somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জে. আলফ্রেড প্রুফ্রকের প্রেমের গান

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জে. আলফ্রেড প্রুফ্রকের প্রেমের গান
মূল : টি এস এলিয়ট
বাংলা বিনির্মাণ: ঋতো আহমেদ

যদি জানতাম যাকে আমি দিচ্ছি উত্তর
আবারও সে ফিরবে এই মৃত্যু-পুরীতেই
এই শিখা জ্বলতো না আর তখন আমার
এমনকি কখনো কেউ এ পাতাল ছেড়ে
জীবন্ত ফেরেনি জানি; শুনি যা সত্যি হয় যদি
তবে নিন্দা ভয় ফেলে তোমাকেই বলি, শোনো



চলো, যাই, তুমি আর আমি,
টেবিলে পরে থাকা ইথারে-নিশ্চল রোগীর মতোই ঘনিয়ে এসছে আঁধার
আকাশের বিপরীতে—পৃথিবীতে;
চলো যাই, যে কোনো অর্ধ-নিরব জনহীন নিথর রাস্তায়,
একটি-রাতের সস্তা হোটেলে নির্ঘুম কেটে যাওয়া একে একে
ঝিনুকের শাঁস আর ঘূণে-খসা কাঠেদের এমন রেস্তোরাঁয়:
রাস্তার তুচ্ছ বিতন্ডায়—কপট অভিপ্রায়ে—
নিয়ে যায় কী এক দুর্বহ প্রশ্নের কাছে…
ওহ্, জানতে চেও-না, “সে কী?”
চলো যাই, তারচে’ বরং কোথাও ঘুরে আসি।

মেয়েরাও আসে এই ঘরে
মাইকেলেঞ্জেলো নিয়ে কথা বলে, চলে যায়।

এখানে হলুদ কুয়াশারা এসে আলগোছে ঘঁষে যায় জানালার কাঁচ,
হলুদ ধোঁয়ারা আসে, ঘঁষে দেয় শার্শির স্তব্ধতা,
সন্ধ্যার পর খুলে দেয় ভাষা
দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ড্রেনে অলস ভঙ্গিতে শেষে চলে যায় পুকুরের 'পরে,
যেদিকে চিমনির থেকে ঝুলে থাকে ঝুল, সেই দিকে চলো, নেমে যাই,
ছাদ থেকে পিছলিয়ে পড়ি,— হঠাৎ লাফাই,
দেখি, অক্টোবরের এই নরম ওমের মতো রাত
কী করে জেঁকে আসে বাড়িটিতে, তারপর তলিয়ে যায় ঘুম—ঘুমের গহীনে।


আর, সময় আসবে সত‍্য‌ি
ওইসব হলুদ ধোঁয়ার—শার্শিতে পিঠ ঘেঁষা
রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া হরিৎ ধূসর সময়;
আসবে, সময় আসবে তোমার
নিজেকে গড়ার, যেন মুখোমুখি হতে পারো সেইসব মুখেদের,
মুখোমুখি হ‌য়ে থাকো নিয়ত যাদের;
সময় তুমিও পাবে—ভাঙা ও গড়ার,
সময়কে পেয়ে যাবে সমস্ত কাজের ভেতর সমস্ত দিনের ভেতর
মনের ভেতরে যারা প্রশ্ন জাগায় ও নেভায়—তাদের ভেতর‌ও;
এই যে বিস্কিট আর চা এইসব খাওয়ার আগেই
তোমার ও আমার সময় আসবেই;
এমনকি সময় এখনও আছে এই যে শত সিদ্ধান্তহীনতা,
আর শত দৃষ্টিভঙ্গির, পূনর্বিবেচনার প্রয়োজনে।

