্যি কার্টিসি বজায় রেখে কথা বলতে পারলো সে। মাঝেমাঝে প্রয়োজনের চাইতেও একটু বেশীই জোরালো হাসি হাসলো। সবুজ নীল কম্বিনেশনের একটা শাড়ি পরে এসেছে সে। ফ্যাশনসচেতন মায়ের কাছ থেকে ধার করে। তাই বেশ কিছু এডাল্ট এডমায়ারও জুটে গেলো কপালে। শোয়েবের সাথে সম্পর্কটা বেশ স্মুথলীই চলছে ইশরাতের। পজেজিভনেসের কারণে মাঝেমাঝে বাড়াবাড়ি করে বসে সত্য কিন্তু এতোদিনে তা হ্যান্ডেল করতে শিখে গেছে সে। এই কারণে সেইসকল এডমায়ারদের বিশেষ একটা গুরুত্ব দিলোনা।

কিন্তু খেতে বসে, লোকজনের সাথে কথা বলে, সেলফি-ফটো তোলা শেষে যখন বিয়ে থেকে বেরুলো ইশরাত তখনো সে টের পাচ্ছিলো কাঁটাটা সহজে যাবার নয়। তার বুকে একবার যখন বিঁধেছে, চলে যেতে সময় লাগবে নিশ্চিত। কতোদিন সম্পর্ক ছিলো তাদের? ইশরাত কড়ে আঙ্গুল গুনে ঠিক ঠিক হিসাব করতে পারলো। সাড়ে তিন বছর। এই সময়টুকুতে বলতে গেলে গোটা ঢাকা শহরটাই তারা চষে বেড়িয়েছে। এমনকি তিন বছর আগের হেমন্তে, আশুলিয়ায় রাহুলের বন্ধু আশীষের মামার জনমানবহীন ফার্মহাউজ- কই সেখানেও তো তার খোঁপা নিয়ে রাহুলকে প্রশংসাসূচক একটা বাক্যও বলতে শোনেনি সে। আর সেই একই মানুষ আজকে; বিয়ের মতো একটা পাবলিক গেট টুগেদারে সবার সামনে প্রেমিকার খোঁপা নিয়ে খেলা করছে নির্দ্বিধায়, ইশরাত এর কোন তল খুঁজে পায়না।

তাদের দুইজনেরই তখন ভালোবাসার প্রথম পাঠ। পূর্ব অভিজ্ঞতাহীন। ফলশ্রুতিতে মানসিক আদানপ্রদান র, কাঁচা, তীব্র। সেই সময়েও রাহুলের চোখে মুখে এক ধরণের নিস্পৃহতা কাজ করে লক্ষ্য করতো সে। অনেকবার এই নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেও স্পষ্ট কোন উত্তর কখনো পায়নি ইশরাত। এমনকি তাদের সম্পর্কচ্ছেদের দিনটাও স্পষ্ট স্মরণ করলে দেখতে পায় বৃষ্টি হয়ে যাওয়া ভেজা বিকাল, অস্থির বাতাস - সম্পর্কটি সে আর বজায় রাখতে পারছেনা, নিরাসক্ত ভঙ্গিতে কথাটা ইশরাতকে জানিয়ে যখন রাহুল ফিরে যাচ্ছিলো তখনো তার মুখাবয়ব একইরকম, উদাসীন।

সেই একই মানুষ আড়াই বছর পরে এতোটা বদলাতে পারলো কি করে? রুপান্তর হয় বৈকি মানুষের, কিন্তু এতোটা? সুপ্তি, মানে রাহুলের প্রেমিকা সরাসরি না হলেও ইশরাতের পরিচিত। একজন উদাসীন, কিঞ্চিত এরোগেন্ট যুবককে আপাদমস্তক বদলে দিতে যেই ক্যারিশমার প্রয়োজন হয় সুপ্তিকে দেখে তার সম্পর্কে তেমনটা মনে হওয়া মুশকিল। অন্ততপক্ষে কলেজে থাকতে কবিতা সংগঠণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে লেখালেখির সাথে যুক্ত থাকবার অভিজ্ঞতা- এসবের বদৌলতে ইশরাত নিজেই যথেষ্ট চৌকস । তারপরেও তো সে কিছু করে উঠতে পারলোনা। বরং তুলনামূলক বিচারে অপ্রতিভ, কম আত্মবিশ্বাসী একটা মেয়েই রাহুলকে বদলে দিয়েছে।

অফিসে কলিগদের সাথে মিস কমিউনিকেশনের হ্যাজার্ড, শোয়েবের সাথে ধারাবাহিক ভুল বুঝাবুঝি – ইশরাত বুঝলো সিচুয়েশন ক্রমশই আউট অব কনট্রোল। এভাবে বেশীদিন চলতে থাকলে বেশ পরিশ্রম করে গুছিয়ে আনা জীবনটা আবারো এলোমেলো হতে বাধ্য। ফের বাবার সেই একঘেঁয়ে সব থিওরী, সেসব শুনে শুনে অতিষ্ঠ হয়ে তার কাছে এস মায়ের অনুযোগ- নতুন করে এইসব হ্যাপা সে কোনভাবেই আর পোহাতে চায়না।

এক সপ্তাহ পর অফিস থেকে ক্যাজুয়াল লিভ নিয়ে দুপুরে বাড়ি থেকে বেরুলো ইশরাত। রিকশা নিলোনা। সিএনজি কি বাস প্রশ্নই আসেনা এতোটুকু দূরত্বের জন্য। নভেম্বর মাসের ঝলমলে রোদ। মিষ্টি ধরণের। অনেকদিন খালি রাস্তায় এভাবে সে হাঁটতে বের হয়না। সাথে মোবাইল ফোন নেয়নি ইচ্ছা করে। কোন ফোনকল রিসিভ করতে চায়না। বিশেষ করে শোয়েবের। সিটি কলেজ ধরে যখন জিগাতলায় নেসক্যাফের লেক ধরে এগুলো ইশরাত দেখলো মানুষজনের উপস্থিতিতে জায়গাটা গমগম করছে। দুপুরের রোদ, কলেজ পালিয়ে প্রেম করতে আসা ছেলেমেয়েগুলোর পরিতৃপ্ত মুখ চিকমিক করে। সেই জায়গা অতিক্রম করে প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে দাঁড়ালে দেখা গেলো বিপুল সংখ্যক মানুষে জায়গাটি ভরপুর। খুব সম্ভবত রাজনৈতিক কোন নেতা এসেছেন। সচরাচর জায়গাটি প্রায়শই রাজনৈতিক নেতাদের তুষ্ট করতে উৎসুক পাতি নেতা, কর্মীদের মুখরিত শ্লোগানে ভরপুর হয়ে উঠে। আমি কি ভেবে এই সময়ে এখানে চলে আসলাম- খুব সঙ্গত প্রশ্নটি ইশরাতকে যখন প্রথম আঘাত করে তার ডান হাতের কারসাজিতে যত্ন করে বাঁধা খোঁপা তখন লুটিয়ে পড়েছে। গোঁয়ার- সে স্বগতোক্তি করলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৫২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×