somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকের দৃশ্য

এ বছরের প্রথমদিকে কোন এক সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ঢুকতেই নীলচে আলো। চন্দ্রালোকের আভাস। কিন্তু কেন? আমাদের স্মরণে আসে প্রযোজনাটির নামকরণ, ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’। আর ঠিক তখুনি সবাই বুঝে উঠতে পারি পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে রাখা এই জ্যোতির মহিমা। বাংলাভাষার অসামান্য কথাশিল্পী শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’। নামের মাঝেই রয়েছে অতীতচারিতার গন্ধ। তাতে আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, এ কাহিনি পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনোকিছুর ওপর দাঁড়িয়ে। নবীন নাট্যদল আরশিনগর তাদের আত্মপ্রকাশের প্রযোজনারূপে উপন্যাসটিকে অনুবাদ করেছে মঞ্চে। পশ্চিমা শিল্পাদর্শে অথচ দেশজ প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটির আধেয় প্রায় অক্ষুন্ন রেখে মঞ্চায়ন করেছে দলটি। দূূরূহ সেই কাজ যাঁর হাত দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তিনি সমকালের মেধাবী নির্দেশক রেজা আরিফ। ইতোপূর্বে মাকড়শা, রহু চন্ডালের হাড়, কেরামতমঙ্গল ইত্যাদি প্রযোজনায় তাঁর সামর্থ্যের পরিচয় আমরা পেয়েছি। এই প্রযোজনাতেও তিনি ধরে রেখেছেন তাঁর শিল্পীসত্তার সেই ধারাবাহিকতা।


ঔপন্যাসিক শহীদুল জহির

সে রাতে পূর্ণিমা ছিল উপন্যাসের কাহিনি সুহাসিনী গ্রামের, শ্রমজীবী আকালু ও তার পালিত কন্যা কিংবা স্ত্রী, একজন মফিজউদ্দিন ও চন্দ্রভান, মোল্লা নাসিরউদিন ও দুলালী, আবু বকর সিদ্দিক ও আলেকজানের। এই আখ্যান মফিজউদ্দিনের বন্ধু করিম খাঁর ছেলে আফজাল খাঁর পরিবারের এবং বেশ্যা নয়নতারার। এই গল্প কৃষকের, পরম্পরা আর রূপান্তরের কিংবা একটি গ্রামের আবডালে একটি দেশের। হয়তো কেবলমাত্র প্রেমের কিংবা শেষবিচারে বিভ্রমের। বিভিন্ন উপকাহিনি যুক্ত হয়ে উপন্যাসটির আয়তন ও শিল্পসৌকর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। আরিফের দক্ষতা, পুরো উপন্যাসটিকে মঞ্চে মেলে না ধরেও নির্বাচিত দৃশ্যনির্মাণের মধ্যদিয়ে তিনি প্রায় সবটুকু নির্যাস সঞ্চার করতে পেরেছেন দর্শকের মাঝে। উপন্যাস ও নাট্য, দুই পৃথক শিল্পমাধ্যমের তুলনা অবান্তর। আমরা বরং প্রযোজনার ব্যবচ্ছেদ অন্তে সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার খোঁজ করতে পারি।


সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকের দৃশ্য

প্রযোজনাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় নিরাভরণ বা অ্যাম্পটি স্পেস। নৌকার গলুইয়ের সাজেশন, ঢেকিসদৃশ লিভার আর কিছু দীর্ঘ কাপড়ই বিভিন্ন দৃশ্যে সেটের প্রয়োজন মিটিয়েছে। কিন্তু তাতে করে কোথাও বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি নজরে আসেনি। বর্ণনা ও সংলাপ এবং একই চরিত্রে একাধিক শিল্পী কিংবা একই অভিনেতার একাধিক চরিত্ররূপায়নের যে কৌশল তাতে বোঝা যায় নাটকটির পরিবেশনায় ছিল ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ণনাত্মকরীতির আধিপত্য। চরিত্র অনুযায়ী বাস্তবতা বিচারে পরিকল্পিত হয়েছে পোশাক। শাহীনুর রহমানের আলো প্রযোজনাটির বিভিন্ন দৃশ্যকে আরো উপভোগ্য করে তুলেছে। সংগীতে দেশীয় বাদ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের যন্ত্র একই সুরে-তালে বেজেছে। তবে সমবেত কণ্ঠদানের ক্ষেত্রে শিল্পীদের আরো একটু মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।


নির্দেশক রেজা আরিফ

নাট্যে তোরাব আলী কিংবা পুলিশ অথবা মোবারক আলী চরিত্রে ইভান, আকালু চরিত্রে সোহেল, মফিজুদ্দিন চরিত্রে পার্থ, চন্দ্রভানরূপী ডেইজি, নয়নতারার ভূমিকায় মৃন্ময়ী, নাসিরউদ্দিন হিসেবে আতিক আর দুলালী হয়ে ওঠা রূপার অনবদ্য অভিনয় দর্শকের মনে দীর্ঘদিন থেকে যাবে। যৌনতার ইঙ্গিতবাহী অংশগুলোর দৃশ্যায়নে পরিমিত বোধ, প্রযোজনাটির একটি বিশেষ দিক। আমাদের অনগ্রসর সমাজব্যবস্থার বিবেচনায় যথেষ্ঠ দক্ষতার সঙ্গেই একে মোকাবিলা করেছেন নির্দেশক। আর তাতে দূর হয়েছে দর্শকের ভেতরে অস্বস্থি তৈরির শঙ্কা।


সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকের দৃশ্য

২০০২ সালে সেলিম আল দীন উপন্যাসের মঞ্চভ্রমণ অভিধায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পাশ্চাত্য আঙ্গিকে অঙ্ক-দৃশ্য বিভাজনের পথে উপন্যাসের বিলুপ্তি ঘটে বলে মনে করতেন তিনি। এ কারণেই কোনো নাট্যরূপ না দিয়ে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসের ভাষা এবং কাহিনিকে প্রায় অবিকৃত রেখে হুবহু মঞ্চায়নের চেষ্টা করেছিলেন। সেই অপ্রচলিত ভাবনার উত্তরাধিকার আরশিনগরের প্রথম প্রযোজনা।

থিয়েটার বা নাট্য একটি চলমান ক্রিয়া। সমসময়ে ঘটার পরই মৃত্যু হয় তার। কিন্তু দর্শকের করোটির উঠোনে নাটকের মঞ্চায়ন থামে না কখনো। শিল্পোত্তীর্ণ নান্দনিক প্রযোজনার মাহাত্ম্য এখানেই, দেখনজনার হৃদয়ে সেটি বেঁচে থাকে চিরকাল। ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’র যাত্রা সেপথেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×