মেয়েরাও আসে এই ঘরে
মাইকেলেঞ্জেলো নিয়ে কথা বলে, চলে যায়।

আর হ‍্য‍াঁ, সময় আসবে সত‍্য‌িই
‘আমি কি পারি?’, ‘আমি কি পারি?’ এই কথা বিস্ময়ে ভেবে দেখবার
সময় আসবে সিঁড়ি বেয়ে নিচে ফিরে তাকাবার
সময় আসবে টাক পড়বার
(সবাই বলবে: 'আহারে, চুল পাতলা হয়ে গেছে বেচারার!’)
সকালের কোট, চিবুকে ঠেকানো পরিপাটি কলার
সামান্য পিন, গেঁথে রাখা মার্জিত সমৃদ্ধ টাই আমার—
(সবাই বলবে: ‘কিন্তু আহা কী জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা হাত-পা'র!’)
আমি কি পারি
চিরায়ত ওই নিয়ম পাল্টাতে? হায়—
এক মুহূর্তের নেয়া সিদ্ধান্ত পর-মুহূর্ত এসেই উল্টে দেয়।

কী করে সাহস করি বলো?
যেহেতু জেনে গেছি আমি, জানা হয়ে গেছে সব—
সকাল সন্ধ্যা বিকেল
কফির চামুচ আর কফি খেতে খেতে মাপা হয়ে গেছে এইসব;
দূরে— দূরবর্তী ঘর থেকে ভেসে আসা গানে— অন্তরালে—
জানি আমি সব— সমস্ত কন্ঠ‌ই ঝরে যেতে যেতে মরে যায় শেষে।

কী করে সাহস করি বলো?
যেহেতু জেনে গেছি আমি, জানা হয়ে গেছে সব দৃষ্টি—
বেঁধে ফ‍্য‌ালে সূত্রে তোমাকে,
সূত্রের বেষ্টনে কথার খোঁচায় দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছি আমি,
দেয়ালের পিঠে-গেঁথে ঝুলে থেকে—ছটফটাচ্ছি,
বলো তবে, কীভাবে
ছুঁড়ে দিই আমার পথের—যাপিত জীবনের স্বার?

যেহেতু জেনে গেছি বাহুদের‌ও, জেনে গেছি সব—
নগ্ন, শুভ্র, বাজুবন্ধ বাহু
(ল‍্য‌াম্পের আলো, নীচু করা হালকা বাদামী চুলে)
মনোযোগ ব‍্যহত হচ্ছে আমার—সে কী
তবে পোশাকের সুগন্ধি কোনো?
টেবিলে হেলানো এইসব হাত, অথবা জড়ানো শালে।
কী করে সাহস করি বলো তবে?
কী করে করি শুরু?

* * *


তবে কি বলবো আমি, অলিগলি অনেক ঘুরেছি ওই সন্ধ্যার অন্ধকারে
দেখেছি পাইপের ধোঁয়া মানুষের মুখে
একাকী নিঃসঙ্গ মানুষ গায়ে-শার্ট উবু হয়ে নুয়ে আছে বিষাদ-জানলায়?...

হয়তোবা প্রয়োজন ছিল একজোড়া রুক্ষ থাবার
দ্রুত বেগে ছুটে যেতে স্থির সমুদ্র সমতলে।

* * *

আহা কী গভীর শান্তির ঘুমে ডুবে আছে বিকেল, সন্ধ্যা!
যেন কিছু দীর্ঘ আঙুলের আদর,
শ্রান্ত… ঘুমন্ত… কিংবা হয়তো অভিনয় এর,
এইখানে, তোমার ও আমার পাশে, এলিয়ে শুয়ে আছে ফ্লোরে।
তবে কি চা, কেক আর কুলফির পর
মুহুর্তটিকে ঠেলে দেবো এর সংকটের ভেতর?
যদিও কেঁদেছি আর থেকেছি অভুক্ত অনেক, করেছি প্রার্থনা,
যদিও দেখেছি আমার (টাকপড়া) মাথা, নিয়ে এসছে থালায়,
আমি কোনো পয়গম্বর নই—এগুলো আসলেই তেমন কিছু নয়;
দেখেছি গৌরব-মুহূর্ত আমার নিমেষেই নিভে যায়,
দেখেছি মুখ টিপে হাসছে পদাতিক শাশ্বত আর চেপে ধরে আছে কোট আমার,
যদি বলি তো হ্যাঁ, ভয় পেয়ে গেছি সত্যি হঠাৎ।
আসলে কি চলতো আমার,
এইসব কাপ, মারমালেড, চা,
চীনামাটির বাসনকোসন আর আমাদের কিছু গল্পগুজবের পর,
সত্যি চলতো কি একটুও,
একটু হেসে বিষয়টির সমাপ্তি ঘটাতে,
মহাবিশ্বকে দুমড়েমুচড়ে এক বলের মতো বানিয়ে
ছুঁড়ে দিই কিছু দূর্বহ প্রশ্নের দিকে,
যেন বলি: ‘মৃতদের ভেতর থেকে উঠে এসছি আমি, নিঃস্ব এক,
ফিরে এসছি তোমাদের কাছে, সব বলবো বলে, সব বলবো তোমাদের‌ই’—
আর কোনো মেয়ে যদি বালিশের উপর মাথা রেখে
বলে: 'এমন কিছু বলতে চাইনি মোটেও,
এমনটা নয়, একদমই।’

