আপনার পরিচিতজন বা কোন
নারী ধর্ষণের শিকার
হলে সাথে সাথে যেসব কাজ অবশ্যই
করবেন:
১. যতদ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে নিকটস্থ
হাসপাতালে অথবা থানার মাধ্যমে পুলিশের
সহায়তায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে
২. ‘মেডিক্যাল টেস্ট পরে করলেও হবে’
এই ধারণা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।
যতদ্রুত সম্ভব মেডিকেল টেস্ট
করতে হবে। না হলে আলামত নষ্ট হতে
পারে বা পরবর্তীতে মামলার
ক্ষেত্রে আসামীর অনুকুলে প্রতিবেদন
যেতে পারে।
৩. ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য
আদালতের অনুমতি বা আদেশের কোনও
প্রয়োজন নেই
৪. লোক জানাজানি হবে এই
ভয়ে ঘরে বসিয়ে রাখা একদম চলবে না,
নিজের অত্যাচারের শাস্তি প্রদানের
ব্যবস্থা গ্রহণে সচেতন
হয়ে এগিয়ে যেতে হবে সাহসের সাথে।
পুলিশ থানার মতোই, হাসপাতালও
রোগীর
গোপনীয়তা রক্ষা করতে দায়বদ্ধ।
৫. ‘আগে এফ আই আর করে আসুন’
এটা বলার অধিকার হাসপাতালের নেই।
আক্রান্ত
মেয়েটি হাসপাতালে আগে এলে পুলিশে খবর
দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালের।
৬. ‘মেডিক্যাল টেস্টে যদি ধর্ষণ প্রমাণ
না হয়?’ এই ভেবে ঘাবড়াবেন না।
ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট এ
বিষয়ে চরম প্রমাণ নয়। মেয়েটির নিজের
বক্তব্য এবং সাক্ষীদের
বক্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়
আদালতে।
৭. যে কোনও কারণে শারীরিক, মানসিক
ধকল গেলে গোসল করলে অনেকটাই
শান্তি পাওয়া যায়, তবে এই
ক্ষেত্রে অবশ্যই নয়। মেডিক্যাল টেস্ট
না-হওয়া পর্যন্ত গোসল করতে নিষেধ
করেন ডাক্তাররা, কারণ তাতে বহু
প্রয়োজনীয় প্রমাণ লোপ পেয়ে যায়।
নিজেকে শান্ত করতে মাথায়,
ঘাড়ে পানি দিয়ে মুছে নিন।
৮. ‘নোংরা কাপড় ধুয়ে ফেলি’: এতেও
অনেক প্রমাণ লোপ পেয়ে যায়। জামায়
মাটির বা ময়লার দাগ আছে কি না,
তা কোথাও ছিঁড়েছে কি না, তাতে দেহরস,
রক্ত বা অন্য কিছুর দাগ আছে কি না,
তা সবই আইনের চোখে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। জামা-কাপড়, অন্তর্বাস,
কোনও কিছুই কাচবেন না, ভাঁজ
করে ঢুকিয়ে রাখুন প্লাস্টিকের প্যাকেটে।
পুলিশকে দিন এবং খোঁজ রাখুন,
তা ফরেন্সিক
পরীক্ষা করতে পাঠানো হল কি না।
৯. এফআইআর করার সময় পুলিশের
কাছে সব কিছু বণর্ণা করুন।
পুলিশকে নিজের ইচ্ছেমত লিখতে দিবেন
না, এতে অনেক তথ্য বাদ যেতে পারে।
এটা মামলাকে দুর্বল করে। ঘটনার সময়,
ঠিক কোথায় ঘটেছে, কী কী ঘটেছে,
যেখানে যেখানে আঘাত-চোট লেগেছে,
যে সব ধরনের নির্যাতন করেছে, সব
কথাই নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট বলতে হবে।
অভিযুক্তের নাম জানা থাকলে অবশ্যই
লিখুন, নইলে দিতে হবে তার বিবরণ,
যতটা সম্ভব। লজ্জা, ভয়
ঝেড়ে ফেলে নির্ভেজাল
সত্যি কথা লিখুন।
১০. ‘বাইরে মিটমাট করে নেওয়াই ভাল’:
এই পরামর্শ পুলিশ, পাড়াপড়শি কখনও
কখনও দিয়ে থাকে।
নানা যুক্তি দেওয়া হয়, যেমন ‘রোজ
কোর্টে যেতে হবে, কোনও দিন প্রমাণ
হবে না, জানাজানি হয়ে যাবে, মেয়ের
বিয়ে হবে না, বরং ক্ষতিপূরণের
টাকা নিয়ে নিন।’ মনে রাখবেন,
কোর্টে রোজ যেতে হয় না, সবার
সামনে বিচার হয় না, আক্রান্ত
মেয়েটি যদি কাউকে সঙ্গে চায় তবে সে-ই
থাকে বিচার কক্ষে, নইলে দু-পক্ষের
উকিল এবং বিচারক কেবল থাকেন।
বিচার হয় বন্ধ ঘরে (‘ইন ক্যামেরা’)।
বিপক্ষের উকিল যাতে অশালীন,
অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতে না পারেন
তার জন্য বিচারক রয়েছেন আপনার
পাশে।
১১.‘মেয়েটারও দোষ আছে’: অভিযুক্ত
অনেক সময়েই দাবি করে, মেয়েটির
সম্মতি ছিল। মেয়ের বয়স ১৬-র
নীচে হলে তার সম্মতির প্রশ্নই ওঠে না।
বালিকার সঙ্গে যে কোনও যৌন
সংসর্গই ‘ধর্ষণ’। ভুল বুঝিয়ে, ভয়
দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে (যেমন বিয়ের
প্রতিশ্রুতি) সম্মতি আদায়ও ধর্ষণ।
প্রাপ্তবয়স্ক হলেও, অভিযোগ
জানাতে মেয়েটির কথাই শেষ কথা।
সম্মতি ছিল কি না, সে বিষয়ে তার
বক্তব্যই গণ্য করবে পুলিশ।
-চলুন ধর্ষণ প্রতিরোধে এগিয়ে যাই,
সম্মান করি নারীদের, কঠিন শাস্তির
বিধান করি ধর্ষণকারীর।
#আইনজানুনসচেতনহোন