সত্যি কি চলতো শেষে
পোষাতো কি সত্যি,
সূর্যাস্তের পর আর উঠোনের শেষে, ধুয়ে মুছা রাস্তার পর,
বহু উপন্যাস আর চায়ের কাপের ঝড়ে গল্পের পর, মেঝেতে ঘঁষে যাওয়া সেইসব স্কার্টের‌ও শেষে—
আর এই, এর‌ চেয়েও কি বেশি?—
আসলে অসাধ্য বলা, ঠিক যা বলতে চাই আমি!
ধরো এক যাদুর বাতি পর্দায় ফেলছে আমাদের স্নায়ুর ছায়া:
তবে কি হোতো
যদি কেউ, গোছাতে গিয়ে বালিশ অথবা খুলে ফেলে গায়ের চাদর,
দাঁড়াতো জানালার পাশে, বলতো:
'এরকম না,
আমি যা বলতে চাই তা মোটেও এমন নয়।’

* * *


না ! প্রিন্স হ্য‌ামলেট নই আমি, হ‌ওয়ার কথা‌ও না
কেবল এক অনুচর যার কাজ
কাহিনী এগিয়ে নেয়া, শুরু করা দু’একটা দৃশ্য‌ের, আর
প্রিন্সকে পরামর্শ দেয়া; নিঃসন্দেহে সহজ কাজ,
একটু আলাদা হ‌লেও ধন্য হ‌য়ে যাই কাজে লেগে,
কিছুটা রাজনীতিক, কিছুটা সাবধানী, এবং কখনো অতিসাবধানীও বটে;
গম্ভীর হাবভাব, কিন্তু একটু মোটা;
মাঝেমধ্যে সত্যিই হয়ে যাই হাসির পাত্র—
হয়ে যাই নিরেট নির্বোধ, গাধা।

বয়স হয়েছে আমার... বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আমি…
সময় হয়েছে এবার পা’জামাটি গুটিয়ে পড়ার।

চুলগুলো কি বেঁধে নেবো, পেছনে? সাহস করে খেয়ে নেবো নাসপাতি?
শুনেছি মৎস্যকন্যারা নাকি গাইছে গান, একে অপরকে নিবেদন করে করে
আমি কি যাবো, সাদা ফ্লানেলের পা’জামাটি পড়ে, ঘুরে আসবো ওদিকে, সমুদ্রের পাড়ে।

হয়তোবা শোনাবেনা ওরা, গাইবেনা গান আমার জন্য।

প্রচন্ড বাতাসের বেগ, ফুঁসে উঠছে জল,
সাদা, আছড়ে ফিরে যাওয়া ঢেউয়ের চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে
দেখেছি ওদের আমি, দেখেছি ঢেউয়ের পিঠ-চেপে গভীর সমুদ্রে চলে যেতে।

বাদামী ও লাল শৈবাল সজ্জিত এইসব সাগরকন্যাদের সাথে
বহুকাল কেটে গেছে এভাবেই সমুদ্র মহলে, মহলে মহলে
যদি না মনুষ্য কণ্ঠ এসে ডাকে—জাগায় আমাদের, আমরা ডুবি—জলের পাতালে।

ছবি : ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×